গত ৬ই এপ্রিল মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম একটি লংমার্চ শেষে কয়েক লক্ষ মানুষের বিশাল একটি মহাসমাবেশ করে। দেশবাসী ঐদিন গভীর উৎকণ্ঠায় ছিল। মহান আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমতে অবশেষে কিছু হয় নাই।
আমি গত ৩/৪ দিন থেকে এই আণ্দোলনের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করলাম। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানমতে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, হেফাজতে ইসলামের এই আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। নিম্নে আমার যুক্তিগুলো তুলে ধরলাম।
১।হেফাজতে ইসলাম যখন লংমার্চের ঘোষনা করেন তখন এদেশের শত শত আলেম তাদের এই কর্মকান্ডকে অনৈসলামিক এবং শিরকী বলে গন্য করেন।সুতরাং তারা ইসলামী সেন্টিমেন্ট সহজে ব্যবহার করতে পারবে না।তারা তাদের লংমাচর্কে জায়েজ করতে গিয়ে মহানবী(সঃ) এর হিজরত অথবা মক্কা বিজয়ের সাথে তুলনা করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)...এটা এদেশের বেশিরভাগ সাধারন মুসলমান গ্রহন করতে পারবে না। সেদিনের মহাসমাবেশে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব তার বক্তব্যে বলেছেন বাতিল যখন শক্তিশালী হয়েছিল তখন আল্লাহ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে পাঠিয়েছিলেন, বাতিল যখন শক্তিশালী হয়েছিল তখন আল্লাহ হযরত মুসা (আঃ) কে পাঠিয়েছিলেন, আর এখন বাতিল যখন শক্তিশালী হল তখন আল্লাহ শাহ্ ছফী সাহেবকে পাঠিয়েছেন। (নাউযুবিল্লাহ)..।দেখেন তুলনা করতে করতে একেবারে নবীদের সাথে তুলনা।
২।হেফাজতে ইসলাম মূলত কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রিক একটি সংগঠন। মতিঝিলের সেই মহাসমাবেশে বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টি ও সাধারন মানুষ বড়জোর ৩০ ভাগ। বাকি ৭০ ভাগ কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক। এই ৭০ ভাগ লোক এখনও সেই ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে রয়ে গেছে।
একটি আলিয়া মাদ্রসা বা স্কুলের কোন ছাত্র তার শিক্ষা জীবনের ১০ টি বছর পার করে এবং কওমী মাদ্রাসার একটি ছাত্রের যে শিক্ষা জীবনের ১০ টি বছর পার করেছে তাদের দুইজনের মধ্যে আপনারা যদি তুলনা করেন তাহলে দেখেবেন এদের একজন বর্তমান যুগের আধুনিক মনমানসিকতার ছাত্র আর আরেকজনকে দেখবেন আফগানিস্তানের মতো। আলিয়া মাদ্রাসা অথবা স্কুলের ছাত্র তার ছাত্র জীবনের ১০টি বছরে অনেক বাংলা কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, বিজ্ঞান, সমাজ, বাংলাদেশের ইতিহাস, ইংরেজী ভাষার সাথে সাথে ইসলামী শিক্ষার জ্ঞান অর্জন করে। আর কওমী মাদ্রাসার ছাত্র শুধু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে। তাই এখানেই উভয়পক্ষের দুইধরনের জীবনপ্রণালী গড়ে ওঠে।
৩। কওমী মাদ্রসার শতকরা ৯৮% ছাত্র হচ্ছে এতিম, অসহায় গরীব পরিবারের। ফলে তাদের অভিভাবক হিসেবে একমাত্র হচ্ছেন শিক্ষকরাই। ।অন্যদিকে অপর পক্ষের তাদের বহুলাংশের আর্থিক অবস্থা খারাপ হলেও তাদের অভিভাবক হচ্ছে মা-বাবা। সুতরাং দুইজন দুই ধরনের পরিবেশের মধ্যে বড়ে ওঠে।
৪। কওমী মাদ্রসা থেকে পাস করে বেরুলে হয় মসজিদের ইমাম অথবা মুয়াজ্জিন। অন্যদিকে অপরপক্ষ দেশের সমস্ত স্তরে বিরাজ করে। ফলে সমাজ তথা দেশের নেতৃত্ব থেকে যায় এদের হাতেই।
