somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিস্টেম ব্রেকডাউন। :|:|

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালে ঘুম থেকে উঠার পরই মেজাজ খারাপ।

বাংলালিংক থেকে ফোন এসেছে। এক সুরেলাকন্ঠি আমাকে নানা অফার দিচ্ছে। একেতো রাতে ঘুম হয় না। কোন রকম ভোরের দিকে একটু ঘুমে ধরছিলো। তার উপর সকাল সকাল ফোন দিয়া কাঁচা ঘুমটাই ভেঙে দিয়ে বলে-
--স্যার বাংলালিংক থেকে টুম্পা বলছি। সময় হবে কি দুমিনিট কথা বলার?
-না।
--স্যার দুমিনিট মাত্র। তেমন কোন ক্ষতি হবে না নিশ্চয়ই!
-ক্ষতি না হলেও না।
--স্যার আপনি আমাদের কোম্পানীর অত্যন্ত পুরানো গ্রাহকদের একজন। এই কারণে আমাদের সব এক্সক্লুসিভ অফার আসলে আপনাদেরই আগে জানানো হয়। দুমিনিট হলেই হবে স্যার।
-নতুন পুরাতন বুঝি না। কথা বলবো না।
-- প্লিজ স্যার একটু।
-একটুও না।
--ওকে ঠিকাছে স্যার তাহলে একমিনিট?
-তবুও না।
--স্যার আমাদের এসেছে নতুন এক প্যাকেজ। পিক আওয়ারে বাংলালিংক টু বাংলালিংক এ কথা বলুন মাত্র...

আমি ফোনটা কেটে দিলাম। এই মেয়েকে বুঝাবে কে?

মেয়ে বুঝলো কি না সেটা পরের ব্যাপার। আমার ঘুমের চৌদ্দটা বাজলো এইটাই হলো আসল কথা। তার থেকেও খারাপ ব্যাপার হলো আমি ডাবল মেজাজ খারাপ করে বসে রইলাম।

ডাবল মেজাজ খারাপ করার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আপনার ভালো কথাও এখন এসিডের মত লাগবে। আমিও তার ব্যতিক্রম না। বরঞ্চ আমি তার তিন কাঠি উপরে। তিন কাঠি উপরে মানে আমি প্রথমে কাউকে অকারণেই ভীষণ ধমকাধমকি করি। এরপর দরজা বন্ধ করে বসে থাকি। তারপর ঘর থেকেই বেরিয়েই যাই। আজ-ও তার ব্যতিক্রম হলো না। কাজের মেয়ে সকাল সকাল এসেই ঘরে ঝাড়ু দেওয়া শুরু করেছে। কি আশ্চর্য্য! সকাল বাজে মাত্র ১০টা। এখনই তোর ঘর ঝাড়ু দেওয়ার কি আছে? আরো পরে আয়! তাছাড়া আমি ঘরে হাফপ্যান্ট পড়ে ঘুমাই। এই মেয়ে যখন তখন ঢুকে পড়ে। তারপর আড়চোখে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চিকণ দৃষ্টি দেয়। তারপর সময় নিয়ে ওড়না পেচাইতে থাকে। এসব শেষ হলে ঘর ঝাড়ু দেয়। প্রতিদিন কিছু বলি না। আজকে ডাবল মেজাজ খারাপ। তাই ওর কপালে খারাপি তো থাকবেই। আজকে ওর ওড়নার একদিন কি আমার একদিন।
-কিরে তুই এত সকাল সকাল আসলি যে?
-- ওমা! বেলা বাজে ১০টা। আফনে এইতিরে কন সক্কাল সক্কাল?
-আমার কাছে ঐটাই সকাল। ১০ টা মানে ভোর রাত। ১১টা মানে ফজর। যা এখন।
--অকি। তাড়াইনের লিগা ব্যতিব্যস্ত ক্যান? খালাম্মা কইছে ঘর ঝাড়ু দেতে। তাই দেতেই হইবে। না দেলে মোরে বকপেনে।
- খালাম্মার গুষ্টি গিলাই। যা এখান থেকে!
--অকি ভাইজান! খালাম্মার গুষ্টি আর আপনের গুষ্টি তে তফাৎ কনে? নিজের গুষ্টি কিলাইলে হইবে?

