somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এস এস সুলতানা। দেড়শ বছর আগে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজের করুন কাহিনী।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড় কোন জাহাজ দুর্ঘটনার কথা বলতে গেলে আমরা বারবার স্মরণ করি টাইটানিকের কথা। কিন্তু এমন আরো কিছু জাহাজ দুর্ঘটনা ঘটেছে যেগুলোতে আরো বেশী প্রানহানী ঘটেছে। এরকম এমনই একটি হলো এস এস সুলতানা।



১৮৬৩ সালে জন লিথারবারি শিপইয়ার্ড তৈরী করে ১৭১৯ টন ওজনের এই স্টীমবোড প্যাডল হুইলার জাহাজটি। যারা ঢাকা থেকে বরিশাল গামী সরকারী স্টিমারগুলোতে চড়ার অভিজ্ঞতা আছে তারা পরিচিত প্যাডলগুইলার স্টিমারগুলোর সাথে। প্রাথমিকভাবে ৮৫ জন ক্রু নিয়ে এই জাহাজটি সেন্ট লুইন থেকে নিউ অরলিনস চলাচল করতো। কিছুদিনের মধ্যেই এই জাহাজটিকে ওয়ার ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক সৈনিক পারাপারের জন্য নিযুক্ত করে।

১৮৮৬ সালের এপ্রিলের ২১ তারিখে ক্যাপ্টেন জে সি ম্যাসেনর অধীনে জাহাজটি নিউ অরলিনস থেকে রওনা দেয়। জাহাজের মূল ধারন ক্ষমতা ৩৭৬ জন হলেও ওইদিন জাহাজে ২৪০০ যাত্রী এবং প্রচুর সংখ্যক গবাদী পশু ছিলো। জাহাজের প্রত্যেকটি কেবিন বোঝাই হওয়ার পরে ডেকও পরিপূর্ন হয়ে যায়। বেশীরভাগ যাত্রী ছিলো যুদ্ধফেরত সৈন্য। যাত্রাপথে কয়েকবারই স্টিমারটির বয়লার রিপেয়ার করা হয়।

২৭ই এপ্রিল রাত ২টায় হটাৎ জাহাজটির ৪টি বয়লারের ৩টিই বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরনের শক ওয়েবে ডেকে থাকা অনেক যাত্রী ছিটকে পানিতে পড়ে যায়। জাহাজের বিরাট অংশে দিয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে। কাঠের কাঠামোতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠে। আগুনের শিখা এত মারাত্মক ছিলো যে ৯ কিলোমিটার দূরের মেম্পিস শহর থেকেও তা দৃশ্যমান ছিলো। যাত্রীদের সামনে দুটো মরনপথ ছিলো। জাহাজে লেলিহান আগুনের সামনে বসে উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করা অথবা বরফ ঠান্ডা পানিতে ঝাপিয়ে পড়া। বিস্ফোরনের ১ ঘন্টা পর বসটোনিয়া নামের একটি জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌছায়। কিছুক্ষনের মধ্যে আরেকটি স্টিমার আরকানসাস, এসেস্ক, নেভীর গানবোট ইউএসএস টাইলার উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। জাহাজটিকে টেনে নদীর পশ্চিম তীরে নিয়ে আসে তারা। ততক্ষনে জাহাজের ১৫০০ এর মত যাত্রী মারা গিয়েছিলো। বেশিরভাগই বাচার জন্য নদীতে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন এবং ঠান্ডা পানিতে টিকতে পারেননি। সর্বমোট ৫০০ যাত্রীকে বাচানো সম্ভব হয় যাদের মধ্যে ৩০০ জন আগুনে পোড়ার কারনে পরে হাসপাতালে মারা যান। পানিতে ডুবে ১৫৪৭ এবং হাসপাতালে ৩০০ সর্বমোট ১৮৪৭ এর মত যাত্রী মারা যায় সে দুর্ঘটনায়। পরবর্তী এক মাস মেম্পিস নদীতে হতভাগ্য যাত্রীদের লাশ ভাসতে দেখা গিয়েছিলো।

বয়লার বিস্ফোরনের কারন :
কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয় ৪টি বয়লারে পানির পরিমানের তারতম্যের কারনে এই দুর্ঘটনা ঘটেছিলো। ৪টি বয়লারই পরস্পরের সাথে সংযুক্ত ছিলো। জাহাজটি অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই থাকার কারনে একবার একপাশে বেশী হেলে যেতো। যার কারনে একটি বয়লার থেকে পানি সম্পূর্ন সরে যেয়ে বয়লারটি অতিরিক্ত হিট হয়ে যেতো। তারপরে জাহাজটি অন্যপাশে হেলে গেলে মাত্রারিক্ত হিট হয়ে যাওয়া বয়লার আবার পানি দিয়ে পূর্ন হয়ে অতিরিক্ত বাস্ফ সৃষ্টি হতো। এভাবেই হটাৎ বিস্ফোরন হয় বয়লারে। তদন্তে বলা হয় বয়লারে পানি পরিমান একি রাখলে এই দুর্ঘটনা ঘটতো না।

ইস্ট টেনেসাতে প্রতি বছর এস এস সুলতানা ট্রাজেডীতে বেচে যাওয়া যাত্রীরা বার্ষিক সম্মেলন করতো। শেষ সম্মেলন হয় ১৯২৮ সালে যখন আর মাত্র ৪ জন জীবিত ছিলো।

১৯৮২ সালে একদল আর্কিওলোজিস্ট সুলতানার ধ্বংসাবশেষ আবিস্কার করে একটি সয়াবিন ক্ষেতের ৩২ ফিট নিচে। স্থানটি মেম্পিস থেকে ৪ কি:মি দূরে। ১৮৬৫ সালের কোর্স থেকে নদী এতদিনে প্রায় ৩.২ কি:মি সরে গিয়েছে।

এস এস সুলতানার বেশীর ভাগ যাত্রী ছিলেন ইউনিয়ন সোলজার এবং যুদ্ধ বন্দী। সবাই বাড়ি ফিরছিলেন অনেক স্বপ্ন নিয়ে। প্রিয়জনদের দেখার স্বপ্ন, মুক্তির আনন্দ সব ডুবে গিয়েছিলো সেদিন এস এস সুলতানার সাথে।


লিংক -

Sultana: Titanic of the Mississippi

The SS Sultana

S. S. Sultana Article from the Fire Service History



একটিমাত্র অক্ষত ছবি পাওয়া গেলো এসএস সুলতানার।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৪৬
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×