
মানুষের মৃত্যু আমাকে খুব বেশি ভাবায় না । কারণ মানুষ মারা যাবেই । আশে পাশে কত মানুষের মৃত্যুর খবর শুনি । আমি কেবল আমার কাছের মানুষের মৃত্যু নিয়ে সব সময় চিন্তিত থেকেছি । কিন্তু যখন হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু সংবাদ শুনলাম তখন মনের ভেতরে এমন ধাক্কা লাগলো সেটা আজও যেন টের পাই । তিনি আমার মনের কতখানি কাছে ছিলেন সেটা আসলে তার মৃত্যুর সংবাদ শোনার পরেই বুঝেছিলাম ।
সেই সময়ে আমি গ্রামে গিয়েছিলাম । এতো এতো ফেসবুক নেট নির্ভর ছিলাম না । রাতে ঘুমিয়েছি সেই সময়ে আমার স্টুডেন্ট ফোন দিল । ফোন দিয়ে বলল, স্যার হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছে !
ঘুম চোখে মনে হল ভুল শুনছি । বললাম, কী বললে?
স্টুডেন্ট বলল, স্যার হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছে !
-কোথা থেকে জানলে ?
-খবরে দেখাচ্ছে !
আমি আর কোন কথা বললাম না । সে ফোন রেখে দিল । আমিও ফোন রেখে কিছু সময় চুপ করে শুয়ে রইলাম । তখন ছিল কম দামী জাভা ফোন । সেই ফোন দিয়ে অনেক খুজে টুজে দেখলাম আসলেই সে মারা গেছে ।
আমি বিছানা থেকে উঠে বসলাম । রাতের বেলা সবাই ঘুমিয়ে গেছে । রাস্তার পাশে বাসা হওয়ার কারণে মাঝে মাঝে ট্রাক যাওয়ার শব্দ আসছে । এছাড়া আর কোন শব্দ নেই কোন দিনে । আমি অন্ধকার ঘরে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম । কিন্তু কোন লাভ হল না । আমার আর ঘুম এল না । বুকের ভেতরে কী এক শূন্যতা যে কাজ করছিলো, কী এক বিষণ্ণতা খেলা করছিলো সেটা হয়তো কোন দিন ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না ।
তার লাশ যখন ঢাকায় এল তখন আমি গ্রাম ছেড়ে ঢাকাতে এসেছি । অনেক দিন পরে আমি আবার কারো জানালা পড়লাম । অনেক দিন পরে আমি লাশের সামনে গিয়ে হাজির হলাম । শহীদ মিনারে তার কফিনের সামনে গিয়ে যখন দাড়ালাম তখন মনে হচ্ছিলো এই এই পৃথিবী সব কিছু কেবল শূন্যতার ভরপুর । সত্যি আমি অন্য মানুষের জন্য খুব একটা চিন্তা করি না কখনই । আমার আবেগ অনুভূতি ভালোবাসা কেবল আমার কাছের মানুষ গুলোর জন্য । এই মানুসটার কেবল বই পড়েছি কোন দিন তার কাছে যাই নি, তাকে সামনা সামনি দেখিও নি, ভীড় ঢেলে কোন দিন তার অটোগ্রাফ নেওয়ার ইচ্ছেও আমার হয় নি (তবে হ্যা একদিন ইচ্ছে ছিল তার লেখার ঘরোয়া আড্ডার কথা উল্লেখ আছে সেখানে একদিন যুক্ত হওয়ার) । এই কফিনের সামনে গিয়েছিলাম সেটাই ছিল সব থেকে কাছে যাওয়া । অথচ সেই মানুষটার জন্য আমার মনের ভেতরে তখন কী না তোলপাড় হচ্ছিলো সেটা হয়তো কেউ কোন দিন জানবে না ।
আমি যদি স্কুলে থাকতে হুমায়ূন আহমেদের বই না পড়তাম তাহলে হয়তো আজকের আমি যেমন তেমনটা কোন দিন হতাম না । আমার মন মানসিকতা চিন্তা ভাবনা সব কিছুর আমূল পরিবর্তন এসেছে কেবল তার বই পড়েই । তার বই না পড়লে আজকে আমি নিশ্চিত ভাবেই অন্য মানুষ হতাম। অন্য কেউ হতাম ।
অথচ আজকে তার মৃত্যু দিবস সেটা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম । অবশ্য এই দিনটা ভুলে যাওয়াই ভাল । এই দিনটার কথা আমি মনে রাখতে চাই না ।
প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ, আপনি হয়তো কোন দিন জানবেনও না কোন এক অখ্যাত ছেলের জীবনের আপনার গুরুত্ব কতখানি ! বড় দ্রুত আপনি চলে গেছেন । বড় বেশি দ্রুত আপনি চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে !
pic source
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১২:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


