somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাকাচুলের কম্পুবেলা : কম্পু চারণ পোস্ট :!> :!> :!>

২৪ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৯৮-৯৯ সালের দিকে যখন কলেজে পড়তাম, তখন একবন্ধুকে দেখতাম, সে মাঝে মাঝে গল্প করতো বিভিন্ন কম্পুটার গেমস নিয়ে। তার বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার ছিলো, সেই ভাইয়ের কম্পুটার ছিলো বাসায়। গল্প শুনতাম, আর ভাবতাম, কম্পুটার একটা স্বপ্নের মতো। এটা সবার কাছে থাকে না, শুধু মাঝে মাঝে অধিক ভাগ্যবান ২-১ জনের কাছে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিংএ এক বড়ভাই কম্পু নিয়ে গল্প করতো। বলতো, হলে কম্পুটার রেখে বাড়ী চলে আসছে। জিজ্ঞাসা করলাম, কম্পু যদি চুরি হয়ে যায়? বলল, না, তেমন ভয় নাই।

সেই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে দেখলাম, হলে কম্পু সবার রুমে রুমে।আগে মনে করতাম, যারা কম্পুটার সায়েন্স পড়ে, তারাই কম্পু চালায়। কিন্তু হলে এসে আমার সেই ভুল ভাঙলো। মোটামোটি ৮০% ছেলের কাছেই কম্পু আছে। আর কম্পুতে তারা কি করতো?

সিনেমা দেখা, গান শুনা, এইসব, রাত জেগে হলের ল্যান নেটওয়ার্কে এনএফএস রেসিং গেম খেলা। এই হলো কম্পুর কাজ। বড়ভাইরা গেম খেলতো, আমি ভয়ে ভয়ে পাশে বসে দেখতাম (বড় বলতে একটু বেশি বড়, আমি একটা আদু ভাইদের রুমে ছিলাম।)

একদিন এক ভাইয়ের পাশে বসে কার রেসিং গেম দেখছি, ভাইকে একজন ডাকতে আসছে, ভাই তখন বললো, তুমি খেলবা? আমি রাজী হয়ে গেলাম।

সেই প্রথম আমার কোনো চালু কম্পুর মাউসে হাত দেওয়া। কার্সর এদিকে দেই, চলে যায় ঐ দিকে। তারপরও কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। সে এক অন্য অনুভূতি।

আর একদিন রুমের অন্য এক বড়ভাই বললো, তোমার পিসি কি বাসায়? আমি অনেক লজ্জ্বাতে বললাম, আমার কোনো কম্পুটার নাই।


পাশের রুমে আমাদের ব্যাচের এক ছেলে ছিলো। সে এক দুপুরে বললো, আসো সিনেমা দেখি, রুমে বড়ভাই কম্পু চালু রেখে গেছে, সিনেমা দেখতে পারবো এই ফাকে। দেখতে দেখতে কম্পুর একসময় হ্যাং করলো। আমরা তো ভয়ে শেষ, কম্পু কি নষ্ট হয়ে গেল?। বোঁ করে একটা শব্দও করছে। আমরা ২ জনে কিছুই বুঝতে পারছি না কি হলো? পরে ২ অন্য ফ্লোরের আমাদের ব্যাচের কম্পুতে পড়া এক ছেলেকে ডেকে আনলাম, সে কি কি করলো, আর কম্পু ঠিক। অনেক দিন পরে বুঝলাম, সে টাস্ক ম্যানেজারে গিয়ে এপ্লিক্যাশনন ফোর্সড শাট ডাউন করেছিলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় সেমিস্টারে সি প্রোগ্রামিং ছিলো। অতএব আমার মধ্যবিত্ত পরিবারে একটা কম্পু কিনার জন্য হালকা আবেদন জানালাম, পড়ালেখার জন্য একটা কম্পু দরকার। অনেক চেষ্টার পর একটা সেলেরণ ১.১১ গিগাহার্জ, ৪০ জিবির হার্ডডিস্ক, ১২৮ র‌্যামের একটা কম্পু কিনা হলো ২৭,০০০ টাকা দিয়ে।

আব্বা দিলো ১৫,০০০ টাকা, আমার কয়েক বছরের ঈদ উপলক্ষে পাওয়া সেলামী, আম্মা থেকে বাজারের টুপাইস হিসাবে জমানো, হাবি জাবি সব নিয়ে ৬ বছরের সঞ্চয় ১০,০০০ টাকা আর মেঝ ভাই দিলো ২০০০ টাকা।

কম্পু কিনে দিলো মেঝ ভাই। তখন কম্পুর কিছু বুঝতাম না, খালি বুঝতাম, হার্ডডিস্ক সবচেয়ে বড় হলো ৪০ জিবি। যতবড় হার্ডডিস্ক, ততবেশি জিনিস রাখা যায়, তাই একটাই দাবী, আমাকে যেন একটা ৪০ জিবির হার্ডডিস্ক ওয়ালা কম্পু কিনে দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন একাডেমিক কাজে কয়েকটা পাওয়ারপয়েন্ট রিপোর্ট, ২-১টা সি প্রোগ্রামিং, কিছু রিপোর্টের কাজে এবং শেষের দিকে চাকুরীর জন্য সিভি তৈরীর কাজে কম্পু ব্যবহার করা হলো। বেশি ব্যবহৃত হলো গান শুনা, সাদাকালো পুরোনা বাংলা সিনেমা দেখা, বাংলা নাটক দেখার কাজে।


হলে কম্পু রাখার বিপদও আছে, হঠাৎ করে হল ভ্যাকেন্ট করে দিলে সেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কম্পু হলে ফেলে রাখা ভালো হবে না, তাই বাসায় নিয়ে যেতাম। পোটলা বেধেঁ মনিটরের বক্স, সিপিউর বক্স, ক্রিয়েটিভের ২:১ বক্স, নিজের কাপড়ের পোটলা সব নিয়ে যখন রাস্তায় নামতাম, তখন রাস্তায় কয়েকশত ছেলে মেয়ে, কিন্তু কোনো রিক্সা নাই, ভ্যান নাই, সিএনজি নাই, কি যে বিপদ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে মনে হয় ৪বার কি ৫বার হল ভ্যাকেন্টের পাল্লায় পড়েছিলাম।

একবার ঢাকার ২ বন্ধুকে বললাম, আমাকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। সায়েদাবাদে গিয়ে টিকেট করার পর অপেক্ষা করছি, এমন সময় ২টা ষণ্ডা মার্কা কুলি এসে বললো, এইটাই আপনার বাস, আপনার কম্পু আমরা গাড়িতে তুলে দিচ্ছি। আমি বললাম, আমার সাহায্য লাগবে না, তারপরও তারা জোর করে আমার কম্পু গাড়িতে তুলে দিলো। দিয়ে ১০০ টাকা হুমকী দিয়ে কেড়ে নিলো।

বাস উঠার পর জানলাম, ওটা ৩.৩০ এর বাসা, আর আমার বাস ৪.০০টায়, পরের বাসে। তখন ঐ কুলিগুলোকে আর খুজে পেলাম না।/:)/:)

সেই কম্পু এখনো চলে, তবে আমি এখন ল্যাপটপ ব্যবহার করি। বাসায় এইচপির ল্যাপি আর অফিসে ডেলের ডেস্কটপ।


পোস্টখানা একটু বেশি বড় হয়ে গেছে, কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:০৮
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×