কদিন আগে ব্লগার সোনাবীজ ভাইয়ের ''কিছু অপ্রচিলত বা অর্ধ-প্রচিলত খাবার'' শীর্ষক পোস্টে একটা মন্তব্যের প্রতি উত্তরে তিনি জানতে চেয়েছিলেন আমার উস্তা ভাজি খাওয়ার কথা । উত্তরটা সেখানেই লিখতে যাচ্ছিলাম কিন্তু পরে মনে হল এটা নিয়ে আলাদা একটা পোস্ট দেওয়া যায় । কারণ প্রথম উস্তা ভাজি খাওয়া নিয়ে অভিজ্ঞতাটা আমার এখনও মনে আছে বেশ । সেই কথাই আজকে লেখা যাক !
ছোট বেলা থেকে আমি শাক সবজি একদম খেতাম না । খেতাম না বলতে একদমই না । ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত আমি লালশাক, আলুভাজি আর আলু ভর্তা ছাড়া আর কোন সবজি খাই নি । চিংড়ির সাথে ঝিঙ্গে থাকলে একটু খেতাম । এই হচ্ছে আমার সবজি খাওয়া লিস্ট । এর বাইরে আর কিছু না । সেখানে উস্তা ভাজি খাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না । তবে একদিন ঠিকই আমাকে খেতে হয়েছিলো এই জিনিস !
তখন আমি সম্ভবত ক্লাস এইটে পড়ি । আমাদের স্কুল তখন চলতো বিকাল চারটা পর্যন্ত । স্কুল থেকে সরসরি চলে যেতাম গিয়াস স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে । পড়া শেষ করে তারপর বাসার ফিরতাম । তারপর হত খাওয়া দাওয়া ! যথারীতি সেদিনও স্কুল থেকে পড়তে গিয়েছি । অন্যান্য ছাত্ররা তখনও আসে নি । আমি বসে রয়েছি স্যারের পড়ানোর ঘরে। এমন সময় দেখলাম স্যার এলেন । তিনিও সবে মাত্রই স্কুল থেকে এসেছেন । আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, এই এসো আমার সাথে । আমি বাধ্য ছাত্রের মত স্যারের সাথে স্যারের ঘরের ভেতরে ঢুকলাম । স্যার আমাকে সোজা রান্না ঘরে নিয়ে গেলেন । সেখানে পাটি পাতা আর দুইটা প্লেট । স্যার বসে পড়লেন । আমিও স্যারকে অনুসরন করলাম । স্যার নিজেই আমার প্লেটে ভাত বেড়ে দিলেন । তারপরই আসলো সেই খাবার । দেখলাম স্যার স্ত্রী প্রথমে এক বাটি উস্তাভাজি নিয়ে এলেন । আমি কেবল চুপ করে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে । স্যারকে যে বলব আমি এই বিদঘুটে জিনিস খাই না কিন্তু বলতেই পারলাম না । আসলে আমি একটু কম কথা বলতাম সব সময় । স্যার গল্প করছেন আর নিজ হাতেই আমার প্লেটে ভাজি তুলে দিচ্ছেন । আমি চুপচাপ সেই ভাজি ভাতের সাথে মাখিয়ে মুখে পুড়লাম জীবনের প্রথমবারের মত । তেতো একটা স্বাদ মুখের ভেতরে ছড়িয়ে পড়লো । সত্যি বলতে ওমন বিদঘুটে জিনিস আমি তখনও খাই নি । কত কষ্টে সে সেই ভাতের নলা গলা দিয়ে নামলো সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না । বাকি ভাজি টুকু যে কিভাবে শেষ করেছিলাম সেটা আমি বলতে পারবো না । আমার কেবল মনে হচ্ছিলো আমার নাড়ি ভুড়ি সব বের হয়ে আসবে তখনই ।
অর্ধেক খাওয়ার পরেই স্যার বলল, আচ্ছা আাবর উস্তা ভাজি খাও তো ! অনেকেই আবার খায় না ! আমার আবার অনেক প্রিয় !
আমি স্যারের দিকে তাকিয়ে একটু কষ্টের হাসি হাসলাম কেবল ! পরে অবশ্য আরও তরকারি এসে হাজির হল , রুই মাছ তারপর দেশী মুরগি ছিল । তবে মুখের যে তেতো ভাবটা তখন ছিল তাতে অন্য কোন খাবারই আমার আর মুখে স্বাদ নিয়ে আসতে পারলো না !
এই কথা যখন পরে আমি আমার মাকে বলেছিলাম তখন সে যেন আকাশ থেকে পড়লেন । আমি যে উস্তা ভাজি খেয়েছি এই কথা সে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না ।
এখানে একটা কথা বলে রাখি । গিয়াস স্যার আমাকে অনেক আদর করতেন । তার সাথে ইংরেজি শিখতে যেতাম । তার শেখানো ইংরেজির কারণেই ইংরেজিটা বেশ ভাল ভাবে শিখতে পেরেছিলাম ।, ভাল ভিত গড়েছিল যা এখনও আমার জন্য একটা আশীর্বাদ স্বরূপ !
এরপর আরও অনেক দিন আমি এই উস্তা ভাজি ভাজির দিকে যাই ই । তবে আমাকে আবারও উস্তা ভাজি খেতে হল ২০২০ সালের দিকে । তখন আমি নিজেই রান্না করে খেতাম ! লক ডাউনের কারণে বাইরে বের হওয়ার উপায় নেই । তৎকালীন প্রেমিকা যখন জানতে পারলো যে আমি উস্তা ভাজি খাই না, তখন সে আমাকে জোর করেই এই জিনিস খাওয়ার জন্য নানান ফন্দি ফিকির করতে লাগলো । এবং একবার সফলও হয়ে গেল । অবশ্য এইবার উস্তা ভাজিটা অতোটা খারাপ হয়েছিলো না । বিশেষ করে তেতো ভাবটা ছিল না । আমি যখন উস্তা কাটছিলাম তখন সে আমাকে ফোনে ইনস্ট্রাক্শন দিচ্ছিলো যে কিভাবে কী করতে হবে তাহলে আর তেতো লাগবে না ! কাজ কর্ম শেষ করে যখন দুপুরে খাওয়া শুরু করলাম তখন সত্যিই মনে হল যে জিনিসটা খেতে আসলে অতোটা খারাপ না !
তারপর থেকে অবশ্য এখন প্রায়ই আমার উস্তা ভাজি ভাজি খাওয়া হয় । মূলত দুপুরের একটা সবজি হিসাবে লালশাক থাকে সব সময় । যদি কোন কারণে এই লালশাক না থাকে এই উস্তা ভাজি চলে । রাতে প্রায়ই দিনই উস্তাভাজি খাই এখন । এটা শরীরের জন্য বেশ চমৎকার একটা খাবার ।
আমাদের এলাকাতে করোলাকে উস্তাই বলে । শুদ্ধ করে এটার উচ্চারন হবে উচ্ছে । গ্রামের মানুষের মুখে উচ্ছে উচ্চারণটা আমি খুব কমই শুনেছি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৪০