somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষের যে কাজে বিরক্ত হই সব সময় :|

১৯ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চোখের সামনে এমন সব বিরক্তিকর কাজ কর্ম আমাদের প্রতিনিয়ত দেখতে হয় যা আমরা চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারি না । এবং সেগুলো দেখা ছাড়া আসলে আমাদের পক্ষে আর কিছু করারও থাকে না । আবার জগতের সবাই যে আপনার মন মত হবে কিংবা আপনার মনের মত কাজ কর্ম চলবে সেটা ভাবাও উচিৎ না । মানুষ তার নিজের মত করে কাজ কর্ম করবে এবং আপনাকে সেটা মেনে নিতে হবে । যত সময় না সেটা অন্যের ক্ষতির কারণ না হচ্ছে, কিংবা দেশের প্রচলিত আইন না ভাঙ্গছে সেটা নিয়ে আপনার আমার কিছু বলার নেই । তবে ব্লগে যেহেতু অনেক কিছুই লেখা যায় এই বিরক্তিকর কাজ নিয়েও কিছু লেখা যায় !


১. ঢাকাতে যখন প্রথম এলাম, মেস জায়গা হল । আমরা সব মিলিয়ে ৯ জন মানুষ থাকি । সেই মেস বাড়িতে থাকতে প্রথম ব্যাপারটা খুব ভাল করে খেয়াল করলাম । ওখানে সবাই যখন সকালে ব্রাশ করে তখন সবাই পানির ট্যাপটা খুলে রাখে । পানি পড়তে থাকে । এটা প্রায় সবাই করে । পুরো ব্রাশ করার সময়ে পানি পড়ে নষ্ট হয় । কেন তারা এই পানি চালিয়ে রাখে সেটা আমার আজও ঠিক মাথায় ঢোকে নি । হোটেলে খাওয়ার সময়েও এই ব্যাপারটা খেয়াল করেছি । হাত ধোয়ার আগে যখন সাবান মাখায় তখন সেই একই ভাবে পানি পড়তে থাকে । একটু পানি নিয়ে একটু পানির ট্যাপটা বন্ধ করে রাখলে কী এমন সমস্যা হয় সেটা আমি আজও বুঝলাম না । এটা আসলে সরাসরি অপচয় । কিন্তু এটা নিয়েই যদি আপনি কিছু বলতে চান উল্টো আপনাকেই কথা শুনতে হবে । পানির মত চুলার গ্যাসের বেলাতেও একই কাণ্ড । আমি প্রথম যেই মেস বাড়িতে উঠেছিলাম সেখানে সারাদিন গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখতো । আমি যখন বন্ধ করতাম তখন সেখান থাকা লোকজন বিরক্ত হত । ছোট ছিলাম বয়সে তাই বলার কিছু ছিল না । অবশ্য বেশিদিন সেখানে থাকতে হয় নি ।

২. ঢাকায় এসে আরও একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম । মানুষজন অকারণে মিথ্যা বলছে । ঢাকাতে আমার প্রথম বাহন হল বাস । বাসে করে যাওয়া আসা করি । এই বাসেই অনেক মানুষের ফোন আসে । এবং এই ফোনে যখন তারা কথা বলে, বিশেষ করে কেউ যখন তাদের বর্তমান লোকেশন জানতে চায় আজ পর্যন্ত আমি কাউকে সঠিক লোকেশন বলতে শুনি নি । কেউ শংকর রয়েছে তো বলবে ঝিকাতলা নয়তো বাটা সিগনাল । কেউ রয়েছে বাটা সিগনালে তখন ফোনে কেউ যদি জানতে চায় কোথায় আছে তাহলে বলবে গুলিস্তান চলে এসেছে । এমন কোন দিন হয় নি যে সে ঝিগাতলায় আছে আর সেই জিগাতলার নামই নিয়েছে । এই সামান্য মিথ্যা কথা তারা কেন বলে কে জানে !

