somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউ:- ঋদ্ধ তিন- ব্লগার সংকলন ( পর্ব- ৪ )

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১৩:- গামা লেভেল -কাছের মানুষ

কল্পবিজ্ঞানের উপর রচিত গল্পটি পড়ে বেশ মজা পেয়েছি। গল্পকার স্বপ্নে একটি মানবীয় চরিত্র ইসাই যাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মিল্কওয়ে ছায়াপথ থেকে অনেক দূরে গামা লেভেলে তার সঙ্গে তরুণী অবয়বের এক এলিয়েনের সাক্ষাৎকারকে অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। গল্পে আমরা কয়েকটি বিজ্ঞানের পাঠ পেলাম। প্রথমত-এলিয়েন রুপি তরুণী কিভাবে অণু-পরমাণু বা ফান্ডামেন্টাল পার্টিক্যেলকে পরিবর্তন করে নিজেকে মানুষের আকৃতিকে পরিণত করলেন তার সুন্দর বিশ্লেষণ। দ্বিতীয়ত-মানুষের ডিএনএ কোন তথ্যই ফেলে দেয় না। কিন্তু এলিয়েনদের আবেগীয় গুণাবলী মুছে যায়, যেটা ওরা ফেরত পেতে ইচ্ছুক। আর এজন্যই ইসাই এর উপরে গবেষণার উদ্দেশ্যে ওকে মিল্কিপথে গামা লেভেলে নিয়ে যাওয়া। তৃতীয়ত-গামা লেভেলে এলিয়েনদের আমাদের মত মুখ দিয়ে কথা বলতে হয় না। ওরা যেটা চিন্তা করে তার কম্পনে আর একজন গামা লেভেলে সেটা ধরতে পারেন। সেজন্য ইসাই এর ভাবনাগুলি এলিয়েনরা সহজেই বুঝতে পারছেন - তার সুন্দর বিশ্লেষণ।

ইসাই এর সঙ্গে কথোপকথনে সুন্দরী এলিয়েন অত্যন্ত খুশি যে কারণে ওকে পৃথিবীতে ফেরত পাঠানোর সময় মানুষের আবেগীয় গুণাবলীর সঙ্গে উপহারস্বরূপ পৃথিবীতে মানুষের তিনটি প্রাথমিক নিডস অর্থাৎ অন্ন বস্ত্র বাসস্থান দিয়ে সাহায্য করার অঙ্গীকার করেন । যার ফলে সে সুপার পাওয়ার কাম সুপার রেসপনসিবিলিটির অধিকারী হয়।কিন্তু দুর্ভাগ্য! বাস্তবে সে যখন পৃথিবীতে আসে, লক্ষ্য করে তার কোন অনুভূতি অবশিষ্ট নেই। হাসি কান্নার মতো মানবিক গুণাবলি সব কিছু সে হারিয়ে ফেলেছে। সে হয়ে উঠেছে বর্তমান পৃথিবীতে বসবাস উপযোগী এক জন হৃদয়হীন মানুষ।

একজন পাঠক হিসাবে প্রতিক্রিয়া- গল্পে তরুণী এলিয়েন একবার বলছেন আমরা মানুষের মতো সহজাত প্রবৃত্তি যেমন- হাসি কান্নার মতো আবেগীয় গুণাবলী হারিয়ে ফেলেছি। আমরা যে কারণে গল্প পড়ি না বা লিখি না কিম্বা মুভিও দেখি না । কারণ আমরা জানি এগুলো সব মিথ্যে করে বানানো যা দেখে হাসি কান্নার কিছু নেই।আবার ঠিক পরের প্যারায় বলছেন আমাদের ডিএনএ থেকে আবেগীয় গুণাবলী মুছে গেছে। আমরা সেটা ফিরে পেতে চাই। যে উদ্দেশ্যে ইসাই এর উপর গবেষণার জন্য তাকে গামা লেভেলে নিয়ে যাওয়া। এখানে এলিয়েনের কথাতে স্ববিরোধিতা যেমন আছে একইসঙ্গে, একদম শেষে ইসাইকে বিদায় দেওয়ার সময় তরুণী এলিয়েনের ভাললাগা ও হাসি বিনিময়ের মধ্যে কিন্তু আবেগীয় গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যেটা তাদের আবেগীয় গুণাবলী না থাকা কথার সঙ্গে সংগতি বিহীন। কাজেই গোটা পোস্টে আবেগীয় গুণাবলী নিয়ে বিভ্রান্তি চোখে পড়লো। একইসঙ্গে এলিয়েনের মুখ দিয়ে ,আমরা গামা লেভেলে' কথাটি এত বেশিবার ব্যবহৃত হয়েছে যে বেশ বিরক্তিকর লাগলো।

বেশ কিছু টাইপো আছে- পানীয়/পাণিয়,"..... খুবই সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছো/.... খুবই সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছে।", জিভ বা জিহ্বা/জিব , ফুঁটিয়ে/ফুটিয়ে, অবয়বে/অবয়বয়ে, মৃদু/মৃধু, ফেরত/ফিরত, "তোমার জন্য একটি সুসংবাদ আছে ইসাই?"এই বাক্যে জিজ্ঞাসা চিহ্নটি কেন হবে বুঝলাম না।

১৪:-মৃণালিনী দেবীর রান্না করা কচু শাক খেয়ে রবিবাবু যে গানটি লিখেছিলেন- গিয়াস উদ্দিন লিটন

