somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউ: - ঋদ্ধ তিন- ব্লগার সংকলন ( পর্ব - ১ )

২৬ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সমগ্র সংকলনে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৬ টি গল্প আছে । বইটির সম্পাদক আমাদের সবার প্রিয় হাসান মাহবুব ভাইয়ের এ এক অনন্য সৃষ্টি । বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে শ্রদ্ধেয়া জানা আপুকে। উৎসর্গে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
ইচ্ছা আছে ছোট-বড় মিলিয়ে বইটির সব গল্প গুলোর রিভিউ লেখার । প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আজ প্রথম চারটি গল্পের রিভিউ লেখার কাজে হাত দিয়েছি । জানিনা মান কতটা উৎকৃষ্ট হবে বা পাঠকদের পর্যালোচনা কতটা হজম করতে পারব; আর তারই উপরে নির্ভর করছে আগামী দিনে রিভিউয়ের ভবিষ্যৎ। শুরুতেই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি শ্রদ্ধেয় মা. হাসান ভাইকে। যার অবদান ব্যতীত রিভিউ কর্মটি আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব হতো না । ১৫২ পাতার সংকলনটির দক্ষিণা মাত্র ২৫০ টাকা। যারা এখনো বইটি ক্রয় করেন নি তাদেরকে বইটি সংগ্রহ করতে অনুরোধ রইলো।

১,
একটি ধূসর শহরের গল্প - তেরো

গল্পে গল্পকার নগরায়নের কুফল উপমা সহযোগে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন, একটি সাদা কালো রং হীন শহরকে একটি বাচ্চার ড্রইং রুমের রং পেন্সিল দিয়ে রঙিন করার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে । বাচ্চাটির ড্রইং এর ফলে বদলে গেল শহরের জনগণের চোখের ভাষা, পোশাক- আশাক, জিনিসপত্র ,বাড়িঘর সহ সামগ্রিক চিত্র ।
এর পরেই শুরু হল এক অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা। যেখানে একজন আরেকজনকে দেখে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করে, পোশাক-আশাক নিয়ে প্রশ্ন তোলে, বাড়িঘরের আকার-আকৃতি নিয়েও তোলে আঙুল ।একদা ধূসর শহরের অভিন্ন আত্মা শহরবাসীর মধ্যে দেখা দিলো অনেকগুলো গোষ্ঠী বা দল-উপদলের বিভাজন । হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল খাতার পরে। মুছে গেল শহরের রঙের বিভাজন । পুরানো শহর ফিরে পেয়ে বাচ্চাটি আবার সাইকেল নিয়ে মহানন্দে মেতে উঠলো । গল্পটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কবিগুরুর বিখ্যাত লাইনটি কথা মনে পড়ে গেল,
" দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর।"

গল্পে কয়েকটি টাইপো চোখে পড়লো- শুরু থেকে দশ নম্বর লাইনে সাদা রঙের সাতটা দাগ/সাদটা দাগ, স্যাঁতসেঁতে/শ্যাতশ্যাতে, দুঃখী/দুখী, একি হচ্ছে চারপাশে!??? এরকম বিরাম চিহ্ন না দিয়ে যে কোন এক প্রকার অর্থাৎ বিস্ময় সূচক বা জিজ্ঞাসা চিহ্ন দেওয়াটাই কাম্য বলে মনে হয় । রং, রঙ দু রকম ব্যবহার না করে যে কোন এক রকম দেওয়া যেত কিনা ।
মোটের উপর গল্পটি ভাল লেগেছে এবং সংকলনের শুরুতে দেওয়াটা সার্থক বলে মনে হল ।
২,
সাথুয়া - নম্রতা

গল্পে শহুরে সৌখিন লোকদের বিলাসিতার প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। গল্পকার, বক্তার পেশা হিসেবে বড় লোকের মিষ্টি কুকুর নাওমির সঙ্গে সময় কাটানোকে তুলে ধরেছেন । পিজ্জার দোকানের কাজ ছেড়ে এমন পেশাতে শুরুতে অবশ্য বক্তার বেশ অস্বস্তি লেগেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সে নাওমির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয় । তাই রুটিন মাফিক জীবন শহরের একই রাস্তায় প্রত্যহ নাওমিকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার মধ্যে সে স্বাচ্ছন্দ খুঁজে পেয়েছিল।

হঠাৎ একদিন নাওমির স্থলে একটি তরুণীকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া এবং নাওমির মত আচরন করার মধ্যে দিয়ে লেখকের বক্তব্যটি ঠিক পরিস্কার হলো না। বুঝতে পারলাম না পেশা হিসাবে কেন কুকুর ও মেয়েটি বক্তার কাছে একসঙ্গে না এসে পালা করে আসে ? গল্পে লেখকের নাওমি রুপি মেয়েটার শরীরের উষ্ণ ওমের প্রতি বুনো আসক্তি বারে বারে প্রকাশ পেয়েছে ।
একাধিক জায়গায় উনি ব্লাডার খালি বা জিপার খোলার প্রসঙ্গটি এনেছেন ( ছয় বার) । যেটা বড় একঘেয়েমি লেগেছে । নাওমি ও নাওমী দু'রকম বানান চোখে পড়লো । গল্পে বোবা মেয়েটির নির্দিষ্ট একটি নাম দেওয়াটা সমীচীন ছিল। হতে পারে সে বোবা তাই বলে বারংবার মেয়েটি মেয়েটি বলাতে শ্রুতি মধুর লাগে নি ।
দ্বিতীয় প্যারায় সেভিংক্রিম প্রসঙ্গটি কেন এল বুঝতে পারলাম না। মনে হয় গল্পকার সেভিংসস্কিম লিখতে চেয়েছিলেন । সে ক্ষেত্রে ফাইনাল প্রুফ আরো নিখুঁত হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল ।