৩. হাত ধুয়ে হাত ঝাড়া মারার স্বভাব অনেকের আছে । সেই হাত ঝাড়া মারার ফলে পানি যে কোন দিকে গেল সেটা তাদের খেয়াল থাকে না । বাসাতে এই স্বভাব আমাদের বাড়ির কাজের মহিলার ছিল । সে এই কাজ প্রায়ই করতো । একদিন আমার গায়ে পানি এসে লাগলো, খুব মেজাজ গরম হল । মুখে বললাম কথাটা । শুনে আবার দাত বের করে হাসতে লাগলো । কেন জানি মেজাজটা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেল । সাথে সাথে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বললাম । সেই সাথে বললাম যেন খবরদার এই বাড়ির দিকে আর না আসে । মা রান্নাঘরে ছিলেন । আমার বকাবকি শুনে থামালেন আমাকে । তারপর মহিলাকেও কিছু বকলেন। তবে এই বকা ছিল মূলত তার দোষ কাটানোর বকা যাতে সে পরে আবারও বাড়িতে ঢুকতে পারে । হোটেলে খাওয়ার সময় এই গোছের মানুষ দেখা যায় মাঝে মাঝে । হাত ধোয়ার পরে হাত ঝাড়া মারবে । পানিটা যে কারো শরীরে লাগলো সেই দিকে কোন খেয়াল নেই ।

৪. রাস্তার পাশে গাড়ি পার্কিং করার ব্যাপারটা আমাদের দেশে অতি স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হয়ে গেছে । এখন বাসার বাইরে বের হলে রাস্তার উপরে দুই একটা গাড়ি পার্কিং না দেখলেই বরং অবাক লাগে । তবে এখন যেটাতে অভ্যস্ত হতে পারি নি সেটা হচ্ছে মানুষজন গাড়ি গাড়ি পরিস্কার করে রাস্তায় দাড়িয়েই । সেই পানি পুরো রাস্তায় পড়ে থাকে । কোন কোন জায়গাতে কাদা পর্যন্ত হয়ে যায় সেই পানিতে । এতো টাকা দিয়ে গাড়ি কিনতে পারছে বেটারা নির্দিষ্ট স্থানে যাতে সেই গাড়ি ধোয়ার পানি যায় সেটার ব্যবস্থা করতে পারে নাই !!

৫. পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করার মানুষ গুলো আমার বরাবরই দুই চোক্ষে দেখতে পারি না । আপনাকে জগতের সবাই পছন্দ করবে সেটা অস্বাভাবিক । কোন প্রকার খারাপ কিছু না করার পরেও মানুষ আপনাকে পছন্দ নাই করতে পারে ঠিক তেমনি ভাবে আপনিও যে কাউকে পছন্দ নাই করতে পারেন । এই অবস্থায় সব থেকে স্বাভাবিক কাজ হচ্ছে এড়িয়ে চলা । আমি যদি কাউকে অপছন্দ করি কিংবা বুঝতে পারি যে সামনের মানুষটা আমাকে অপছন্দ করছে, তাহলে সেই মানুষটাকে এড়িয়ে চলি । কিন্তু কিছু নির্লজ্জ বেহায়া মানুষ আছে তারা সেই অপছন্দের ব্যাপারটা জেনেও পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাঁঝানোর চেষ্টা করে যায় অনবরত । বাস্তব জীবনেও যেমন আছে এই অনলাইণ ব্লগেও আছে এমন মানুষ । এদের না আছে নিজেদের আত্মসম্মান বোধ না আছে কোন কাজ, সারাটা সময় অন্যের পেছনে আঙ্গুল দিয়ে বসে থাকে আর কখন ঝগড়া বাঁধবে ।

