somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবুজের নিকুঞ্জে মেঘে ঢাকা আকাশ

২০ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা থেকে বেশ খানিকটা দূরে সবুজের প্রগার একটা নিকুঞ্জে কয়েকটি নির্দিষ্ট বছরের জন্য আমার বসবাস। সবুজের নিকুঞ্জ বললাম এই কারণে যে, ঢাকা শহরে এত গাছপালা এখানে ছাড়া আর কোথায় নেই। ঢাকা সীসায় ভরা দূষিত শহর কিন্তু ঢাকা থেকে এই নিকুঞ্জে আপনি যখন প্রবেশ করবেন তখন মনে হবে আপনি যেন সবুজের রাজ্যে হারিয়ে গেলেন আর কে যেন আপনার সমস্ত শরীর জুড়ে ঠাণ্ডা শীতল একটা পরশ বুলিয়ে দিল। শুধু কি তাই? সম্পূর্ন ধুলাবালি মুক্ত পরিচ্ছন্ন একটা জায়গা যেখানে আসলে থেকে যেতে ইচ্ছে করে।
শুধুই কি সবুজের রাজ্য এটি?
না।
সংস্কৃতির রাজধানীও বটে। এখানে যেন সংস্কৃতিরই একটা অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। কি নেই এখানে, গান বলেন, নাটক বলেন, তর্কযুদ্ধ বলেন আর যাই বলেন না কেন, এই জায়গাটা সব দিক থেকেই প্রসিদ্ধ। প্রসিদ্ধ হবার পিছনে একটা কারণ আছে আর সেটা হল এখানকার সবাই সবার পরিচিত, সবাই সবার ভাই আর কাজ করার সময় সবাই সবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে কাজ করি।
এখানে এসেছেন আর লেক দেখেন নি সাথে বোনাস হিসেবে শীতের অতিথি পাখিও এমন লোক মনেহয় খুব কমই আছে। ঢাকার মধ্যে একমাত্র নিরাপদ জায়গা এটি যেখানে পাখিরা নিরাপদে বিচরণ করে। এখানকার আরেকটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লাল পদ্ম শোভিত লেক। লাল পদ্ম শুধু মনকেই ভরিয়ে দেয় না সাথে রোমন্থন করিয়ে দেয় অতীতের স্মৃতিগুলো।
এখানে এসেছেন কিন্তু বৃষ্টি দেখেন নি তাহলে আপনি জীবনের চরম মূহুর্তগুলির একটি মিস করেছেন। বৃষ্টির রূপ সব জায়গায় এক রকম নয় আর সব জায়গায় উপভোগ্যও নয়। কিন্তু আপনি এখানে যখন মেঘময় একটা দিনে আসবেন তখন নিজে নিজেই আক্ষেপ করে বলবেন যে, আরো আগে এখানে আসা উচিৎ ছিল। এতো গেল বৃষ্টি আসার পূর্ব মূহুর্ত। কিন্তু যখন দেখবেন যে, নীল আকাশটা ঘনকালো মেঘে ঢেকে গিয়েছে আর মেঘ গুড়গুড় করে শুরু হল মুষলধারে বৃষ্টি। যে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা ছুঁয়ে যায় প্রতিটি সবুজের কোণা, মেঘমেদুরে বৃষ্টি আর সবুজ পাতা আলিঙ্গন করে একে অপরকে। বৃষ্টিতে নিজের শরীরটা আপনি যখন এলিয়ে দিবেন তখন বুঝবেন যে, কোমল এক ধরণের শীতলতা আর সেই সাথে শুভ্র ভালোলাগা আপনার ভিতরে কাজ করে যাচ্ছে। বৃষ্টির দিনে নিকুঞ্জের একটা কক্ষে একা একা বসে আপনি যখন জানালার ভিতর দিয়ে দূর দিগন্তের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন তখন জীবনের সেরা মূহুর্তটি আপনার হাতে এসে ধরা দেবে। ঘাসের উপর বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটাকে মনে হবে একেকটি হীরার বিন্দু।
নিকুঞ্জটি একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে। সকালে এক রূপ তো দুপুরে অন্য রূপ, বিকেলে ভিন্ন রূপ তো রাতে আরেক রূপ। প্রতিটি সময় যেন নিকুঞ্জটি জমজমাট থাকে। এই নিকুঞ্জে বসবাস একঝাক স্বপ্ন বিলাসী মুখের যারা প্রতিটি মুহুর্ত স্বপ্নকে ধারণ করে, তাকে লালন করে এবং ফাইনালি পালন করে।
আপনি বাংলাদেশের সেরা সেরা খাবারগুলো পাবেন এই নিকুঞ্জে। কি নেই এখানে? গ্রাম-বাংলার সেই ভর্তা-ভাজি থেকে শুরু করে ফাস্ট ফুড পর্যন্তও এখানে পাওয়া যায়। বিভিন্ন রকমের ভর্তা, বিভিন্ন রকমের মাছ, বিভিন্ন রকমের মাংস, ভাত, খিচুড়ি, কোর্মা-পোলাও, বিশেষ দিনে পান্তা-ইলিশ সবই দেখা মিলবে এখানে। খাবার সময় মনে হবে আপনি নিজের মায়ের হাতের সেই সেরা রান্নাটাই খাচ্ছেন।
এখানেও বারো মাসে তের পার্বন জমে। বাংলাদেশের আকাশে যখন হঠাৎ করে কালবৈশাখীর আনাগোনা শুরু হয় তখন এখানে চলে পহেলা বৈশাখ উৎযাপনের পালা। নানা ঢং এ নানা রং এ আমরা সবাই যেন এখানে পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নেই। সেদিন যেন সেই নিকুঞ্জের চেহারাটা পাল্টে যায়। খোলস ভেদ করে তার যৌবন যেন উঁকি দেয়। পহেলা ফাল্গুন, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারিতেও তার সেই রূপ যেন বিদ্যমান।
অনেক স্বপ্নবাজ এখানে ঘোরাফেরা করে। আমিও তাদের মধ্য একজন। এই নিকুঞ্জটি যেন স্বপ্ন পূরনেরই একটা আলাদিনের চেরাগ। অধ্যাপক আলী আহসান আমার পূর্ব বাংলা কবিতায় মূলত “সবুজে ভরা নিকুঞ্জ” শব্দটি ব্যবহার করেছেন এই নিকুঞ্জের রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে। মূলত কবিতায় সারা বাংলাকে তিনি সবুজের নিকুঞ্জের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি কবিতায় এই নিকুঞ্জের রূপের মধ্যে দিয়ে পুরো বাংলাকে সবুজের প্রগাঢ় নিকুঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেছেন।

জানেন, সেই নিকুঞ্জ কোনটি?
“জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়”
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×