পুঁজিবাজারে অন্য কোম্পানিগুলোর তুলনায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বেশি দর হারায়। একই সাথে মৌলভিত্তির বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর ছিল বিক্রির চাপ, এতে বড় মূলধনী কোম্পানিগুলো দর হারায়। মূলধনী মুনাফার ওপর করারোপ আর ২০ শতাংশের ওপর লভ্যাংশ প্রদান করা কোম্পানির কর রেয়াত সুবিধা বাতিল করায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সরকারের ২০১৪-১৫ বাজেট প্রস্তাবনার পর থেকেই শেয়ারবাজারে লেনদেনে মন্দাবস্থা দেখা গেছে। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গেল সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন আগের সপ্তাহের চেয়ে কমেছে ৩৩.৩২ শতাংশ। দৈনিক গড় লেনদেন নেমে এসেছে ২৭৯ কোটি টাকায়। এ সময় সূচকও উলেখযোগ্য পয়েন্ট হারিয়েছে। ডিএসই প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইক্স সূচক কমেছে ১.৮২ শতাংশ। দেশের অন্য শেয়ারবাজার সিএসইতে গেল সপ্তাহে সার্বিক সূচক কমে ১.৭৭ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০ শতাংশ ওপর লভ্যাংশ প্রদান করার কোম্পানিকে দেয়া ১০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা প্রস্তাবিত বাজেটে তুলে নেয়া হয়েছে। এতে বেশি লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানির আয়কর হার বেড়ে যাবে। আর বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বরাবরই লভ্যাংশ বেশি দিয়ে থাকে। এতে সামনের প্রান্তিকে তাদের ওপর আয়করের চাপও বাড়বে। ফলে বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ারদরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এদিকে ডিএসইতে গেল সপ্তাহে সূচকের পতন দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। প্রধান কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচক কমে ৪৭.২২ পয়েন্ট। এদিন লেনদেন হয় ২১৪ কোটি টাকা। পরের কার্যদিবস সোমবার ডিএসএক্স সূচক কমে ২.৮৩ পয়েন্ট। এদিন লেনদেন হয় ৩১৯ কোটি টাকা। মঙ্গলবার লেনদেন কমে দাঁড়ায় ২৬৩ কোটি টাকায়। এদিন সূচক কমে ১৯.৮৮ পয়েন্ট। বুধবার সূচক টানা পতন কিছুটা থামে। সূচকও বাড়ে মাত্র ১.৫৯ পয়েন্ট। তবে লেনদেন কমে দাঁড়ায় ২৩৩ কোটি টাকা। শেষ কার্যদিবসে সূচক পয়েন্ট হারায় ১২.০৬ পয়েন্ট। এদিন লেনদেন হয় ২৬৬ কোটি টাকায়।
খাতওয়ারি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের শুরুতে পদ্মা সেতু নিয়ে চীনা কোম্পানি সঙ্গে চুক্তির ঘোষণা সিমেন্ট ও প্রকৌশল খাতে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল। তবে সপ্তাহের শেষভাগে এসব খাতেও বাজারমূলধন হারায়। তবে লেনদেন আগ্রহ এ দুই খাতে বেশি ছিল।
গেল সপ্তাহে পেনিসুলা চিটাগংয়ের লেনদেন শুরু হয়। এতে এ খাতের বাজার মূলধন সবচেয়ে বেশি বাড়ে। এ খাতের বাজার মূলধন বাড়ে ৭.৯৪ শতাংশ। এছাড়া বিবিধ খাতে বাজার মূলধন বাড়ে ২.৯৬ শতাংশ। অন্য সব খাতেই গেল সপ্তাহে নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল।
ডিএসইতে গেল সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর হারায় সেবা ও আবাসন খাত ৫.৩৬ শতংশ। এছাড়া ৫.১৪ শতাংশ, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ৪.৪৯ শতাংশ ও বস্ত্র খাতে ৪.৯৯ শতাংশ বাজার মূলধন কমে।
ডিএসইতে গেল সপ্তাহে ৩০৩টি কোম্পানির মোট ৩০ কোটি ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৯টি সিকিউরিটিজের লেনদেন হয়। যার বাজারদর ছিল ১ হাজার ৩৯৬ কোটি ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৫২টির, কমেছে ২৩৮টির ও অপরিবর্তিত ছিল ১৩টির দর।
ডিএসইএক্স সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৮০.৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৪৩২৮ দশমিক ৪১ পয়েন্ট। অন্যদিকে নির্বাচিত সূচক একই সময়ে ৩৪.৬২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬০৩.৪৬ পয়েন্টে।
দেশের অন্য শেয়ারবাজর সিএসইতে গেল সপ্তাহে ২৪৬টি কোম্পানির মোট ৩ কোটি ১২ লাখ ৯৯ হাজর ১টি সিকিউরিটিজের লেনদেন হয়, যার বাজার দর ছিল ১২৮ কোটি ২৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৫টির, কমেছে ১৮৪টির ও অপরিবর্তিত ছিল ১৭টির।
সিএসইর সার্বিক সূচক আগের সপ্তাহে চেয়ে ২৪১.৭২ পয়েন্টে কমে দাঁড়িয়েছে ১৩৩৮১.৪৩ পয়েন্টে। অন্যদিকে নির্বাচিত সূচক একই সময়ে ১৫৬.১২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১০৯৭০.১ পয়েন্টে।
ডিএসইতে গেল সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলো হলো- লাফার্জ সুরমা, গ্রামীণফোন, বিএসআরএম স্টিল, পেনিনসুলা চিটাগং, স্কয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো লিমিটেড, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, মবিল যমুনা লুব্রিক্যান্ট ও মিথুন নিটিং।
ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলো হলো- বেক্সিমকো লিমিটেড, এবি ব্যাংক, আইসিবি এএমসিএল ইসলামিক মিউচ্যুয়াল ফান্ড, মুন্নু স্ট্যাফলারস, বঙ্গজ, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, লঙ্কাবাংলা ফিন্যান্স, এসিআই লিমিটেড, মিথুন নিটিং ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।
অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি দর হারানো কোম্পানিগুলো হলো- রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, ওয়াটা কেমিক্যালস, আর্গন ডেনিমস, মেঘনা কনডেন্সড, জুট স্পিনার্স, ম্যারিকো বাংলাদেশ, সাফকো স্পিনিং, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, মবিল যমুনা লুব্রিক্যান্ট ও জিপিএইচ ইস্পাত।