৬. ঢাকার মানুষজন রাস্তায় হাটার সময় ফুটপাত ব্যবহার করতে চায় না । ফুটপাত দিয়ে না চলার পক্ষে সব থেকে বড় যুক্তি হচ্ছে ঢাকার সব ফুটপাত দখল হয়ে আছে, সেখানে নানান হকারের দোকান, হাটা যায় না ! এটা অতি ক্ষুদ্র ভাবে সত্য । দোকান পাট আছে তবে ঢাকার অধিকাংশ ফুটপাতই ফাঁকা । কেবল মাত্র জংসন কিংবা মোড় এড়িয়ে গুলোতে হকারের দোকান বসে । এছাড়া অন্য সব স্থানে ফুটপাত ফাঁকা । অন্তত সেখান দিয়ে খুব ভাল করেই হাটা যায় । এই যেমন বাংলা মোটর থেকে শাহবাগের দিকে যেতে হয় শেরাটনের সামনে দিয়ে এই রাস্তার ফুটপাত একেবারে চওড়া । দোকান পাট নেই । তারপরেও মানুষজন এই রাস্তা দিয়েও হাটবে ফুটপাতে উঠবে না । এই পাব্লিকের বিরুদ্ধে একটা কঠিন আইন প্রনয়ণ করা দরকার । ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় হাটলেই ফাইনের সিস্টেম রাখা দরকার ।

৭. আরেক টাইপের মানুষ আমার খুব বেশি বিরক্তির কারণ জোগায় । দেখা যাবে আমাদের আশে পাশে এমন কতগুলো মানুষ রয়েছে তারা সব সময় এমন একটা আচরণ করে যে তাদের ছাড়া আসলে জগত চলবে না । অন্য কেউ ভাবুক কিংবা না ভাবুক, অন্য কেউ কিছু বলুন না বলুন এরা সব সময় এমন আচরণ করে যে তারা চলে গেলেই সেই প্রতিষ্ঠান ধ্বংশ হয়ে যাবে । তারা সেখানে আছে দয়া করে । তার মত যোগ্য লোক বুঝি এই জগতে আর কেউ নেই ।সব জায়গাতে নিজেদের লম্বা নাক এদের ঢোকাতে ইচ্ছে করে ।

৮. বিরক্তির আরও একটা বড় ঘটনা হচ্ছে ওয়াজ কিংবা রাজনৈতিক সভার মাইকের ব্যবহার নিয়ে । এই যে শীতকাল আসছে এখন ওয়াজ ব্যবসায়ীদের জ্বালায় টেকা যাবে না । ওয়াজ এবং রাজনৈতিক সভার সময় এরা কেবল সভা স্থলেই মাইক লাগায় না, এর আশে পাশে যত দুর সম্ভবত মাইকের পর মাইক লাগিয়ে বসে থাকে । ঠিক আছে ওয়াজ করবি, সভা কর, কেবল যে স্থানটুকুতে লোকজন বসে সেই স্থানের ভেতরেই মাইকের শব্দ সীমিত রাখ, তা রাখবে না, এরা পুরো এলাকাতে ছড়িয়ে দিবো এই মাইকের আওয়াজ ! বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এই আওয়াজের কারণে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে !


আরও কত বিরক্তির কাজ কর্ম আছে । হয়তো এমন অনেকেই আছে যারা আমার কাজ কর্মে বিরক্ত হোন । হতেই পারেন ।


pic source
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:৪২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪



গত কয়েকদিন আমি চিনি ছাড়া চা খাচ্ছি।
সারাদিনে মাত্র দুই কাপ চা। আগে চা খেতাম কমপক্ষে ৮ থেকে দশ কাপ। সবচেয়ে বড় কথা চা যেমন-তেমন, সিগারেট খাচ্ছি না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রচুর ব্লগিং করুন, কিন্তু......

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৯

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাত্রলীগের লুঙ্গির নিচে ছিল শিবির, এখন শিবিরের লুঙ্গির নিচে ঘাপটি মেরে আছে গায়ে বোমা বাঁধা সশস্ত্র জঙ্গিরা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৫


"তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ: চোখে যা দেখেছো, কানে যা শুনেছো, সেগুলো সঠিক নয়, সেসব ভুলে যাও।" - জর্জ অরওয়েল

অনেকদিন ধরে একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। এতদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×