.............জীবনে ক্যরিয়ারটাই কি সব?ভালোবাসাটা কিছু নয়?
"না।"
"কি?"চমকে উঠলাম আমি।অবাক হয়ে তাকালাম ছেলেটির দিকে।থট রিডার নাকি?
"বললাম ,না,মনকে উদাস করবেন না।"পকেটে মোবাইলটাকে রেখে আমার দিকে ফিরে বলল,"কথা বলতে বলতেই খেয়াল করছিলাম,আপনার মুখে এক বেদনার গাড় নীল রঙ জমে উঠছে।মুখ মলিন,চোখ ভেজা ভেজা।পাশে বসে এমন মলিন মুখ দেখতে ভাল লাগছিল না,তাই না করলাম"
"মুখ ফিরিয়ে রাখুন।"
"কি?!"
"মুখ ওদিকে ফিরিয়ে রাখুন।তাহলেই আর কষ্ট করে দেখতে হবে না।আমি তো আর তাজমহল নই যে পাশে বসে বসে দেখতে দেখতে যাবেন!"
দরাজ গলায় হেসে উঠল ছেলেটি।"উফ,ভীষন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।কথার সাথে মুখের হাসিটি না থাকলে ভেবেই নিতাম আপনি রেগে গেছেন।"
ভ্রু কুচকে বললাম,"এখন কি মনে হচ্ছে?"
"এখন মনে হচ্ছে আপনি অত সহজে রাগ করেন না।সময় লাগে।....কিন্তু আমি ওই সময় দিতে নারাজ।এনিওয়ে,মাইসেলফ তন্ময়।আপনি?"
"আমি রোদেলা।"
"পরিচিত হয়ে খুশী হলাম।আচ্ছা,এবার কি মন খারাপের কারনটা জানতে পারি?"
আমি সরাসরি তাকালাম ছেলেটির দিকে।কত বয়স হবে?৩০/৩২?চেহারা ভারিক্কি হলেও চোখেমুখে কি এক ছেলেমানুষী,মায়া আর মমতাকে নিয়ে জড়াজড়ি করে আছে।।দূ'চোখে রাজ্যের সরলতা।এতটাই সরল , মনের কথা যে সবসময় মুখে বলতে হয় না তাও বোধকরি জানে না।
"সব কথা জানতে হয় না,তন্ময়।"
"হুম,তার মানে বলতে চান না।"একটু শ্রাগ করল।"ঠিক আছে,জোর করব না।কিন্তু জানেন নিশ্চয়ই,দূঃখকে ভাগ করে নিলে দুঃখ কমে!"
"কিন্তু দুঃখীর সংখ্যা বাড়ে।"
"তারমানে?"
"দেখুন,আজ আমি শূধু দুঃখী।কিন্তু আপনাকে বলামাত্র আপনারো দুঃখ হবে।তখন দুঃখীর সংখ্যা বেড়ে হবে দুই।তাই না??"
"তাই তো!এভাবে তো ভাবিনি!"
"এবার ভাবুন।"
"কিন্তু সময় কই?"
"মানে?"
তন্ময় পকেট থেকে একটি কার্ড বের করল।ভিজিটিং।হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,"সংখ্যা বেড়ে গেলে ক্ষতি নেই,তবু দুঃখ ভাগ হয়ে যাক।................এই আমার কার্ড ।ফোন নম্বর দেয়া আছে।আশা করি আজ বিকেলেই একটি কল পাব।আর বন্ধুত্বের ইনভাইটেশন!"
সশব্দে হেসে উঠলাম আমি।কার্ডটাকে হাতে নিয়ে বললাম,"এত দ্রুত!"
"আমার স্টপেজে চলে এসেছি।সময় কই?না ভাবনার,না বন্ধুত্বের!তাই একটু সময় চাইছি।কৃপাপ্রার্থী!একটা কল শুধু,প্লিজ।"
সত্যি কৃপাপ্রার্থীর মত করুন দৃষ্টি নিয়ে তাকাল,কিন্তু সরলচোখের কোনে দুষ্টু হাসি।
আমি মাথা নেড়ে বললাম,"ঠিক আছে।"
"আজ বিকেলে?'
