
আমার বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রতিদিনই বেশ রাত হয় । কলাবাগান মিরপুররোড দিয়ে সোজা এসে ২৭ নম্বরের আগে একটা গলি রাস্তায় ঢুকে পড়ি । এই রাস্তায় একটা ছোট ফাস্ট ফুডের দোকান আছে । আমি যখন এই রাস্তার সামনে দিয়ে যাই তখন এই দোকানটা বন্ধ হব হব করে প্রতিদিনই । দেখা হয় হয়তো এক কিংবা দুই পিচ বার্গার সামনের তাকে পড়ে রয়েছে । কয়েকদিন আগের ঘটনা । বাসায় ফিরছি । আমার চোখ গেল দোকানে দিকে । দেখলাম সেখানে একটা বার্গার রয়েছে । তবে ততক্ষণে আমি দোকানটা পার হয়ে গেছি । মনের ভেতরে হঠাৎ মনে হল যে বার্গারটা খাই । কিন্তু কেন জানি সাইকেল ঘুরিয়ে আর সেখানে যেতে ইচ্ছে করলো না । আমি বাসায় চলে এলাম । মনে মনে ঠিক করলাম যে যে কোন ভাবেই হোক, কাল আমি বার্গার খাবো । আগে থেকেই মনস্থির করা । তাই সোজা দোকানের সামনে সাইকেল থামাবো । বার্গার কিনবো তারপর খাবো ।
পরদিন দোকানের সামনে দাড়িয়ে দেখি সেখানে কোন বার্গার নেই । সব শেষ ।
ঠিক করলাম যে পরের দিন অবশ্যই খাবো । কিন্তু পরের দিন গিয়ে দেখি পুরো দোকানটাই বন্ধ গেছে । আমার মনের ভেতরে তখন এমন একটা ভাব যে যে কোন ভাবে আমাকে বার্গার খেতে হবেই । মনে মনে ঠিক করেই নিলাম কাল আগে আগে বের হব। এখানে আসবো তারপর খাবো ।
পরেরদিন আমার প্রাক্তন স্টুডেন্ট ফোন দিয়ে বলল তাদের বাসা থেকে । সে ছুটিতে খুলনা থেকে ঢাকায় এসেছে । আমিও ভাবলাম যে অনেকদিন দেখা হয় না। যাই ঘুরে আসি । ওদের বাসায় গেলাম । কিছু সময় গল্প হল এবং তারইকিছু সময় এসে হাজির হলা বার্গার ! বলল, স্যার আমার পক্ষ থেকে আজকে আপনাকে বার্গার ট্রিট । আমি গত তিন ধরে বার্গার খাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু খেতে পারছি না ।আর আজকে বার্গার এসে হাজির হল ।
ঐদিন যখন একই রাস্তা দিয়ে যাই, সেদিক ঠিকই দোকান খোলা ছিল, ছিল বার্গারও কিন্তু বার্গার আর আমার খেতে ইচ্ছে করে নি ।
ঠিক এমন ঘটনা আমার সাথে আরও অনেক ঘটেছে । বিশ্ব বিদ্যালয় জীবনে একদিন দুপুরে নিচে নামছি, নিচের ফ্লোরের বাসায় সেদিন রান্না করেছে পোলাও । সেই সুবাস এসে লাগলো নাকে । বাসার পৌলাও আর দোকানের পোলাওয়ের ভেতরে একটা পার্থক্য রয়েছে । সুগন্ধে আলাদা একটা পার্থক্য আছে । ব্যাপার টা এমন যে আমি চাইলেই বিরিয়ানীর দোকান থেকে মোরগ পোলাও খেতে পারি । নিয়মিতই খাই আমি কিন্তু বাসার রান্না করা পোলাও তখন পাওয়ার কোন উপায় ছিল না । যদিও পোলাও রান্না করতে পারি আমি তবে কেন জানি ঝামেলা নিতে ইচ্ছে হল না । ঠিক করলাম যে রাতে টিউশনি থেকে ফেরার পথে নুর বিরিয়ানী থেকে খাওয়া যাবে মোরগ পোলাও । স্টুডেন্টকে পড়িয়ে বের হব তখন আন্টি বলল, তানভীর আজকে পোলাও রান্না করেছি, খেয়ে যাও । আমি খানিকটা অবাক না হয়ে পারলাম না ।
