মৃত্যুর মিছিল ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে । সড়ক আর মহাসড়ক সব জায়গাতেই এখন মৃত্যু ফাদ পেতে আছে । দুই লেনের রাস্তা চার লেন করেও ঠেকানো যাচ্ছে না এই মৃত্যু মিছিল । এর দায়ভার কার? কে নেবে এর দায়ভার? কি কারনে এত এত মৃত্যু আমাদের দেখতে হচ্ছে । কোথায় সমস্যা । নাকি আমরা নিজেরাই সমস্যা ।
হ্যা, আমরা নিজেরাই সমস্যা । আমাদেরই সমস্যা । তবে আমরা সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাই এত বেশি যে বাংলা প্রবাদের মত অধিক সন্নাসীতে গাজন নষ্ট এর মত অবস্থা দাঁড়ায় । সত্যি বলতে আমরা হেন করেঙ্গা তেন করেঙ্গা অনেক বলতে পারি । কিন্তু সময় হলে কাউকেই আর পাওয়া যায় না ।
এসি রুমে বসে বড় বড় বুলি আওড়ে কিছুই হয় না । দেশ পরিবর্তনের জন্য নিজেকেই দায়িত্ব নিতে হয় । নিজেকে আগে শুধরাতে হয় । নয়ত মুখের কথা মুখেই থাকা ভাল । সেটা মানুষকে না শোনানোই উচিত ।
গত বছর ছাত্ররা আন্দোলন করেছে শেষ পর্যন্ত সেটা অন্য দিকে মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া হয়েছে । আর বাহিনী তো একটা আছেই । ক্ষমতা থাকার জন্য সেটা দরকার । নয়ত গদি চলে গেলে কেউ খবর ও রাখবে না । তারপরও কি ছাত্রদের দাবিটা অযৌক্তিক মনে হয়েছে । তাদের উপর লাঠি চালাতে একটু কাপেনি হাত ।
আমার মনে পরে আমি তখন অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম যখন ছাত্রদের পেটানো হচ্ছিল । সবাই দৌড়ে পালাচ্ছে যে যেদিকে পারেছে পালিয়েছে । হেলমেট মাথায় দাড়িওয়াল আংকেল যখন তার ছেলেমেয়ের বয়সীদের উপর লাঠি চার্জ করছে তখন শুধু মনে হয়েছিল তার ঘরে কি সন্তান নেই । নাকি তিনিও আছেন ধান্ধায় ।
আমি রাজনীতি কখনই বুঝতে চাইনি । আমার বাবা সাসপেন্ড হলো তখনও বুঝতে চাইনি । তারপরও কখনও একবারের জন্য মনে হয়নি বাংলাদেশ পরিবর্তন হবে না । আশায় থেকেছি । একদিনের জন্য হলেও একটা সুন্দর বাংলাদেশ দেখব ।
এই মৃত্যু পুরীতে ভয় লাগে । আজ ঘর থেকে বের হলে কেউ বলতে পারে না সে আর ঘরে ফিরবে কিনা । অজানা আতঙ্ক সব সময় যেন পিছু লেগে থাকে । আপনি রাস্তায় যে কাউকেই জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন । দিন শেষে যখন সবাই বাসায় ফেরে তখন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার পর আবার পরবর্তি দিনের ভয় শুরু হয়ে যায় ।
তাহলে আজ কি মানুষের জীবনের মুল্য মুল্যহীন । আপনাদের জীবনের মুল্য আছে সাধারন মানুষের জীবনের নেই । নাকি ভিআইপিরাই শুধু থাকবে বাকি সব চুলোয় যাক ।
মৃত্যুর আগে ব্যবস্থা নিতে হয় । মরার পর তার নামে সড়ক ব্রিজ দিয়ে কি হবে । মানুষটাকে কি ফেরত আনতে পারবেন । পারবেন বাবা মায়ের বুকে সন্তান কে ফিরিয়ে দিতে । পারবেন সন্তানকে বাবা মায়ের কাছে ফেরাতে ।