৩,
লোবান দিনের তালব্য শ - প্রজ্ঞা মৌসুমী

গল্পটি আমার বেশ ভাল লেগেছে। গল্পকার উপমহাদেশের চিরাচরিত ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাকে অত্যন্ত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পের প্রধান চরিত্র জহর মিস্ত্রি না হতে পারল নিজের ঘরের বা না হতে পারল পরেরও। লেখক জহরের মুখে বসিয়ে দিয়েছেন,
"রাধামাধব কিবা ছাড়ি। ধর্ম না শিখাই প্রেম, প্রেম ধর্ম শিখায়।" - মত সুন্দর বাণী। তাই হিন্দু জহরের বানানো অপূর্ব নকশার খাটিয়ায় মুসলমানের জানাজা হবে কিনা কিংবা খাটিয়া মসজিদে রাখা উচিত কিনা - শয়তানের প্ররোচনায় সব নাকচ হয়ে যায় । যদিও পরে তার গায়েবী মুসলমান হওয়ার তত্ত্ব ধোপে টেকেনি । আবার খ্রিস্টান মিস্ত্রি থাকাতে জহরের কফিন বানানোর অনুমতিও মেলেনি । এহেন জহরের তৈরি খাটিয়া একটাও বিক্রি না হওয়ায় সংসারের চূড়ান্ত অনটন।তখন স্ত্রী তুলসী রানী পরিচারিকা জাতীয় কাজ করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সংসারকে টানতে থাকে ।
অবশেষে একদিন জহর নিরুদ্দেশ হলো । পুত্র শম্বুক খুঁজতে বের হয় বাবার সন্ধানে । হঠাৎ এক স্থানে সে মাথার উপরে শকুনের উপস্থিতি টের পায় । খুঁজে পায় খুবলানো, মরা একাত্তরের বৃদ্ধকে । গল্পের শুরুতে কাঠখোট্টা জহরের চূড়ান্ত পরিণতি হয় , আরেক কাঠখোট্টা মৃত্যু নামক চূড়ান্ত পরিণতির মধ্য দিয়ে ।

নববধূ না বলে নয়া বউ (২ বার) ব্যবহার শ্রুতিমধুর লাগে নি । কয়েকটি টাইপো চোখে পড়লো - যীশু/যিশু, মিস্ত্রি/মিস্ত্রী, পিছে পিছে/ পাছে পাছে
পরিশেষে তালব্য শয়ের মত দেখতে উড়ান শকুনদের উপমা সহযোগে গল্পের নামকরণটি ভীষণ ভালো লাগলো ।

৪,
সেইন্ট মাটিন - ব্লগার ফ্রাস্ট্রেটেড

আপাদমস্তক একটি ট্রাজেডিক প্রেমের গল্প । রুহির সঙ্গে নিয়াজের ছাড়াছাড়ির পর চারবন্ধু যোগে সেইন্ট মার্টিনের নির্জন সৈকতে অবসর যাপন কালে নিয়াজ আবিষ্কার করে অন্য যুবা তানিমের সঙ্গে হন্ঠনরত রুহিকে। ফলে নিরালা সৈকত পুরীর আনন্দ মুহূর্তে তার কাছে অস্তমিত হয়। তার কৌতুহলী চোখ ও মন সারাক্ষণ খুঁজতে থাকে ফেলে আসা দিনগুলিকে। এহেন অবস্থায় বন্ধুদের রঙ্গ -তামাশা তার ভালো লাগে না । অস্থির মনে কিছুতেই শান্তি না পেয়ে পরদিন প্রভাতে স্নিগ্ধ সৈকতে একাকী যাপনকালে স্থানীয় একজনকে বলতে শোনে,
" হেই, বেশি দূরে যাইয়েন না ভাই,
ভোরে এক্ষণে মাইয়ারে সাগরের টাইনা নিসে।"
নিয়াজের মনে কুডাক ডাকে। অস্থির হয়ে মাইয়াটার পরিচয় জানতে চায় । কিছুক্ষন উদভ্রান্তের মত ছোটা- ছুটির পর অবশেষে জানতে পারে,
"মাইয়াটির নাম রুহি।" শিকারি প্রাণীর মতো ক্ষিপ্র গতিতে দৌড়াতে থাকে নিয়াজ।
বেশ কিছু টাইপো চোখে পড়লো- অপরাধী/অপরাধি, সান্ত্বনা/স্বান্তনা, সিঁড়ি/ সিঁড়িঁ,আস্তাকুঁড়/আঁস্তাকুর, ঝগড়াঝাঁটি/ঝগড়াঝাটি, প্রথমে প্রাণী বানানটি ঠিক থাকলেও পরে প্রাণি হয়ে আছে।
সমগ্র গল্পে গল্পকারের এক ধরনের মুদ্রাদোষ অথবা প্রধান চরিত্র নিয়াজের এক ধরনের ম্যানারিজম চোখে পড়ল। যেমন -
তারপর হাঁটল, হাঁটল, হাটলো
আর ভাবলো, ভাবলো, ভাবলো
অন্য একটি স্থানে,
রুহি, রুহি, রুহি
রুহি, রুহি, রুহি
বা,
রুহি নেই, রুহি নেই, রুহি নেই
আবার অন্য একটি স্থানে,
রুহি নেই, রুহি নেই, রুহি নেই!!!
কিংবা নিয়াজের চোখের জলে বন্যা বয়ে যায়। ' রুহিইই! রুহিইইইই!!
যেগুলি অত্যধিক একঘেয়েমি এবং বিরক্তিকর লেগেছে ।



সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:০০
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×