আমি কিছু বলতে গিয়ে আটকে গেলাম। কাজের মেয়ে ঘর ঝাড়ু দিয়ে চলে গেলো। ওড়না আজকে পেচিয়েই এসেছে। তাই ওটা নিয়েও ঝাড়ি দিতে পারলাম না। ডাবল রাগের নিয়মানুযায়ী আমার এখন দরজা আটকে দেওয়ার কথা। কিন্তু দরজা আটকাতেও মন চাচ্ছে না। রাগ এখন আর ডাবল নাই। ট্রিপল হয়েছে। তাই মাঝের স্টেপ বাদ। আমি ঘর থেকেই বেরিয়ে গেলাম।

আমার আগে কখনো ট্রিপল রাগ ধরেনি। তাই বুঝছি না সামনে কি হবে! আমি কি কাউকে খুন করে বসবো? নাকি মাথা ফাটানোতেই সীমাবদ্ধ থাকবো... এখনো বুঝতে পারছি না। তবে কিছু একটা যে হবে এটা নিশ্চিত। আমি কিছু একটা করে ফেলবো ভাবতে ভাবতে সামনে আগাতে থাকি। হাটতে হাটতে পার্কে ঢুকে পড়ি।


এই পার্ক আমার অতি প্রিয় একটা জায়গা। এখানে ডেইলি মলি তার আম্মাকে নিয়ে হাটতে আসে। দুবার। বেলা এগারোটায় একবার। বিকাল ৫টায় আরেকবার। আমি সাধারণত নিচে আসি না। জানালা দিয়েই দেখাদেখির কাজটা সারি। আজকে ট্রিপল মেজাজ খারাপ। নিচে না এসে উপায় নেই। আমি বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম। মলিকে দেখলে আমার মেজাজ ঠান্ডা হবেই।

--ভাইসাহেব কি আগাখান রোডটা চিনেন?
চমকে তাকাতেই দেখি পোটলা পাটলি সহ এক বয়স্ক লোক। হাতে একটা কাগজ।
-না।
--ভাই সাহেব বড়ই বিপদে পড়িয়াছি। আধ ঘন্টা ধরিয়া খুঁজিয়া বেড়াইতেছি। কেহই সন্ধান দিতে পারিতেছে না। আপনি একটু ঠিকানাটা বলিয়া দিবেন কি?
- বললাম তো চিনি না।
-- ভাইসাহেব তো এই এলাকাতেই থাকেন, তাই না? আপনি একটু চিন্তা করিলেই বলিতে পারিবেন। আমাকে বলা হইয়াছে আগাখান রোড হইতে পূর্ব পার্শে যে গলি রহিয়াছে, উহাতে যাইয়া হাতের ডানের গলি ধরিতে। সেই গলির দক্ষিণ পার্শে মালঞ্চ ভিলায় আমার দূর সম্পর্কের এক বোন বসবাস করিয়া থাকেন। উনি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ। সেই অসুস্থ আত্মীয়াকে দেখিতে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়া আসিয়াছি। কিন্তু আগাখান রোডটা খুঁজিয়া পাইতেছি না। উহা পাইলেই আমি চিনিয়া নিতে পারিব। এখন মহাশয়, আপনার যদি একটু করুণা হয়।

একে তো আমি ঢাকার ছেলে। উত্তর দক্ষিণ ভালো চিনি না। তার উপর এই লোক সাধু ভাষায় দিকনির্দেশনা চাচ্ছে! ভাইসাহেব থেকে রীতিমত মহাশয়!! আমার মেজাজ ক্রমেই আরো খারাপ হতে লাগলো।
-বললাম তো আংকেল চিনি না। তাছাড়া আমি উত্তর দক্ষিণ-ও ভালো বুঝি না। পূর্ব পশ্চিম শুনলেই আমার শরীরে কাপন দিয়ে জ্বর আসে। সুতরাং আপনি আসলে কোথায় যেতে চাচ্ছেন সেটাও বুঝছি না। আপনি কাইন্ডলি অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করেন।
--ভাইসাহেব! তাহলে আপনি ঠিকানাটা একটু পড়ে দেখিবেন কি?
-উফ কি যন্ত্রণা! আংকেল আপনি অন্য দিকে যান তো!

আমার ‘করুণা’ হলো না। ভদ্রলোক ভীষন মন খারাপ করলেন। মন খারাপ করে দাড়িয়েই রইলেন। উনি দাঁড়িয়ে থাকুক। তাতে আমার কি? আমি তাকিয়ে আছি পার্কের দরজার দিকে। মলি তার মাকে নিয়ে হাজির।

মলি কি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে? আরে হ্যাঁ তাই তো! শুধু তাকিয়েই নেই... একেবারে অপলক দৃষ্টি যাকে বলে। যেন আগে কখনো দেখেনি! কি আশ্চর্য্য! ওর আমাকে দেখলে এমন অনুভূতি হয়?! জানলে তো আরো আগে থেকেই পার্কে আসতাম! আমার শরীরে শিহরণ জাগতে থাকে। আজকের দিনটা তাহলে একবারে খারাপ নয়...

