somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমন ব্লগঃ সুন্দরবন ও ইরাবতী ইকো রিসোর্ট ট্যুর

২০ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুন্দরবনে সাধারনত তিন ধরনের ট্যুর দেওয়া যায় । প্রথম ধরণটা সর্ট ট্যুর । মোংলা বন্দরে যাবেন । সেখান থেকে ট্রলার ভাড়া করে করমজল গিয়ে হাজির হবে । কিছু সময় বনের ভেতরে ঘুরেটুরে ফেরৎ চলে আসবেন আবার মোংলাতে । সেখান থেকে বাড়ি । দ্বিতীয় ধরনটা হচ্ছে বড় শীপে করে সুন্দরবনের ভেতরে ঘোরাফেরা করা । এটা তিনদিনের একটা ট্যুর । সাধারণত শুরু হয় খুলনা থেকে । মোংলাতেও সম্ভবত রয়েছে । আর তৃতীয় ধরণের ট্যুরটা হচ্ছে সুন্দরবনের কোল ঘেসে বেশ কিছু রিসোর্ট তৈরি হয়েছে এখন । সেই রিসোর্টে গিয়ে হাজির হওয়ার । উপরের দুই ধরণের ট্যুর আমি গিয়েছি আগেই । এইবার ঠিক হল রিসোর্ট ট্যুর হবে ।

আমার যদিও এই আরামের ট্যুর ঠিক পছন্দ না । আমার ঘোরাঘুরির জন্য প্রথম পছন্দ হচ্ছে যেখানে থাকার জন্য আরামের কোন ঘর থাকবে না, যাওয়ার জন্য কোন আরামের বাহন থাকবে না । যেতে হবে পায়ে হেটে পরিশ্রম করে । এমন ট্যুর গুলোই আমার পছন্দ । আরাম করার জন্য আমার নিজের ঘরই তো রয়েছে । টাকা খরচ করে বাইরে যাওয়ার কোন দরকার আছে কি ! আমাদের ঘোরাঘুরির জন্য একটা গ্রুপ রয়েছে। তাদের সাথেই সাধারণ সব স্থানে যাওয়া হয় । তারা ঠিক করলো যে এবার একটা আরামের ট্যুর হোক । সুন্দরবনের ভেতরে বৃষ্টি বিলাশ হোক । একবার মনে হল যে না যাই । কিন্তু পরে রাজি হয়ে গেলাম ।

আমাদের প্রথম গন্তব্য হল মোংলা বন্দর । কয়েক ভাবে ঢাকা থেকে মংলাতে যাওয়া যায় । বেশির ভাগ মানুষই আগে খুলনা কিংবা বাগেরহাট গিয়ে হাজির হয় । তারপর সেখান থেকে মংলা বন্দরে । কারণ ঢাকা থেকে মংলা বন্দর সরাসরি ভাল বাস নেই । তবে আমরা সরাসরি মংলাতেই যাবো এই সিদ্ধান্ত নিলাম । শুক্রবার সকালে সায়দাবাদ জনপদের মোড় থেকে বাসে উঠলাম । বাস ছিল সাড়ে সাতটার । আমাদের গ্রুপের দুইজন আসতে লেট করলো । বাস ছাড়লো আটটার সময়ে । পদ্মাসেতুর উপরে আমি এই প্রথমবার উঠলাম । পদ্মাসেতুর কল্যানে সাড়ে চার ঘন্টায় আমরা গিয়ে হাজির হলাম মংলা বন্দরে । সেখান থেকে আমাদের জন্য রিসোর্টের বোট ঠিক করা ছিল। তবে আমাদের সাথে আরো একটা গ্রুপ যাওয়ার কথা ছিল । তাদের বাস এল আরো আধা ঘন্টা পরে । দুই গ্রুপ নিয়ে বোট ছেড়ে দিল । পশুর নদীর কোল ঘেষে আমরা যাত্রা শুরু করলাম । ঘন্টা দেড়ে লাগলো আমাদের রিসোর্টে পৌছাতে । মোটামুটি উপর থেকে রিসোর্টটা দেখতে এমন লাগে ।


