ঠিক এই কারণেই ওকে আমার ভীষণ ঈর্ষা। বিরাট এক কর্পোরেটে দারুণ পজিশনে আছে বলে নয় (এবং ডাক্তারিকে গুলি্ল মেরে), জীবন সম্পর্কে ওর দারুণ এক হাস্যকর বিশ্লেষণ আছে। যে কোনো জটিল ব্যাপারকেই ও খুবই হাস্যষ্পদ বানিয়ে ফেলতে পারে অনায়াস। তারপরও দ্বিতীয়বার ভাবলে সেটাকে খেলো মনে হয় না একটুকুও।
আজ ভাগ্যবশে অফ ডে পেয়েছি। আমার সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতিবার। সেদিনই সবচেয়ে বড় জ্যামটা থাকে বলে বেরুতে ইচ্ছে করে না। কৌশিক শরতের সঙ্গে আগে দেখা হতো। আড্ডাটা মিইয়ে গেছে সংযমের মাসে। যা কথা মুঠোফোনে। তো জুয়েলের ফোনটা এল ঠিক দুপুরে। শাহজাহানপুর থেকে বাবার কবর দেখে ফিরেছি কাকভেজা হয়ে। বিছানায় এলিয়ে মাত্র বাক্যকোবিদ আর বাক্যজ্ঞ'র পার্থক্য বুঝছি- জুয়েলের ফোন। সিএমসিতে আমার অনেক পাপের জুটি, দীর্ঘদিন একসঙ্গে সময় কাটানো। এখন বড় শিশু বিশেষজ্ঞ। হঠাৎ ঢাকায় এসেছে, জানতে চাইল কি করছি। বললাম। রাতেই চলে যাবে। ঠিক করলাম সন্ধ্যেয় দেখা করব।
আসলে জুয়েলের সঙ্গে আমার প্রায়ই ফোনে কথা হয়, চিটাগাং গেলে পকেটে হাত দিতে দেয় না। কিন্তু ঢাকায় সেটা আমি সবসময় ফিরিয়ে দিতে পারি না বলে একটু লজ্জাতেই থাকি। সেটা মনে মনে। কারণ আমাদের মধ্যে ওই ভাবটা কখনোই আসে না কে, কি, কেন? তারপরও নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুরি এতই জমিয়ে বসেছেন আমার সঙ্গে যে ঠিক করলাম কাটিয়ে দেব। জুয়েল সুমনের কথা বলল। এবার আমি শু্যট করে দিলাম ভাদুরি বাবুকে। 'তারতুন মারাত্মকের লয় দেখা হইবু'- আমাদের সিএমসির স্ল্যাং। কিছু হলেই আফিউর বলত, 'আরে তারতুন মারাত্মক ব্যাডা' সেটা সুমনের গলায় অনেক ইমপ্রোভাইজড। আর কসকি বলছকি!
উজ্জ্বল হোটেলে ভেনু্য। আমি একটানে পেঁৗছতেই দেখি সুমন বসে। জুয়েল আসেনি তখনো। ওই পাঁচ মিনিটেই উজ্জ্বলের ওয়েটার মামুরা আমার নতুন এই রুপ দেখে ছানাবড়া! পিয়াল মামা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। আশেপাশের টেবিল থেকেও চেংড়াদের অবাক বিস্ময়- কাহিনী কী!
