
বৃষ্টি আমার ভালই লাগে । তবে হ্যা যখন কোন কাজের কারণে বাইরে যেতে হয় আর এই সময়ে বৃষ্টি শুরু হয় তখন একটু বিরক্ত লাগে বইকি! তবে সমগ্র ভাল লাগার কথা হিসাব করলে বৃষ্টি আমার বেশ পছন্দ । তবে বৃষ্টির সাথে আমার আরেকটা ব্যাপার বেশ পছন্দ আর তা হচ্ছে বৃষ্টির সময়ে হওয়া জলবদ্ধতা । শুনতে বেশ অবাক হওয়ারই কথা ।
বর্ষা কালে যখন প্রবল বৃষ্টি হত তখন আমাদের বাড়ির ঠিক সামনে পানি জমে যেত । প্রধান সড়কের পাশে বাড়ি হলেও সড়ক এবং আমাদের বাড়ির মাঝে জমতো এই পানি । এবং এই পানি জমে থাকতো অনেক দিন । আমাদের তখন সেই পানির মাঝ দিয়ে ইটের রাস্তা পানিয়ে যেতে হত । আমার মনে আছে যে একবার এতো উচু পানি হল যে আমরা একটা বাঁশের সাকো বানালাম । সেই সাকো দিয়ে পার হতাম । ব্যাপারটা আমার জন্য মজারই লাগতো !
আর কেনই বা লাগবে না । পানি জমলেও পানি কখনও আমাদের বাসায় ঢুকতো না । সেটা সব সময় শুকনোই থাকতো । আমরা নিরাপদে বৃষ্টি বিলাশ করতে পারতাম । জলাবন্ধতা বিলাশ করতে পারতাম ।
ঢাকার আসার পরে প্রথম জলাবদ্ধতা উপভোগ করতে করি ধানমণ্ডি ১৫ নম্বরে । যদিও আমি সারা জীবন থেকেছি মোহাম্মাদপুর এলাকাতে তবে কয়েক মাস ছিলাম পনের নম্বরে । একদিন ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরছি । বাসস্ট্যান্ড থেকে নেমে হাটা ধরেছি বাসার দিকে । একটু দুর এসেই দেখি বিস্তার পানি জমে গেছে । সেটাই ছিল আমার এতো পানি জমা দেখা । এতোদিন দেখে এসেছি টিভিতে সেদিন দেখলাম সরাসরি । এবং এই ব্যাপারটা একেবারে নতুন ছিল কারণ আমার অন্য পথ দিয়ে যাওয়ার কোন বিকল্প ছিল না । আমাদের বাড়ির সামনে পানি জমলেও আমরা চাইলে বাড়ির পেছনের রাস্তা দিয়ে শুকনো পথে যাওয়া আশা করতে পারতাম । কিন্তু ঢাকায় এই ব্যাপারটা একেবারে নতুন ছিল তখন কারণ আর অন্য পথ দিয়ে যাওয়ার কোন উপায় ছিল না । একটাই পথ সামনে । পানি পাড়িয়েই যেতে হবে । দেখলাম দুটো ভ্যান কাজে নেমে গেছে । ৫ টাকার বিনিময়ে পানি পার করিয়ে দিচ্ছে । অনেকেই সেই সার্ভিস নিচ্চেও । আমি অবশ্য সেই সার্ভিস নিলাম না । আমি প্যান্টের হাটু গুটিয়ে পানিতে নেমে পড়লাম । আমার বেশ চমৎকারই লাগলো !

