বোধ করি আপনারা সবাই ভুত দেখার গল্প শুনেছেন । আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখেছি যে যাদের মুখে আমরা এই ভুতের গল্প গুলো শুনেছি তারা নিজেরা কেউ ভুত দেখে নি । তার মামার বড় ভাই, চাচার শ্বশুরের ছোট বোন জামাই, দাদীর মেঝ মামা টাইপে মানুষেরা সেই ভুত দেখেছে । মানে আমি বলতে চাইছি যে আপনি কি এমন কোন মানুষকে দেখেছেন যে নিজে বলেছে যে হ্যা সে নিজ চোখে ভুত দেখেছে ! আমি অবশ্য দেখি নি । আপনারা হয়তো দেখতে পারেন । ব্লগারদের ভেতরেই হয়তো এমন কাউকে পাওয়া যাবে যে নিজ চোখে ভুত জ্বীন এসব দেখেছে । যাক, সে সব কথা পড়ে থাক । আজকে আমি আমার ভুত দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করি ।
সময়টা ছিল ২০১২/১৩ সালের দিকে । সম্ভবত গরমের ছুটিতে বাসায় গিয়েছি । আমার আগের কিছু পোস্ট যারা পড়েছেন তাদের আমাদের বাড়ির ব্যাপারে একটা ধারণা আছে । তারপরেও একটা ছোট বর্ণনা দেওয়া যাক। আমাদের বাড়ির পেছনে উঠন রয়েছে বেশ খানিকটা জুড়ে । সেখানে নানান ধরনের গাছ পালা রয়েছে । পুরো বাড়িটা তখন টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল । বাড়ির একেবারে শেষ সীমানাতে এক দিকে রয়েছে একটা বড় আম গাছ । আর অন্য দিকে তখন ছিল একটা কাঁঠাল গাছ তার পাশে লিচু গাছ । বাড়ির সীমানার পেছনে ছোট গ্রামের রাস্তা তার পরে একটা কাঁনা পুকুর । পুকুরের একদিকে বড় আম বাগান। বারির অন্য একপাশে ছিল বড় বাঁশ ঝাড় । এখন অবশ্য বাঁশ ঝাড় নেই । কেটে ফেলা হয়েছে । এবং তখন আমাদের বাড়ির আশে আমাদের নানীর বাড়ি ছাড়া আর কোন বাড়ি ছিল না । এখন অবশ্য অনেক বাড়ি হয়ে গেছে ।
এবার আসা যাক আসল গল্পে । আমি বাসায় গিয়েছি । বাসায় গেলে তখন একটা সমস্যা হত যে রাত এগারোটার ভেতরে আমার বাড়ির সব মানুষজন ঘুমিয়ে পড়তো । আমি যেহেতু ঢাকাতে রাত জেগে থাকতাম তাই আমার ঘুম আসতো অনেক দেরিতে । এই সময়ে আমি দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে আসতাম । আমার ঘরের পেছন দিক দিয়ে আলাদা একটা দরজা ছিল । সেটা দিয়েই বের হওয়া যেত। এছাড়া আমি ওয়াশরুমের জন্য বাইরে যেতাম । বাসার ভেতরের গুলো ব্যবহার করতাম না ।
এমনই এক রাতের কথা । আমি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি । সময় তখন রাত দুইটা থেকে আড়াইটা হবে । বিছানাতে যাওয়ার আগে আমি বাইরে বের হলাম ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য । কাজ শেষ করে কলপাড় থেকে হাত ধুলাম । তাকালাম পুরো উঠোনের দিকে। চারিদিকে নিশ্চুপ হয়ে গেছে । গ্রামের কেউ আর জেগে আছে বলে মনে হয় না । রাস্তার পাশে বাড়ি হওয়ার কারণে মাঝে মাঝে একটা দুইটা নাইটকোচ যাওয়ার শব্দ ভেসে আসছে অথবা ভারি মালামাল সহ ট্রাক যাচ্ছে । এই আওয়াজ ছাড়া আর কোন আওয়াজ নেই । সব নিশ্চুপ।
