ব্লগে যদি সোভিয়েত রাশিয়ার নাম নেওয়া হয় সবার আগে যে ব্লগারের নাম মনে আসে সেটা হচ্ছে ব্লগার শেরজা তপন । শেরজা তপনের বাবনিক আশা করি সবাই পড়েছেন । আমাদের দেশে রাশিয়া সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা বলা চলে খুবই কম । আমরা মূলত পশ্চিমা ঘেষা । আমাদের শিল্প সাহিত্যের ব্যাপারেও তাই । এই সব বইতেই রাশিয়াকে সব সময় একটা ভিলেন চরিত্রেই উপস্থাপন করা হয়েছে । রাশিয়ান মানেই হচ্ছে হার্ডকোর রাফটাফ একটা ব্যাপার । তবে পশ্চিমা বই পত্র এদেশে যত পাওয়া যায়, যতমুভি আমরা দেখি হলিউডের রাশিয়ান শিল্প সাহিত্য সেই তুলনায় অনেক কম । অথচ হওয়া দরকার ছিল উল্টো ।
বই পত্র যখন পড়তে শিখেছি তখন রাশিয়ান রূপকথা নিয়ে পড়েছিলাম কয়য়েকটা বই । এরপর কেবল গোর্কির বই পড়েছি । সেই বই পড়ে রাশিয়া সম্পর্কে জানার একটা আগ্রহ জন্মেছে তবে সেটা কোথায় যেন থেকে গিয়েছিলো । ব্লগার শেরজা তপনের বাবনিক পড়ে শেষ করার পড়ে কেন জানি তীব্র ভাবে আবার রাশিয়ার সম্পর্কে জানার আগ্রহ জন্মালো । তপন ভাইয়ের লেখা বইটা হাতে আসার পরপরই পড়ে ফেললাম । তারপর তার ব্লগে গিয়েই জানতে চাইলাম আর কোন বই আছে কিনা যা পড়ে আমি আরও জানতে পারবো রাশিয়া সম্পর্কে ।
তখনই আরেকজন ব্লগার এগিয়ে এলেন । ব্লগার মুনিরা সুলতানা আপা নিজ থেকেই কয়েকটি বইয়ের নাম বলেদিলেন । তবে কেবল নামই বললেন না, তিনি নিজের কাছে থাকা সেই বই গুলো আমাকে পাঠিয়ে দিলেন ।
দুটি বই । লেখক একই । লেখকের নাম শাহাব আহমেদ । একটি বইয়ের নাম ''লেনিনগ্রাদ থেকে ককেশিয়া'' আর অন্য বইটির নাম ''ককেশিয়ার দিন রাত্রি'' বৃহৎ ভাবে লেখা দুটি বই । বইটি মুলত লেখকের নিজ জীবনের সাথে যুক্ত । লেখক জীবনের একটা অংশ কাটিয়েছেন সোভিয়েত রাশিয়াতে । সেখানে নিজ চোখে দেখেছেন সেখানকার মানুষের জীবন যাত্রা । মিশেছেন মানুষের সাথে ।
বই দুটির পুরো কাহিনী বলতে গেলে তিন ভাগে ভাগ করা যায় । এই তিন ভাগের গল্প এগিয়ে চলেছে একই সাথে । এক ভাগে লেখক বলেছেন রাশিয়ার মানুষের গল্প । রাশিয়ার জারতন্ত্র থেকে শুরু করে সোভিয়েত গঠিত হওয়া, সোভিয়েত রাশিয়ার ভ্লাদিমির লেনিন, জোসেফ স্ট্যালিনের গল্প । কিভাবে মানুষ সেই সময়ে বেঁচে ছিল কীসের ভেতর দিয়ে গিয়েছে সব কিছু । অন্য একটা ভাগে লেখক বলেছেন মিথ আর মিথোলজির গল্প । আর শেষ ভাবে বলেছেন নিজের বাস্তব জীবনের গল্প । বাংলাদেশের ছোট্ট গ্রাম থেকে কিভাবে একদল ছেে মেয়ে সোভিয়েত রাশিয়াতে গিয়ে হাজির হল । কিভাবে সেখানে তাদের জীবন যাত্রা চলল এই নিয়ে গল্প । এই অংশের প্রধান চরিত্র গুলো ছিল লেখক নিজে এবং তার রাশিয়ান প্রেমিকা নাতালিয়া । তবে পুরো বইয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে ছিল রায়হান আর অন্বেষা আর ঈশিতার গল্প । গল্প ছিল পার্টির লোকজনের গল্প।
