
ওয়াজ ব্যাপারটা আমার এক সময় বেশ পছন্দ ছিল। আশে পাশের গ্রামে যখনই ওয়াজ হত আমি সেটা শুনতে যেতাম বন্ধু বান্ধবসহ। দোজাহানের অশেষ নেকি অর্জনের জন্য। কিন্তু একটা সময়ে খেয়াল করে দেখলাম প্রতিটা ওয়াজেই একটা খুব কমন ব্যাপার দেখা যেত। সেটা হচ্ছে বক্তা অনেকটা ম্যানুপুলেট করে সামনে বসা মানুষদের কাছ থেকে টাকা তুলছে। মাদ্রাসার ছাদটা ঢালাই হবে অনেক বাচ্চারা পড়বে অনেক নেকি পাবেন, মসজিদে সিড়ি তৈরি করতে হবে অনেক নেকি পাবেন অনেক সোয়াব পাবেন … ঢাকার ওয়াজ গুলোতে ঠিক এই ব্যাপারটা দেখা যায়। গ্রামে দুই চার পাঁচ হাজারের বেশি চাওয়া হত না, ঢাকায় আমি লাখ পর্যন্ত ছাড়িয়ে যেতে দেখেছি। তারপর ওয়াজ মফফিলে যাওয়া বাদ দিয়েছি অনেক বছর।
কিন্তু আমি ওয়াজ বাদ দিলেও ওয়াজ আমার পিছু ছাড়ে নি। আমি যে হাউজিংয়ে থাকি সেই হাউজিংয়ের আশে পাশেই বেশ কয়েকটা মাদ্রাসা আছে। নিয়মিত ভাবেই সেখানে ওয়াজ মাহফিল হয়। এছাড়াও দেখা যায় হাউজিংয়ে রাস্তা আটকেও এরা ওয়াজ হয় মাঝে সাজে। এইতো কদিন আগেও এমন একটা হল । এবং আজকেও একটা হচ্ছে। যদিও আজকেরটা রাস্তা আটকে না, সম্ভবত হাউজিংয়ের পাশের কোন মাদ্রাসাতে কিংবা পাশের কোন গলিতে হচ্ছে।
সেটা আসলে হোক। কেউ যদি ওয়াজ মাহফিল করতে চায়, সেটা নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই। এমন কি কেউ যদি এই হুজুরদের কথা শুনে সেখানে টাকা দান করে সেটাতেও আমার কোন আপত্তি নেই। আপত্তি হচ্ছে শব্দ দূষন।
উপরের ছবিটা দেখতে পাচ্ছেন নিশ্চয়? মাইকটা চোখে পড়ছে তো? ছবিটা আজকে দুপুরে তোলা। আমি ঠিক জানি না ঠিক কোন জায়গাতে ওয়াজটা হচ্ছে কিন্তু সেটা যেখানেই হোক, এরা করেছে কি হাউজিংয়ের গলিতে এই রকম মাইক সেট করে দিয়েছে। প্রতিবারই এই কাজই করে। ওয়াজ যেখানেই হোক, প্রতি গলিতে গলিতে এরা মাইক সেট করে দিয়ে যায়! এবার আপনি একবার কল্পনা করেন যে ঐ মাইকের সামনের বাসায় আপনার বাসা, ঠিক ঐ নিচের বারান্দার বাসাতেই আনি থাকেন। তাহলে কী ভয়ানক অবস্থার ভেতরে আজকে সারাদিন এরা গিয়েছে, সেটা ভাবুন। একটা মাইক তো একটা দেখা যাচ্ছে, পেছনের দিকে আরও একটা আছে। এই ভাবে প্রতি মাহফিলেই এরা এই কাজ করে। পুরো হাইজিং মাইকে মাইকে ভরে ফেলে। আজকে দুপুর থেকে চিল্লাচিল্লি শুরু হয়েছে। বিশ্বাস করেন আপনি যতই ভাল কথা বলেন না কেন, যতই মধুর কথা বলেন না কেন জানালার সামনে এমন উচ্চস্বরে মাইক বাজালে সেই কথা কারো পছন্দ হবে না। কারো ভাল লাগোবে না। লাগার কথা না।
কদিন আগে যে রাস্তার মাঝে মফহিলটা হল সেটাতে একেকটা হুজুর মশাই যেন গলা ফাটিয়ে ফেলে চিৎকার করছিলো। কান পাতার উপায় ছিল না। বিকেল থেকে শুরু হয়ে চলেছে বারোটা পর্যন্ত । আজকে দুপুর থেকে এই জিনিস শুরু হয়েছে। শুরুর দিকে এরা ইসলামিক গান গাইছিল এক টানা। বিকাল থেকে শুরু হয়েছে ওয়াজ। আজকে কয়টা পর্যন্ত চলবে কে জানে?
আমি বলছি না যে ওয়াজ মাহফিল আপনারা বন্ধ করেন । আপনাদের ইচ্ছে হয়েছে আপনারা ইসলামের বানী ছড়িয়ে দিন। কিন্তু পাব্লিক ন্যুইসেন্স সৃষ্টি করে আপনারা আসলে কিভাবে বানী ছড়ান আমার মাথায় ঢোকে না। এর বিরুদ্ধে কিছু বলতে যদি যান তাহলে আপনি হয়ে যাবে ইসলাম বিরোধী।
ওয়াজ মাহফিল ঠিক যেই স্থান হচ্ছে সেখানে সেই স্থানের মানুষদের শোনার জন্য মাইক বা স্পিকার ব্যবহার করলেই কিন্তু চলে। যাদের ওয়াজ শোনার ইচ্ছে তারা তারা প্যান্ডেলে এসে শুনবে। এভাবে হাউজিং এলাকার সেই দুপুর থেকে একটা চলছে এই অত্যাচার। শব্দ দূষন বন্ধ হোক। নিয়ম হোক, আবাসিক এলাকাতে কোন ওয়াজ কিংবা কোন জনসভা হবে না। যদি করতেই হবে তাহলে কোন ভাবেই প্যান্ডেলের বাইরে মাইক সেট করা যাবে না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