আমাকে অবাক না, ডাবল অবাক-ও না, একেবারে ট্রিপল অবাক করে দিয়ে মলি দৌড়ে আসে। আমি উত্তেজনায় উঠে দাড়াই। কিন্তু মলি এসে জড়িয়ে ধরে আমার সামনে দাঁড়ানো সেই সাধু ভাষার আংকেলকে!
--মামা! তুমি কত দিন পর এলে বলতো?
লোকটাও যেন সৎবিৎ ফিরে পায়।
-মা মলি! তুমি কেমন আছো বলোতো?
--এইতো ভালোই। কখন আসলেন? এইখানে দাঁড়িয়ে যে!
- তোমাদের বাড়ি যে খুঁজে পাইতেছিলাম না মা! ইনাদের জিজ্ঞাসা করিলেও কেহই চিনিতে পারিতেছেন না।

আংকেল অসহায় হয়ে প্রথমে হাতের ঠিকানাটা দেখালেন। এরপর আমাকে। মলি গাধা মেয়ে না। আংকেলের চেহারা দেখেই যা বোঝার বুঝে নিলো। তারপর আমার দিকে যে দৃষ্টিটা দিলো তার মানে এই-- ‘ ছোকড়া ,তোমার আর কোন আশাই নাই’।

মলি তার আংকেল ও মা কে নিয়ে চলে গেলো। ওরা পার্কের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতেই আমার স্পষ্ট মনে পড়লো আগাখান রোড হলো আমার বাসার তিন গলি পড়েই। প্রথম যেদিন আমি মলিকে দেখি সেদিন ফলো করে বাসা পর্যন্ত গিয়েছিলাম। দুগলি আগের রোডের নাম আগাখান রোড। নিজেকে বলেছিলাম ‘এই নাম কোন দিন ভুলবিনা’। কিন্তু ত্রিপল রাগের মাথায় নিজেকে জাহির করার এমন এক সুযোগ আমি বস্তায় ভরে পানিতে ফেলে দিলাম। এরপর আর পার্কে থাকার মানে হয় না। মেজাজ এখন চারগুণ খারাপ।

চারগুণ মেজাজ খারাপ হবার পর আর রাস্তায়ও থাকা যায় না। যে কেউ যে কোন সময়ে আমার হাতে খুন হয়ে যেতে পারে। আমি তাড়াহুড়া করে একটা বাসে উঠে পড়লাম।

আমার বাসভাগ্য সচরাচর ভালো। বাসে দুএকটা সুন্দরী মেয়ে আমার আশেপাশে সবসময়ই থাকে। সুতরাং যাত্রা সর্বদা ভাবের হয়। আজকে দিন খারাপ। সকাল থেকেই পিছনে ‘কু’ লাগছে। তাই আজকে পাশে পেলাম এক আন্টিকে। আন্টি দুই সিটের মাঝে দেড় সিট দখল নিয়ে বসে আছে। আমি কোনরকম একটু বসলাম। আশেপাশের সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। আমি একজন মহিলার পাশে বসেছি। অতএব হয় আমি মহিলার বিশেষ কেউ। আর নইলে আমার স্বভাবে লুইচ্চামি আছে। আন্টি নিজেও সন্দেহের দিকে তাকাচ্ছে। এই ছেলের মতে কি? সে আমার পাশে কেন বসলো? সে তো দাড়িয়েও থাকতে পারতো! আন্টি নিজের হাতব্যাগটা আরেকটু টাইট করে ধরে। এইসব দেখে আমার মেজাজ আস্তে আস্তে পাচঁগুণ খারাপের দিকে যেতে থাকে। বাস চলতে থাকে। এর মাঝে এক হকার এসে হাজির।

চলন্ত পথের যাত্রী ভাই ও বোনেরা... স্লামালাইকুম। আপনাদের জন্য আমি নিয়ে এসেছি এক বিশেষ প্রকৃতির মলম। এই মলমের উপকারিতা কি? জানতে চান? অবশ্যই জানবেন। তার আগে বলেন দেখি, যাত্রীভাই বোনদের মাঝে এমন কি কেউ আছেন যার খাউজানি, চুলকানি, এলার্জি, গোটা বা বরণের সমস্যা নাই?

