somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ ও আমার কিছু ভাবনা

১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৬ই এপ্রিল মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম একটি লংমার্চ শেষে কয়েক লক্ষ মানুষের বিশাল একটি মহাসমাবেশ করে। দেশবাসী ঐদিন গভীর উৎকণ্ঠায় ছিল। মহান আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমতে অবশেষে কিছু হয় নাই।

আমি গত ৩/৪ দিন থেকে এই আণ্দোলনের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করলাম। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানমতে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, হেফাজতে ইসলামের এই আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। নিম্নে আমার যুক্তিগুলো তুলে ধরলাম।

১।হেফাজতে ইসলাম যখন লংমার্চের ঘোষনা করেন তখন এদেশের শত শত আলেম তাদের এই কর্মকান্ডকে অনৈসলামিক এবং শিরকী বলে গন্য করেন।সুতরাং তারা ইসলামী সেন্টিমেন্ট সহজে ব্যবহার করতে পারবে না।তারা তাদের লংমাচর্কে জায়েজ করতে গিয়ে মহানবী(সঃ) এর হিজরত অথবা মক্কা বিজয়ের সাথে তুলনা করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)...এটা এদেশের বেশিরভাগ সাধারন মুসলমান গ্রহন করতে পারবে না। সেদিনের মহাসমাবেশে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব তার বক্তব্যে বলেছেন‍‍‍‍‍‌‌‌‌‌‌ বাতিল যখন শক্তিশালী হয়েছিল তখন আল্লাহ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে পাঠিয়েছিলেন, বাতিল যখন শক্তিশালী হয়েছিল তখন আল্লাহ হযরত মুসা (আঃ) কে পাঠিয়েছিলেন, আর এখন বাতিল যখন শক্তিশালী হল তখন আল্লাহ শাহ্ ছফী সাহেবকে পাঠিয়েছেন। (নাউযুবিল্লাহ)..।দেখেন তুলনা করতে করতে একেবারে নবীদের সাথে তুলনা।