এই রকম ঘটনা অনেকবারই ঘটেছে । আরেকটা মজার ঘটনা বলি । তখন আমি নিজের শহরে থাকি । সবে মাত্র প্রেম শুরু হয়েছে । প্রেম শুরু হলেই প্রেমিকারা নানান ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে । এমনই একটা নিষেধাজ্ঞা জারি হল আমার উপরেও । বাইরের চটপটি খাওয়া যাবে না । আমি বললাম ঠিক আছে খাবো না, তাহলে তুমি রান্না করে খাওয়াও। সে তখন বলে কিভাবে দিবো, কোন উপায় নেই । কিন্তু আমার মনে তখন তার হাতের চটপটি খাওয়ার জন্য মন উতলা হয়েছে । যে কোন ভাবে চটপটি খেতে হবেই । কয়েক দিনের চেষ্টাতেও কিছু হল না । তার বাসায় বেশ কড়াকড়ি । তাদের চোখ এড়িয়ে আমাকে আসলে চটপটি পৌছানোর কোন উপায় নেই । কিন্তু সেই চটপটি একদিন ঠিকঠিক আমার বাসায় হাজির হল । তার চাচাতো বোন লতায় পাতায় কিভাবে জানি আমার ছোট খালার শ্বশুর বাড়ির আত্মীয় হয় । ছোট খালার শ্বশুর বাড়ি আমাদের গ্রামে । একদিন সন্ধ্যা বলে ছোট খালা দেখি হটপটে করে চটপটি নিয়ে হাজির আমাদের বাসায় । সে জানালো তার ওমুক আত্মীয় নাকি এই চটপটি বানিয়ে তাদের বাসায় দিয়ে গেছে । এবং পরে আরও জানাগেল যে এই চটপটি যে বানিয়েছে সে হচ্ছে ওমুকের ওমুক হয় । আমি চোখ বড় বড় করে শুনছি । কারছ ঐ ওমুকের ওমুকটা হচ্ছে আমার তৎকালীন প্রেমিকা । কিভাবে কিভাবে এই চটপটি এসে হাজির হল আমাদের বাসায় । পরে যখন তাকে ঘটনা বলি তখন সে নিজেও বেশ অবাক হয়েছিলো । কারণ তার নিজেও কোন ধারণা ছিল না যে এই চটপটি এতো হাত ঘুরে আমার কাছে পৌছাবে !
রিজিক ব্যাপারটা আমি সব সময় খুব বিশ্বাস করি । যার কপালে যে জিনিস লেখা থাকবে সেটা তার কাছে পৌছাবেই । আমার কাছেই এমন অনেকবার এমন এমন জায়গা থেকে খাওয়া পৌছিয়েছে যা আমার কোন ভাবেই খাওয়ার কথা ছিল না ঠিক একই ভাবে যার কপালে যা নেই সে শত চেষ্টা করেও সেটা খেতে পারবে না ।
যাইহোক গতকাল মহাখালির দিকে যাচ্ছি । মহাখালি ডিওএএইচের কাছে আসতে, ফ্লাই ওভারের মুখ থেকে নাকে এমন চমৎকার একটা বিরিয়ানীর গন্ধ লাগলো যে বলা বোঝাতে পারবো না । রাওয়া ব্যাকারী পর্যন্ত এই গন্ধে যেন পুরো এলাকাটাকে সুরভিত করে রেখেছে । আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে উৎস খুজতে লাগলাম কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না । আশে পাশে কোন বিরিয়ানীর দোকান নেই । আর এই গন্ধ ঠিক বিরিয়ানীর দোকান থেকে আসা না । মনে হল যে বিয়ে বাড়ি কিংবা অন্য কোন অনুষ্ঠানের জন্য এই বিরিয়ানী রান্না হচ্ছে । রাতের খাবার নুর বিরিয়ানী থেকে খেলাম তবুও মন থেকে সেই সুগন্ধ গেল না । এখন দেখা যাক ঐ বিরিয়ানী আমার কপালে লেখা থাকে কিনা !
pic source
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১১:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




