somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধু কি খবর বল...!

০৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ দুপুর ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুমনকে দেখলে এই প্রথম কলিটাই খাটে, পরেরটুকু নয়। কতদিন দেখা হয়নি- মনে জাগেই না! আইডিয়াল স্কুল, মাঝে ও নটরডেমে ছিল। তারপরও দেখা হতো। এরপর চিটাগং মেডিকেল। এখন আমার দু'গলি পরই ওর বাসা। কিন্তু ব্যস্ত যাপন ছেদ টানে। রাস্তা ঘাটে ক্ষণিকের দেখা। যত তাড়াই থাক, সময় থমকে যায়। দুটো সিগারেট খেতে খেতে অনেক বিনিময়, আমার আয়ু বেড়ে যায়। সুমন কথা বললেই আমার হাসতে হাসতে পেট ফেটে যায়, দম বের হয় অবস্থা- আয়ু বেড়ে যায়!

ঠিক এই কারণেই ওকে আমার ভীষণ ঈর্ষা। বিরাট এক কর্পোরেটে দারুণ পজিশনে আছে বলে নয় (এবং ডাক্তারিকে গুলি্ল মেরে), জীবন সম্পর্কে ওর দারুণ এক হাস্যকর বিশ্লেষণ আছে। যে কোনো জটিল ব্যাপারকেই ও খুবই হাস্যষ্পদ বানিয়ে ফেলতে পারে অনায়াস। তারপরও দ্বিতীয়বার ভাবলে সেটাকে খেলো মনে হয় না একটুকুও।

আজ ভাগ্যবশে অফ ডে পেয়েছি। আমার সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতিবার। সেদিনই সবচেয়ে বড় জ্যামটা থাকে বলে বেরুতে ইচ্ছে করে না। কৌশিক শরতের সঙ্গে আগে দেখা হতো। আড্ডাটা মিইয়ে গেছে সংযমের মাসে। যা কথা মুঠোফোনে। তো জুয়েলের ফোনটা এল ঠিক দুপুরে। শাহজাহানপুর থেকে বাবার কবর দেখে ফিরেছি কাকভেজা হয়ে। বিছানায় এলিয়ে মাত্র বাক্যকোবিদ আর বাক্যজ্ঞ'র পার্থক্য বুঝছি- জুয়েলের ফোন। সিএমসিতে আমার অনেক পাপের জুটি, দীর্ঘদিন একসঙ্গে সময় কাটানো। এখন বড় শিশু বিশেষজ্ঞ। হঠাৎ ঢাকায় এসেছে, জানতে চাইল কি করছি। বললাম। রাতেই চলে যাবে। ঠিক করলাম সন্ধ্যেয় দেখা করব।

আসলে জুয়েলের সঙ্গে আমার প্রায়ই ফোনে কথা হয়, চিটাগাং গেলে পকেটে হাত দিতে দেয় না। কিন্তু ঢাকায় সেটা আমি সবসময় ফিরিয়ে দিতে পারি না বলে একটু লজ্জাতেই থাকি। সেটা মনে মনে। কারণ আমাদের মধ্যে ওই ভাবটা কখনোই আসে না কে, কি, কেন? তারপরও নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুরি এতই জমিয়ে বসেছেন আমার সঙ্গে যে ঠিক করলাম কাটিয়ে দেব। জুয়েল সুমনের কথা বলল। এবার আমি শু্যট করে দিলাম ভাদুরি বাবুকে। 'তারতুন মারাত্মকের লয় দেখা হইবু'- আমাদের সিএমসির স্ল্যাং। কিছু হলেই আফিউর বলত, 'আরে তারতুন মারাত্মক ব্যাডা' সেটা সুমনের গলায় অনেক ইমপ্রোভাইজড। আর কসকি বলছকি!

উজ্জ্বল হোটেলে ভেনু্য। আমি একটানে পেঁৗছতেই দেখি সুমন বসে। জুয়েল আসেনি তখনো। ওই পাঁচ মিনিটেই উজ্জ্বলের ওয়েটার মামুরা আমার নতুন এই রুপ দেখে ছানাবড়া! পিয়াল মামা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। আশেপাশের টেবিল থেকেও চেংড়াদের অবাক বিস্ময়- কাহিনী কী!