২।হেফাজতে ইসলাম মূলত কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রিক একটি সংগঠন। মতিঝিলের সেই মহাসমাবেশে বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টি ও সাধারন মানুষ বড়জোর ৩০ ভাগ। বাকি ৭০ ভাগ কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক। এই ৭০ ভাগ লোক এখনও সেই ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে রয়ে গেছে।
একটি আলিয়া মাদ্রসা বা স্কুলের কোন ছাত্র তার শিক্ষা জীবনের ১০ টি বছর পার করে এবং কওমী মাদ্রাসার একটি ছাত্রের যে শিক্ষা জীবনের ১০ টি বছর পার করেছে তাদের দুইজনের মধ্যে আপনারা যদি তুলনা করেন তাহলে দেখেবেন এদের একজন বর্তমান যুগের আধুনিক মনমানসিকতার ছাত্র আর আরেকজনকে দেখবেন আফগানিস্তানের মতো। আলিয়া মাদ্রাসা অথবা স্কুলের ছাত্র তার ছাত্র জীবনের ১০টি বছরে অনেক বাংলা কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, বিজ্ঞান, সমাজ, বাংলাদেশের ইতিহাস, ইংরেজী ভাষার সাথে সাথে ইসলামী শিক্ষার জ্ঞান অর্জন করে। আর কওমী মাদ্রাসার ছাত্র শুধু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে। তাই এখানেই উভয়পক্ষের দুইধরনের জীবনপ্রণালী গড়ে ওঠে।
৩। কওমী মাদ্রসার শতকরা ৯৮% ছাত্র হচ্ছে এতিম, অসহায় গরীব পরিবারের। ফলে তাদের অভিভাবক হিসেবে একমাত্র হচ্ছেন শিক্ষকরাই। ।অন্যদিকে অপর পক্ষের তাদের বহুলাংশের আর্থিক অবস্থা খারাপ হলেও তাদের অভিভাবক হচ্ছে মা-বাবা। সুতরাং দুইজন দুই ধরনের পরিবেশের মধ্যে বড়ে ওঠে।
৪। কওমী মাদ্রসা থেকে পাস করে বেরুলে হয় মসজিদের ইমাম অথবা মুয়াজ্জিন। অন্যদিকে অপরপক্ষ দেশের সমস্ত স্তরে বিরাজ করে। ফলে সমাজ তথা দেশের নেতৃত্ব থেকে যায় এদের হাতেই।
৫।কওমী মাদ্রসার ছাত্ররা ভর্তি হওয়ার কয়েক মাস পর থেকে তাদের শিক্ষকরা তাদেরকে বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় যাকাতের টাকা , কোরবানীর চামড়া আনার জন্য। অন্যদিকে অন্যপক্ষরা কখন যায় না।
৬। হেফাজতে ইসলামের বর্তমানের আন্দোলন মূলত শাহবাগ গনজাগরনের বিপক্ষে। তারা বলতেছেন যে শাহবাগের সকল নাস্তিক-মুরতাদ, ব্রগার রাস্তিক-মুরতাদ। শাহবাগে নাকি আল্লাহ ও মহানবীসেঃ) সর্ম্পকে কুৎসা রটনা করা হয়।অথচ দেখেন শাহবাগে একটা কথাও আল্লাহ অথবা মহানবী(সঃ) এর বিরুদ্ধে একটি কথাও বলা হয়নি। যেকয়েকজন ব্লগে লেখালেখি করেছিল তাদেরকে সরকার গ্রেফতার করেছিল। আন্দোলনকারীরা ব্লগ মান কী তা জানেনা। হেফাজতের এক মাওলানাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ব্লগ মান কী? উত্তরে উনি বলেছেন ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেট চালায়। যেখানে তাদের নেতাদেরই সঠিক ধারনা নেই তারা কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন এবং শাহবাগে আল্লাহতায়ালা ও মহানবী(সঃ) বিপক্ষে কোন কটুক্তি করা হয়েছে এর সপক্ষে কোন প্রমান দিতে পারেনি। যে আন্দোলন সম্পূর্ন একটি মিথ্যা তথ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছে, কাজেই সেই আন্দোলন ব্যর্থ হতে বাধ্য। অনেকে এখানে বলতে পারেন যেসব ব্লগার আল্লাহ ও মহানবী(সঃ) এর বিরুদ্ধে যারা লিখেছে তারাতো গনজাগরন মঞ্চে ছিল্। তারা গনজাগরনমঞ্চের সাথে যুক্ত থাকলেও তারা এগুলো গনজাগরন মঞ্চ তৈরী হওয়ার আগে লিখেছে। এগুলো তাদের ব্যক্তিগত মত। এগুলোর সাথে গনজাগরন মঞ্চের কোন সর্ম্পক নেই। যারা এইসব কটুক্তি করেছে তাদের অবশ্যই কঠোর শাস্তি হওয়ার দরকার। ব্লগে যে হেফাজতেরও কিছু মানুষ আছে এগুলো তারা জানেওনা।
৭। হেফাজতে ইসলাম যে ১৩ দফা দাবি পেশ করেছে তার সবকটি দাবিই সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এই দাবিগুলোর একি দাবিও কোন একটি আধুনিক দেশে আইনের মধ্যে নেই। বাংলাদেশও একটি আধুনিক রাষ্ট্র। কাজেউ এই দাবীগুলো কখনই পুরন হবে না।
৮। শেষ আদমশুমারী অনুসারে এদেশে পুরুষের চেয়ে মহিলাদের সংখ্যাই বেশি। যখন এদেশের নারীরা এভারেষ্টের চূড়া পদানত করছে, যখন এদেশের নারীরা ছত্রীসেনা হচ্ছে, যখন এদেশের নারীরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,এডভোকটে সহ সমাজের সর্বক্ষেত্রে তথা এদেশের অর্থণীতির চাকাকে সচল রাখছে ঠিক তথনই তারা নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার নামে নারীকে গৃহে বন্দী করে রাখতে চাইছে। তারা মনে হয় জানেনা এদেশের ২০লক্ষ নারীরা পোশাক শিল্পে কাজ করছে। এদেশের নারীরা মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ তথা সবকটি সমাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছে। কাজেই তারা এই দাবীর মাধ্যমে সমগ্র নারী সমাজকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
৯। এদেশের মানুষ কখনও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী কাউকেও ভালোভাবে নেয়নি। হউন তিনি মহান কোন এক মানুষ। মাওলানা আহমদ ছফী সাহেবের মুক্তিযুদ্ধকালীন অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি তৎকালীন মুজাহিদ বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে পাক বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীকে সাহায্য করেছেন।

উপরোক্ত বিভিন্ন কারনে আমার কাছে মনে হচ্ছে হেফাজতে ইসলামের এই আন্দোলন ব্যর্থ হতে বাধ্য এবং সটো আমরা খুব শীঘ্রই দেখতে পাব।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৬
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×