আমি কলপাড় থেকে তাকালাম আম গাছটার দিকে । ঠিক সেই সময়েই আমার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো । বাড়ির সামনের দিকে একটা আলো জ্বলে সারা রাত কিন্তু বাড়ির পেছনের দিকে কোন আলো জ্বলে না । এই দিকটা একেবারে অন্ধকার হয়ে থাকে । তবে বাড়ির সামনের দিকের আলোটা একেবারে কর্ণারে সেট করা তাই সামান্য আলো আসে । সেটা না আসার মতই । পেছনটা তাই অন্ধকারই থাকে । পেছনে পুকুর আর তারপরে ধারে কাছে কোন বাড়ি নেই তাই আর কোন আলো আসে না । কিন্তু আমি কলপাড় থেকেই পরিস্কার দেখতে পেলাম যে আম কাছের ডালে একটা আলো নড়ছে । খানিকটা জমাট আলো । আমার মনে হল আমি ভুল দেখলাম । চোখ বন্ধ করে আবার চোখ খুললাম । এবং তখনও দেখতে পেলাম আলোটা রয়েছেই এবং সেটা স্থির না । নড়ছে ।
আকাশের উপর দিয়ে আগুনের গোলা যাওয়া, গাছের ডাল আগুনের খেলা করার গল্প আমি অনেক শুনেছি নানী খালাদের কাছে । আজকে আমিও এমন কিছু দেখে ফেললাম । আমি কলপাড় থেকে কেবল একটা লাফে আমার ঘরের দরজায় চলে এলাম । ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম । দরজা বন্ধ করে অনুভব করতে পারছিলাম যে আমার বুকের ভেতরটা কেমন লাফাচ্ছে । আমার তখনই ইচ্ছে হল যে আলো বন্ধ তখনই শুয়ে পড়ি । বেশ কিছুটা সময় আমি সেখানে সেভাবে দাড়িয়ে রইলাম ।
তারপর কিছুটা সময় পরে আমার ভয়টা একটু কমে গেল । সেখানে জমা হল কৌতুহল । মনে হল আরেকবার দেখা যাক আলোটা আছে কিনা ! আমি ভয়ে ভয়ে দরজা খুললাম । তারপর আবারও আম গাছের দিকে তাকালাম । এবং অবাক হয়ে দেখলাম যে আলোটা এখনও আছে এবং নড়ছে । আমি দরজা বন্ধ করতে যাবো তখনই আমার আলোটাকে একটু যেন অন্য রকম মনে হল । মানে কলপাড় থেকে যেমন দেখেছিলাম এই দরজার কাছ থেকে আলোটাকে তেমন মনে হচ্ছে না । তারপর আরো একটু ভাল করে খেয়াল করলাম । এবং তখনই নিজেকে বড় গাধা মনে হল ! গাছের ডালের আলোর রহস্যও সমাধান করে ফেললাম সাথে সাথেই ।
আপনারা ভিসিআরের নাম শুনেছেন নিশ্চিত । অনেকে হয়তো দেখেছেন । সিডির যুগের আগে এই ভিসিআর ছিল । আমাদের বাসায় এই ভিসিআর ছিল । সেই সাথে ছিল ভিডিও ক্যাসেট । ভিসিআর নষ্ট হয়ে গেছে । তবে তখনও কিছু ভিডিও ক্যাসেট ছিল আমাদের বাসায় । আমার ভাইয়ের ছেলে তখন একটু বড় হয়েছে । সে এই ক্যাসেটের ফিতে বের করে সারা গাছের ডালে বেঁধে রেখেছে । এমনই একটা ফিতে বাড়ির সামনের জ্বলতে থাকা আলো সরাসরি রিফ্লেক্ট করে আমার চোখে এসেছে আর আমি ভেবেছি যে এটা বুঝি কোন আলো । আর বাতাসে যেহেতু ফিতে নড়ছিলো আমারও মনে হচ্ছিলো বুঝি আলো নড়ছে ।
আমি এবার গাছের কাছে গিয়ে হাজির হলাম । দেখলাম সত্যিই তাই। আমার ভয়ডর সব কোথায় দৌড় দিল ।
ঘরে এসে ধীরে সুস্থে শুয়ে পড়লাম । শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম যে যদি আমি আবার দরজাটা না খুলতাম তাহলে হয়তো একদিন আমার এই ভয় পাওয়ার গল্প আমি ভুত এফএমের রাসেল ভাইকে লিখে পাঠাতাম । সেখানে রাসেল আমার এই গল্প পড়েও শোনাতো । কিন্তু কৌতুহলের কারণে গল্পটা আর ভুতের গল্প হয়ে উঠলো না ।
pic source
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২৩ রাত ১১:৫৪