ক্লাস শেষ করে হলের দিকে যাচ্ছিলাম তখনই একজন আমার নাম ধরে ডাক দিলো ।
-সুমন ভাইয়া!
আমি কন্ঠটা শুনে সত্যিই অনেক চমকে গেলাম । এই মেয়েটাকে আমি এখানে দেখতে পাবো কোনদিন ভাবতেও পারি নি । আমার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে । কত বড় হয়ে গেছে !
আমার কেবল মুখ দিয়ে একটা শব্দই বের হল, আলো ! তুই?
-চিনতে পেরেছো?
-তুই এতো বড় হয়ে গেছিস! কী আশ্চর্য্য । এখানে কী করছিস তুই?
-আমি এখন তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ি ।
হিসাব করে দেখলাম আলোর এই বছর এইচএসসি পাশ করার কথা। ও যে আমার বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হবে সেটা আমি ভাবি নি । আমি ভালো করে আলোর দিকে তাকালাম । মেয়েটা সত্যিই বড় হয়ে গেছে । চোখ গুলো যেন আর সুন্দর হয়েছে । সেই সাথে চুল লম্বা হয়েছে গায়ের রংটা আগের থেকে আরও বেশি উজ্জ্বল হয়েছে । এই মেয়েটার সাথে এক সময় কত খেলা করেছি । একটা সময় ছিল আলো সব সময় আমার পেছন পেছন ঘুরতো । আমি যেখানে যেখানে সেও আমার পেছন পেছন সেখানে সেখানেই আসতো । আমাকে যে কত খামচি দিয়েছে সেটার কোন হিসাব নেই । আমিও ওকে মেরেছি কত ! শেষে বাবার হাতে মারও খেতে হয়েছে । সেই মেয়ে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেছে । ভাবা যায় ! আমি বললাম, তোর বাবা আসতে দিলো এতোদুর?
-দিতে চায় নি। রাজি করিয়েছি ।
-যাক ভাল । কোথায় উঠেছিস?
-একটা মেস ভাড়া করেছি কাছেই ।
হঠাৎই পুরানো কথা মনে পড়ে গেল সব । আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আলো বলল, আমাকেও ঘৃণা কর বাবার মত?
-আরে কি বলিস? তোকে কেন ঘৃণা করবো?
-চাচী কই?
-মা আছে ভাল । এখানে একটা এতিমখানায় পড়ায় আর ওখানেই থাকে।
কথাটা শুনে আলোর মুখটা কেমন ছোট হয়েগেল । একটু পরেই দেখলাম ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । ওর সারা মুখ জুড়ে একটা তীব্র অপরাধবোধের রেখে দেখতে পেলাম । আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, তুই কাঁদছিস কেন? তোর উপর আমি কোন দিন রাগ করেছি? যা করেছে তোর বাবা করেছে । তুই তো আর করিস নি।
আলো কোন কথা বলল না । চুপচাপ ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো । আমি আরও একটু এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলাম । তারপর বললাম, কাঁদিস না ।
আলো চোখ মুছলো । তারপর বলল, আমাকে চাচীর কাছে নিয়ে চল।
-এখনই ?