সিস্টেম সিস্টেম বলে চিৎকার করলেই সিস্টেম বদলানো যাবে না । আমি আপনি চাইলেও সিস্টেম বদলাবে না । বদলানোর দায়িত্ব নিতে হবে । কিন্তু এখানেই সবাই ভুল করে থাকে । কারন তখন নিজের কথাই মানুষ বেশি ভাবে । কি দরকার আমার ঝামেলায় যাওয়ার । তাই না ঝামেলা মনে হয় । তাহলে সেই ’৪৭ এরপর থেকে যত আন্দোলন হয়েছে সেগুলো না হলেই পারত । বাংলাদেশের জন্ম না হলেই ভাল হতো ।
আমাদের পুরো সিস্টেম ঘুনে ধরা । এর জন্য দায়ী তো আমরাই । আমরা একে ঘুনে ধরিয়েছি । আমরাই একে পচিয়েছি । আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য । নিজেদের জন্য । সিস্টেম একা দায়ী নয় । দায়ী আমরা । গালি দেবার আগে ভেবে দেখুন তো একবার ।
আইন তো সবার জন্য সমান । যে ছেলেটি আজ মারা গেলো সেও কিন্তু আইন মেনেছে । কিন্তু চালকের ব্যাপারে আইন কি করেছে । বাঙ্গালদেশের পরিবহন সেক্টর কতটা অসহায় সেটা কাছ থেকে দেখলে বুঝতেন । এখানে টাকা আর পেশি শক্তি কতটা প্রবল সেটা তো গত বারই দেখেছেন । তারা চাইলেই পারে । আর আমরা জনতা তাদের কাছে জিম্মি । সত্যিকার অর্থেই জিম্মি ।
আবার দুপুরে অফিসে বসে একটা ভিডিও দেখলাম । বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি ওভার পাসের নিচের । মানুষ জন কত দক্ষতার সাথে রাস্তা পার হচ্ছে । সার্কাসের এক্রোব্যাটরাও তাদের কাছে নস্যি । রডের ভেতর দিয়ে একে বেকে বের হয়ে আসছে । যেন বাইন মাছ । আমরা বাঙালিরা সত্যি পারিও বটে । পুলিশের কথাও অমান্য করেছে । ভিডিও কারি কে আঙুল দেখিয়ে শাসিয়েছে । কিন্তু বাসায় যেয়ে ঠিক ই বলবে শালার পুলিশরা কোন কাজের না । রাস্তায় এক্সিডেন্ট হইছে চোখে দেখে না । সব দোষ পুলিশ আর বাস চালকদের ।
আমরা আইন না মানলে দোষ নেই । তাহলে আইন সবার জন্য সমান হতে পারবে না । আলাদা আলাদা আইন হবে ।
আমি বলছি না যে সব দোষ জনগনের । আবার এটাও বলছি না আমাদের দেশের চালকরা খুব দক্ষ এবং শিক্ষিত । তারা রাস্তায় কোন কিছুই পরোয়া করে না । এর সাহস তারা কোথায় পেয়েছে । অবশ্যই বিচারহীনতাই এর জন্য দায়ী । কত গুলো দুর্ঘটনার বিচার আমরা দেখেছি । সব কিন্তু ফাইলের উপর চাপা পরে আছে ।
আমাদের আসলে কি দরকার আমরা নিজেরাই জানি না । তবে যেটা দরকার তা হলো, স্কুল শিক্ষকদের মত বেতের বাড়ির উপর রাখা ।
আশা রাখি এই দুর্ঘটনার বিচার হবে ।
শেষে একটা জোকস বলি,
কোর্টে মামলা চলছে এক দুর্ঘটনার উপর । দুই উকিলের কথোপোকথন,
১ম উকিলঃ মাননীয় আদালত, আমার মক্কেল ৩০ বছর ধরে গাড়ী চালাচ্ছে । তার পক্ষে দুর্ঘটনা ঘটানো অসম্ভব ।
২য় উকিলঃ মাননীয় আদালত, আমার মক্কেল ৪০ বছর ধরে হাটিয়ে । সে ৪০ বছর ধরে হাটছে । এমন দক্ষ হাটিয়ের পক্ষেও দুর্ঘটনা ঘটানো অসম্ভব ।
ভাল থাকুন । সুস্থ থাকুন । নিরাপদে থাকুন । আপনার চারপাশ পরিস্কার রাখুন ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০১