মানুষ জনের প্রতি যে আমার খুব বেশি টান ভালবাসা আছে ব্যাপারটা তেমন না । জীবনের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমি স্বাবলম্বি । কারো সাহায্য সহযোগিতা আমার লাগে না । যখন প্রথম বার বাড়ির বাইরে এসেছিলাম তখন অবশ্য খানিকটা কষ্ট হয়েছিল । পরিবারের মানুষ ছাড়া, বিশেষ করে মায়ের যত্ন ছাড়া একা একা থাকাটা আমার জন্য তখন খুব একটা সহজ ছিল না। তবে সেটা মানিয়ে নিলাম । এখন আর আসলে কারোই দরকার পড়ে না জীবনে বেঁচে থাকার জন্য । সব কিছুই একা একাই করতে পারি ।
মা বলে, তাই বললে কী হয়? এভাবে একা একা কি জীবন যায়?
আসলেই কি যায় না একা জীবন?
কথায় আছে যে একা থাকা সহজ না। সবাই পারে না তবে একবার যদি একা থাকার অভ্যাস হয়ে যায় তাহলে এই অভ্যাস কাটানো মুশকিল হয়ে ওঠে । আমারও সম্ভবত এই একা থাকার এডিকশনে পেয়েছে । এখন জীবনে সামান্যতম প্যারা সহ্য হয় না । সকাল থেকে রাত শান্তির জীবন চাই যে কোন কিছুর মূল্য।
তবে বাসায় আসলে অবশ্য সেই শান্তি আর থাকে না । বাড়ি আসলে না চাইতেও অনেক দায়িত্ব এসে কাধে চাপে । এটা লাগবে ওটা করতে হবে ! আমার বলি, যখন আমি থাকি না, তখন এই কাজ গুলো কে করে?
তখন করে অন্য কেউ ।
তাহলে এখন তার করলে সমস্যা কি?
এই প্রশ্নের কোন উত্তর আসে না । আমি অবশ্য উত্তরের আশা করিও না । এই প্যারার সাথে সাথে অনেক সুবিধাও আসে । একা থাকলে গোসলের পরে নিজের কাপড় নিজেই ধুয়ে রাখতে হয় । সেখানে আমার কাপড় আমাকেই ধুতে হবে। এখানে চাইলেই গোসলের পরে কাপড় বালতিতেই রেখে আসা যায় । কয়েক বছর আগে আমি গোসলের পরে নিজের লুঙ্গিটা নিজেই যখন ধুয়ে তারে মেলে দিলাম আমার মা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । আমি যে এই কাজ করেছি সেটা যেন তার বিশ্বাসই হচ্ছে না । কারণ আমাকে সে আজীবন সেগুলো বালতিতে রেখেই এসেছি ।
তারপর ধরা যাক খাওয়ার কথা। বাসায় যখনই খাওয়ার সময় হয় কেবল আমার জন্যই আলাদা ভাবেই সব কিছু গরম করে দেওয়া হচ্ছে । একেবারে আমার মুখে তুলে দেওয়ার মত অবস্থা । যখন যা খেতে চাইছি মোটামুটি তাই এসে হাজির হচ্চে । ঢাকাতেও পাওয়া যায় তবে সেখানে নিজে কিনে খেতে হয় এখানে এসে হাজির হয়ে যাচ্ছে। এই কটা দিন আর যাই হোক খেয়ে দেয়ে খুব শান্তি পাওয়া গেল । অবশ্য এই শান্তির জন্য অন্য অনেক শান্তি বিসর্জন দিতে হল । একটু পরে আবার বাজারে দৌড়াতে হবে !
রোজার মাস আসলেই আমার ঘুমের খুব সমস্যা হয় । একেবারে রুটিন ওলট পালট হয়ে যায় । সকাল বেলার অভ্যাসটা একেবারে নষ্ট হয়ে যায় । আমার ঘুমটা সব সময় হল বেশ গাঢ় । আর একবার চোখ বুজলে সেটা সাত আট ঘন্টার আগে কোন ভাবেই ভাঙ্গে না । কোন এলার্মে কাজ হয় না । তাই রোজায় সব সময় আমি একেবারে সেহরি খেয়েই ঘুমাই । এই অভ্যাসের কারণে সকালে ঘুম ভাঙ্গে দেরিতে । এই এক মাস দেরিতে ঘুমের কারণে সকালেও দেরিতে উঠেছি । এখনও সে অভ্যাস যাচ্ছে না । কিভাবে আগের অভ্যাস ফেরত যাব ভাবছি । এদিকে আমার বাসার লোকজন মনে করছে আমি বুঝি ঢাকাতেও এ একই ভাবে দেরিতে ঘুম থেকে উঠি সব সময় ।
ঈদ বা অন্য যে কোন উৎসব কেন্দ্রিক আনন্দ আমি কেন জানি কখনই ঠিক বুঝি না । ঈদে বাড়ি আসি আবার অন্য সময় বাড়ি আসি, এ দুই বাড়ি আসার ভেতরে আমার কেন জানি কোন পার্থক্যই অনুভূত হয় না । একই মনে হয়। বাড়ি আসলে এখানকার বন্ধু বান্ধবদের সাথে দেখা হয়, আড্ডা হয় সেটা ঈদ বা ঈদের বাইরে সব সময় আমার কাছে একই মনে হয় । মানুষ কী আনন্দ করে জানে ?
আমার ঈদ কাটে একই ভাবে । ঈদের আগের দিন পরের দিন যেভাবে ঠিক সেভাবেই । সারা দিন শুয়ে বসে আর খেয়ে দেয়ে । অবশ্য কাজও থাকে কিছু । না করতে চাইলেও করতে হয় । আপনার ঈদ কেমন গেল? ব্লগে ব্লগারদের উপস্থিতি কম দেখে মনে হচ্ছে সবাই নিজেদের মানুষদের নিজে সময় কাটাচ্ছেন । এটা একটা ভাল ব্যাপার । ব্লগে তো অনেক দেশ আর সমাজ উদ্ধার করলেন সারা বছর । ঈদের এই ছুটির কটা দিন নিজ পরিবারকে সময় দিন ।
সবাইকে ঈদ মোবারক । সেই সাথে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা !
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