-হ্যা । এখনই।
আমি আর মানা করলাম না । একটা রিক্সা ভাড়া করলাম । ওকে নিয়ে এতিমখানার দিকে রওয়ানা দিলাম । রিক্সা চলতে শুরু করলে আলো নানা রকম কথা বলতে শুরু করলো । আমার সেই পুরানো দিনের কথা আবার এক ঝটকাতে মনে পড়ে গেল । যে কষ্টটা চাপা দিয়ে রেখেছিলাম সেটা বের হয়ে এল আবার ।
আলো আমার সম্পর্কে চাচাতো বোন হয় । ছোট চাচার মেয়ে। আলোর পরে আরও একটা বোন আছে । আমি আমার বাবার এক মাত্র ছেলে । ছোট বেলাতে যখন একটু বুঝতে শিখেছি তখন নিজ থেকেই খেয়াল করতাম যে আলোর বাবা অর্থ্যাৎ আমার ছোট চাচা আমাকে আর আমার মাকে ঠিক পছন্দ করেন না । কারণটা বুঝতে পেরেছি আরও কিছু সময় পরে ।
আমার মা আগে হিন্দু ছিল । আমাদের গ্রামেই তাদের বসবাস ছিল । দেখতে সুন্দর ছিল বেশ । বাবার সাথেই তার প্রেম হয় এবং তাকেই সে বিয়ে করে । এলাকাতে বাবা চাচাদের বেশ প্রভাব ছিল । আমার দাদা এলাকার চেয়ারম্যান ছিল । কেউ সাহস করে কিছু বলতে পারলো না । মায়ের পরিবার মেয়েকে হারিয়ে সেই গ্রাম ছেড়ে ইন্ডিয়া চলে গেল সব কিছু বিক্রি করে । পরে আর কোন দিন মায়ের মুখ দেখেন নি । দাদা বাবার উপর অখুশি হলেও মা যখন মুসলিম হয়ে গেল তখন আর কিছু বলেন নি। কিন্তু ছোট চাচা কেন জানি ব্যাপারটা একদমই পছন্দ করেন নি । মাকে সে কোন দিন ভাবী হিসাবে মেনে নেন নি ।
সব কিছু তবুও চলছিলো । ছোট চাচা বিয়ে করলো । আমি হলাম । কয়েক বছর পরে আলোর জন্ম হল । এর ফাঁকে দাদা মারা গেল । এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল । আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন আমার বাবা মারা গেলেন স্ট্রোক করে । এরপরেই ছোট চাচার ভয়ংকর রূপ দেখতে পেলাম । সে কোন দিন আমাদের আপন করে নেয় নি । আমাকে আর মাকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়েই সে বের করে দিল । আমার মা আর আমি অসহায়ের মত কত মানুষের কাছে সাহায্য চাইলাম, পুলিশের কাছে গেলাম কিন্তু কোন লাভ হল না । কেউ আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এল না । চাচা কিভাবে জানি প্রমান করেছিলো যে দাদা নাকি সব কিছু তার নামে লিখে দিয়ে গেছে । কেস যে করতে যাবো সেই সামর্থ্য আমাদের ছিল না । মায়ের পরিবার আগেই দেশ ছেড়েছে । যারা ছিল তারা মাকে কোন প্রকার সাহায্য করলো না । অবশ্য অনেক আগেই তারা মেয়ের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছিলো বাবাকে বিয়ে করার কারণে। বাধ্য হয়ে আমাদের এলাকা ছাড়তে হল।
সেই সময়ে আমাদের চরম দুর্দশার মধ্যে কাটাতে হয়েছিলো । একটা সময়ে মা একটা এতিমখানাতে কাজ জুটিয়ে নেয় । আমিও সেখানেই থেকেছি কয়েক বছর । তারপর এসএসসির পরে আমিও টিউশনি করতে শুরু করি । বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে অবশ্য অনেকটাই সামলে নিয়েছি । এতোদিন সেভাবেই জীবন পার করে আসছিলাম । এই সময়ে আলোর সাথে আবার দেখা হল ।
