শিমুল ও মনি খুবই ভাল বন্ধু। বন্ধু থেকেও আরো বেশিকিছুর স্বপ্ন দেখে।তারা সহকর্মী।তাদের ভাললাগা ও ভালবাসা প্রথম সাক্ষাতের কিছুদিনের মধ্যেই ঘটে।শিমুল-মনি একদিন কথা না বলে থাকতে পারে না। বুঝতে পারে,তারা পরস্পর গভীরভাবে ভালবেসে ফেলেছে। তারা ভবিষৎ স্বপ্নের জাল বোনে।
একদিন পবিত্র সেই ভালবাসার মাঝে ছেদ পরে।মনি নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে সে তার সাংসারিক জীবনের ইতি করে শিমুলের ভালবাসায় সাড়া দিবেনা।যদি সেখানে সুখী না হয়।সে সাফ জানিয়ে দেয়, বর্তমানের চাইতে বেশি কিছু না পেলে পরিবর্তন করবে না। শিমুল তাকে কি দিতে পারবে?
এদিকে শিমুল মনিকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারেনা।সে ছটফট করে।তার জীবনের প্রথম প্রেম,প্রথম ভালবাসা,যাকে নিয়ে ঘর বাঁধবে। এইরূপ কথা দেওয়া- নেওয়া ছিলও বটে।
মনির দিনের পর দিন অবহেলা,অপবাদ শিমুলকে বিষিয়ে তোলে। তবুও সে মনিকে ভুলতে পারেনা। তার পবিত্র ভালবাসার পূর্ণতা চায়। এইরূপ বেশ কয়েকমাস মনি শিমুলের সাথে যোগাযোগ রাখেনা।মনি তার সাহিত্যচর্চা, চাকুরী আর সংসারের মায়ার জালে আবদ্ধ থাকে, ভুলতে থাকে তার প্রতিশ্রুত প্রেমকে। শিমুলের ফোন পর্যন্ত রিসিভ করেনা।
শিমুল মনির পথ পানে চেয়ে পাগলপ্রায়। সে ভাবে এই বুঝি মনি ফোন দিয়েছে। এই বুঝি তার ভুল বুঝতে পেরে শিমুলের জীবনসঙ্গী হয়ে ঘর বাঁধার জন্য ছুটে আসছে।তার সে মতিভ্রম বেশ কিছুদিন চলে।
শিমুলের বেড়ানোর বেশ শখ।গত একটি বছর বেড়াতে বাইরে কোথাও যায়নি।কোনমতে চাকরি করেছে আর হতাশা, ব্যর্থতায় শোকাচ্ছন্ন থেকেছে।
জানুয়ারীর ১ তরিখে দুইদিনের ছুটি নিয়ে সে পরিকল্পনামাফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই মিজানের কাছে বেড়াতে যায়। যিনি খুলনা বিভাগের একজন ডিপিএম। শিমুলকে সুন্দরবনে ঘুরতে নিয়ে যেয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে।
কথাপ্রসঙ্গে সব কথা খুলে বলে।বড় ভাই তার জীবনে একইরূপ করুন ট্র্যাজেডির ঘটনা বর্ণনা করে। শিমুল চৈতন্য ফিরে পায়।সে মিজান ভাইকে অনুসরন করে নতুন করে জীবন গঠনের স্বপ্ন দেখে।সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে কঠোর পড়াশুনা শুরু করে।এটাই ছিল তার জীবনের শেষ বিসিএস।অতএব সময় অপচয় চলবে না।
বিসিএসের চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশিত হয়।সে জানতে পারে সে পুলিশ ক্যাডার এ থার্ড হয়েছে।আনন্দে আত্মহারা। পরক্ষনে তার চোখে পানি। রুমে সে একা। সে মনে মনে ভাবে এই ক্যাডারের জন্য মনি কি না বকাঝকা করত। বলতো তুমি ক্যাডার হও তারপর আমি তোমার কাছে একবারে চলে আসবো। শিমুলের চোখে পানি।হৃদয়ে উঞ্চ মরুভূমি।
কয়েকদিন পর ট্রেনিং,এজন্য শিমুল প্রামে এসেছে মা-বাবার কবর জিয়ারত করতে।
ট্রেনিং শেষে শিমুলের টাঙ্গাইলে পোস্টিং।একদিন দুপুর বেলা লান্স শেষে শুয়ে শুয়ে আনিসুল হকের একটা গল্পের বই পড়তে পড়তে হঠাৎ মনির কথা মনে পরলো। একদিন মনি আনিসুল হকের সাক্ষাৎকার বইটি তাকে দিয়ে বলেছিল-তুমি যমুনার পাড়ে বসে বসে পড়,খুব ভাল লাগবে।আমি অফিস শেষে তোমাকে ফোন দিচিছ।বইটিতে আনিসুল হকের ছেলেবেলা, সাহিত্যিক হওয়ার কাহিনি ইত্যাদি, খুব ভাল লাগলো।......এসব কথ ভাবতে ভাবতে তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরল।
