কিন্তু আজ ব্লগে লেখার সুবিধাই যেন নতুন করে মনে করিয়ে দিল হারিয়ে যাওয়া দিনগুলির কথা।খুন্তি রেখে ধুলোপড়া কলম তুলে নেয়ার দুঃসাহস জোগাল এই ব্লগ।নিজেকে ধাক্কা টাক্কা দিয়ে কোনমতে বের করে আনলাম একটি গল্প।সবই কাল্পনিক।যেখানে চোখ বুজলেই চোখে ভেসে ওঠে দুপুরের লাঞ্চ,রাতের ডিনারের মেন্যু,সেখানে কাল্পনিক কোন গল্প লেখা যে বড়ই কঠিন তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম লিখতে গিয়ে।তবু লিখলাম।প্রচুর ভুল ভ্রান্তি থাকা সত্ত্বেও বিনয়ের সাথে শেয়ার করলাম ব্লগে।খুন্তি আর কলম একসাথে চালিয়ে নেয়ার সামান্য প্রয়াস!]
(এক)
"আপনার চুড়ির মিষ্টি আওয়াজটা বেশ লাগছে।"
আমি চমকে পাশে মুখ তুলে তাকালাম।শেভ না করা দিন দুয়েকের খোচা খোঁচা দাড়িসমেত উজ্জ্বল একটি মুখ,দীপ্তিময় দুটো চোখ,চোখের কোনে দুষ্টু এক ঝলক হাসি।
"আমাকে বলছেন?'অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
"জ্বী,আপনাকেই।আপনি যখনি হাত নাড়ছেন তখনি টুং টাং শব্দ হচ্ছে।বেশ লাগছে।"
আমি মৃদু হাসলাম।"তাই নাকি?"তারপর একটু চুপ থেকে যোগ করলাম,"সব চুড়ির আওয়াজই তো একরকম জানি।এর মধ্যে বিশেষত্ব কি আছে?তাছাড়া যাদের হাতে চুড়ি থাকে না তাদের সাথে আলাপ শুরু করেন কি বলে বলুন তো?"
মুহূর্তেই দরাজ গলায় হেসে উঠল ছেলেটি। চমৎকার প্রানখোলা হাসি।কোন রকম ভনিতা নেই।
"ধরা পড়ে গেছি ,তাই না?'
এইবার আমার পালা। মৃদু হেসে বললাম।"বয়স তো কম হল না,এখন কি আর এসব কাজে লাগে?"
"আমি কিন্তু কাজে দেয়ার জন্য কিছু বলিনি।পাশে বসে মিষ্টি শব্দটা ভাল লাগছিল,তাই বলে ফেললাম।আপনি পুরুষ হলেও বলতাম। কিন্তু পুরুষরা তো আর চুড়ি পরে না,তাই বলা হত না হয়ত।"একটু চুপ থেকে বলল,"আসলে পাশাপাশি এতদুর যাব, কথাবার্তা না হলে ভাল লাগে নাকি বলুন তো?"
কিছু বললাম না। আসলে ছেলেটি যদিও গায়ে পড়ে আলাপ জমাতে চাচ্ছে,কিন্তু বিরক্ত লাগছে না মোটেই।হয়ত লম্বা দুরত্ব একা পাড়ি দিতে হবে তাই,কিংবা হয়ত ছেলেটির ব্যক্ত্বিত্ব!চোয়াড়ে টাইপ মনে হয় না কথা শুনে।বরং বেশ সোজা সাপ্টাই মনে হচ্ছে।কে জানে কি?কিন্তু এই মুহূর্তে একাকিত্বের বোঝা একটু হলেও কম হওয়াতে যেন স্বস্তি পেলাম।
"কি ভাবছেন বলুন তো?"
"নাহ,তেমন কিছু না।"
"কিছু তো ভাবছেন,কিন্তু বলতে চাইছেন না।....আচ্ছা থাক,বলা লাগবে না।বরং অন্য কথা বলি।-"মোবাইলের রিং টোনে কথা আটকে গেল ছেলেটির।পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে একটু হেসে বলল,"স্যরি,অফিস থেকে।কলটা ধরতেই হচ্ছে।"
"ওহ,শিওর!'আমি হাসি ফিরিয়ে দিলাম।
ছেলেটি কথা বলেই চলেছে।কথা শুনে ওইপাশের জন অফিসের বস বলেই মনে হচ্ছে।একটু পর পর 'জ্বী স্যার' শুনতে পাচ্ছি।আমি ওড়নাটা টেনে নিয়ে ফিরে তাকালাম জানালার বাইরে।মনটা হু হু করে উঠল।ভেসে উঠল নাফিসের মুখ।কি এক ব্যাথায় মুচড়ে উঠল বুকটা।গতকালই শেষ দেখা হল তার সাথে।সব ছেড়ে চলে গেল নিউ ইয়র্ক ,নতুন জীবনের সন্ধানে।যাওয়ার আগে কর্তব্য করতে ভুলেনি। সম্পর্কটুকু শেষ করে দিয়ে গেছে।আর ফিরিয়ে দিয়ে গেছে সব চিঠি পত্র।বুদ্ধিমান ছেলে।যাওয়ার আগে কোন পিছু্টান রেখে যেতে চায়নি।আমিও বাধা দেইনি।যে চলে যেতে চায়,তাকে কি শিকলে বাধা যায়?
আমার জীবন আজ শুন্য।একা!বড় একা!এই একাকিত্ব বয়ে চলতে হবে কতদিন?কত বছর?মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কি করে?মানুষের জীবনে ক্যারিয়ারটাই কি সব?ভালোবাসাটা কিছুই নয়? তাহলে কি মন,ভালবাসা, সম্পর্ক বলে আসলে কিছু নেই?সব মিথ্যে?সব কল্পনা?.............
(ক্রমশ)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৩:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



