somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ দুই প্রহরের দিনকাল ....।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেদের নাকি কাদতে নেই । কিন্তু আমি খুব অবাক হয়ে আবিস্কার করলাম আমার চোখে জল । একটু আগে শিশির তার বাম হাত দিয়ে আমার ডান গালে একটা চড় বসিয়েছে। কষ্ট লাগছে কিনা বুঝতেছি না ।

এই মেয়েটাকে যেদিন প্রথম দেখেছি, শুধু তার চোখের দিকেই আমি তাকিয়ে ছিলাম । আহামরি সুন্দর চোখ তো তার ছিল-ই না বরং তার চোখ ছিল চাকমাদের মত পিচ্চি পিচ্চি । কিন্তু অদ্ভুত এক গভীরতা ছিল তার চোখে ।

এরপর কেটে গেছে বহুদিন । কিন্তু আমরা কাছাকাছি আসতে পারিনি । আমার অবশ্য এতে কোন সমস্যা হয়নি । ভালবাসলে যে এক ছাদের নিচে থাকতে হবে তাই বা কে বলেছে? এইতো বেশ ভালো, প্রত্যাশার চাপ নেই – হারাবার ও ভয় নেই । আর তাছাড়া শিশিরের মনে অনেক আগে থেকেই কেউ ছিল ।


আমার বন্ধু “কুয়েত করিম” ( পাঁচ বছর কুয়েত ছিল কিনা ) হঠাৎ করেই বলে উঠল

-“মেয়েরা ভ্যাগাবন্ড ছেলেদের প্রেমে খুব সহজেই পড়ে যায়, টেনশন নিস না । মনিষী বলেছেন”

কথাটা ভুয়া, নাহলে আমার পিছনে আজ এক ডজন মেয়ে থাকত । আফসোস তা হয় নাই ।

- যেই মনিষী এইটা বলছে ওরে মাঘ মাসে পূবাল বিলে ১০০ টা ডুব দেয়ান দরকার ।
- আরে কবি বলছেন There is a plenty of fish in the sea
- কোন কবি বলছেন? নাম বল তাড়াতাড়ি ।
- আরে বলছে এক কবি । এখন একটা চা আর একটা স্টার লাইট খাওয়া ।

চা আর সিগারেট এর বদলে কুয়েত করিমের পিঠে বিরাশী সিক্কার ঘুসি দিয়ে আমি উঠে পরলাম । এমনেই মেজাজ খারাপ তার উপর কবি আর মনিষী নিয়া লাগছে । এর মধ্যে বস ফোন দিচ্ছে । শালার বস, একদিন অফিস না গেলে কি কেয়ামত হয়ে যাবে ? বেটা বদ, খাচ্চর, ইতর । সামনেই প্রভাতী বনশ্রী বাস থেকে শ্রীপুর- বরমী বলে ডাক দিচ্ছে । কোন কিছু না ভেবেই বস এর চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে করতে উঠে পড়লাম ।

বাসে উঠলেই আমার ঘুম আসে । যেন তেন ঘুম না, কঠিন ঘুম । ঘুম যখন ভাঙল, গাড়ী তখন দাড়িয়ে আছে রাস্তার এক পাশে, চাকা পাংচার । দুই পাশেই জঙ্গল । আমি বাস থেকে নেমে সোজা হাটা দিলাম জঙ্গল এর মধ্য দিয়ে পায়ে চলা পথ ধরে । খারাপ লাগছিল না । ভুল একটাই হইসে, মোবাইলটা রেখে আসা দরকার ছিল । সমস্যা নাই, সুইচ দা ফোন অফ । শান্তি শান্তি ওঁম শান্তি ।