তার কাছে মনির স্মৃতি বলতে কিছুএসএমএস, আর মোবাইলে তোলা কয়েকটি ছবি।যা শিমুল বেড়াতে গিয়ে তার মোবাইলে তুলেছিল।লাল-সবুজ শিমুলের প্রিয় রং।এই জন্য শিমুল ঈদ উপলক্ষে মনিকে যে লাল-সবুজ জামদানি শাড়ি দিয়েছিল তাই পরে রাজশাহী কনফারেন্স শেষে পদ্মার পাড়ে বসে তুলেছিল। শিমুলের আজ সমস্ত স্মৃতি মনে পরছে......কোথায় কোথায় মনির সাথে বেড়িয়েছে, কত মজাই না হয়েছে.....।
আজ ৪ বছর পার হয়েগেছে। আজকে এতদিন পর কেন মনিকে এত মনে পরছে? সে কেমন আছে? তার সন্তান সংসার কেমন আছে? খুব জানতে ইচছা করছে।
শিমুল মনির ছবি ও এসএমএস দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পরেছে খেয়াল নেই।হঠাৎ ঘরির দিকে চেয়ে দেখে বিকাল ৫টা বেজে গেছে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ইউনিফর্ম পরে অফিসের দিকে ছোটে।
এইরুপ অফিস আর বাসা,আর মাঝে মঝে মিটিং এভাবে সরকারী আদেশ পালনের মাঝে দিন অতিবাহিত হতে থাকে হতাশা দু:খ বেদনার মাঝে। আজ মনির আশানুরূপ চাকরি,সম্মান,গাড়ী, অর্থ-বিত্ত নিরাপত্তা সবই পেয়েছি। তারপরও কেন এত শূন্য শূন্য মনে হয়।
একদিন দুপুরবেলা কনস্টাবল এসে খবর দেয়, স্যার এক ভদ্রমহিলা আপনার সাথে দেখা করতে চায়।নাম কি?কোথা থেকে এসেছে?স্যার নাম জানিনা,তবে ঢাকা থেকে এসেছে।
ভদ্র মহিলাকে ভেতরে আসতে বলল।
তিনি ভেতরে আসলেন আমিতো অবাক!! মনির বোন মুক্তা।
আপনি? কোথা থেকে?কি খবর? কেমন আছেন?
সব উত্তর দেওয়ার আগে বলল, আপুর ভীষন অসুখ। ঢাকাতে স্কোয়ার হাসপাতালে ভর্তি। আপু শুধু আপনার নাম ধরে ডাকছে। খাওয়াদাওয়া করতে পারেনা।সঙ্গে সঙ্গে এসপি স্যারকে ফোন করে অনুমতি নিয়ে একটা গাড়ী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছুটলাম।হাসপাতালে গিয়ে দেখি মনির অবস্হা খুবই খারাপ। তার পাশে তার মা, আর তার একটি সন্তান।জানতে পারি তার স্বামীর সাথে অনেক আগে ডিভোর্স হয়ে গেছে। সে তার এক সন্তান নিয়ে চলে এসেছে......।ডাক্তারের নিকট থেকে অসুখ সম্মর্কে খোজ নিলো।সারাক্ষণ শুধু শিমুল শিমুল বলে ।স্বামীর সাথে ডিভোর্সের পর লজ্জায় আর বিবেকের প্রতিবন্ধকতায় শিমুলের সাথে কোনরূপ যোগাযোগ করেনি। অচেতন অবস্হায় বিছানায় মনিকে দেখতে পেয়ে মনে হতে লগলো সারা পৃথিবীটা লাটিমের মত ঘুরছে। তার মুখের ভাষা স্তব্ধ হয়ে যায়।নির্বাক, সামনে দাড়িঁয়ে থাকে কিছুক্ষন। এ কি অবস্হা হয়েছে মনির?মনির সেই আকর্ষণীয় রূপ-লাবণ্য একেবারে ভেঙ্গে গেছে। তার তো এরূপ থাকার কথা না। সে তো সুখেই ছিল।শিমুলতো কোনদিন মনির অমঙ্গল চায়নি।এরপর মনির হাতখানা ধরে ডাকে-মনি,মনি ও মনি আমি এসেছি।মনির চেতন ফিরে আসে আস্তে আস্তে চোখ খুলে প্রথমে নিজেকে বিশ্বাসই করতে পারেনা; শিমুল তার পাশে, তার হাত ধরে আছে..... দু-চোখ দিয়ে পানি ছেড়ে দিল, শিমুলেরও দু-চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। আজ সে তার মনের মানুষের কাছে....

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



