
কমিউনিষ্ট পার্টি গঠনের পর থেকে আজ পর্যন্ত যত বিপ্লবী, যত নিষ্ঠার সাথে যত ত্যাগ করেছে, মানুষের ওপর মানুষের লুন্ঠন নিপীড়নের বিরুদ্ধে যত লড়াই করেছে করেছে, যত জেল-জুলুম-গুম-খুন-নির্যাতন হজম করেছে, যত সুযোগ-সুবিধা ও আপোস-প্রলোভন ঘৃণা ভরে উপেক্ষা করেছে, তার দ্বিতীয় কোন নজির আমাদের ইতিহাসে নেই বললেই চলে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাদের এইসব ত্যাগ-তিতিক্ষা যাদের মুক্তির জন্য, সেই নিপীড়িত শোষিত বঞ্চিত মানুষদের কাছে কমিউনিস্টরা, তাদের রাজনৈতিক বন্ধু ও নেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনি।
বইঃ রাষ্ট্র সংস্কারের রাজনীতিঃ তাত্ত্বতিক ও ব্যবহারিক দিক
লেখকঃ হাসনাত কাইয়ূম
উপরে লেখাটি পড়ার সময় আমার নিজের ভেতর একটি প্রশ্ন জেগেছে। সত্যিকার অর্থেই কেন কমিউনিস্টরা যাদের জন্য লড়াই করেছে তাদের নেতা বা রাজনৈতিক বন্ধু হতে পারেনি। এই প্রশ্নটি যদি এখন কমিউনিস্ট কাউকে করা হয় তখন তিনি কি জবাব দেবেন সেটা দেখার একটি বিষয়। কারণ যুক্তি খন্ড অবশ্যই রয়েছে।
যদিও বামপন্থী বা কমিউনিস্টদের কথা যদি বলি তাদের আন্দোলনের যেই ধরন সেটা এখনও সেকেল বা পুরাতন রয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়। এখন আসলে আন্দোলন বা লড়াই বেশ আধুনিকায়ন হয়েছে। সেই হিসেবে দেখা যায় যে তারা এই দিকটাকে একটু এড়িয়ে যাচ্ছেন। এখন শুধু তাত্ত্বিক আলোচনা দিয়ে যুদ্ধ জয় করা সম্ভব নয়।
গণতন্ত্র ও কমিউনিস্ট দুটো পুরো আলাদা বিষয়। কিন্তু ভেবে দেখুন দুজনের মুল জায়গা এক সেটা হচ্ছে জনগণ বা প্রজা। দুই ধারার মুলনীতিতে জনগণ রয়েছে। শুধু মাত্র প্রয়োগের দিক থেকে দু ধারা আলাদা। এখন সমস্যা হচ্ছে কমিউনিস্টরা তাত্ত্বিক দিক থেকে যতটা নিজেদের শক্ত বা স্ট্রং মনে করে। বাহ্যিক দিক থেকে আসলে সেটা কিন্তু স্ট্রং না।
আমার নিজের কোন মতামত যদি বলা হয়, তবে কমিউনিস্টরা সবার কথাই ভাবে আবার সবাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকে। সেটা অন্য আলোচনা। আমাদের কথা হচ্ছে কমিউনিস্টরা কেন তাদের বন্ধু বা নেতা হতে পারে না এই বিষয়টি নিয়ে কি তারা কখনও ভেবে দেখেছে। তারা কি আদৌ তাদের ভেতর সেই আদর্শ মতবাদ তৈরি করতে পেরেছে যারা তাদের অনুসরন করছে। নাকি তারা শুধু বইপত্র ও তাত্ত্বিক জ্ঞানের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছে।
এখানে উল্লেখ করা মত বিষয় হচ্ছে হালের কমিউনিস্টরা আসলে কমিউনিস্ট সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞান রাখেন। অথবা তারা তাদের আদর্শ মতবাদ কে কতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তারা কি নেতা হতে পেরেছেন? তারা কি সেইসব নিপীড়িত মানুষকে এক জায়গাতে একই ছায়াতে আনতে সক্ষম হয়েছেন? তাদের ভেতর কি শোষিত মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবার মত শক্তি সঞ্চার করেছেন?
আসলে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যদি দেখা যায় কমিউনিস্ট আসলে হাতে কলমে ও খবরের কাগজের পাতাতেই সীমাবদ্ধ। এর কারণ অবশ্য অনেক সেগুলোর দিকে আমরা না থাকলেও চলবে। কিন্তু আদৌ কি তাদের ভেতর শোষিত নিপীড়িত মানুষের জন্য পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবার যে সাহস ও উদ্যম কাজ করার কথা সেটি কাজ করছে?
আমি আমার কোন আদর্শ বা মতবাদ প্রচার করছি না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে সেই শুরু কথা শোষিত মানুষ কেন কমিউনিস্টদের সাথে যুক্ত থাকতে পারছে না বা তারা কেন তাদের আদর্শকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ব্যর্থ।
এখানে প্রশ্ন আসতে পারে তার এত সব ভেবে কাজ করেন না। কেন করেন না? এসব তো ভাবতে হবে। কারণ মানুষ তো আর শুধু মুখের কথায় তো আর বিশ্বাস করবে না। তাদের জন্য কাজ করতে হবে, তাদের সংঘবদ্ধ করতে হবে। লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। তাদের কে বুঝাতে হবে মুক্তির পথ কোনটি। কিভাবে মুক্তি আসবে। কেন মুক্তি দরকার।
এখানেই সম্ভবত তারা মার খেয়ে গিয়েছেন। কারণ তারা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন আমরা তোমাদের ভালর জন্য করছি। সমাজের জন্য করছি। সমাজের শৃংখলার জন্য করছি। এসব কারণ গুলো আসলে কর্মের মাধ্যমে বোঝানোর বিষয়। তবে আমরা উপনিবেশ থেকে বের হবার পরও নিজেদের ভেতর কোন পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারিনি।
আমাদের ভেতর শোষিত হবার একটা প্রবঞ্চনা রয়ে গিয়েছে। আমরা অভ্যস্ত হয়ে পরেছি শোষিত ও নিপীরিত হবার জন্য। এখন এটা আমাদের রক্তের সাথেই মিশে গিয়েছে। তাই আমরা চাই আমাদের কেউ আধিপত্য বিস্তার করে চলুক। আমরা তাদের বা তার নিচে পরে থাকব। এই ব্যাপারটি আমাদের আদি যুগ থেকেই চলে আসছে। হয়ত এজন্য আমাদের ভেতর শোষিত হবার যে ব্যাপারটি সেটি অনুধাবন হয় না।
এখন দেখার বিষয় হচ্ছে কমিউনিস্টরা কি আদৌ তাদের এই জায়গাকে পরিবর্তন করতে পারবে?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৯:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



