somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামী ট্রাজেডির উপাখ্যান

১৭ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



[১] ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন যে আওয়ামী লীগ রোজগার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। দুঃখজনক হলেও সত্য, মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ করে মরতে পারেননি। [ইনি ভুলে গেছিলেন, প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী শামসুল হকের কথা। তাকে জেল খাটিয়ে পাগল বানিয়ে, সংসারচ্যুত করে, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরিয়ে শেখ মজিব ঐ পদটা দখল করেছিলেন। অজ্ঞাত স্থানে মৃত্যু হয় শামসুল হকের।]

[২] আওয়ামী লীগের যে সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে দলের দুঃসময়ে কাজ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, স্বাধীন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদও আওয়ামী লীগ করে মরতে পারেননি।

[৩] ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুসহ নেতারা যখন জেলে তখন যে নেত্রী দলের হাল ধরেছিলেন, ছয় দফার প্রচার চালিয়েছিলেন সেই আমেনা বেগমও আওয়ামী লীগ করে মরতে পারেননি।

[৪]সিলেটের কৃতী সন্তান জেনারেল এম এ জি ওসমানী সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। '৭০ সালে জাতীয় পরিষদ সদস্য হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিও আওয়ামী লীগ করে মরতে পারেননি।

[৫] ষাটের ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদ অনাদর-অবহেলায় কোনো রকমে আওয়ামী লীগে বেঁচে আছেন।

[৬] ষাটের আরেক ছাত্রলীগ নেতা আওয়ামী লীগের একসময়ের প্রভাবশালী নেতা আমির হোসেন আমুও একই অবস্থায় আছেন। সিলেটের বন্দরবাজারে পচা আলু-পটলের মূল্য থাকলেও আওয়ামী লীগ আজ এতটাই অভিশপ্ত দল যে, সেখানে আমু-তোফায়েলের কোনো মূল্য নেই।

[৭] ষাটের ছাত্রলীগ নেতা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কা-ারি আবদুর রাজ্জাক কাঁদতে কাঁদতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। বুকভরা বেদনা নিয়ে এই দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলও ইন্তেকাল করেছেন। তাদের কাউকেই আওয়ামী লীগ সম্মান নিয়ে মরতে দেয়নি।

[৮] ষাটের ছাত্রলীগের পুনঃজন্মকালে ছাত্রলীগের সভাপতি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এই দল করতে পারেননি।

[৯] কে এম ওবায়দুর রহমান আওয়ামী লীগ করে মরতে পারেননি। মাজহারুল হক বাকী, আবদুর রউফ, আওয়ামী লীগ করে মরতে পারেননি।

[১০] ফেরদৌস আহম্মেদ কোরেশীও আওয়ামী লীগ করতে পারেননি। পারেননি খালেদ মোহাম্মদ আলী।

[১১] ষাটের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক যিনি স্বাধীন বাংলার রূপকার, ইকবাল হলের পুকুরঘাটে যাকে আমার হাতের অনামিকা আঙ্গুল কেটে রক্ত দিয়ে মাতৃভূমি স্বাধীন করার শপথ নিয়েছিলাম সেই সিরাজুল আলম খান আওয়ামী লীগ করতে পারেননি।

[১২] আওয়ামী লীগ করতে পারেননি আসম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ।

[১৩] স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতা '৭০-এর নির্বাচন ও মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখা ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর নাম নিতে নিতে মারা যাচ্ছেন, তবুও আওয়ামী লীগ করতে পারেন না।

[১৪] ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বঙ্গবন্ধুর ভাগনে শেখ শহিদুল ইসলাম আওয়ামী লীগ করতে পারেননি।

[১৫] বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের উত্থানে সাহসী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ভূমিকা ইতিহাসে অমর অক্ষয়। কিন্তু তার ছেলে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন তো আওয়ামী লীগ করতে পারেনইনি, তার আরেক ছেলে ষাটের ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও নন।

[১৬] ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ রশিদ কোথায় কেউ জানে না।

[১৭] ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মনিরুল হক চৌধুরী এখন বিএনপি করেন। তার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান করেন জাগপা।

[১৮] সিলেটের অলিতে-গলিতে যে ছাত্রনেতা তরুণদের আদর্শের রাজনীতির পাঠ দিয়েছিলেন সেই সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ছাত্রলীগের সভাপতি ও ডাকসু ভিপি হয়ে সিলেটবাসীকে গৌরবান্বিত করেছিলেন। আজ সিলেটের ভোটের ময়দানে তিনি কেন প্রচারণায় নেই? তিনি কেন আওয়ামী লীগ করতে পারেন না?

[১৯] ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাহলুল মজনুন চুন্নুর আওয়ামী লীগে ঠাঁই হয়নি। কোথায় আছেন কেউ খবরও নেয় না।

[২০] সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নান ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কোনো রকমে দলে বেঁচে থাকলেও খ ম জাহাঙ্গীরের ঠাঁই নাই।

[২১] এই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে তিনি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। তাকেও আওয়ামী লীগ করতে দেওয়া হয়নি।

[২২] যে বিশ্বজিৎ নন্দী বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করত গিয়ে ফাঁসিতে ঝুলতে গিয়েছিল ক্ষুদিরামের মতো এই দল তাকেও ঠাঁই দেয়নি। তার খোঁজও নেয় না।

এই অভিশপ্ত আওয়ামী লীগ আপনারা কেউ করবেন না - এটা ফজলুর রহমানের নিবেদন।

[এক সময়ের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাড়াজাগানো বক্তা, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুর রহমান এখনো কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চার সিটির নির্বাচনে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার অনুরোধে সিলেটের বিজয়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন। টানা ১০ দিন সিলেটে থেকে হেমিলনের বংশীবাদকের মতো তার বক্তৃতায় ভোটারদের মুগ্ধ করেছেন একের পর এক সভায়।

প্রথম দিন বক্তৃতা দেওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেউ কেউ তার প্রতি কটাক্ষ করে তাকে আদর্শচ্যুত নীতিহীন রাজনীতিবিদ বলে বক্তৃতা করায় দ্বিতীয় দিন থেকে প্রচারণা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত জবাবে তিনি একই বক্তৃতা করেছেন আরিফুল হক চৌধুরীর জন্য ভোট চেয়ে। মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান '৭৫-উত্তর দুঃসময়ে ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে সারা দেশে শিক্ষাঙ্গন থেকে জেলা-নগরে তার অনলবর্ষী আবেগ ও যুক্তিনির্ভর বক্তৃতায় ছাত্রছাত্রীদের ছাত্রলীগের পতাকাতলে টেনেছিলেন। '৮৬-এর নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে এমপি নির্বাচিত হন। '৯৬ সালের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেড় হাজার ভোটে হেরেছিলেন। পরে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। ]


সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।

২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×