ছবিটা রিসোর্টের ফেসবুক পেইজ থেকে নেওয়া । আমাদের কাছে কোন ড্রোন ছিল না তাই এমন ছবি তোলার উপায় ছিল না ।রিসোর্টের আরো ছবি দেখতে ওদের ফেসবুক পেইজে ঢু মারতে পারেন ।

আমরা এসে হাজির হলাম ইরাবতী ইকো রিসোর্টে । এটা এই বছরের শুরুতেই চালু হয়েছে । গেস্ট বুকে নাম সই করতে গিয়ে দেখি মোটামুটি আমাদের নিয়ে সাড়ে ৬শর বেশি গেস্ট এসেছে এই পর্যন্ত । আমাদের স্বাগত জানালো হল ওয়েলকাম ড্রিংক দিয়ে । তারপর আমাদের ঘর দেখিয়ে দেওয়া হল । রিসোর্টে দুই ধরনের ঘর বিদ্যমান । একটা হচ্ছে চারজনের বড় ঘর । অন্যটা দুইজন থাকার মত কাপল কটেজ । আমরা যেখানে ছিলাম সেটার নাম সুন্দরী । কটেজের নাম আরকি । এটা রিসোর্টের একেবারে সামনের দুইটা ঘরের একটা । মুলত এই ট্যুর আর কিছুই করার নেই । ফ্রেশ হয়ে আমরা খেতে খেলাম রিসোর্টের ক্যান্টিনে । এটা পেছনের দিকে অবস্থিত । খাওয়াটা হল বেশ । প্রথমদিন ছিল হাসের মাংস দিয়ে সাদা ভাত । সাথে নানান পদের তরকারি আর ভর্তা ।

কোন বেলায় কি খাবো ওদেরকে আগে থেকে বলে দিলে সেটা ওরা ম্যানেজ করার চেষ্টা করে । যদিও ওদের রান্নায় লবন হয় কম । খাওয়ার সময় আলাদা ভাবে লবন নিয়ে নিতে হবে
এই ট্যুর পুরো সময়টাতেই আমরা কেবল রিসোর্টের ভেতরেই কাটিয়েছি । আমি সাথে করে বই নিয়ে গিয়েছিলাম । সেই বই পড়ে সময় কেটেছে । বিশেষ করে বৃষ্টি ছিল প্রায় পুরোটা সময় । রিসোর্টের বারান্দায় বালিশ নিয়ে শুয়ে শুয়ে বই পড়ছি আর বাইরে বৃষ্টি পড়ছে । এমন সময় আর কখনও আসবে বলে মনে হয় না । সময়টা এতো চমৎকার কেটেছে । আমার সাথে লোকজন অবশ্য মোনোপলি খেলে সময় কাটিয়েছি । সাথে তিনটা বই নিয়ে গিয়েছিলাম আমি তার ভেতরে দুইটা পড়ে শেষ করে ফেলেছি ।

পরের দিন অর্থ্যাৎ শনিবার সকালে নাস্তার পরে আমরা গিয়েছিলাম ক্যানাল ক্রুজে । নৌকা নিয়ে আমরা সুন্দরবনের খালের ভেতরে ঢুকে পড়লাম । একেবারে নির্জন সব কিছু । কেবল মাঝে মাঝে বানর দেখা যাচ্ছে । আপনারা রাতারগুল গেলে এমন একটা ফিল পাবেন । তবে এটা বেশি ভাল মনে হবে আপনাদের কাছে । ঐদিন বৃষ্টি হয়েছিলো প্রচুর । রিসোর্টের সামনে বসে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকার ভেতরে আলাদা একটা মজা ছিল । একই দৃশ্য অথচ বারবার মনে হচ্ছিলো সব কিছু ভাবে আসছে ।

পরের দিন রবিবার আমাদের ফিরে আসার পালা । ফিরে আসার সময় আমরা করমজল হয়ে এলাম । যদিও এখানে আমার নামার ইচ্ছে ছিল । আগে বেশ কয়েকবারই করমজলে আমি এসেছি। কিছু ছবি দেখা যাক ট্যুরের।


যাওয়ার পথে বোট থেকে তোলা । আমাদের সাথে অন্য যে গ্রুপটা ছিল তাদের ভেতরে একজন শিল্পি ছিল। ছবিতে তাকেই দেখা যাচ্ছে । পুরো যাত্রা সে বেশ ভাল বিনোদন দিয়েছে ।


