বলিউডের সাম্প্রতিক খবর হচ্ছে রনবীর কাপুরের নতুন মুভি “এনিমেল” মুক্তি পেয়েছে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন স্বন্দীপ রেড্ডি ভাঙা। নামটি অদ্ভুত হলেও তার নামটি আমি প্রথম শুনে এটি কেমন নাম এটাই ধারণা হয়েছিল। এরপর কিছুটা গুগল করলাম। দেখলাম যে ভারতের ২০১৭ এবং ২০১৯ এ সুপারহিট মুভি “অর্জুন রেড্ডি” ও এর রিমেক “কবীর সিং” দুটোর ই পরিচালক হচ্ছেন এই স্বন্দীপ।
তখন মনে হল তাহলে আর একটু গভীরে যাওয়া যাক। খুজে পেতে দেখলাম লোকটা বেশ প্রতিভার অধিকারী। যদিও আমি “অর্জুন রেড্ডি” বা “কবীর সিং” কোনটিই দেখিনি। তবুও ওনার প্রতি আমার আগ্রহের অন্যতম একটি কারণ আছে।
হঠাৎ করেই আগ্রহ এসেছে এমন নয়। এর কারণ একটি গান। “এনিমেল” মুভিতে একটি গান আমাকে বেশি আকৃষণ করেছে। আমি দু দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শর্টস, রিলসে এই গানটি শুনছি। তাই মনে হল গানটি সম্পর্কে আমার জানতে হবে। গানটির মধ্যে একটি আলাদা অনুভূতি আছে। ইংরেজিতে যাকে বলে ওল্ড স্কুল এর মত। আমি ওল্ড স্কুল ভালবাসি। তাই এই গানটি সম্পর্কে খুজতে থাকলাম।
গানটি আর অন্য কোন গান নয় এটি হচ্ছে “জামাল-কুদু”। এই গানের মাধ্যমেই “এনিমেল” সিনেমায় ববি দেওলের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। গানের নামটি কিছু বেশ অদ্ভুত। ওই যে বলে না এক দেশের ভাষা অন্য দেশের গালি এমন আরকি। তবে আমাকে বেশি বেগ পেতে হয়নি এই গানটির তথ্য বের করার জন্য।
গুগলের কাছেই অনেক তথ্য আছে। তাই ভাবলাম সবাই এই গানটি শুনছে অনেকের কাছে ভাল লেগেছে এটি অনেক শেয়ার হচ্ছে। গানটির পেছনের গল্পটিও জানা যাক।
গল্পটি জানার জন্য আমাদের যেতে হবে প্রায় ১৯৪১ সালের ইরান। ইরান এর কথা আসলেই আমাদের সবার আগে যাদের নাম সামনে আসে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হাফিজ, ফেরদৌসী, শামস তাবরিজী এনারা। তবে আজ এনাদের কাউকে নিয়ে বলার সময় নেই। আজ বলব অখ্যাত একজন মানুষকে নিয়ে, তিনি হচ্ছে বিজান সামান্দার।
বিজান সামান্দার এর জন্য ১৯৪১ সালে ইরানে। তিনি একজন ইরানীয়ান কবি, গীতিকার, ও সঙ্গীতশিল্পী। তার রচিত গান কবিতার সংকল ১৯৭০ সালে আমেরিকায়। তার এই সংকলনের নাম হচ্ছে “সিরাজ-ই-উজ-বৈতারু”। যদিও আমি সঠিক ভাবে অনুবাদ করতে পারিনি নামটি।
আপনারা ভাবছেন “জামাল-কুদু” গানের সাথে এই লোকটার সম্পর্ক কি? সম্পর্ক আছে বলেই এনার সম্পর্কে আগে বলে দিয়েছি। নাম হলে পরে বুঝতে সমস্যা হতো।
“জামাল-কুদু” গানটি ইরানের ঐতিহ্যবাহী একটি সঙ্গীত। তবে এই গানটি মুলত কবি ও গীতিকার বিজান সামান্দার এর লেখা। যদিও পুরো গানটি তার কবিতা থেকে নেয়া হয়নি। কবিতার নাম “জামাল-কুদু” তার কারণে গানটির নামও এটাই রাখা হয়েছে।
এই গানটি ১৯৫০ সালে দক্ষিণ ইরানের খারজামি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মেয়েরা কোরাসে গেয়েছিল। মুলত ইরানের বিয়ে ও এক সাথে সবাই একত্রি হলেই মুলত এই গানটি নেচে গেয়ে আনন্দ করত। বলা যায় ইরানের গত কয়েক দশক ধরেই এই গানটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গাওয়া হচ্ছে। এর সুর ও সঙ্গীত ইরানের ফোক থেকে নেয়া হয়েছে।
