somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিলেটে স্মরণকালের বৃহত্তম জানাযা,আল্লামা আমিন উদ্দীন শায়খে কাতিয়া আর নেই

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন প্রখ্যাত বুজুর্গ কুতবে বাঙ্গাল, মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা আমিন উদ্দীন শায়খে কাতিয়া আর নেই। গত ১০ সেপ্টেম্বর ৩০ রমযান শুক্রবার বেলা ২:১৫ মি: সিলেট মডার্ন ক্লিনিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। দেশের প্রবীণ এই বুজুর্গ আলেম দীর্ঘ দিন থেকে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ৯ রমযান থেকে তিনি নগরীর একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত শুক্রবার ২:১৫ মি: তিনি ইন্তিকাল করার পর মুহূর্তে সিলেট বিভাগের সর্বত্র তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এক শোকাবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। রাজনীতিবিদ, আলেম ওলামা ও সর্বসাধারণ মুসলমান বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত ছুটে আসায় ক্লিনিকে তাদের সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ইন্তিকালের সাথে সাথে ক্লিনিকে ছুটে আসেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বদর উদ্দীন আহমদ কামরান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দীন সিরাজ, বিএনপি মহানগর সেক্রেটারি নাসিম হোসাইন, জামেয়া ক্বাসিমুল উলুম দরগাহ শাহজালাল রহ. মাদরাসার মুহতামিম মুফতি আবুল কালাম জাকারিয়া, শিক্ষাসচিব মাওলানা মুফতি মুহিববুল হক গাছবাড়ী, জামাতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি মাওলানা ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী, মহানগর আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জমিয়ত নেতা আলহাজ্জ নাদির খান, প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা আং মালিক চৌধুরী, খেলাফত মজলিস নেতা মাওলানা গাজী রহমত উল্লাহ প্রমুখ। পরে পরামর্শক্রমে হযরত মাদানী রহ. স্মৃতি বিজড়িত নয়াসড়ক মাদরাসায় হযরতের লাশ দেখানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সিলেট বিভাগের প্রায় সকল মসজিদ সমূহে হযরত শায়খে কাতিয়ার ইন্তিকালের সংবাদ এবং পরদিন ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাযের পর নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। বাদ এশা প্রথমে শায়খে কাতিয়ার নিজ পরিচালিত মাদরাসা খেলাফত বিল্ডিং আল মাদানিয়া দারুল হাদিসে কিছুক্ষণ রাখা হয়। পরে নয়াসড়ক হোসায়নিয়া মাদরাসায় হযরত শায়খে কাতিয়াকে শেষবারের মত দেখতে আসা মানুষের ভিড় বাড়তেই থাকে। এ যেন ঈদ আনন্দ ভুলে গিয়ে মানুষ শোকের মাতম করছে। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে রাতেই অসংখ্য মানুষ গাড়ি বিজার্ভ করে সিলেট রওয়ানা হয়ে যায়। রাতে নয়াসড়ক মাদরাসায় এক দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তা'লীম বাংলাদেশ এর সভাপতি শায়খুল হাদীস মাওলানা হোসাইন আহমদ বারকোটি। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি মেয়র বদর উদ্দীন আহমদ কামরান, আযাদ দ্বীনি এদারা বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বাসিত বরকতপুরী, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি এডভোকেট মাওলানা আং রকীব, সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মাওলানা শাহী নূর পাশা চৌধুরী, জমিয়তের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জিয়া উদ্দীন, মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আরিফুল হক চৌধুরী, জমিয়ত নেতা হাফিজ মাওলানা মুহসিন আহমদ, শায়খুল হাদীস মাওলান আং মন্নান, মাওলানা শফিকুল হক আমকুনী, মাওলানা মুশতাক আহমদ খান, মাওলানা মাহমূদুল হাসান, মাওলানা হাফিজ খলীলুর রহমান, মাওলানা আং মালিক চৌধুরী, মাওলানা রেজাউল করীম কাসেমী, মাওলানা মুফতি ফয়জুল হক, কাউন্সিলর ফয়জুল আনওয়ার আলাওর, হযরত শায়খে কাতিয়ার সাহেবজাদা মাওলানা হাফিজ ইমদাদুল্লাহ, ইউসুফ আমিনী, ইসহাক আমিনী প্রমুখ।