এই বইতে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে রাশিয়ার কবি আর সাহিত্যিকদের গল্প । তারা সোভিয়েত সরকারের আমলে আসলে কিভাবে নির্যাতিত হয়েছেন কিভাবে তাদের জীবন কেটেছে সে সবের বর্ণনা করা হয়েছে বইতে । এছাড়া বড় পার্টির গুরুত্বপূর্ন পদে অধিস্থিত হওয়া মানুষ গুলো কিভাবে এক সময়ে পার্টির শত্রুতে পরিনত হয়েছে সেটাও আস্তে ধীরে বর্ণনা করা হয়েছে ।
পশ্চিমাদের দেখা চোখে রাশিয়াকে আমরা যেভাবে দেখে এসেছি এই বই পড়লে সেটার সাথে ঠিক মেলানো যাবে না । বিশেষ করে রাশিয়ান মেয়েদের আপনারা চিনতে পারবেন অন্য ভাবে । মনে হল সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে চলে যাই কোন রাশিয়ান কন্যার কাছে । তার সাথেই ঘরবাধি ।
বইতে রায়হানের গল্প গুলো সব থেকে উল্লেখযোগ্য । তার বাংলাদেশী প্রেমিকা অন্বেষার জন্য ভালোবাসা কথা শুনলে মনে হবে পুরুষ মানুষ আসলে কত অসহায় তার ভালোবাসার মানুষের কাছে । বারবার কষ্ট পেয়েও ছুটে চলে যায় সে তার কাছেই । রাশিয়াতে গিয়ে যখন ঈশিতার সাথে পরিচয় হয়, তখনও তার মনের ভেতরের কোথাও যেন অন্বেষাই লুকিয়ে থাকে । অন্য দিকে হাসি এসে হাজির চায় রায়হানের জীবনে । কিন্তু রায়হান কিভাবে নিজের মনে অন্য কাউকে জায়গা দিবে । হাসির সেই কিশোরী মন কত প্রবল ভাবেই না রায়হানকে ভালোবেসেছিলো কিন্তু রায়হান ছিল অপারগ ! এই রকম কত ছোট ছোট গল্প এসে জমা হয়েছে এই বইতে । শেরজা তপন ভাইয়ের বাবনিক পরে সেই রাশিয়ান কন্যার জন্য যেমন করে তীব্র এক কষ্ট এসে জমা হয়েছিলো একই ভাবে এই বইয়ের নাতালিয়ার জন্যও একই কষ্ট এসে জমা হয়েছে মনে ।
যাদের রাশিয়া নিয়ে আগ্রহ রয়েছে, রাশিয়ার মানুষ সম্পর্কে জানতে চান আরও তাদের অবশ্যই এই দুইটি বই পড়া উচিৎ ।
বই দুটোর রকমারি লিংক দিলাম
ককেশিয়ার দিন রাত্রি
লেনিনগ্রাদ থেকে ককেশিয়া
ব্লগার মুনিরা সুলতানা আপুকে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই । সে না থাকে হয়তো এই বই দুটির কথা আমার কোন কালে জানাই হত না । তার উপর নিজের কাছে থাকা বইদুটো আমার কাছে পাঠিয়ে খুবই উপকার করেছেন । আমি আমার বই কাউকে ধার দিই না পড়তে । তাই যখন কেউ আমাকে বই পড়তে দেয় আমার কাছে এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার মনে হয় । আমার প্রিয় মানুষ হয়ে ওঠার এটা সব থেকে ভাল পদ্ধতি ।
সব শেষে এই বলি বই পড়ুন । নিজে পড়ুন মানুষকেও পড়তে দিন । আমাকেও পড়তে দিন ।
যারা বই পড়ে না তাদের থেকে দুরে থাকুন ।
হ্যাপি রিডিং ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:২৯