এতিমখানাতে মাকে দেখে আলো কোন কথা না বলেই জড়িয়ে ধরলো । তারপর সে কী কান্না । মা যতবার বলতে যায় আরে বোকা মেয়ে কাঁদিস কেন, সে কিছুতেই শোনে না । একটা সময়ে আলোকে রেখে আমি বাইরে বের হয়ে এলাম । আলো হাওয়াই মিঠাই খুব পছন্দ করতো । কে জানে এখনও পছন্দ করে কিনা । এতিম খানার পাশেই একটা লোক হাওয়াই মিঠাই বানায় । দেখি লোকটাকে পাওয়া যায় কি না ।
পাওয়া গেল । দুটো হাওয়াই মিঠাই নিয়ে যখন আবার ফিরে এলাম দেখি দুজনের কান্নাকাটি পর্ব বন্ধ হয়েছে । মায়ের কোলে মাথা রেখে আলো বকবক করে যাচ্ছে । মা ওর চুলে হাত দিয়ে আদর করে যাচ্ছে । আমার হাতে হাওয়াই মিঠে দেখে সে ছুটে এল আমার দিকে । ছোঁ মেরে দুটি হাওয়াই মিঠাই নিয়ে নিল । এমন ভাবে ছোট বেলাতেও করতো ও ।
সন্ধ্যা সময়ে আলোকে ওর হোস্টেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে এলাম । এরপর থেকে নিয়মিত রুটিন হয়ে গেল ওর সাথে দেখা করা । সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার এমন কি ডিনারও করতো ও আমার সাথেই । প্রায়ই মায়ের সাথে দেখা করতে যেত ।
একদিন নিয়মের ব্যতীক্রম ঘটলো । সকালবেলা সেদিন আলো আমার হলের সামনে এসে হাজির । আমাকে ফোন করে নামতে বলল। আর বলল যেন আমি একটু তৈরি হয়ে বের হই । আমাকে নিয়ে এক স্থানে যাবে ।
আমি একটু পরে বের হয়ে এলাম । দেখলাম আলো বেশ সেজে গুজেই এসেছে । কোথায় যাবে জানতে চাইলে বলল না । কেবল বলল যে চল । গেলেই দেখতে পাবে ।
আমাকে নিয়ে সে গাজীপুরের বাসে উঠলো । আমি আর বেশি প্রশ্ন করলাম না । গাজীপুরে সাফারি পার্ক আছে, জাতীয় উদ্যান আছে । সেখানেই হয়তো যাবে । ওর সাথে সময় কাটাতে আমার নিজেরও ভাল লাগে ।
কিন্তু গাজিপুর নেমে ও যখন ড্রিম ল্যান্ড রিসোর্টের কথা বলল তখন আমি খানিকটা অবাক হলাম । গাজীপুরে অনেক রিসোর্ট আছে । কেবল নামই শুনেছি কিন্তু আসা হয় নি । আসলে এতো টাকা খরচ করার মত সামর্থ্য আমার নেই । তাই আসার প্রশ্নই আসে না । কিন্তু আলো হঠাৎ এদিকে যাচ্ছে কেন?
-ঐদিকে হঠাৎ?
-ইচ্ছে হল । বেশ কিছু টাকা জমেছিলো । ভাবলাম একটু আরাম আয়েশ করে আসি ।
রিসোর্টে গিয়ে আমাদের সময়টা বেশ ভালই কাটলো । আমি ভেবেছিলাম যে সন্ধ্যা বেলা হয়তো ফিরে যাবো আমরা কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আলো জানালো যে আজকে রাতে আমরা এখানেই থামবো । সেভাবেই ঘর বুক করা হয়েছে । এইবার আমার খানিকটা অস্বস্থি শুরু হল ।
রাতে ডিনার করার পর গান হল । রিসোর্টের নিজেস্ব শিল্পী আছে । গেস্টদের আপ্যায়ন করতে তারা ব্যবস্থা করেছে । রাত বারোটা দিকে রুমে এসে হাজির হলাম । আমার তখন কেন জানি অস্বস্থি লাগছে । আমি আলোর দিকে তাকিয়ে বলল, তুই খাটে ঘুমা আমি সোফাতে ঘুমাচ্ছি ।
আলো সাথে সাথেই বলল, কেন আমার শরীরে কি গন্ধ ?
-কী বলছিস এসব?
-খাটটা এতো বড়, তুমি সোফাতে কেন শোবে?
-আলো এটা ঠিক হবে না ।
-সব সময় কেন ঠিক কাজটাই করতে হবে? তোমার সাথে তো ঠিক কাজটা করে নি । আমার বাবা তো তোমার সাথে বেঠিক কাজ করেছে তুমি কেন ঠিক কাজ করবে?
আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আলো এসব কি বলছে ! আলো বলল, আমি চাই তুমি আমার সাথে কিছু কর।
-কি করবো?
-বুঝতে পারছো না কি করবে? বোকা তুমি?
