
আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস মোহাম্মদপুরে গিয়েছিলাম ছবি তোলার জন্য। সকাল সকাল ঘুম নষ্ট করে দৌড় দিয়েছি। ৮ টা এর আগেই পৌছে গেলাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে৷ সেখানে গিয়ে জানলাম ৯টায় ওপেন হবে৷ বেশ ভালো কথা আমার সিরিয়াল হচ্ছে ৭ নাম্বারে।
যাইহোক বেশ ভালো কথা দাঁড়িয়ে আছি। লোকজন দেখতেছি। তারা একজন অপরজনের সাথে মত বিনিময়ে ব্যস্ত। অপরিচিতরাও পরিচিত হচ্ছে পরিস্থিতি অনুযায়ী। বেশ ভালো, আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ অনেক প্রবল। কিন্তু সিরিয়াল কেউ ছাড়ছে না। চাইলে দুই কাপ চা খান তবে সিরিয়াল ছাড়া যাবে না।
এর মধ্যে সাড়ে ৮টা বেজে গেল। গেট খুলে গেল। এতো জলিল ভাইয়ের মতোই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ঘটনা বুঝতে ২ মিনিট লাগল। দেখলাম যারা ডেলিভারি নিতে আসছে তাদের পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া শুরু হয়েছে। আহা ডিজিটাল বাংলাদেশ বোধহয় এটাই। কিন্তু আমার আশার বেলুনে সুই দিয়ে ফুটুস করে দিল স্টাফ, যখন শুনলাম কাগজ জমা নিবে সাড়ে ৯টার পর।
একেই বলে আশার বেলুন চুপসে যাওয়া। তারপরও দাঁড়িয়ে রইলাম। অফিসার এলেন আর কাগজ নেয়া শুরু হলো। ভেবে দেখলাম বাহ ভালোই তো। এখন নেয়া শুরু করলে তাড়াতাড়ি অফিসে চলে যেতে পারব। ছবি তুলতে কত সময় আর লাগবে৷
আমার নাম্বার আসলো, দুম করে সাইন করে দিলেন। কিন্তু কিন্তু না আ আ আ আ, সাইন হলেও সিল হলো না। কারণ আমার টাইম শিডিউল দেয়া ১০:৪২। ব্যাস আর কি সিল দিলেন না। কথায় আছে হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেয়, আমাকে তারা কাগজ ধরিয়ে টাইম মতো যেতে বললেন। তখন ঠাকুমার ঝুলির কার্টুনের মতো বলতে ইচ্ছে করছিল, এ কেমন বিচার হে।
তারপর আরকি মন কষ্টে মুচকি হাসি দিয়ে বের হলাম। বাইকের কাছে যাচ্ছি হাতে কাগজ দুই তিন জন এগিয়ে এসে বলল, ভাই করিয়ে দিচ্ছি দুই মিনিট লাগবে না, কি সমস্যা আমাকে দেন। এক ফটোকপির দোকানদার তো গলা উচিয়ে বলল, আরে ভাই আমাকে দেন লাইনে দাড়াতে হবে না।
তখন আর মেজাজ ধরে রাখতে পারিনি, ঠুস করে বলে দিয়েছি, আপনার কাজ করা লাগলে আমাকে দেন, করে দিচ্ছি, নয়া পাইছেন নাকি। এইসব দালালরা আসলে সুযোগ পাচ্ছে সঠিক তথ্য মানুষের কাছে পৌছাতে পারছে না বলে। এসব নিয়ে অন্য দিন কথা বলব।
তারপর আরকি আমি আমার বাইক নিয়ে অফিসে চলে গেলাম। সেখানে রেস্ট নিয়ে। ফ্রেশ হয়ে আবার গেলাম। গিয়ে দেখি লাইন নেই। বেশ বেশ। দাঁড়িয়ে গেলাম। কিন্তু ডেস্কে কেউ নেই। তখন বাজে ১০:২০। এরপর লাইন বড় হতে থাকে। সময় যেতে থাকে। কিন্তু আমাদের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি আসেন না। চাতক পাখির মতো ডেস্কের দিকে তাকিয়ে থাকি। তবুও তার আসার নাম নেই। কত লোক পেছন মেরে, দু:খিত পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকছে বের হচ্ছে তার কোন খোজ নেই।
অবশেষে ১ ঘন্টা দশ মিনিট পর তিনি এলেন। এসেই ঝড়ের গতিতে কাজ শুরু করলেন। এখন আর কারো টাইম দেখার সময় নেই তার। কে পরে কে আগে কিছু দেখলেন না। সাইন সিল মেরে দিচ্ছেন। তাহলে বাবা, সকালে এই নচ্ছলা (বরিশালের আঞ্চলিক ভাষা) মানে ঢং করার কি দরকার ছিল।
এরপর আমি কাগজপত্র সহ নির্দিষ্ট রুমে গেলাম। ছবি তুললাম, বের হলাম। সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট লেগেছে। যেহেতু আমার রিনিউ করতে হবে সেইজন্য কম লাগতে পারে কিন্তু আমার মনে হয় কাগজপত্র ঠিক থাকলে কোন সমস্যাই হবে না।
ছবি তোলার ওখানে যিনি বসে ছিলেন তিনি বেশ মজার মানুষ। ওনার সাথে কথা বার্তা হলো। সুন্দর ভাবে কাজ সম্পন্ন করে বের হয়ে অফিসে চলে গেলাম।
পাসপোর্ট অফিসে হয়রানি হবার কারণ হচ্ছে সঠিক তথ্য না জানা এবং দালালদের দৌরাত্ম্য। যদিও সেটা কমে এসেছে কিন্তু নাই হয়নি। আর যারা স্টাফ রয়েছে তাদের ব্যবহার অনেক খারাপ। তারা তুই তোকারি করেছে অনেকেই। আমার মনে হয়, জনগণ যদি একটু সচেতন হয় আর ভাবে আমি এক টাকাও দালালকে দেব না। তাহলেই দুর্নীতি বন্ধ সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