রাত ১ টায় যখন আমি বাসায় পৌছলাম তখন ছোটবোন জ্বরীর রুমের লাইট ছাড়া সবই অন্ধকার । আব্বা আম্মার চেয়ে জ্বরীর সাথে আমার সম্পর্ক হাজারগুণ ভাল । দরজায় আস্তে করে টোকা পড়তেই জ্বরী দরজা খুলে দিল ।
ঘরে ঢুকতেই জ্বরীর জেরা শুরু—

- কই ছিলি ?
- হন্টনে গেছিলাম ।
- কিসে গেছিলি ? বুঝিনাই- ভালভাবে বল বলতেছি, আম্মারে ডাক দিব?
- না মানে একটু হাটতে গেছিলাম আর কি ।
- হাটতে কই গেছিলি?
- গ্রামের নাম জানিনা কিন্তু জেলা গাজীপুর এইটা শিওর ।

এই বলে আমি আমার বত্রিশ দন্ত বিকাশিত করিয়া একখানা ভুবন ভোলান হাসি দিয়ে বললাম –

- যা ভাত নিয়া আয়, বেয়াফুক ক্ষুদা লাগছে আফা ।
- হলুদ দাত বের করে হাসিস কেন? তোর কি আল্লাহ কোনদিন হেদায়েত করবে না? বাসার সবাই তোরে নিয়ে কি টেনশন করে তুই জানিস । বল আর এমন করবি?
- আচ্ছা যা, আর করব না । খুশি?
- আবার যাবি না তো আমায় না বলে কোথাও ?
- আরে বললাম তো না ।
- আর সামনের বার যাওয়ার সময় আমায় নিয়ে যাবি, বুচ্ছস? আর যদি না নিস তারপর দেখিস তোকে আমি ডাল ঘুটুনি দিয়ে যদি সাইজ না করছি !


এইবার দুজনেই দন্ত বিকাশিত করিয়া হাসিতে লাগলাম ।

- দুই বানরে এই রাত্রেবেলায় কি নিয়া এত খুশি ? একটু আমিও হাসি ।

আম্মা যে কখন দরজার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই করি নাই । কেন যেন আমি বলে উঠলাম-

- আম্মা চল সামনের গ্রীষ্মের ছুটিতে নানাবাড়ি ঠাকুরকান্দী যাই ।
- “প্লীজ আম্মা, প্লীজ”। আমার সাথে জ্বরীও তাল মেলাল ।








বাস থেকে নেমে নৌকা নিয়ে নানাবাড়ি যাচ্ছি আজ অনেক দিন পর । নৌকায় ওঠার পর জ্বরীর খুশি কে দেখে । আর আম্মা গরমে তার মোটা শরীর নিয়ে রাগে গজ গজ করতেছে । আম্মাকে রাগানোর জন্য আমি বললাম-

- আম্মা তোমার কষ্ট দেখে আমার আর সহ্য হচ্ছে না ।

আম্মা কিঞ্চিৎ অবাক হলেন বৈকি-

- আজ যদি আমার একটা বউ থাকত তাইলে কি আর তোমার এতো কষ্ট করতে হয় । আম্মা আমাকে একটা বিয়া করায়ে দেও না আম্মা ।

আম্মা রাগের সহিত উত্তর দিলেন-

- থাপড়ায়ে পা ভেঙ্গে ফেলব হারামী ।

নৌকার গলুইয়ের উপর থেকে জ্বরীর কণ্ঠ শোনা গেল-

- আম্মা থাপড়ায়ে কিভাবে পা ভাঙ্গবা ?

- কাছে আয় ছোট বানর, দেখাই ।



মিশন কমপ্লিট । আমি প্রফুল্লচিত্তে নৌকার গলুইয়ের উদ্দেশ্যে প্রস্থান করলাম । নাহ আমার এই জীবনে আমার এর থেকে বেশি ভালবাসার না আছে অভ্যাস, না আছে দরকার । গুন গুন করে গাইছে মন, “যেটা ছিলনা ছিলনা সেটা না পাওয়াই থাক, সব পেলে নষ্ট জীবন” ।
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×