somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনাবীজ ভাইয়ের সমীপেঃ উস্তা (উচ্ছে) ভাজির গল্প

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কদিন আগে ব্লগার সোনাবীজ ভাইয়ের ''কিছু অপ্রচিলত বা অর্ধ-প্রচিলত খাবার'' শীর্ষক পোস্টে একটা মন্তব্যের প্রতি উত্তরে তিনি জানতে চেয়েছিলেন আমার উস্তা ভাজি খাওয়ার কথা । উত্তরটা সেখানেই লিখতে যাচ্ছিলাম কিন্তু পরে মনে হল এটা নিয়ে আলাদা একটা পোস্ট দেওয়া যায় । কারণ প্রথম উস্তা ভাজি খাওয়া নিয়ে অভিজ্ঞতাটা আমার এখনও মনে আছে বেশ । সেই কথাই আজকে লেখা যাক !

ছোট বেলা থেকে আমি শাক সবজি একদম খেতাম না । খেতাম না বলতে একদমই না । ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত আমি লালশাক, আলুভাজি আর আলু ভর্তা ছাড়া আর কোন সবজি খাই নি । চিংড়ির সাথে ঝিঙ্গে থাকলে একটু খেতাম । এই হচ্ছে আমার সবজি খাওয়া লিস্ট । এর বাইরে আর কিছু না । সেখানে উস্তা ভাজি খাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না । তবে একদিন ঠিকই আমাকে খেতে হয়েছিলো এই জিনিস !

তখন আমি সম্ভবত ক্লাস এইটে পড়ি । আমাদের স্কুল তখন চলতো বিকাল চারটা পর্যন্ত । স্কুল থেকে সরসরি চলে যেতাম গিয়াস স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে । পড়া শেষ করে তারপর বাসার ফিরতাম । তারপর হত খাওয়া দাওয়া ! যথারীতি সেদিনও স্কুল থেকে পড়তে গিয়েছি । অন্যান্য ছাত্ররা তখনও আসে নি । আমি বসে রয়েছি স্যারের পড়ানোর ঘরে। এমন সময় দেখলাম স্যার এলেন । তিনিও সবে মাত্রই স্কুল থেকে এসেছেন । আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, এই এসো আমার সাথে । আমি বাধ্য ছাত্রের মত স্যারের সাথে স্যারের ঘরের ভেতরে ঢুকলাম । স্যার আমাকে সোজা রান্না ঘরে নিয়ে গেলেন । সেখানে পাটি পাতা আর দুইটা প্লেট । স্যার বসে পড়লেন । আমিও স্যারকে অনুসরন করলাম । স্যার নিজেই আমার প্লেটে ভাত বেড়ে দিলেন । তারপরই আসলো সেই খাবার । দেখলাম স্যার স্ত্রী প্রথমে এক বাটি উস্তাভাজি নিয়ে এলেন । আমি কেবল চুপ করে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে । স্যারকে যে বলব আমি এই বিদঘুটে জিনিস খাই না কিন্তু বলতেই পারলাম না । আসলে আমি একটু কম কথা বলতাম সব সময় । স্যার গল্প করছেন আর নিজ হাতেই আমার প্লেটে ভাজি তুলে দিচ্ছেন । আমি চুপচাপ সেই ভাজি ভাতের সাথে মাখিয়ে মুখে পুড়লাম জীবনের প্রথমবারের মত । তেতো একটা স্বাদ মুখের ভেতরে ছড়িয়ে পড়লো । সত্যি বলতে ওমন বিদঘুটে জিনিস আমি তখনও খাই নি । কত কষ্টে সে সেই ভাতের নলা গলা দিয়ে নামলো সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না । বাকি ভাজি টুকু যে কিভাবে শেষ করেছিলাম সেটা আমি বলতে পারবো না । আমার কেবল মনে হচ্ছিলো আমার নাড়ি ভুড়ি সব বের হয়ে আসবে তখনই ।

অর্ধেক খাওয়ার পরেই স্যার বলল, আচ্ছা আাবর উস্তা ভাজি খাও তো ! অনেকেই আবার খায় না ! আমার আবার অনেক প্রিয় !
আমি স্যারের দিকে তাকিয়ে একটু কষ্টের হাসি হাসলাম কেবল ! পরে অবশ্য আরও তরকারি এসে হাজির হল , রুই মাছ তারপর দেশী মুরগি ছিল । তবে মুখের যে তেতো ভাবটা তখন ছিল তাতে অন্য কোন খাবারই আমার আর মুখে স্বাদ নিয়ে আসতে পারলো না !
এই কথা যখন পরে আমি আমার মাকে বলেছিলাম তখন সে যেন আকাশ থেকে পড়লেন । আমি যে উস্তা ভাজি খেয়েছি এই কথা সে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না ।

এখানে একটা কথা বলে রাখি । গিয়াস স্যার আমাকে অনেক আদর করতেন । তার সাথে ইংরেজি শিখতে যেতাম । তার শেখানো ইংরেজির কারণেই ইংরেজিটা বেশ ভাল ভাবে শিখতে পেরেছিলাম ।, ভাল ভিত গড়েছিল যা এখনও আমার জন্য একটা আশীর্বাদ স্বরূপ !


এরপর আরও অনেক দিন আমি এই উস্তা ভাজি ভাজির দিকে যাই ই । তবে আমাকে আবারও উস্তা ভাজি খেতে হল ২০২০ সালের দিকে । তখন আমি নিজেই রান্না করে খেতাম ! লক ডাউনের কারণে বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই । তৎকালীন প্রেমিকা যখন জানতে পারলো যে আমি উস্তা ভাজি খাই না, তখন সে আমাকে জোর করেই এই জিনিস খাওয়ার জন্য নানান ফন্দি ফিকির করতে লাগলো । এবং একবার সফলও হয়ে গেল । অবশ্য এইবার উস্তা ভাজিটা অতোটা খারাপ হয়েছিলো না । বিশেষ করে তেতো ভাবটা ছিল না । আমি যখন উস্তা কাটছিলাম তখন সে আমাকে ফোনে ইনস্ট্রাক্শন দিচ্ছিলো যে কিভাবে কী করতে হবে তাহলে আর তেতো লাগবে না ! কাজ কর্ম শেষ করে যখন দুপুরে খাওয়া শুরু করলাম তখন সত্যিই মনে হল যে জিনিসটা খেতে আসলে অতোটা খারাপ না !

তারপর থেকে অবশ্য এখন প্রায়ই আমার উস্তা ভাজি ভাজি খাওয়া হয় । মূলত দুপুরের একটা সবজি হিসাবে লালশাক থাকে সব সময় । যদি কোন কারণে এই লালশাক না থাকে এই উস্তা ভাজি চলে । রাতে প্রায়ই দিনই উস্তাভাজি খাই এখন । এটা শরীরের জন্য বেশ চমৎকার একটা খাবার ।

আমাদের এলাকাতে করোলাকে উস্তাই বলে । শুদ্ধ করে এটার উচ্চারন হবে উচ্ছে । গ্রামের মানুষের মুখে উচ্ছে উচ্চারণটা আমি খুব কমই শুনেছি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৪০
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×