পর দিন ১১ সেপ্টেম্বর শনিবার ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ ময়দানে লাখ লাখ মানুষের ঢল নামে। ঈদের জামাতের পর শুরু হয় হযরত শায়খে কাতিয়ার জানাযা। সিলেট বিভাগের বাহির থেকেও অন্যান্য জেলার লোকজন জানাযায় অংশগ্রহণের জন্য রাতেই রওনা দিয়ে ভোরবেলায় এসে সিলেট পৌঁছে। শাহী ঈদগাহের আশপাশে বিল্ডিং এর ছাদসহ তিল ধারণের ঠাই নেই। এ যেন সিলেট নগরী জনস্রোতে ভেসে যাচ্ছে। ঈদের নামাযের পূর্বে খতীব ও ইমাম সাহেব বয়ান পেশ করেন। বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং সিটি মেয়র বদর উদ্দীন আহমদ কামরান। তারা বললেন, আজ পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন আমাদের সিলেট বাসীর জন্য একটি শোকের দিন। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে, সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুজুর্গ প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন সিলেটের গর্ব আল্লামা আমিন উদ্দীন শায়খে কাতিয়া চিরবিদায় নিয়ে আমাদেরকে অভিভাবকহীন করে চলে গেছেন। ঈদের জামাতের পর পরই তার নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা তার আত্মার শান্তি ও সুউচ্চ মর্যাদা কামনা করি। আমাদেরকে যেন আল্লাহ ধৈর্য ধারণের তাওফিক দেন। সিলেটের স্মরণকালের বৃহত্তম এই জানাযায় ইমামতি করেন মুফতি মঞ্জুর রশিদ আমিনী। পরে হযরতের লাশ তার নিজ গ্রাম কাতিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। ১২:৩০ মি: কাতিয়া পৌঁছলে মানুষের ঢল নেমে যায়। প্রায় ৭/৮ কিলোমিটার রাস্তা যানজট সৃষ্টি হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ জানাযায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। হযরত শায়খে কাতিয়ার নিজ হাতে গড়া জামিয়া ইসলামিয়া কাতিয়া মাদরাসা মাঠে জানাযা আয়োজন করা হলেও পরে লোকসংকুলান না হওয়ায় কাতিয়া গ্রামের উত্তর পশ্চিমপ্রান্তের মাঠে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা ভক্ত অনুরক্তদেরকে রাস্তায় রাস্তায় গ্রামের বালক বালিকাগণ জগ ও গ্লাস হাতে পানি পান করান। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গরু জবাই করে মেহমানদের আপ্যায়ন করানো হয়। এযেন গ্রামবাসীর এক ব্যতিক্রমী আয়োজন। জানাযাপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন শায়খুল হাদিস মাওলানা হোসাইন আহমদ বারকোটি, শায়খুল হাদীস মাওলানা নূরুল ইসলাম খান, শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুশ শহীদ, মাওলানা মুফতী রহমত উল্লাহ, মাওলানা সাজিদুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা বদীউজ জামান, হযরতের সাহেবজাদা ক্বারী উবায়দুল্লাহ আমিনীসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক। বেলা ৩টায় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন হযরত শায়খে কাতিয়ার জৈষ্ঠ্য সাহেবজাদা মাওলানা হাফিজ ইমদাদুল্লাহ। পরে হযরত শায়খে কাতিয়ার নিজ হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাগার জামেয়া ইসলামিয়া কাতিয়া মাদরাসায় তাকে দাফন করা হয়।
নেতৃবৃন্দের শোক
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রধান পৃষ্ঠপোষক কুতবে বাংগাল মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা আমিন উদ্দীন শায়খে কাতিয়ার ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি খলিফায়ে মাদানী শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল মোমিন (শায়খে ইমাম বাড়ি), নির্বাহী সভাপতি, মাসিক মদীনা সম্পাদক আল্লামা মুহিউদ্দীন খান, মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস।
জমিয়ত সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা হাফিজ মুহসিন আহমদ, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নাদির খান, হাফিজ মাওলানা খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাফিজ মনছুরুল হাসান রায়পুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী প্রমুখ। জমিয়ত নেতৃবৃন্দ এক শোক বার্তায় বলেন, আল্লামা শায়খে কাতিয়ার ইন্তিকালে দেশবাসী একজন পথ প্রদর্শক আধ্যাত্মিক গুরুকে হারালো, যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তারা মরহুমের আত্মার শান্তি ও শোকাহত পরিবার, ভক্ত অনুরক্ত ও মুরিদানদের ধৈর্য ধারণের আহবান জানান। (দৈনিক সংগ্রাম)
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×