somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কাজিন বাবু

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার ছোটবেলার একটা বড় অংশ কেটেছে জাফরপুরে। আমাদের বাসার বাড়িটা একেবারে আমার নানার বাড়ির পাশেই। বাড়ির দরজা থেকেই আগে নানা দেখা যেত। সেই হিসাবে জীবনের একটা বড় অংশ মামাতো ভাইবোনদের সঙ্গে কেটেছে আমার। ঢাকায় আসার আগ পর্যন্তও তাদের সঙ্গে আমার প্রতিদিন দেখা হতো।
আমার বড় মামার দুই ছেলেমেয়ে। আমার এই বোনটা আমার থেকে দেড় বছরের বড় আর ছোটটা আমার থেকে দুই-তিন বছরের ছোট হবে। ঢাকায় আসার কয়েকদিন পরেই বোনের বিয়ে হয়ে যায়। বরের সঙ্গে সেও ঢাকায় এসে ওঠে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি যেখানে টিউশনি করতাম, বোনের শ্বশুরবাড়ি ছিল সেই এলাকাতেই। সে আমাকে ফোন করে কতবার যেতে বলেছে, তবে কোনোদিন আমি তার বাড়ি যাইনি। তারপরও তার সঙ্গে আমার দেখাসাক্ষাৎ ঠিকই হতো, ফোনে কথা হতো। ছোট মামাতো ভাই ইন্টারের পরে কিছুকাল এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করে, তারপর মালয়েশিয়া চলে যায়। তারপর থেকে তার সঙ্গে আর আমার দেখা বা কথা হয়নি। দশ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, তার সঙ্গে কোনোদিন কথা হয়নি।
আজকে বাসায় এসে মামাতো বোন আমাকে ফোন করে বলল, বাবু, মানে আমার সেই ছোট মামাতো ভাইয়ের একটা কাজ করে দিতে হবে। আমি পারব কি না। আমি যোগাযোগ করতে বললাম ফোনে। একটু আগে তার কাজটা করে দিলাম।
এতদিন পরে বাবুর ছবিটা আমি দেখতে পেলাম। শেষবার যখন বাবুকে দেখেছিলাম, তখন তার চেহারা অনেক চমৎকার ছিল, এখন একেবারে চেনা যায় না। আগের সেই মোলায়েম ভাবটা আর নেই। এরই মধ্যে বয়সের ছাপ পড়ে গেছে।
ছোটবেলায় বাবুর মাছের লেজ খাওয়ার খুব জেদ ছিল। বাসায় যখন মাছ রান্না হতো, তাকে মাছের লেজ দিতেই হতো। নয়তো সে কোনোভাবেই ভাত খেত না। এই লেজভক্তি দেখে একবার আমার নানা বলেছিলেন যে ওকে অনেকগুলো পুটি মাছের লেজ রান্না করে দেওয়া হবে, তখন যত ইচ্ছে লেজ খেয়ে শেষ করুক। বাবুর আরেকটা অদ্ভুত অভ্যাস ছিল। ও ইলিশ মাছ আর গরুর দুধ দিয়ে ভাত খেত। এটা তার পছন্দের একটা খাবার ছিল। আমি নিজের চোখে তাকে এই খাবার খেতে দেখেছি।
স্কুলের সময়টা বাদ দিলে বাবু প্রায় পুরো সময়ই আমার পেছনপেছন ঘুরে বেড়াত। আমি যখন বাড়ির আশপাশের বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতাম, তখন বাবু সব সময় আমার সঙ্গেই থাকত। ক্রিকেট, ফুটবল, কানামাছি কিংবা চিঁড়ে খেলা—সব কিছুতেই সে আমাদের সঙ্গেই থাকত।
সন্ধ্যাবেলা যখন বিদ্যুৎ চলে যেত, তখন হয় আমি ওদের বাসায় যেতাম, নয়তো ওরা ভাইবোন আমাদের বাসায় এসে হাজির হতো। এমন অনেক দিন গেছে, বইখাতা নিয়ে আমরা তিনজন একসঙ্গে পড়তে বসেছি, যদিও সেখানে পড়াশোনার থেকে গল্প বেশি হয়েছে।
এসএসসি পাসের পরে বাবু একটু কুসঙ্গে পড়ে যায়। তখন সে অনেকটাই বড় হয়ে গেছে। আমিও তখন কলেজে পড়ি। দিনের বেশিরভাগ সময় কলেজ, প্রাইভেট নিয়েই ব্যস্ত। বাবুর থেকে আলাদা হয়ে যাই। তখন তার অনেক নতুন বন্ধু-বান্ধব হয়ে যায়, তখন থেকেই মূলত বাবুর সঙ্গে সম্পর্কে ছেদ পড়ে। কালেভদ্রে আমাদের তখন দেখা হতো। আমি ঢাকায় চলে আসার পরে আর বাবুর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। ইন্টারের পরে তার বাবা-মা তাকে তার নানার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়, কারণ গ্রামে থাকলে খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। তার কিছু সময় পরে সে মালয়েশিয়ায় চলে যায়। তারপর থেকে সেখানেই আছে। প্রথম প্রথম কারও সঙ্গে যোগাযোগ করত না। পরে এখন অবশ্য সবার সঙ্গেই যোগাযোগ করে। আজকে আমার সঙ্গে কথা হলো!
পুরানো দিনের এই কথাগুলো ভাবলে মনে হয় যেন এই তো সেদিনের কথা। সেদিন আমি আর আমার কাজিনরা মিলে আড্ডা দিচ্ছি, আম ঝালাই করে খাচ্ছি। অথচ মাঝ দিয়ে কতগুলো বছর পার হয়ে গেছে! আমরা কত বড় হয়ে গেছি!

Pic source
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×