তারপর আবার মোহাম্মাপুর চলে আসায় আর এমন অবস্থায় পড়তে হয় নি । মোহাম্মাপুরের আমি সেখানে থাকি সেই এলাকাটা বেশ উচু । এখানে সাময়িক ভাবে পানি জলমেও সেটা সরে যায় ! এছাড়া আমি যে জায়গা গুলো দিয়ে নিত্য দিনের চলাচল করতাম সেই সব এলাকা পানিতে ডুবতো না । বৃষ্টি হলে পানি জমতো বটে একটু তবে তা দ্রুত সরেও যেত ।
পানির আবার দেখা পেলাম ২৭ নম্বরে । যারা এই রাস্তায় যাওয়া আসা করেন তারা জানেন । বৃষ্টি হলেই এই এলাকা একদম ডুবে যায় । আমি তখন ২৭ নম্বর দিয়ে যেতাম মাঝে মধ্যে । তবে সব সময় না । তাই পানি জমলেও বিকল্প পথে যাওয়া যেত । কোন সমস্যা হত না । একদিন সাইকেল নিয়ে গেছি বৃষ্টির শেষ হওয়ার পরে । গিয়ে দেখি ওমা একেবারে সমুদ্র হয়ে গেছে । বাস গুলো যখন যাচ্ছে তখন একটা ঢেউ দিয়ে যাচ্ছে । ঠিক যেন বড় লঞ্চ যাচ্ছে । ব্যাপারটা এতো মজা লাগলো আমার কাছে । তারপর বৃষ্টি একটু বেশি হলেই আমি এই পথে যেতাম ঘুরতে । ঢাকার বুকে সমুদ্রে দেখতে ।
তারপর নেহালরা বাসা বদলে স্কাটনের ভেতরের একটা গলিতে নিল । সেই গলিতে বৃষ্টির পরে একদিন গেছি পড়াতে । গিয়ে দেখি হাটু পর্যন্ত পানি । আশে পাশের বাড়ির ভেতরে পর্যন্ত পানি ঢুকে গেছে । ওদের ঐ এলাকার বাড়ি গুলো একটু পুরানো ধরনের । সব খানদানি বড়লোকরা থাকে । আধুনিক ফ্লাট এপার্টমেন্ট কম । দুই তিলা তিন তলা বাড়িই বেশি সেখানে । সেই সব বাড়ির সামনে গেট সিড়িঘরে পানি জমে আছে । আমি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি সমুদ্রের ভেতর দিয়ে । বেশ চমৎকার সব অভিজ্ঞতা একটা । আমার তো বেশ মজা লাগতো তখন ।
এরপর ঘটলো আরেকটা ঘটনা । সেদিন গিয়েছি শাহজানপুর । সেখান থেকে যাবো শান্তিনগর অফিসে । তার আগে ঘন্টা খানেক বৃষ্টি হয়েছে । আমতলা মসজিদ ক্রস করে যখন একটু সামনে এলাম এক অভাবনীয় দৃশ্য । পুরো এলাকা পানির নিচে । যে সে পানি না একেবারে সমুদ্র পানি । আমি খানিকটা সময় বোকার মত তাকিয়ে রইলাম । এতো পানি আমি আগে দেখি নি । প্যান্ট গোটালামা হাটুর উপরে । তারপর সাইকেল নিয়ে রওয়ানা দিলাম । যদিও আমি আগেই সাইকেল চালিয়েছি পানির ভেতরে তবে এই পানির কাছে সেসব কিছু না ।

গতকালও ছিলাম শাহজানপুর । তবে ভাগ্য ভাল যে বৃষ্টি শুরুর আগেই বাসার দিকে চলে এসেছি । রাতে যখন খেতে নামলাম তখনও বৃষ্টি হচ্ছে বেশ ভাল পরিমানেই । আমার বাড়ির সামনে খুব একটা পানি জমে না । তবে দেখলাম কাল আমার বাড়ির সামনেও পানি জমে গেছে । আমি যে হাউজিংয়ে থাকি সেই হাইজিংয়ের পাশেই একটা খাল রয়েছে । পানি সেখান দিয়েই নেমে যায় । খালের ঠিক পাশের আবার বসতি । আমি পানি জমেছে দেখে একটু হেসে খালের পাড়ের গেলাম। দেখলাম খাল পুরো ভর্তি হয়ে গেছে । এবং খালের পাশে যে ঘর বাড়ি গুলো ছিল নিচ তলার সব ঘরে পানি ঢুকে গেছে । কিছু সময় ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে মনে হল না, এসব ভেবে লাভ নেই । আমি বরং মনের আনন্দ বৃষ্টি উপভোগ করি।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে ছাতা আর রেইনকোর্ট গায়ে চাপিয়ে পানির ভেতরে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ালাম কিছু সময় । রংয়ের দোকান দেখলাম এই বৃষ্টির ভেতরেও খোলা । সাথে মোবাইল ছিল না নয়তো কয়েকটা ছবি তুলে রাখতে পারতাম । তারপর আবার বাসায় ফিরে এলাম ।
এই পনের বছর উন্নয়নের আরেকটা নমুনা এই বৃষ্টি বাদলার দিনে যারা ঢাকাতে থাকি তারা বেশ ভাল ভাবে টের পাই । আমি বৃষ্টি উপভোগ করতে পারি । বারবার করে মনে করিয়ে দেয় যে বৃষ্টির দিনেও নৌকার কোন বিকল্প নেই ।
খবরে দেখলাম মিরপুরে একই পরিবারের তিন জন মারা গেছে । আমাদের নগর পিতারা অবশ্য আরামেই রয়েছে । রাস্তার পানি জমলো কিংবা সেই পানিতে বিদ্যুতের তার পড়লো কী পরলো না, সেই তারে শক খেয়ে কেউ মরলো কী মরলো না সেটা নিয়ে আমাদের কোন চিন্তা নেই । আমরা আছি বৃষ্টি বিলাশ নিয়ে ।
ছবি গুলো গতকালের । প্রথম আলোর সৌজন্যে
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



