somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ - কৃষণ চন্দর (বুক রিভিউ)

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



'ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’
- পদ্মা নদীর মাঝি


বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঐতিহাসিক উপন্যাস হচ্ছে "পদ্মা নদীর মাঝি"। বইটি লিখেছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। এক প্রকার ইতিহাস সৃষ্টি করে গিয়েছেন। উপরের উক্তিটি এই উপন্যাস থেকে নেয়া। মুলত ঈশ্বরের অবজ্ঞা বা দরিদ্রদের অসহায়ত্বে ঈশ্বরের নিরব অবস্থানকে নির্দেশ করে এই উক্তি করা হয়েছে। ঈশ্বরের কাছে ধনী গরিব যদি সমান হতো তবে গরিব কেন অসহায়ের মত জীবন পার করে যাবে৷ এটাই মুলত বলা হয়েছে৷ তবে আজকে ঈশ্বরের অবস্থান বা তিনি আছেন এসব নিয়ে আলোচনা করব না। আজকের আলোচনা অন্য একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে, যদি ঈশ্বর, ভগবান, আল্লাহ, এই মর্ত্যে মানে পৃথিবীতে আসেন কিছু সময়ের জন্য তখন কেমন হবে বিষয়টি।
প্রথমত বলে নিচ্ছি, এখানে ধর্মীয় আলোচনা বা ধর্ম কে ছোট করে কিছু বলা হচ্ছে না। তাই একটু সহনশীলতা আশা করছি।
হঠাৎ করেই এক দিন ঈশ্বর পৃথিবীতে আসলেন৷ তার আসার একটি কারণ রয়েছে৷ সেই কারণ হচ্ছে পবিত্র-পুন্য একটি শিশু খুজে বের করা।

ঈশ্বর এসেই সামনে পেয়েছেন আমাদের গল্পের কথককে। এমনিতেই এই বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই) শহরে গল্পকথকের একবেলা খাবার জুটাতেই দম ফুরোবার অবস্থা। তার মধ্যে আবার উটকো ঝামেলা হিসেবে এসেছে এই ঈশ্বর বা ভগবান। তাও কিনা আবার এমন এক ছেলের সন্ধানে যার মধ্যে ন্যূনতম কোন খারাপ কিছুর অস্তিত্ব নেই। যার মধ্যে অন্ধকার নেই। যার ভেতর সাদা শুভ্র এবং স্বচ্ছ। সততা ও সত্যের প্রতিক যে, তাকেই খুজে বের করতে হবে। এসব শুনতে শুনতে আমাদের গল্পকথক কিছুটা বিরক্ত, কারণ ক্ষুধা তার পেটে চরম এই সময়ে এসব তার ভাল লাগছে না।

ক্ষুধা থাকলেও আমাদের কথকের মাঝে মায়া অনেক বেশি। তাই ভগবান কে সাহায্যের জন্য সে বেরিয়ে পরে ভগবানকে নিয়ে পবিত্র শিশুর খোজে। প্রথমেই তারা চলে যায় এক মন্দিরে, সেখানে গিয়ে ভগবান নিজের আরতি দেখতে গিয়ে দেখে গাজ ও ধোয়ার গন্ধ, বমি চলে আসে তার। এরপর তারা চলে যায় এক পুল বা ব্রিজে, সেখানে ছোট ফুটপাতে দোকান বসাতে চায় তারা। জামরুল ও বই বিক্রি করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। কারণ সেখানে বসতে হলে টাকা দিতে হবে, স্বাধীন দেশে টাকা দিতে হবে এই কথা বলার পর ভগবান ও কথকের উপর কিল ঘুষির বন্যা বয়ে চলে।

এভাবেই পৃথিবীতে ভগবান বা ঈশ্চরের খোজ যাত্রা শুরু হয়। তিনি কি শেষ পর্যন্ত তার খোজ শেষ করতে পেরেছিলেন। তিনি কি পেয়েছিলেন সেই শ্বেত শুভ্র সাদা স্বচ্ছ সৎ পবিত্র শিশু? আজ আলোচনা করছি বিখ্যাত ঐতিহাসিক কৃষণ চন্দর এর লেখা "দাদর পুলকে বাচ্চে" এর অনুবাদ "ভগবানের সাথে কিছুক্ষণ"। বইটি অনুবাদ করেছেন মোস্তফা হারুণ।

"একটা খেয়ালের জন্যেই তো মানুষকে কাঠের সাথে বেঁধে আগুন দিয়ে পোড়ায়, গভীর কবর খনন করে দেহটাকে পুঁতে দেয়, রেশমী দড়ি লাগিয়ে প্রাণবায়ু নির্গত করে, ক্রুশে বিদ্ধ করে মারে। কিন্তু তারপরও খেয়ালের শেষ নেই।"