ঋদ্ধ তিন ব্লগার সংকলনের প্রথম থেকে ত্রয়োদশ গল্প পর্যন্ত অনেক পড়ালেখা করলাম। যুক্তিতর্ক সমালোচনাও কম হলো না। নাহ! এবার আর কোনো সমালোচনা নয়, স্রেফ বিনোদন; নিপাট রসিকতা। লিটন ভাই যেখানে স্বাস্থ্যই, থুরি রম্যই সেখানে। ছোটবেলা থেকে চলে আসা লাইফবয়ের অ্যাডটি এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। হা হা হা.... । কি নেই গল্পে! একদিকে যেমন কাউডাং সদৃশ্য ইন্ডিয়ান রেসিপি- কচু পাতার পাতুরি আপনার জিভে জল আনতে বাধ্য অন্যদিকে তেমনি সৃষ্টির আদিকাল থেকে চলে আসা ভারতীয় মেগা সিরিয়ালের ভুলভুলাইয়া আপনাকে এনে দেবেই দেবে অনাবিল আনন্দ। আর এর কৌশল জানতে- চট করে পড়ে ফেলুন গল্পটি। তবে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা থাকতে পারে তার জন্য লিটন ভাই কোন অবস্থাতেই দায়ী নয়- এ কথা হলফ করে বলে রাখলাম। হা হা হা হা হা..

১৫:-উদাসীন সঙ্গম-শিখা রহমান

কথায় বলে স্বামীর পায়ের তলায় স্বর্গ। আর সে স্বর্গের লোভে উপমহাদেশের হাজার অদিতিরা আহসানদের বক্সিং প্রাক্টিসে যেমন বালির বস্তার ন্যায় ভূমিকা পালন করে, তেমনি গভীর রাতে একটা কালো হাতের আলিঙ্গনকেও উপেক্ষা করতে পারেনা। গল্পের শিরোনামেই তখন ভবিতব্য হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি চলতে থাকে নিত্যনতুন কালসিটের যুক্তি সংগত ব্যাখ্যা খোঁজার মিথ্যে প্রস্তুতি। তাই সে নিরন্তর ভেবে চলে পাড়া-পড়শী আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে অফিসের সহকর্মী সকলের কাছে একটা যুৎসই যুক্তি উপস্থাপনের। আর তা নাহলে যে মান থাকবে না। অদিতিদের এভাবে বেঁচে থাকাকে ঠিক বেঁচে থাকা বলে না। লেখক অত্যন্ত ব্যঙ্গাত্মক ভাবে দেখিয়েছেন যে অদিতিরা মরার কথা ভাবতে পারেনা, কারণ তারা যে কবেই মরে গেছে। ছোট্ট গল্পে লেখক অত্যন্ত সুন্দর একটা বার্তা দিয়েছেন সকলকে পড়ার অনুরোধ রইল।

১৬:-মিলির জন্য একটি সাদা গোলাপ- ইখতামিন

গল্পটিকে লেখক একটি প্রেমের উপাখ্যান হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সঠিক ভাবে পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারেননি । অন্তত পাঠক হিসেবে তো আমার সেটাই মনে হল। উত্তম পুরুষে রচিত গল্পে একটি টেলিফিল্মে শুটিং কালে বক্তার সঙ্গে পরিচয় হয় কো- আর্টিস্ট জেনিফার মিলির। পরবর্তীকালে যে সম্পর্ক আপনি থেকে তুই'তে পরিবর্তিত হয়েছিল। অর্থাৎ একে অপরে হয়ে উঠেছিলেন খুব বিশ্বস্ত বন্ধুও। যদিও মিলির মধ্যে বক্তা তার পুরোনো প্রেমিকা রুপাকে খুঁজে পান যিনি তখন ডাক্তার স্বামীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসী।

হঠাৎ একদিন মিলির পক্ষ থেকে জন্মদিনের আমন্ত্রণ আসে, যেখানে বক্তাকে থাকতেই হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। সেদিন পৌঁছে দেখেন অদ্ভুতভাবে এক চাপা আশঙ্কায় সকলে আশঙ্কিত। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন গুরুতর অসুস্থ হয়ে মিলি হসপিটালে ভর্তি। এবং সেখানেই তার জীবনাবসান ঘটে। পরে এক গুচ্ছ সাদা গোলাপ মিলির সমাধিতে রেখে আসেন। উল্লেখ্য যে গোলাপ ছিল রুপারও খুব পছন্দের ফুল।

একজন পাঠক হিসাবে প্রতিক্রিয়া-বেশ কিছু স্থানের সংলাপ বেশ এলোমেলো লাগলো। গল্পের শুরুতে যেখানে বলছেন বৃষ্টির সময় আমার কিছুই ভালো লাগেনা। খুবই বিষণ্ন লাগে এই সময়টায়। নিজেকে খুব অসহায়ত্ব মনে হয়। আবার পরের প্যারায় বলছেন, বৃষ্টিতে ভিজতে পারলে অনেক ভালো হতো। কাজেই বৃষ্টিতে বক্তার এলোমেলো মনের পরিচয় পেলাম।
অন্য একটি স্থানে বলছেন," আমি বিরক্ত হলাম। আমার খুব একা থাকতে ভালো লাগছিল এই মুহূর্তে।"
আমি শান্তভাবে বললাম,
-আমি মরলে আপনাকে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। সংলাপটি একেবার অপ্রাসঙ্গিক লাগলো।
-সে আর কথা বাড়ালোনা। শুধু বলল-
-ওই- তাই তো' এবং আমাকে অবাক করে চলে গেল। এখানে তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই মেয়েটির আগমনের ও কথাতে উনি খুবই বিরক্ত, তাহলে তার চলে যাওয়াতে উনি অবাক হবেন কেন?পরক্ষণেই আবার বলছেন ওর প্রতি একধরনের মায়া জন্মে গেছে সেই প্রথম দিন থেকেই।
কাজেই একাধিক স্থানে পরস্পর বিরোধী সংলাপে বেশ বিরক্তিকর লেগেছে গল্পটি পঠন কালে ।



সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:৪১
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×