কিছু মানুষ চির সবুজ হয়। সুমন সেরকম। একদম বেবি ফেস। তবে জিভটা সেরকম নয়। আমাদের খুবই ফটকা এক বান্ধবী তাকে সর্বশেষ গ্যাদারিংয়ে একটু খোঁচাতে গিয়ে লাল হয়ে পড়েছিল। বান্ধবী স্রেফ বলেছিল, 'সুমন তোমার চুলগুলো কি অরিজিনাল?' সুমনের উত্তর, 'কেন নয়, তোমার কি ধারণা আমি নিচের থেকে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করছি!' মেয়ে তখনও হাল ছাড়েনি, বলে, 'না এমনি জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের তো সব ঝরে যাচ্ছে।' সুমন চোখ গোল গোল করে বলে, 'স-ও-ও-ব!' ওদিকে আমরা তো আরওএফএল।
তো যাই হোক মিললাম তিন রত্ন। জম্পেশ আড্ডা। অতীতচারণ। এবং বর্তমানও। সুমন খুবই রুপবান। সাধারণত বিশ্ব বিদ্যালয় পর্যায়ে ইয়ারমেটদের মধ্যে অ্যাফেয়ার হলেও, সেটা দুই দফা হওয়াটা বিরল। সুমন সেটাই করেছিল। দু বছর এক বান্ধবীর সঙ্গে প্রেম করে, বাকি তিন বছর আরেকজন। বিয়ে করেছে অন্য মেয়ে। ডাক্তার। এখনও তার আগের সেই ক্যারিশমা আছে, মেয়ে পটানোর। মেয়েরা পটে। ওর পজিশন, ওর অর্জন এবং চেহারায় তারা পঙ্গপালের মতো ঝাপায়। এসএমএস এল কয়েকটা পরপর। আমরা হাসি আর হিংসায় জ্বলি। তারপরও ব্যাটার কথার কী ছিরি! একজনকে বলল, 'দেখো আমি তো ইয়াং মেয়ে ছাড়া শুইনা। কারণ বিচিশুদ্ধ আটকাইয়া যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাই না। তবে তুমি যদি সিজারিয়ান পার্টি হও, তাইলে আছি।' আমরা হো-হো-হা-হা।
গল্প হয়, আড্ডা হয়। সময় গড়িয়ে যায়। কারো মনেই হয় না সময় বলে আসলেই কিছু আছে। জুয়েলের ফেরার বাস 11টায়। সুমনের মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে আমরা সিটে আটকে যাই। মাঝে ফোনে এরওর সঙ্গে আলাপ। গসিপও হয়, কাসমেটদের রিসেন্ট কেলেঙ্কারি, ঘর-সংসার ভাঙার গল্প ও নেপথ্য কারণ। দুঃখের কাহিনীগুলোরও সুমনের সরস বয়ান। মেয়ে পটানোর টিপস নিই।
ফোন এল হেলালের। ছাত্রলীগ প্রেসিডেন্ট ছিল। এক কথা দু'কথায়, 'তোরা রাজাকারগো কোম্পানিতে ক্যান।' সুমন বলে, 'আরে রাজাকার, ব্যাটা আমি যে এখনো জামাতের রুকন হইয়া যাই নাই শুকর কর। তবে শিবিরের সদস্য বা সাথী হইয়া যাইতে পারি। নাইলে উন্নতি নাই। এইযে পিজিতে বালটা ছিড়লি। বিএনপির কথা বাদ দে, ইউনিয়নের পোলাপাইন একটা আরেকটারে তুলল। বিদেশ লইয়া যায়, কিনিক খোলার টাকা দেয়, সমবায় স্টাইলে কিনিক খুলে। কই আমাগো জয় বাংলার কোন ভাইডা আমগো ডাইকা কইছে, যে চাকরি করবি? তাইলে আয়। ওই বালের কথা কইস না।' এইবার ওকে রাগতে দেখি। বেনসন ধরিয়ে বলে, 'কই জানি আসিলাম? ও আচ্ছা ওর বউরে কইলাম যে তোমাগো ক্যাচাল মিটানোর জন্য আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের ভূমিকায় নামতে পারলাম না। যার যারটা তার তার মিটাইতে হইব। তোমার রিমোট কন্ট্রোল নষ্ট হইলে, তুমি ব্যাটারি চেঞ্জ করো, শোল্ডারিং করো। আমি নাই ক্যাচালে।'
জুয়েলের ফোন আসে। সঙ্গীরা ওর ট্রেস না পেয়ে অস্থির। পৌনে দশ বেজে গেছে। উঠতেই হয়। তীব্র ভালো লাগার অনুভূতির রেশ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই কি বোর্ডে ঝড় তুলি। থ্যাঙ্কস বাডি। (কবির) সুমনের একটা গানের কথা বদলে সুর ঠিক রাখি- তুই কাছে আসলেই দুঃখ লজ্জা পায়...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