নৌকা থেকে ইরাবতী ইকো রিসোর্টের ছবি ।


এই ঘরের একটা আমরা নিয়েছিলাম । মোট দুটা রুমের এক হচ্ছে কোনার দিককার একটা ঘর। অন্য রুমটা সামনের দিকে ।


রিসোর্টের সামনে বসে তোলাম । সামনের সুন্দরবন দেখা যাচ্ছে খালের ওপারে । আমরা খালের এই পাড়ে ।


একই স্থান থেকে সন্ধ্যার ছবি


রিসোর্টের ভেতরে বাঁশের রাস্তা । এক কটেজ থেকে অন্য কটেজে যাওয়ার জন্য এই বাঁশের রাস্তা রয়েছে ।


রিসোর্টের পেছনে আছে গ্রাম ।


গ্রামের ছাগল


গ্রামের হাস


ক্রজ ডিনার চালু ছিল এই নৌকাতে । তবে সেটা এখন সংস্কারের কাজ চলছে । আমরা এটা মিস করেছি । নয়তো এখানে রাতে ডিনার করা যেত ।


ক্যানাল ক্রুজের সময় সুন্দরবনের ভেতরে । জায়গা নির্জন আর সুন্দর ।


ফিরে আসার সময় করমজল গিয়ে হাজির হয়েছিলাম ।


এই যে হরিণ


দুইটা কুমির


ফিরে আসার পথে ।



মোট দুইদিন আমরা ছিলাম রিসোর্টে । বেশির ভাগ মানুষ অবশ্য একদিন থাকে ।

এটা পরিপূর্ণ ভাবে একটা রিল্যাক্স ট্যুর । এখানে প্রায় পুরোটা সময়ই আপনাকে থাকতে হবে রিসোর্টের ভেতরে । পেছনে অবশ্য গ্রাম আছে একটু দুরে । সেখানে বাজার আছে । চাইলে সেখানে ঘুরে আসতে পারেন । বৃষ্টির কারণ পথ ঘাত কাঁদা ময় আর পিচ্ছিল ছিল । তাই আমরা বাইরে বের হয় নি । তবে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম একটা লম্বা সময় । তখন অবশ্য গ্রামের রাস্তায় হেটে বেড়িয়েছি । পাশেই একটা দোকান আছে । সেখান থেকে চা কফি কোক বিস্কিট খাওয়ার ব্যবস্থা আছে । এছাড়া প্রতি সন্ধ্যা বেলা রিসোর্ট থেকেই ঝাল মুড়ি দেওয়া হয় । রাতে চাইলে বার্বিকিউ করা যায় ।

কাপলটা একান্তই নিজেদের ভেতরে সময় কাটাতে চাইলে যেতে পারেন এই ট্যুর । এছাড়া বন্ধুবান্ধবরা আড্ডা দেওয়ার জন্য এই ট্যুর যেতে পারেন । ফ্যামিলি নিয়ে গেলে বাচ্চারা বোর হয়ে যাবে খুব জলদিই কারণ যাওয়ার যায়গা নেই । তবে একদিনের ট্যুরে অবশ্য যাওয়াই যায় পরিবারের সকলের সাথে এক সাথে সময় কাটানোর জন্য ।

যাওয়ার সিস্টেমও বেশ ভাল । এখন পদ্মাসেতু হওয়ার কারণে খুব জলদিই ঢাকা থেকে যাওয়া যায় । সরাসরি মংলা । তারপর সেখান থেকে বোট ভাড়া করে রিসোর্টে ।


খরচও খুব বেশি না । আমরা একটা প্যাকেজে গিয়েছিলাম । এখানে মংলা থেকে বোটে করে যাওয়া, ক্যানাল ক্রুজ ফিরে আসার সময় করমজল হয়ে আবার মংলা, সেই সাথে তিন বেলা খাওয়া, থাকা এই সব ছিল জন প্রতি সাতাশ'স টাকার মত । এটা এক রুমে চারজনের জন্য । আর কাপল যে রুম সেটার জন্য জন প্রতি চার হাজার টাকার কাছাকাছি । তবে প্যাকেজের বাইরে খরচ আরো একটু বেশি । আগস্ট মাস পুরোটা এই প্যাকেজ চলছে ।


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৫:৫০
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×