৫।কওমী মাদ্রসার ছাত্ররা ভর্তি হওয়ার কয়েক মাস পর থেকে তাদের শিক্ষকরা তাদেরকে বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় যাকাতের টাকা , কোরবানীর চামড়া আনার জন্য। অন্যদিকে অন্যপক্ষরা কখন যায় না।
৬। হেফাজতে ইসলামের বর্তমানের আন্দোলন মূলত শাহবাগ গনজাগরনের বিপক্ষে। তারা বলতেছেন যে শাহবাগের সকল নাস্তিক-মুরতাদ, ব্রগার রাস্তিক-মুরতাদ। শাহবাগে নাকি আল্লাহ ও মহানবীসেঃ) সর্ম্পকে কুৎসা রটনা করা হয়।অথচ দেখেন শাহবাগে একটা কথাও আল্লাহ অথবা মহানবী(সঃ) এর বিরুদ্ধে একটি কথাও বলা হয়নি। যেকয়েকজন ব্লগে লেখালেখি করেছিল তাদেরকে সরকার গ্রেফতার করেছিল। আন্দোলনকারীরা ব্লগ মান কী তা জানেনা। হেফাজতের এক মাওলানাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ব্লগ মান কী? উত্তরে উনি বলেছেন ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেট চালায়। যেখানে তাদের নেতাদেরই সঠিক ধারনা নেই তারা কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন এবং শাহবাগে আল্লাহতায়ালা ও মহানবী(সঃ) বিপক্ষে কোন কটুক্তি করা হয়েছে এর সপক্ষে কোন প্রমান দিতে পারেনি। যে আন্দোলন সম্পূর্ন একটি মিথ্যা তথ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছে, কাজেই সেই আন্দোলন ব্যর্থ হতে বাধ্য। অনেকে এখানে বলতে পারেন যেসব ব্লগার আল্লাহ ও মহানবী(সঃ) এর বিরুদ্ধে যারা লিখেছে তারাতো গনজাগরন মঞ্চে ছিল্। তারা গনজাগরনমঞ্চের সাথে যুক্ত থাকলেও তারা এগুলো গনজাগরন মঞ্চ তৈরী হওয়ার আগে লিখেছে। এগুলো তাদের ব্যক্তিগত মত। এগুলোর সাথে গনজাগরন মঞ্চের কোন সর্ম্পক নেই। যারা এইসব কটুক্তি করেছে তাদের অবশ্যই কঠোর শাস্তি হওয়ার দরকার। ব্লগে যে হেফাজতেরও কিছু মানুষ আছে এগুলো তারা জানেওনা।
৭। হেফাজতে ইসলাম যে ১৩ দফা দাবি পেশ করেছে তার সবকটি দাবিই সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এই দাবিগুলোর একি দাবিও কোন একটি আধুনিক দেশে আইনের মধ্যে নেই। বাংলাদেশও একটি আধুনিক রাষ্ট্র। কাজেউ এই দাবীগুলো কখনই পুরন হবে না।
৮। শেষ আদমশুমারী অনুসারে এদেশে পুরুষের চেয়ে মহিলাদের সংখ্যাই বেশি। যখন এদেশের নারীরা এভারেষ্টের চূড়া পদানত করছে, যখন এদেশের নারীরা ছত্রীসেনা হচ্ছে, যখন এদেশের নারীরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার,এডভোকটে সহ সমাজের সর্বক্ষেত্রে তথা এদেশের অর্থণীতির চাকাকে সচল রাখছে ঠিক তথনই তারা নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার নামে নারীকে গৃহে বন্দী করে রাখতে চাইছে। তারা মনে হয় জানেনা এদেশের ২০লক্ষ নারীরা পোশাক শিল্পে কাজ করছে। এদেশের নারীরা মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ তথা সবকটি সমাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছে। কাজেই তারা এই দাবীর মাধ্যমে সমগ্র নারী সমাজকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
৯। এদেশের মানুষ কখনও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী কাউকেও ভালোভাবে নেয়নি। হউন তিনি মহান কোন এক মানুষ। মাওলানা আহমদ ছফী সাহেবের মুক্তিযুদ্ধকালীন অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি তৎকালীন মুজাহিদ বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে পাক বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীকে সাহায্য করেছেন।
উপরোক্ত বিভিন্ন কারনে আমার কাছে মনে হচ্ছে হেফাজতে ইসলামের এই আন্দোলন ব্যর্থ হতে বাধ্য এবং সটো আমরা খুব শীঘ্রই দেখতে পাব।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




