somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছুডুবেলার গপ্পঃ এক যে ছিল পান্তাবুড়ি......।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক দেশে ছিল এক পান্তাবুড়ি । তার তিন কূলে কেউ ছিল না । সে ছিল অনেক গরীব আর অভাবী । দু- বেলা ঠিকমত খেতেই পেত না । অনেক কষ্টে সে রাতের খাবারের ব্যাবস্থা করত শুধু । আর সেই খাবার থেকে বাঁচিয়ে কিছু ভাত সে পানি দিয়ে রেখে দিত পরের দিনের সকালের জন্য । রোজ সকালে বুড়ির দিন শুরু হত সেই পান্তাভাত খেয়ে । বুড়ির চাহিদা কম ছিল তো, এজন্য একটু কষ্ট হলেও তার দিন ভালই যাচ্ছিল ।

কিন্তু এভাবে বেশি দিন বুড়ির কপালে সুখ সইল না । শোন একদিন হল কি, এক চোর আসল বুড়ির বাড়িতে রাতের বেলায় । বুড়ি তো তখন ঘুমে অচেতন আর এদিকে চোর বুড়ির ঘরে চুরি করার জিনিস খুজছে । কিন্তু ঐ যে বললাম না, বুড়ি অনেক অভাবী ছিল তাই চোর তার ঘরে চুরি করার কিছুই পেল না । শেষে চোর রেগেমেগে বুড়ির পান্তাভাত খেয়ে চলে গেল ।

সকালে ঠাণ্ডা বাতাসে বুড়ির ঘুম ভাঙ্গল । বুড়ি ভাবল ঘরের দরজা বন্ধ করতে বোধ হয় ভুলে গেছি । একটু পড়েই বুড়ি বুঝল যে ঘরে চোর এসেছিল । প্রথমে বুড়ি একটু ভয় পেলেও যেইনা দেখল তার পান্তাভাত চোরে খেয়ে শেষ করে গেছে ওমনি বুড়ির কষ্টে আর রাগে বুক ফেটে কান্না আসতে লাগল । বুড়ি শেষে নিজেকে এই ভেবে সান্তনা দিল যে এখন থেকে সে সাবধানে থাকবে, তাহলেই আর এমন অঘটন ঘটবে না । কিন্তু পর পর তিনদিন যখন চোর বুড়ির পান্তাভাত সাবাড় করে দিল, বুড়ি তখন রাগে, দুঃখে, কষ্টে থানায় গিয়ে চোরের নামে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিল ।

এর পরদিন সকালে বুড়ি থানার উদ্দেশ্যে রওনা হল । পথে যেতে বুড়ির সাথে দেখা হল শিং মাছের । শিং মাছ বলল, “কই যাও পান্তাবুড়ি । তোমার কি হয়েছে ”? পান্তাবুড়ি তার দুঃখের কথা শিং মাছকে সব খুলে বলল । শুনে শিং মাছ বলল, “আমাকে তোমার সাথে নাও । আমি তোমার কাজে লাগব ।” কিন্তু বুড়ি বলল, “আগে আমি থানায় যাই বাপু, যদি এরপর দরকার হয় তখন তোমায় আমার সাথে নিয়ে যাব”।

এভাবে থানায় যাওয়ার পথে বুড়ির সাথে দেখা হল কয়লা, বেল, গোবর, কাস্তে এবং বালুর । সবাই বুড়ির মন খারাপের কারণ জেনে বুড়ির সাথে যেতে চাইল । কিন্তু বুড়ি সবাইকে একই জবাব দিল, “থানায় কাজ না হলে তখন নিয়ে যাবে”।

অবশেষে বুড়ি থানায় পৌছাল । কিন্তু বুড়ির নালিশে কেউ কান-ই দিল না । সারাদিন কত কাজ তাদের, দেশে কত মানুষ খুন হচ্ছে, ডাকাতি হচ্ছে, গণ্ডগোল তো আছেই । তাদের কি আর এই পান্তাবুড়ির কথা শোনার সময় আছে । পান্তাবুড়ি না হয়ে পোলাওবুড়ি হলে তাও না হয় একটা ব্যাপার ছিল । সুতরাং পান্তাবুড়িকে হতাশ হয়ে থানা থেকে ফিরতে হল কিন্তু ফেরার সময় শিং মাছ, কয়লা, বেল, গোবর, কাস্তে এবং বালুকে সাথে করে নিয়ে আসতে ভুলল না ।

পান্তাবুড়ি তার সারাদিনের কাজ শেষে রাতের খাবার খেয়ে যখন ভাতের হাড়িতে পানি দিতে গেল তখন তার মধ্যে শিং মাছও ছেড়ে দিল । আর কয়লায় আগুন জ্বেলে রাখল চুলায়, তবে আগুনে বেলকে রাখতে ভুলল না । চুলার সামনের পাশে রাখল গোবর । আর দরজার মেঝের কাছে বালু রেখে তাতে কাস্তে লুকিয়ে রাখল । সব কিছু শেষে বুড়ি ঘুমাতে চলে গেল ।

প্রতিদিনের মত সেই রাত্রেও চোর আসল আর কিছুক্ষন পর পান্তাভাতের হাড়ি নিয়ে বসল । চোর যেই না হাড়িতে হাত ঢুকিয়েছে ওমনি শিং মাছ তার হাতে কাটা ফুটিয়ে দিল । চোর তো তখন প্রচণ্ড যন্ত্রণায় অস্থির । হঠাৎ চোর দেখল কি যে চুলায় আগুন জ্বলছে । আগুনে হাতটা একটু সেকে নেয়ার জন্য চোর যেই না চুলার কাছে গেল, তখনি চুলায় রাখা বেলটা বিকট শব্দে ফেটে গেল । বেলের কিছু টুকরো চোরের চোখে লেগেছে তো, এজন্য ব্যাটা চোর কিছুই দেখছে না । তার পা গিয়ে পড়ল সোজা গোবরের ভিতর । চোর খানিকবাদে আশেপাশে চেয়ে মেঝের কাছে বালু দেখে তাতে পা মুছতে গেল । কিন্তু পা মুছতে গিয়ে বেচারার পা’টাই কেটে গেল বালুতে রাখা কাস্তের কারণে ।

কাটা পা নিয়ে হাটতে না পেরে চোর মেঝের পাশেই সারারাত বসে রইল । আর ওদিকে সকালে উঠেই পান্তাবুড়ি দেখল চোর কাটা পা নিয়ে বসে আছে । এরপর আর কি, বুড়ি গ্রামের লোকজন ডেকে চোর কে ধরিয়ে দিল আর আমার গল্পটিও ফুরাল ।

[অফটপিকঃ গল্পটা ছোটবেলায় মা’র কাছে অনেক বার শুনেছি । তবে মা অনেক ভাল করে বলতে পারত, আমার মত ফালতু না। ]
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয় দিবসের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে । সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ২০২৫, ১৬ই ডিসেম্বর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৯




দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রানের এক সাগর রক্তের বিনিময়। দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারানো। লক্ষ শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত‍্যু। এক কোটি মানুষের বাস্তুহারা জিবন। লক্ষ কোটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×