মৃত্যু হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় সত্য। কিন্তু এই সত্য সবাই যেন এড়িয়ে চলে। মৃত্যুর পর কিছু আছে বলে মনে হয় না। সবার কাছেই এই জীবন ই শেষ ও শুরু। যে যেভাবেই দেখুক মৃত্যু কিন্তু সত্য। কেউ পুরিয়ে, কেউ কবরে কেউ বা ক্রুশে অথবা রেশমী দড়িতে, সব জায়গার সত্য হচ্ছে মৃত্যু। এই মৃত্যু মানুষের অমোঘ সত্য, এড়াবার কোন সুযোগ নেই।

"কখনো কখনো পাপী লোকেদেরকেও এক আধবার স্বর্গে জায়গা দেয়া উচিত। পক্ষান্তরে, ভাল লোকেদেরকেও নরকের শাস্তি ভোগ করতে দিও। প্রত্যেক লোকেরই এটা জানা উচিত - সে কি হারিয়েছে। যে পাপে ক্ষমা নেই এবং যে পুণ্যে বেদনা নেই, তার মাহাত্ম্য কোথায়?"

আসলে এই বইটিতে কৃষণ চন্দর ততকালীন সমাজ ব্যবস্থার একটি চিত্র তুলে ধরেছেন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে যুগে যুগে বইটি সকল সমাজ ব্যবস্থার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। কারণ যুগের পরিবর্তন হলেও সমাজের কোন পরিবর্তন হয়নি। সমাজ একই জায়গাতে রয়েছ। গল্পটা হাস্যরস সমৃদ্ধ হলেও কৃষাণ চন্দরের চিন্তাধারা তার লেখার ধারের তীর্যকতা টের পাবেন ক্ষণে ক্ষণে।

কৃষাণ চন্দর যে কতটা মজার ছলে বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু তৎকালীনই নয় বরং এখনকার সময়ের প্রেক্ষাপটেও এই গল্প দারুণ প্রতীকী। ভগবানের এই দুনিয়ায় রাজত্ব করে মানুষেরা। সেই রাজ্যে স্বয়ং ভগবানও যেন অসহায়, নিরীহ আর দুস্থদের কাতারে।

এই রাজ্যে টিকতে হলে লাগে তোষামোদ আর অর্থকড়ি। নয়তো এই রাজ্যে স্বয়ং ভগবানও লাথি খেয়ে ভাগাড়ে পড়ে থাকবার জোগাড়।মজার হলে হলেও বাস্তবতা যেন আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন কৃষণ চন্দর। সত্যি যদি কোন দিন ভগবান চলেই আসেন তবে তিনি মুর্ছা যাবেন এটা নিশ্চিত। মানুষ মানুষের সাথেই যে আচরণ করে থাকে তাতে ভগবানও ছাড় পাবেন না এটা নিশ্চিত।

গল্পের এক জায়গাতে নয় কয়েক জায়গাতেই ভগবানকে লেখক যেভাবে নাস্তানাবুদ করেছেন তাতে ভগবান নিজেই বলেছেন, "এরা তো ভগবান কে মানুষ বানিয়ে ছেড়ে দেবে"।

"এই জগতের কেউ ভগবানকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারে না। তাতে কিছু না কিছু স্বার্থ থাকেই। যার যে বস্তুর অভাব, সেটুকু পাবার জন্যে তোমার কাছে ধর্ণা দেয়। আর যার সবকিছুই আছে সে নিজের জন্য এই জগতেই স্বর্গ তৈরি করে আর পরকালে নিজের জায়গা নেয়ার জন্য ভগবানের কাছে আসে। লক্ষ লক্ষ টাকা কালোবাজারি করে একটা মসজিদ বা মন্দির বানিয়ে ভগবানকে খুশী করা ঘুষ নয় তো কি? এরা ভগবানের পূজা করে না, নিজেদের ইপ্সিত বস্তুর পূজা করে। নিজেদের ভয়ের পূজা করে।"

হ্যা, এটাই সত্য। ভগবান, ঈশ্বর বা আল্লাহ সবাই কিন্তু তার স্বার্থের জন্য ধর্ণা দেয়। সবার স্বার্থ উদ্ধার হলেই আবার কেটে পরে। এভাবেই জীবনচক্র আবর্তিত হয়।

যুগে যুগে মানুষ আছে, থাকবে। ভগবান, ঈশ্বর বা আল্লাহ আছেন থাকবেন। তবে মানুষের মানবিকতা, মনুষত্ত্ব, মায়া, মমতা, আবেগ, অনুভূতি গুলো যেন আরও মানবিক হয় মানুষের জন্য মানুষ হয় সেটাই দেখার বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×