"আজ বিকেলে।"
"আসি তবে।"উঠে দাঁড়াল তন্ময়।"ভাল থাকবেন।"
দৃঢ় পায়ে নেমে দাড়াল বাস থেকে।ঘাড় ফিরিয়ে হাত নাড়াল।আমি দেখলাম,পারলাম না।হাতদুটো যেন ভারী হয়ে গেছে।ধীরে ধীরে তাকে ফেলে এগিয়ে চললাম।পেছনে পড়ে রইল এক বন্ধুত্বের বাড়ানো হাত।
এতদিন যাকে বন্ধু ভেবে কাছে টেনেছিলাম,সে আজ এক কথায় পর হয়ে গেল।আর,চেনা নেই,জানা নেই কে একজন হুট করে বলে বসল,বন্ধু হতে চাই!এভাবেই কি শুন্যস্থান পুরন হয়?ঠিক যেন নদীর জলে কচুরিপানার মত!হাত দিয়ে একটাকে সরালেই আরেকদিক থেকে পানা এসে জমে।মানুষের জীবনটাও কি তাই?
না,তা হবে কেন?এত সহজে ক্ষত সারে না!খুব ধীরে ধীরে।তারপর একদিন হয়ত মিলিয়ে যায় সম্পুর্ন।কিন্তু ক্ষতের দাগ থেকে যায় আজীবন।জীবনের শুন্যস্থান ও পুরন হয় না কোনোদিন।আমাকেও এক বুক শুন্যতা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে আমৃত্যু।
"আপা,টিকেট!"
চমকে উঠলাম কন্ডাক্টরের চিল চিৎকারে।ঝটপট ব্যাগ হাতড়ে টীকেট বের করে হাতে দিলাম।কন্ডাক্টর টিকেট চেক করে চলে যেতেই আবার জানালার বাইরে দৃষ্টি মেলে দিলাম।এক বাস লোকের ভেতরে থেকেও মুহুর্তেই একা হয়ে গেলাম আমি।হারিয়ে গেলাম দূরে,কোন এক বৃষ্টিঝরা বিকেলে।
__________________________________________________
"আপা,আপনার স্টপেজ!জলদি নামেন।"
এক ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে এলাম।তড়িঘড়ি সিট থেকে ঝোলা আর ছাতা নিয়ে নেমে পড়লাম বাস থেকে।হোঁচট খেয়ে উলটে যেতে নিয়ে সামলে নিলাম নিজেকে।গোছগাছ করে ফুটপাতে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই বাসটা ছেড়ে দিল।
"এই,দাঁড়ান,দাঁড়ান।বাস থামান।"
চিৎকার করে এগিয়ে গেলাম বাসের দিকে।কিন্তু ততোক্ষনে দেরী হয়ে গেছে।বাস চলে গেছে সীমানার বাইরে।অপসৃ্য়মান বাসটির দিকে নির্বাক তাকিয়ে থাকলাম শুধু।ধীরে ধীরে গতি বাড়িয়ে চলে গেল বাস।যার মাঝের দিকের ডান পাশের সীটে পড়ে আছে একটি ভিজিটিং কার্ড!
হাত থেকে কখন টিকেট বের করতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল ,আর তোলা হয়ে ওঠেনি।হারিয়ে গেল তার নাম ঠিকানা।হারিয়ে গেল আরেকজন বন্ধু হতে চাওয়া কেউ!হায়!এভাবেই হারায় মানুষ!হারিয়ে যায় এক বিকেলের কথা দেয়া একটি কল!
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশের দিকে তাকাই।মেঘলা আকাশ।আমার মনের মতই অন্ধকার জমে আছে।কোথাও কোন আলো নেই।......ছাতাটাকে খুলে নিয়ে হাঁটা দেই আমার গন্তব্যে।আমার একাকী বাসগৃহে!যেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে বিশাল শুন্যতা!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ২:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



