somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক যে ছিলেন নারী ভাস্করঃ বাংলাদেশের নারী ভাস্কর

৩০ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







বাংলাদেশের শহীদ মিনার ডিজাইন করেছেন হামিদুর রহমান কিন্তু তার সাথে ছিলেন নভেরা আহমেদ নামের এক শিল্পী । যারা শিল্পের প্রশংসা করে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন, “নেভেরা যে কাজটি আজ করছে সেটা বুঝতে আমাদের অনেক সময় লাগবে – সে ঠিক ওই মাপের শিল্পী” ।

নভেরা আহমেদের পৈত্রিক বাড়ি চট্টগ্রামের আসকারদীঘির উত্তর পাড়া। তার পিতা সৈয়দ আহমেদ চাকরি করতেন সুন্দরবন অঞ্চলে। তবে কি চাকরি করতেন তা বিশেষভাবে জানা যায় না। এখানে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। মতান্তরে ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে কলেজে ভর্তির কথা বিবেচনা করলে, ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দ অসংগত মনে হয়।

পিতার কর্মস্থল পরিবর্তনের সূত্রে, তিনি কলকাতায় চলে আসেন। এখানেই তাঁর শৈশব কেটেছে। কলকাতার লরেটো স্কুলে লেখাপড়া করেন। সম্ভবত ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার লরেটো স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। এরপর পাক-ভারত বিভাজনের সূত্রে তিনি তাঁর পরিবারে সাথে পূর্বপাকিস্তানে চলে আসেন। এই বৎসরেই তিনি কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। তাঁর পিতার অবসরের কারণে, তিনি পরিবারের সাথে চট্টগ্রামে চলে আসেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। এই সময় তাঁর সাথে এক পুলিশ অফিসারে বিবাহ হয়। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যে তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে নভেরা তাঁর মেজো বোন শরীফা আলমের কাছে লণ্ডনে যান। উল্লেখ্য এই সময় তাঁর এই বোন বিবিসির একটি অনুষ্ঠানের পরিচালিকা ছিলেন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে লণ্ডনের Camberwell School of Arts and craft-এর ন্যাশনাল ডিপ্লোমা ইন ডিজাইনের Design for the Modelling and Sculpture পাঠ্যক্রমে ভর্তি হন। এরই ভিতরে তিনি ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ইতালির ফ্লোরেন্সে যান। এই সময় তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন শিল্পী হামিদুর রহমান। সেখানে তিনি প্রখ্যাত ইতালিয়ান ভাস্কর ভেন্তুরির কাছে ভাস্কর্যের পাঠ নেন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি শিল্পী হামিদুর রহমানের সাথে ঢাকাতে আসেন। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে হামিদুর রহমান শহিদ মিনারের কাজ শুরু করেন। এই সময় নভেরা তাঁর বিশেষ সহযোগী ছিলেন। তবে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সামরিক শাসন জারি হলে, এই কাজ বন্ধ হয়ে যায়।




১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তেঁজগাও শিল্প এলাকায় অবস্থিত একজন শিল্পপতির বাসস্থানের আঙিনায় প্রাঙ্গন ভাস্কর্য স্থাপন করেন। এর নাম ছিল 'কাউ এন্ড টু ফিগার্স'।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ আগষ্ট তৎকালীন কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারে, পাকিস্তান জাতিসংঘ সমিতি এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে নভেরার একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী হয়। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আজম খান। এই প্রদর্শনীর শেষে, পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিলের সেক্রেটারি কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের আমন্ত্রণে নভেরা লাহোর যান।

১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে অল পাকিস্তান পেইন্টিং এন্ড স্কালপ্চার এক্সিবিশান-এ নভেরার তৈরি 'চাইল্ড ফিলোসফার' ভাস্কর্যটি প্রথম পুরস্কার পায়। এই ভাস্কর্যটি ক্রয় করেছিলেন পাঞ্জাবের মূখ্যমন্ত্রী মমতাজ দৌলতানা। এই বছরের শেষের দিকে তিনি নাচ শেখার জন্য ভারতে যান। ভারত থেকে ফিরে তিনি ১৯৬২ থেকে ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পাকিস্তানের লাহোরে কাটান।

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ভিয়েৎনামের যুদ্ধের বিষয়ে জানার জন্য, তাঁর এক ফটোগ্রাফার বন্ধুকে নিয়ে ব্যাঙ্কক যান। এই বছরের অক্টোবর মাসে তিনি ব্যাঙ্ককে একটি একক ভাস্কর্য প্রদর্শনের আয়োজন করেন। ব্যাংকক থেকে তিনি প্যারিসে চলে যান ওই বছরেই। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসে তাঁর একটি ভাস্কর্য প্রদর্শনী হয়।এরপর থেকে তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। ১৯৭৩ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ভাস্কর্যের পরিবর্তে ছবি এঁকে কাটিয়েছেন।

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন সরকারের পক্ষ থেকে একটি মাসোহার দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর, তা বাতিল হয়ে যায়।১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গ্রগরি দ্য বুনস-এর সাথে বিবাহ হয়। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন এবং এর পর থেকে তিনি হুইল চেয়ারেই কাটাতেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই মে তিনি প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্য ও ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৬
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×