somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিলেটের গৌরব মহাপ্রাণ খাঁন বাহাদুর নাছির উদ্দিন সাহেব

০১ লা মে, ২০১৩ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৮৭১ সালে সিলেট জেলার ভাদেশ্বর গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে খাঁন বাহাদুর নাছির উদ্দিন জন্ম গ্রহণ করেন।তাঁর দাদা আলিম উদ্দিন চৌধুরী, পিতার নাম মোঃ মোশারফ উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা আমেনা খাতুন। তাঁর পারিবারিক পদবী ছিল চৌধুরী।তবে তিনি তা লিখতেন না।অল্প বয়সে তিনি তাঁর বাবাকে হারান।তাঁর বাবার মৃত্যুর পর মা ই তাঁকে লেখাপড়া চালাতে উৎসাহিত করেন।প্রাথমিক শিক্ষা নেন ভাদেশ্বরে ও সিলেটে।তারপর তাঁর ভগ্নিপতি পূর্বভাগের গোলাম ইজদানী চৌধুরী তাঁর কর্মস্থলে হবিগঞ্জ নিয়ে যান ও লেখাপড়ার ব্যয়ভার গ্রহণ করেন।হবিগঞ্জ হাইস্কুল থেকে ১৮৯২ সালে তিনি এন্ট্রাস পাস করেন।সিলেট তখন আসাম প্রদেশের একটি জেলা।প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি আসাম প্রদেশ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেন। বাঙালি মুসলমান সমাজে প্রথম প্রজন্মের আধুনিক উচ্চ শিক্ষিতদের একজন ছিলেন নাছির উদ্দিন।তিনি ছিলেন শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক এর সমসাময়িক ও সহপাঠী।১৮৯৬ সালে তিনি ইংরেজীতে অনার্স সহ প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন।১৮৯৭ সালে তিনি এম.এ পাস করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।সে বছর মাত্র দুজন মুসলমান ছাত্র এম.এ পাস করেন।১৮৯৯ সালে নাছির উদ্দিন রিপন কলেজ থেকে বি.এল পাস করেন।বছর খানেক উকালতি করে ১৯০০ সালে তিনি বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। চাকুরী জীবনের প্রথমে তিনি সাবডেপুটি কালেক্টর পদ লাভ করেন এবং অল্প কালের মধ্যে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্যাট পদে উন্নিত হন।অতঃপর তিনি ডিষ্ট্রিক ম্যাজিস্ট্যাট পদে অধিষ্টিত হয়ে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন।তিনি একজন সফল ও জনপ্রিয় রাজকর্মচারী ছিলেন।যার জন্য পরবর্তীকালে তিনি ‘খাঁন বাহাদুর’ উপাধি লাভ করেন।কর্মজীবনের শেষপর্যায়ে তিনি কলিকাতা এডিশনাল চীফ ম্যাজিস্ট্যাট পদে উন্নিত হন। ম্যাজিস্ট্যাট হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন দিল্লী, কলকাতা, পাবনাসহ বাংলার বিভিন্ন জেলায়।১৯০৪ সালে তিনি বিবাহ করেন চাঁদপুরের রূপসায় জমিদার মরহুম শমসের গাজী চৌধুরী সাহেবের প্রথমা কন্যা আশরাফুন্নেছাকে। তার অধিকাংশ সময় কাটে কলকাতায়।সে সময় কলকাতার লেখক,বুদ্ধিজীবী ও সমাজকর্মীদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ট সর্ম্পক গড়ে ওঠে।তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন এ.কে.এম.ফজলুল হক, স্যার সাদুল্লা, নওয়াব আহসান উল্লাহ, কামিনী কুমার দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ।তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল।নাছির উদ্দিন সাহেবের আরও এক ভাই হলেন নূর উদ্দিন মোহাম্মদ চৌধুরী।তিনিও একজন রুচিবান ব্যক্তি ছিলেন।তাঁর দুই ছেলের মধ্যে ১ম জন হলেন ডাঃ মরহুম আসাদ চৌধুরী ও ২য় ছেলে হলেন আসাম প্রদেশের খ্যাতিমান খেলোয়াড় মরহুম রইসুজ্জামান চৌধুরী।সেকালে নাছির উদ্দিন আধুনিক পাশ্চাত্য পোশাকই পরতেন।বাড়িতে পরতেন পাজামা-পাঞ্জাবি।সমাজের উন্নতির জন্য অবিরাম ভাবতেন নাছির উদ্দিন।আধুনিক শিক্ষা বিস্তার কীভাবে হবে সে চিন্তায় ক্লান্তি ছিল না তাঁর।বেগম রোকেয়ার সাথেও তাঁর সুসম্পর্ক ছিল।বেগম রোকেয়ার প্রথম স্কুল প্রতিষ্ঠায় নাছির উদ্দিনের সহায়তা ছিল।তখনকার বাংলা প্রদেশের খ্যাতনামা মুসলমান সাহিত্যিক এস.ওয়াজেদ আলী বি.এ(কেন্টাব)বার-এট-ল খান বাহাদুর নাছির উদ্দিন সাহেবের সমসাময়িক ছিলেন। এস.ওয়াজেদ আলী তাঁর লিখিত বই‘মাসুকের বই’ নাছির উদ্দিন সাহেবকে উৎসর্গ করেছিলেন।তিনি আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের উদারভাবে সাহায্য করতেন। নানাভাবে সমাজের জন্য তিনি কাজ করে গেছেন।বিয়ের ৩/৪ বছর পর তাঁর স্ত্রী মারা যান।এরপর তিনি আর কোন বিবাহ করেননি।তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। ভাদেশ্বরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁর অকাল প্রয়াত প্রিয়তমা স্ত্রীর নামে “আশরাফুন্নেছা দাতব্য চিকিৎসালয়’’।যা এখনও বর্তমান।এলাকায় তিনি কয়েকটি কালভার্টও নির্মান করেন।নিজের সঞ্চিত অর্থ সমাজের ব্যয় করেছেন।তিনি ১৯৩৩ সালের ৩১শে জানুয়ারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।১৯৩৬ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত সরকার কর্তৃক মনোনীত কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন।যখন সময় পেতেন তখন বই পড়তেন। বিশেষকরে সাহিত্যে অগ্রসরমান জাতিগুলোর ইতিহাস, ইংরেজি ভাষায় লিখা ইতিহাস, সমাজ,বিজ্ঞান ও দর্শনের বই।তাঁর ভাদেশ্বরের বাড়িতে ছোটখাট একটি লাইব্রেরি ছিল। লাইব্রেরিতে প্রচুর মূল্যবান বই ছিল।তিনি ইসলাম ধর্মের অর্ন্তনিহিত শিক্ষা ও দর্শন নিয়ে ভাবতেন ও অন্যের সঙ্গে আলোচনা করতেন।চাকুরীতে থাকা অব¯থায় শিলং পাহাড়ের উপরে একটি বাড়ি করেছিলেন।তিরিশের দশকে ছিল তাঁর দামি মটরগাড়ি।১৯৪৭ সালের পরে তিনি শিলং এর বাড়িটি বিনিময় করে সিলেটে প্রায় দুই বিঘার একটি বাড়ি পান।পরে সে বাড়ি তিনি তাঁর ভাতিজার কাছে মাত্র ৯০০ টাকায় বিক্রি করেন।তিনি দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস রোগে ভুগেছিলেন। অতঃপর ১৯৫১ সালের ১লা মে ভাদেশ্বরস্থ নিজ বাড়িতে তিনি মৃত্যবরণ করেন।তিনি ছিলেন একজন বিদ্বান ব্যক্তি।স্বভাবগতভাবে তিনি ছিলেন নিরহংকার ও সমাজসেবী।আজ এই দিনে এই মহান ব্যক্তির রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৩ রাত ৯:২১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×