-আলো তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে ।
-হয়েছে । এতো গুলো বছর ধরে খারাপ হয়েছে । যতবার আমি ভাবি আমার আপন বাবা তোমার আর চাচীর সাথে কি অন্যায় করেছে তখন মেয়ে হিসাবে আমার নিজের উপর ঘেন্না হয় । কি যে ছোট মনে হয় নিজের কাছে ।
আমি অবাক হয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম কেবল । মেয়েটা এই এতো গুলো বছর কী মানসিক যন্ত্রনা নিয়েই না বেঁছে চিল ! ত আস্তে আস্তে এগিয়ে এল আমার দিকে । মেয়েটির চোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছে । আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম । মেয়েটার জন্য হঠাৎই বুকটা আমার হাহাকার দিয়ে উঠলো । ইস! কি কষ্ট আর অপরাধবোধ নিয়ে মেয়েটা এতোদিন বেঁচে আছে !
আমি এবার একটু এগিয়ে গেলাম । তারপর ওকে জড়িয়ে ধরলাম । অনুভব করলাম আমাকে জড়িয়ে ধরে আলো হুহু করে কেঁদে চলেছে আর বলছে, সুমন ভাই প্লিজ আমাকে এই অপরাধবোধ থেকে মুক্তি দাও । তোমার পায়ে পরি !
আমি এবার ওকে সামনে নিয়ে এলাম । ওর কপালে ছোট করে চুমু খেলাম । বললাম, তোর সাথে এই কাজটা করলেই তোর মুক্তি হবে? তুই কেন নিজেকে অপরাধি ভাবছিস? তুই কিছু করিস নি।
-আমার বাবা তো করেছে ।
-করুক । তার উপরে আমার কোন রাগ নেই । তোর উপরে তো রাগ থাকার প্রশ্নই আসে না । বুঝেছিস?
রিসোর্ট থেকে ফিরে এসেই আমাদের বিয়ে হল । মাকে বলাতে মা বেশি উচ্চবাচ্চ করলেন না । একটু পরে মা এসে হাজির হলেন কাজী অফিসে । সাথে আমার কিছু বন্ধু বান্ধব এসে হাজির হল !
আমাদের জীবনের অবশ্য খুব একটা পরিবর্তন হল না । এই ভাবে কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পরে আসল ঘটনা ঘটলো । একদিন দুপুরে হঠাৎ আলোর ফোন । এখনই সে আমাকে হলের সামনে যেতে বলল । আর বলল যে পারলে কয়েকজন যেন সাথে করে নিয়ে যাই । ওর কি কোন বিপদ হল ! কয়েকজন বন্ধু বান্ধব মিলে হাজির হতেই আসল ঘটনা টের পেলাম । শরীরের ভেতরে একটা রাগ দলা পেকে উঠলো ।
আমার ছোট চাচা এসেছে !
আলোকে সে নিয়ে যাবে । আমাকে দেখে আলো যেন ভরশা পেল । আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল, সুমন আমি যাবো না বাসায়।
ছোট চাচা বলল, যাবি না মানে ! আজই যাবি । দেখি কে আটকায় আমাকে !
আমি চাচার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম, চাচা আলো যখন যেতে যাচ্ছে না ওকে আপনি নিয়ে যেতে পারবেন না ।
-আমার মেয়েকে আমি নিয়ে যাবো ।
-আপনার মেয়ে এখন আমার বিয়ে করা বউ ।
আমি দেখলাম চাচা এই তথ্য শুনে চমকালেন না । তার মানে সে এই খবর জানে । সম্ভবত জেনেই এসেছে । চাচা আলোর হাত ধরে রেখেছিলেন । আমি সেটা ছাড়াতে গেলাম । চাচা আমাকে গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন । আমার বন্ধুর ভেতরে রিয়াদ একটু রগচটা । সে এগিয়ে আসতে গেল । আমি হাতের ইশারায় থামতে বললাম । তারপর চাচার দিকে তাকিয়ে বলল, চাচা এটা আপনার গ্রাম না যে যা ইচ্ছে তাই করবেন । আপনি বড় তাই আপনাকে আমি কোন ভাবেই অসম্মান করতে চাই না । দয়া করে আলোর হাত ছেড়ে দিন । ওকে আপনি কোন ভাবেই জোর করে নিয়ে যেতে পারবেন না ।
-তোকে আমি .....
