প্রথম আলো ০৭-০২-২০১০ তারিখের সংখ্যা থেকে কপি-পেষ্ট
হূষ্টপুষ্ট ২৫টি গরু জবাই করা হয়। রান্না করা হয় ১৭৫ মণ চালের ভাত। আরও কয়েক পদের উপাদেয় খাবারে ভূরিভোজ হয় প্রায় ৩০ হাজার মানুষের। গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই ভোজের আয়োজন চলে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নের ছয়গাঁও গ্রামে; ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিনের বাড়িতে। শরীয়তপুর সদর, ডামুড্যা উপজেলা, মাদারীপুরের কালকিনি ও বরিশালের মুলাদী উপজেলা থেকে অতিথিরা এসে যোগ দেন। এটি ছিল কুতুব উদ্দিনের মায়ের কুলখানির অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এক বসায় দুই হাজার মানুষের খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এ জন্য গোসাইরহাট, নাগেরপাড়া ও কালকিনি উপজেলার খাসেরহাট বাজারের সব ডেকোরেটরের দোকান ভাড়া করা হয়েছে। আলী হোসেন বাবুর্চির নেতৃত্বে ৭০ জন কর্মী গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় রান্নার কাজ শুরু করেন। খাবার পরিবেশন ও পরিচ্ছন্নতার কাজে লাগানো হয় ৩০০ জন কর্মী। নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারদের নেতৃত্বে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক কর্মী।
গরু জবাইয়ের কাজে নিয়োজিত কসাই হাসেম মিয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ২৫টি গরু জবাই করা হয়েছে। একেকটি গরুর দাম ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকা। প্রতিটি গরু জবাই করে মাংস তৈরি করতে তিন হাজার টাকা মজুরি দেওয়া হয়। আমরা ১০ জন কর্মী কাজ করছি।’
বাবুর্চি আলী হোসেন বলেন, ‘আমি ৭০ জন কর্মী নিয়ে বৃহস্পতিবার কাজ করেছি। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৩০ হাজার মানুষের খাবার রান্না করেছি। এ কাজের জন্য আমাকে এক লাখ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হবে।’
খাবার পরিবেশনে নিয়োজিত শহীদুল বলেন, সকাল ১০টা থেকে ১৫টি বৈঠকে খাবার পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ফজলুল হক শিকদার বলেন, ‘কুতুব উদ্দিনের খরচে অনুষ্ঠানটি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে থেকে এলাকার মানুষকে দাওয়াত দেওয়া শুরু করি। অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হবে।’
কালকিনির আকাল বরিশ গ্রামের সোলায়মান বলেন, ‘পাঁচ দিন আগে এই দাওয়াত পেয়েছি। সপরিবারে এসেছি।’
নাগেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এত বড় ভোজের অনুষ্ঠান এর আগে কখনো দেখিনি। হাজার হাজার মানুষ আসছে, খাচ্ছে। খাবারের কোনো কমতি নেই।’
নাগেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, ‘সামাজিক অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করা উচিত। তাই আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চৌকিদার ও স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে এখানে কাজ করাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমি একটি বড় ধরনের বিপদ থেকে মুক্ত হয়েছি। আল্লাহ আমাকে সামর্থ্য দিয়েছেন, তাই খরচ করছি।’ অনুষ্ঠানের ব্যয়ের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বড় ধরনের পারিবারিক অনুষ্ঠান করতে হলে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। এ অনুষ্ঠানটির ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগও করেননি।’
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় কুতুব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার পর তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ১৬ মাস কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালে হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। ২০০৯ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। পরে চাকরিতেও বহাল হন।
সূত্র : Click This Link