কিছু মানুষ চির সবুজ হয়। সুমন সেরকম। একদম বেবি ফেস। তবে জিভটা সেরকম নয়। আমাদের খুবই ফটকা এক বান্ধবী তাকে সর্বশেষ গ্যাদারিংয়ে একটু খোঁচাতে গিয়ে লাল হয়ে পড়েছিল। বান্ধবী স্রেফ বলেছিল, 'সুমন তোমার চুলগুলো কি অরিজিনাল?' সুমনের উত্তর, 'কেন নয়, তোমার কি ধারণা আমি নিচের থেকে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করছি!' মেয়ে তখনও হাল ছাড়েনি, বলে, 'না এমনি জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের তো সব ঝরে যাচ্ছে।' সুমন চোখ গোল গোল করে বলে, 'স-ও-ও-ব!' ওদিকে আমরা তো আরওএফএল।

তো যাই হোক মিললাম তিন রত্ন। জম্পেশ আড্ডা। অতীতচারণ। এবং বর্তমানও। সুমন খুবই রুপবান। সাধারণত বিশ্ব বিদ্যালয় পর্যায়ে ইয়ারমেটদের মধ্যে অ্যাফেয়ার হলেও, সেটা দুই দফা হওয়াটা বিরল। সুমন সেটাই করেছিল। দু বছর এক বান্ধবীর সঙ্গে প্রেম করে, বাকি তিন বছর আরেকজন। বিয়ে করেছে অন্য মেয়ে। ডাক্তার। এখনও তার আগের সেই ক্যারিশমা আছে, মেয়ে পটানোর। মেয়েরা পটে। ওর পজিশন, ওর অর্জন এবং চেহারায় তারা পঙ্গপালের মতো ঝাপায়। এসএমএস এল কয়েকটা পরপর। আমরা হাসি আর হিংসায় জ্বলি। তারপরও ব্যাটার কথার কী ছিরি! একজনকে বলল, 'দেখো আমি তো ইয়াং মেয়ে ছাড়া শুইনা। কারণ বিচিশুদ্ধ আটকাইয়া যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাই না। তবে তুমি যদি সিজারিয়ান পার্টি হও, তাইলে আছি।' আমরা হো-হো-হা-হা।

গল্প হয়, আড্ডা হয়। সময় গড়িয়ে যায়। কারো মনেই হয় না সময় বলে আসলেই কিছু আছে। জুয়েলের ফেরার বাস 11টায়। সুমনের মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে আমরা সিটে আটকে যাই। মাঝে ফোনে এরওর সঙ্গে আলাপ। গসিপও হয়, কাসমেটদের রিসেন্ট কেলেঙ্কারি, ঘর-সংসার ভাঙার গল্প ও নেপথ্য কারণ। দুঃখের কাহিনীগুলোরও সুমনের সরস বয়ান। মেয়ে পটানোর টিপস নিই।

ফোন এল হেলালের। ছাত্রলীগ প্রেসিডেন্ট ছিল। এক কথা দু'কথায়, 'তোরা রাজাকারগো কোম্পানিতে ক্যান।' সুমন বলে, 'আরে রাজাকার, ব্যাটা আমি যে এখনো জামাতের রুকন হইয়া যাই নাই শুকর কর। তবে শিবিরের সদস্য বা সাথী হইয়া যাইতে পারি। নাইলে উন্নতি নাই। এইযে পিজিতে বালটা ছিড়লি। বিএনপির কথা বাদ দে, ইউনিয়নের পোলাপাইন একটা আরেকটারে তুলল। বিদেশ লইয়া যায়, কিনিক খোলার টাকা দেয়, সমবায় স্টাইলে কিনিক খুলে। কই আমাগো জয় বাংলার কোন ভাইডা আমগো ডাইকা কইছে, যে চাকরি করবি? তাইলে আয়। ওই বালের কথা কইস না।' এইবার ওকে রাগতে দেখি। বেনসন ধরিয়ে বলে, 'কই জানি আসিলাম? ও আচ্ছা ওর বউরে কইলাম যে তোমাগো ক্যাচাল মিটানোর জন্য আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের ভূমিকায় নামতে পারলাম না। যার যারটা তার তার মিটাইতে হইব। তোমার রিমোট কন্ট্রোল নষ্ট হইলে, তুমি ব্যাটারি চেঞ্জ করো, শোল্ডারিং করো। আমি নাই ক্যাচালে।'

জুয়েলের ফোন আসে। সঙ্গীরা ওর ট্রেস না পেয়ে অস্থির। পৌনে দশ বেজে গেছে। উঠতেই হয়। তীব্র ভালো লাগার অনুভূতির রেশ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই কি বোর্ডে ঝড় তুলি। থ্যাঙ্কস বাডি। (কবির) সুমনের একটা গানের কথা বদলে সুর ঠিক রাখি- তুই কাছে আসলেই দুঃখ লজ্জা পায়...
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ দুপুর ২:২৫
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এয়ার এম্বুলেন্স ও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী’কে নিয়ে জরিপে আপনার মতামত দেখতে চাই॥

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৩০

যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন শহরে বসবাস করছেন। সেই দলের মূল নেত্রী অসুস্থ। আর তাকে চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যাওয়ার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিবে কাতারের আমির। বিএনপি এবং জিয়া পরিবারের কি এতটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×