দেশের পাহাড়ী এলাকায় সহিংসতা দেখে অস্থির বোধ করছি। তাই আমার ভাবনাগুলো শেয়ার করলাম।
পুরো ঘটনায় অনেকগুলো পক্ষ আছে, সাধারন বাংগালী, সাধারন পাহাড়ী, সেটলার, আর্মি, সরকার, জনসংহতি সমিতি,সুবিধাবাদী শ্রেনী, বাইরের দেশ।
যতদূর দেখেছি বা জানি - সাধারন পাহাড়ীরা খুবই সাধারন এবং সহজ সরল হয়, খুব বেশি চাওয়া পাওয়াও ওদের নেই। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এই মানুষগুলোকে উস্কানো হয়, এই উস্কানিগুলো অনেক সময়ই সেটলাররা দিয়ে থাকে, আর তার ফলে শুরু হয় দুই গোষ্ঠী মাঝে সমস্যা, সেনাবাহিনী তখন নেয় একটি পক্ষ - যা সবসময়ই সেটলারদের পক্ষে যায়। আর পাহাড়ীদের এই ক্রোধ কাজে লাগায় - কখনও সরকার, কখনও সমিতি, কখনও সুবিধাবাদী শ্রেনী বা দল, কখনও বাইরের দেশ।
একজন সাধারন বাংগালী বা একজন সাধারন পাহাড়ী কোনভাবেই বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় বলে আমার মনে হয় না। বরং তারা চায় ন্যায্যভাবে বাঁচতে।
গত কয়েকদিনের ঘটনার ক্ষেত্রে পাহাড়ী - সেটলার দ্বন্ধের সাথে যোগ হয়েছে আরো কিছু ব্যাপার।
১। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভিত্তিক সংস্থা চিটাগাং হিল ট্র্যাকটস কমিশন যখন খুব তৎপর এবং তাদের ২/১ কমিটি মেম্বার যখন ঢাকায়, সেই সময় এমন ঘটনা ঘটছে। এর সাথে যোগ হয়েছে ভারতের উস্কানী, আমার দেশের সমস্যায় ওরা কেন জাতিসংঘে আবেদন জানাবে?
২। এই কমিশনের মেম্বাররাই পূর্ব তিমুরকে স্বাধীনতা দিয়েছিল। এদের উদ্দেশ্য খুব একটা সৎ নয়, তা স্পষ্টতই বোঝা যায়।
৩। অনেকেরই একটা ভুল ধারনা আছে যে বাংগালীরা পাহাড়ে গিয়ে বসবার করতে পারবে না, এটি সম্পূর্নই ভুল একটা ধারনা। এরকম কোন আইন নেই বা কোন দেশের হিসেবে থাকতেও পারে না। বসবাসের অধিকার মানে এই নয় যে জমি দখল। জমি দখল করে বসবাস করা অন্যায়। এই ব্যাপারটি সচেতনভাবে ভুল করে উপস্থাপন করছে একটি মহল পাহাড়ী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে।
৪। তার সাথে এই ব্যাপারটিও ঠিক যে সীমান্ত এলাকা বলে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য জায়গাটি খুবই গুরুত্বপূর্ন, বিশেষ করে আমাদের প্বার্শবর্তী দাদারাও খুব একটা মহৎ নন। তারাও যে পাহাড়ীদের অবস্থা কাজে লাগিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন, সেটিও পরিস্কার।
৫। এগুলোর সাথে যোগ হয়েছে আমাদের সেনাবাহিনীর চিরাচরিত দমননীতি বা নির্যাতন কৌশল, পাহাড়ী বাংগালী দুপক্ষেরই হিংস্র হয়ে ওঠা।
৬। এই ঘটনার সুবিধাবাধী শ্রেনি হিসেবে জামাতের ব্যাপার একদম উড়িয়ে দেয়া যায় না।
- সব মিলিয়ে আসলেই একটি খারাপ অবস্থা'র ভেতর দিয়ে যাচ্ছি আমরা সবাই। উপরের পয়েন্টগুলো খুব সুন্দর করে লেখা আছে ব্লগার পি মু্ন্সীর পোস্টে: Click This Link
ঐ পোস্টে করা ব্লগার জিপিএস এর একটি মন্তব্য তুলে দিচ্ছি :
একদিকে গণতান্ত্রিক নাগরিকদের নিরাপোষ নীতিগত অবস্থান দরকার যেকোনো অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে, সেটা যেখানেই হোক না কেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো একটা জিওস্ট্রেটেজিক জায়গায়, আবার রাষ্ট্র সত্তা ও এর নিরাপত্তার হুমকি মোকাবেলার জন্য সতর্কতা জারি রাখার আবশ্যিক দিকটাকে কোনোভাবেই দুর্বল না করা। এই উভয়বিধ দিকের কোনো সমন্বয় স্বাভাবতই গরহাজির।
এর সাথে যোগ করতে চাই - নিশ্চিত করতে হবে পাহাড়ীদের ন্যায্য অধিকার নিরাপত্তা এবং বৈধভাবে বসবাসকারী বাংগালীদের নিরপাত্তা, জমি দখল করে অনুপ্রবেশকারীদের দমন করতে হবে।
আমি মনে করি না যে পাহাড়ীরা ভাবে বসবাসকারী বাংগালী মানেই খারাপ। যারা খারাপ ওদেরকে দমন করা খুব একটা কঠিন ব্যাপার নয়।
আর সেই সাথে বিদেশী কুচক্রীমহলগুলোকেও দূরে রাখতে হবে এই ব্যাপার থেকে।
পাহাড়ীরা হয়ত বাংগালী নয়, কিন্তু তারা বাংলাদেশী, এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ওরাও যু্দ্বে করেছে, দেশটির উপর আমার যেমন অধিকার, ওরও সমান অধিকার। আর সেই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।
স্বপ্ন দেখছি একটি সুন্দর বাংলাদেশের যেখানে পাহাড়ী বাংগালী একসাথে মিলেমিশে থাকতে পারবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ ভোর ৪:১২