হকার একটু থামে। যাত্রী ভাইবোনেরা কেউ কিছু বলে না। চুলকানি, খাউজানি, বরণ কার নাই?!

হকার মুচকি আসে।

চুলকানি, দাউদ, খাওজানির জন্য আপনাদের কতই না ঝামেলা পোহাইতে হয়! বাড়িতে বসে আছেন। চুলকানির চোটে আপনের অস্থির অবস্থা। হাত দিয়া চুলকাইতে চুলকাইতে চামড়ার বেহাল দশা। হাতের কাছে যদি থাকে আমার এই টাইগার মলম, দেখবেন ভাই চুলকানি আর নাই। নিয়া যান একপিস,জানেআলমের স্পেশাল টাইগার মলম। লাগবে কোন ভাইয়ের?

কেউ হাত বাড়ায় না। প্রকাশ্যে কেউ ‘আমার চুলকানি আছে’ এই কথা বলতে চায় না। সবাই হাত দিয়ে গোপনে চুলকাতে চায়। আমি উদাস হয়ে জানালার বাইরে তাকাই। মলির জন্য ভিতরটা ব্যাপক চুলকাচ্ছে। মলম লাগাতে পারলো ভালোই হতো। জানে আলমের স্পেশাল দিলের ব্যাথা উপশমের মলম।


-ভাই লাগবে নাকি একপিস?
আমি চমকে উঠি। হকার এবার জনে জনে জিজ্ঞাসা করছে। তার দৃষ্টিতে যার যার চুলকানি আছে তাদেরকেই সাধছে মলম নিতে।
--না ভাই। চুলকানি নাই।
-চুলকানির মলম নাতো ভাই!
--তাহলে কিসের মলম?
হকার মাথা নিচু করে। আনার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে-
-ভাই, আছে। লাগলে বইলেন?
-- কি আছে? এইবার আমি কিছুটা ঘাবড়ে যাই।
-দাঁড়ায় না, ছোট, বাঁকা... সমস্যা থাকলে বলেন। আছে ভাই। নগদ ঔষুধ আছে। কম দাম।
-- কি দাঁড়ায় না? কিসের ঔষুধের কথা বলছেন ভাই?

হকার আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি সৌদি থেকে মাত্র প্লেনে করে ল্যান্ড করলাম। কিছুই জানি না। এদিকে আশেপাশের লোকজন আরো বেশি করে উকিঝুকি মারছে। তাদের ধারনা আমি গোপনে চুলকানির সমস্যাটা জানাচ্ছি। আমার সমস্যা কত গভীর সেটা শোনার জন্য তারা আরো কাছিয়ে আসছে। আমার পাশের আন্টিও উৎসুক হয়ে উঠে। আমি বিব্রত হই। একটু সময় লাগলেও বুঝে যাই হকার কি দিতে চাইছে।
-না ভাই। ওইরকম কিছু নাই। ঔষধ লাগবে না।
--ভাই লজ্জ্বা পান কেন? আপনের লাগবে আমি জানি।
-আমার লাগবে আপনি কিভাবে বুঝলেন?
--দেখলে বুঝা যায়। এতদিন ধইরা বেচাকিনা করি। কাস্টোমার চিনি।
-না চিনেন না। আমার ঐ জাতিয় কোন সমস্যা নাই। খামোখা বিরক্ত কইরেন না। মেজাজ এমনিতেই ভাল নাই।
-- আরে ভাই চেতেন কেন? এইসব সমস্যাতো মাইষের ‘আচানক’ হয়। সমস্যা থাকলে ঔষুধ লাগবো না?

আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না। শুধু একটা বিষয়ই বুঝতে পারছি যে আমার মেজাজ নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে।
আমি বুঝতে পারলাম না বাস ভর্তি এত লোক থাকতে হকারের কেনই বা মনে হলো যে আমার গোপন কোন সমস্যা আছে! আশেপাশে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তারাও ভাবছে যে আমার আসলেই কোন সমস্যা আছে। দুচারজনের চোখে করুণাও দেখতে পাচ্ছি। আহা... কচি ছেলেটা! কি সুন্দর চেহারা! অথচ গোপন অঙ্গ ছোট, বাঁকা! চুক চুক...