এইবার দেখলাম আলো নিজের হাত এক ঝটকাতে ছাড়িয়ে নিল । আমার সামনে এসে খানিকটা চিৎকার করেই বলল, এই লোক আমাকে জোর করে নিয়ে যেতে চায় আমি যেতে চাই না । আমি আমার স্বামীর সাথে থাকতে চাই ।
এইবার দেখলাম রিয়াদ সামনে চলে এল । বলল, চাচামিয়া শুনলেন তো ! এখন কেটে পড়েন । সোজা কেটে পড়েন ।
আমাদের ক্যাম্পাসে সব সময়ই পুলিশ থাকেই । চিৎকার চেঁচামিচি শুনে দেখলাম তারা এসে হাজির হল । রিয়াদই তাদের সামলে নিল । চাচা পুলিশের কাছে গিয়ে বলল, এই ছেলে আমার মেয়েকে জোর করে আটকে রেখেছে ।
পুলিশ কিছু বলবে তার আগেই রিয়াদ বলল, আপনার কি মনে হচ্ছে এই মেয়েকে আমরা আটকে রেখেছি? দেখুন এই মেয়ে আর সুমন এখন বিবাহিত । এই লোক আমার বন্ধুর বউকে জোর করে নিয়ে যেতে চায় ।
পুলিশ আরও বক্তব্য শুনলো । তারপর আলোর দিকে তাকিয়ে বলল, ইনি তোমার বাবা?
-জি?
-আর এই ছেলে তোমার স্বামী?
-জি ।
-তোমার ১৮ বছর হয়েছে?
-জি হয়েছে । সার্টিফিকেটে আমার বয়স উনিশ বছর । চাইলে দেখাতে পারি । হলেই আমার সার্টিফিকেট আছে । দেখাবো?
পুলিশ আরও কিছু কথা বললেন তারপর চাচার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখুন আপনি চাইলে কেস করতে পারেন । কিন্তু এই কেস টিকবে না । মেয়ে সাবালিকা । মেয়ে যখন স্ব ইচ্ছেতে তার স্বামীর সাথে থাকতে চাচ্ছে, এখানে আপনার কিছু করার নেই । কারো কিছুই করার নেই। বুঝতে পেরেছেন?
চাচা একবার পুলিশের দিকে আরেকবার আমাদের দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে রইলেন । বুঝতে পারলেন যে এখানে সে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না ।
পরিশিষ্টঃ
আলোর সাথে আমার সংসার শুরু করতে আরও বছর দুয়েক লেগে গেল । এই দুই বছরে সে একটা বারের জন্যও গ্রামে যায় নি । মাঝে মাঝেই দেখতাম ছোট চাচা ঢাকা আসতো । আলো তার সাথে দেখা পর্যন্ত করতো না । একটা আমি লক্ষ্য করতে শুরু করলাম যে চাচা কেমন যেন ভেঙ্গে পড়েছে । নিজের আদরের মেয়ে এভাবে তার তাকে ত্যাগ করেছে এটা বাবা হিসাবে সে মেনে নিয়েছে । এতো জায়গা সম্পত্তি তার অথচ নিজের মেয়ে তাকে ঘৃণা করছে ।
আমি মাঝে মাঝে আলোকে বোঝানোর চেষ্টা করতাম যে অন্তত কথা বল চাচার সাথে কিন্তু আলো সেটাতেও রাজি না । নিজের বাবার উপরে এমন কী এতো অভিমান আমি জানি না । আমার মনে আসলে চাচার জন্য একটু করুণাই হল । আমাদেরকে কিাভবে বিতাড়িত করেছিল আজকে তার নিজের মেয়ে তাকে ত্যাগ করে চলে গেল । কী নির্মম একটা পরিহাস ! একেই বলে বুঝি রিভেঞ্জ অব নেচার !
গল্পটা আগেই নিজেস্ব ওয়েব সাইটে প্রকাশিত
pic source