somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গা ও আমার কিছু কথা

১৪ ই জুন, ২০১২ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিয়ানমারের মতো সামরিক শাসিত স্বার্থলোলুপ সরকারের কাছ থেকে তেমন ভাল কিছু বিশ্বের কোন দেশই মনে হয় আশা করে না। তারা তাদের সুবিধামতো তাদের দেশের জনগণকে বঞ্চিত করবে, অত্যাচার লুটপাট করবে, এটাই যেন স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের মতো এক গণতান্ত্রিক দেশের তথাকথিত জনগণের সরকার কিভাবে আত্মসংকীর্ণতা থেকে মানবতাবোধকে উপরে তুলতে পারলো না?



যে দেশের জনগণ যেমন, তাদের নেতাও তেমন হবে, এই চিরসত্যটাই আবার প্রকট হয়ে চোখে পড়ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকার ওয়েবসাইটে পাঠকের মন্তব্য, এবিষয়ক বিভিন্ন ব্লগ ও সেখানকার কমেন্ট পড়লেই ব্যপারটা আরও স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়। আমরা পুরো বাংলাদেশী জাতি হিসাবে অনেক বেশি স্বার্থপর ও সংকীর্ণমনা হয়ে উঠেছি, তো আমাদের সরকারই বা তার থেকে ভাল হতে যাবে কেন? রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে দেশের জনসংখ্যার সমস্যা থেকে নিয়ে আরও নানা রকমের বাহানা দিয়ে বিরোধীতা করছে অনেকেই। এমনিতেই আমাদের দেশ জনসংখ্যার ভারে কুজো হয়ে আছে, তার উপরে এসব রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীরাও এখানে স্থায়ীভাবে থেকে যাবে, যেমন তাদের আরও অনেকেই এভাবে অনেকদিন যাবত আমাদের দেশে আছে, তারা খারাপ, তারা ড্রাগ ডীল করে, আমাদের দেশটা একটা ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত হবে তাদের আশ্রয় দিলে। এরকম আরও কতো টালবাহানা!

কিন্তু না! জনসংখ্যার জন্য আমাদের দেশটা ডুববে না। ডুববে এসব জনসংখ্যার ভিতরে মানবিকতাবোধ, নীতি, সহনশীলতা, পরোপকারিতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এসব ভাল ভাল গুণাবলীগুলোর অভাবে। দিন দিন মানুষ থেকে আমরা সমষ্টিগতভাবে যখন নিচে নেমে যাচ্ছি, তখন আমাদের ধ্বংসের জন্য বাইরে থেকে কাউকে আমদানী করার দরকার কি? আজকে আমার স্বার্থের কথা চিন্তা করে আমি প্রতিবেশীর বিপদে উপকার করবো না। কাল প্রতিবেশী আমার দরকারে উপকারে না আসলে তাকে ইচ্ছেমতো গালি দেবো। তার পরদিন নিজের স্বার্থ নিয়ে নিজের ভাইয়ের সাথেই খুনাখুনিতে লিপ্ত হবো। আসলে হবো না, ইতিমধ্যেই হচ্ছি। পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে আমাদের দেশের অবস্থা কোথায়। কথায় কথায় শিশু থেকে নিয়ে বৃদ্ধ অপহরণ, খুন, ডাকাতি এসব শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণেই হচ্ছে না। কয়েকটা টাকার থেকে আমাদের কাছে মানুষের জীবনের মূল্য এখন অনেক কমে গেছে। তাই সহজেই যে কেউ নিজের স্বার্থের চিন্তা করে এসব করতে পারছে। তিন বছরের প্রেমিকাকে খুন করে টুকরো টুকরো করে কেটে কিছু অংশ জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়া, আর বাকী কিছু অংশ কমোডে ফ্ল্যাশ করার জন্য আমাদের রোহিঙ্গাদের আমদানী করতে হয়নি। আমরা বাংলাদেশীরাই এসব কাজে পারদর্শী হয়ে উঠেছি। কথায় কথায় হরতালে যোগ দিয়ে দেশ ও জনগণের সম্পত্তি ভাংচুড় করার জন্যও মিয়ানমার বা ভারত থেকে আমাদের লোক আনতে হয় না। ভিন্নমতের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ কতটুকু, তা দেখার জন্য আমাদের দেশের দুই দলের নেতা-নেত্রীদের দিকে না তাকালেও চলবে, বাংলা ব্লগের সাইটগুলোতে একটু নজর রাখলেই টের পাওয়া যায়। টাকার জন্য ঘুষ খাওয়া, সেটাও এদেশে এখন একটা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। মানুষটা ভাল কিনা সেটা যাচাই করে আমরাই আর কাউকে সম্মান দিতে যাই না। সম্মান দেই লোকটা কোন গাড়িতে চড়ে, বাড়ি কতো বড় এসব দেখে। পূজো করি নীতির না, টাকার। তো এই আমাদের বিপদে ফেলার জন্য অন্য কাউকে কি দরকার?

জনসংখ্যার সমস্যা তো? ঠিক আছে, না আশ্রয় দিলেন রোহিঙ্গাদের। তারা বাঁচলে বাঁচুক, মরলে মরুক। সংকীর্ণ থেকে আরও সংকীর্ণ হতে থাকুন সবাই। আমি দেখতে চাই আপনাদের এ চিন্তাধারা দেশকে কোথায় নিয়ে যায়, আর আপনারাই বা এমন কি অর্জন করে ফেলেন এই মানসিকতা নিয়ে।

জনসংখ্যা কখনোই কোন দেশের জন্য সমস্যা ছিলো না। এক পরিবারে একজন দক্ষ লোকের জায়গায় দশজন দক্ষ লোক থাকলে তা পরিবারের ভিত্তিই আরও মজবুত করে। সমস্যা তখনই হয় যখন মানুষের জায়গায় অমানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর এজন্য রোহিঙ্গাদের দরকার নেই। আমি এমনিতেই আমাদের দেশে মানুষ থেকে মানুষরূপী জানোয়ারের সংখ্যাই দিন দিন বাড়তে দেখছি, যারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে দিনরাত কামড়াকামড়ি মারামারিতে লিপ্ত। তাই যারা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বড় বড় কথা বলছেন, তারা জনসংখ্যা কমানোর চেয়ে সত্যিকারের মানুষ বাড়ানোর দিকে একটু মনযোগ দিন। আর সবার আগে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ান। নিজেকে দিয়েই শুরু করুন।

লেখাটি ইতিপূর্বে বকলমে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১২ রাত ৯:০২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×