-কি হলো ভাই? কি লাগবো কন? হকার আবারো আস্তে করে জিজ্ঞাসা করে।
--ভাই ভালো করে শুনেন। আমার কোন প্রবলেম নাই। মেজাজ খারাপ কইরেন না।
-বুঝছি। সবার সামনে কইতে অসুবিধা, তাই তো? ঠিকাছে এই লন কার্ড। ফুন দিয়েন।

ব্যাপারটা হকারের প্রেস্টিজে লেগেছে।আজ পর্যন্ত সে কাস্টোমার চিনতে ভুল করেনি। আশেপাশের লোকজনের কাছে তার ভ্যালু কমে যাচ্ছে। সবাই ভাবছে সে কাস্টমার চিনে না। ফাউল হকার। এই মুহূর্তে সে আমার সমস্যা আছেই এটা প্রমাণ করতে না পারলে ব্যবসা লাটে উঠবে।

হকার আমাকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে হঠাৎ ছুড়ে দেয় যে সব কাগজ, একটা সেগুলা বাড়িয়ে ধরে। এতক্ষণ কথা আস্তেই হচ্ছিলো। এইবার আশেপাশের সবার কাছেই উন্মুক্ত হয়, আমি আসলে কি চাই!! আমি কার্ডটা নিলে হকারের নৈতিক বিজয় হয়। আমি হাত বাড়ালাম না। শুধু বুঝলাম আমার রাগ আর রাগের পর্যায়ে নাই। এই মুহূর্তে আমি আউট অফ কন্ট্রোল। মানে কমপ্লিট ‘সিস্টেম ব্রেকডাউন’।

আমি কিছুটা জোরেই বলালাম-
-জ্বি ভাই ঠিক ধরছেন। আমার প্রব্লেম আছে। বিশাল প্রবলেম।

হকার বিজয়ীর হাসি হাসে। আশেপাশে তাকায়। ভাবটা এমন... বলছিলাম না প্রবলেম আছে!

--জ্বি বলেন ভাই। কি সমস্যা? কি লাগবো?
-আমার ‘বিচকানি’ আছে।
-- বিচকানি কি?
-বিচকানি বুঝেন না? বিচিতে চুলকানি। ঔষুধ দেন।

হকার চমকে গিয়ে তাকায়। সে আগে কখনোই ‘বিচকানি’ রোগের নাম শুনেনি। আমার চেহারা দেখে বুঝার চেষ্ট করে আমি ফাইজলামি করছি কিনা। আমি ভাবলেশহীন ভাবে তাকায় থাকলাম।

-ভাই এই রোগের তো নাম শুনি নাই!?
--শুনেন নাই মানে! প্রতি পাচঁজন পুরুষের মধ্যে একজনের বিচিতে চুলকানি রোগ আছে। অবিবাহিতদের বেশি। বিবাহিতদের কম। সাংঘাতিক লেভেলে চুলকায়। প্যান্টের ভিতর হাত দিয়ে এইভাবে চুলকাতে হয়।

আমি প্যান্টের চেন খুলে ভিতরে হাত ঢুকিয়ে চুলকানির ডেমো দিতে থাকি। আশেপাশের সবাই ভীষণ উৎসুক হয়ে উঠে। আরে এই ছেলের তো আসলেই বিচকানি আছে! আন্টি ঘাবড়ে গিয়ে আরো দূরে সরে বসে। এই প্রথম আমি পুরাপুরি এক সিট নিয়ে বসতে পারি। আমি আরো আরাম করে বসে চুলকাতে থাকি। হু হু বাবা...রোগের নাম বিচকানি। চুলকানি এত সহজে থামবার নয়!

হকার ঘাবড়ে যায়।
-ভাই আমার কাছে এর ঔষুধ নাই।
-- ঔষুধ নাই মানে? কি বলেন আপনে? সমস্যা কত গভীর দেখছেন? আমি আরো জোরে জোরে চুলকাতে থাকি।
-না ভাই নাই।
--কেন নাই?
-এইসব বেচি না। নাই ভাই। অন্য জায়গায় দেখেন।
-বেচেন না মানে? সমস্যাটা তো দেখেন একবার! কি যে খারাপ অবস্থা!! আমি প্যান্ট খুলতে উদ্যত হই।


হকার ভয় পেয়ে লাফ মেরে বাস থেকে নেমে যায়। আমিও প্যান্টের চেন লাগালে লাগাতে পিছনে পিছনে দৌড় দেই।আজ আমার কমপ্লিট সিস্টেম ব্রেকডাউন হয়েছে। বিচকানি রোগের ঔষুধ না নেওয়ার আগে শান্তি নাই। হকার ঔষুধ না দিয়ে যাবে কই?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২৬
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×