তবে এটি হিন্দি সিনেমায় ব্যবহার করার আইডিয়া বেশ দারূণ বলতে হবে। সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ পাওয়া উচিত হচ্ছে কম্পোজার হার্ষবর্ধন রামেষ্ণর এর। তিনি গানটিতে সেভাবে কোন পরিবর্তন নিয়ে আসেননি। তিনি একদম একটি “র” ফ্লেভার রেখে দিয়েছেন। যা এই গানটিকে আরও সুন্দর ও শ্রুতিমধুর করেছে বলে আমার মনে হয়। এনিমেল মুক্তি পেয়েছে ১ ডিসেম্বর অথচ এই গানটি ইউটিউবে মুক্তি দেয়া হয়েছে ৬ ডিসেম্বর।
এই লেখা লেখার সময় ২৫ মিলিয়ন ভিউ দেখেছি। গানটি এই ফোক ভাবটিই গানটি অন্য গানের চেয়ে আলাদা করে ফেলেছে। আমি নিজেই কতবার শুনেছি বলতে পারব না। মনে হচ্ছে আমাদের কোন অঞ্চলের ফোক শুনছি।
আসুন দেখে নেই এই গানটির মধ্যে আসলে কি বলা হয়েছে। গানটি মুলত ভালবাসার মানুষের জন্য গাওয়া হয়। এই গানটির মধ্যে ভালবাসার কথাই বলা হয়েছে।
“আহ! কালো চোখের অধিকারনী,
তোমার ওই চোখের চাউনিতে আমার হৃদয় ভেঙে দিও না।।
আমার হৃদয় নিয়ে ছিনিমিনি খেলো না,
আমায় ছেড়ে যাচ্ছো দূরের যাত্রায়
তোমার শোকে মজনুর মতো আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।।
তুমি আমার ভালবাসা, আমার প্রাণ প্রিয়, তুমি আমার ভালবাসা।
তোমার হৃদয় এখন অশান্ত, এত দ্রুত শান্ত হবে না,
যতখন তোমার হৃদয় শান্ত হবে না, তুমিও স্থির হতে পারবে না।
তুমি ক্লান্ত পরিশ্রান্ত,
তোমার চাওয়ার কিছুই নেই এখন আর।।
আমার হৃদয় নিয়ে আর খেলা করো না, আর আমাকে কষ্ট দিও না
তোমার পেছনে আমার আর আসতে বলো না, আমার আবেগ নিয়ে আর খেলা করো না।।
তুমি আমার ভালবাসা, আমার প্রাণ প্রিয়, তুমি আমার ভালবাসা।”
আমি এটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছি। জানি না কতটা সঠিক। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।
গানটি আমি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছি। যদিও কতটা সফল আমি জানি না। তবে চেষ্টা করেছি গানটির অর্থ তুলে ধরার। যেহেতু এটি একটি আঞ্চলিক ফোক সঙ্গীত এতে কিছুটা অদল বদল হতে পারে। আমি সঠিক তথ্য পেলে সেটি ঠিক করে দেয়ার চেষ্টা করব।
আপাতত গানটি উপভোগ করা যাক। গানটি আমার কাছে ভালই লেগেছে। এর কম্পোজার হার্ষবর্ধনকে আবারও ধন্যবাদ দিতেই হয় যে তিনি গানটিকে নিয়ে সেভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেননি। তিনি একদম “র” ফ্লেভার দিয়েছেন যাতে করে মানুষ গানটির সাথে মিশিয়ে যায়। আর এটা তাই হয়েছে। এছাড়া এটা হিন্দিতে পরিবর্তন না করে ইরানীয়ান রেখে দিয়েছেন যা একে অন্য গানের থেকে আলাদা করেছে।
আমরা প্রায় দেখি যে বলিউড বিভিন্ন গান নিয়ে পরীক্ষা করতে যেয়ে গানটির পুরো আবেগ নষ্ট করে ফেলে। এখানে সেটি হয়নি। এজন্য ব্যক্তিগত ভাবে গানটি আমার কাছে বেশ উপভোগ্য লেগেছে। আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগবে। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:২১