মেয়েটার নাম "সন্ধ্যা"। নামটা ঠিক যেমন মিষ্টি তেমনি মিষ্টি তার চেহারাখানা। সত্যিই অপরূপ দেখতে মেয়েটা। সে যে শুধুই রূপবতীই তা কিন্তু নয় বরং একইসাথে সে একজন অত্যন্ত ভালো ছাত্রী এবং একজন ভালো মনের অধিকারী মানুষ।
সন্ধ্যা যখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী তখন তার সাথে প্রথম দেখা হয় আমার। মানে এর আগেও দেখা হয়েছিল তবে এভাবে নয়। সত্যিই সেদিন দিনটাই অন্যরকম ছিল। আমার আজও স্পষ্ট মনেআছে সেদিন হলুদ রং এর জামা পড়েছিল ও। সত্যি কথা বলতে কি, একটা দিব্যি বূপকথার পড়ি যেন আকাশ থেকে নেমে এসেছে তাই মনে হচ্ছিল আমার। আর সেই দেখাতেই ভালেবাসা!
এরপর স্টেপ টু স্টেপ এগুতে থাকি একসময় ও সারা দেয় আমার কথায়। একটা সুন্দর রিলেশনশীপ গড়ে ওঠে আমাদের মাঝে।
ওর সাথে কাঁটানো মুহূর্ত গুলোর একটাও ভোলার নয়। কারন এটা যে আমার জীবনে প্রথম রিলেশনশীপ ছিল। শুধু আমার প্রথম রিলেশনশীপ তা কিন্তু নয় বরং ওরও জীবনে আমিই ছিলাম প্রথম কোন ছেলে।
রিলেশনের দুমাস পরেই আমাদের ব্রেকাপ হয়ে যায়। কারন ছিলাম আমি নিজেই। কারন এতক্ষণ পর্যন্ত যতটা ভালো ছেলে আপনারা আমায় মনে করেছেন ততটা ভালো আমি ছিলামনা। আমি সেই মুহূর্তে অনেক অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত ছিলাম। সারাদিন লেখাপড়া বাদ দিয়ে ঘুরে বেড়াতাম তারপর আবার মারামারি করতাম। এছাড়া মাদকাসক্তও ছিলাম আমি।সব কিছু না জেনে বুঝে ও আমায় ভালোবেসেছিল , যখন সত্যটা ওর সামনে পরিস্কার হয়েছে তখন ও চলে গিয়েছে আমার কাছ থেকে। যারা ব্যাপারটি পড়ছেন, তারা নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন আমার সাথে ওর রিলেশন ব্রেকাপ করার সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল কিনা। আমার মতেও সঠিক ছিল; কারন সেই সময়টায় আমি ওর যোগ্য নই।এমন একটা পচা ছেলে ওর যোগ্য হতে পারেনা।
ও রিলেশন ব্রেকাপ করার পর আমি আমার আসল অবস্থানটা বুঝতে পারি ; নিজেকে তুমুল পরিবর্তনের চেষ্টা করি। আর সেই সময়টায়ই একটা অবাক ঘটনা ঘটে যায়। ও ফিরে আসে আবার আমার জীবনে এবং শক্ত করে হাতটা ধরে বলে, পরিবর্তন হতে পারবানা তুমি আমার জন্য??
সত্যিই সেদিন অনেক অবাক হয়েছিলাম ওকে দেখে। আর আমি কথা দিয়েছিলাম ওকে; নিজেকে সত্যিই পরিবর্তন করে দেখাবো ।আর ওর যোগ্য করে তুলবো নিজেকে।
এরপর থেকে সবকিছু বাদ দিয়ে পুরোপুরি পড়ালেখায় মনোনিবেশ করি আমি। কিন্তু এসব কিছু শর্তেও আমার হাতে সময়টা ছিল অনেক কম। কারন মাত্র চারটি মাসটি মাস যে বাকি ছিল এসএসসি পরিক্ষার।
"যে ছেলে পুরা ক্লাস নাইন এবং টেনের এত মাস পর্যন্ত হাতে বই পর্যন্ত উঠায়নি সে কি নিজের কি পরিবর্তন কবরে এই চারমাসে??"
এমন প্রশ্নেরই আনাগোনা চলতে থাকে আমার বন্ধু মহলে তারপরেও কয়েকজন বন্ধু আমায় যতেষ্ট সার্পোট করতো; বলতো তুই নিশ্চই পারবি।
আমি কিছুতেই হাল ছাড়িনি শেষ অব্দি চেষ্টা করে গিয়েছি নিজেকে পরিবর্তনের জন্য। মাঝেমাঝে ও আমার লেখাপড়ার প্রতি আরও বেশী বেশী আগ্রহটা বাড়ানোর জন্য বলতো, তুমি যদি এসএসসিতে গোন্ডেন প্লাস না পাও তবে আমি আবার তোমার কাছ থেকে দূরে চলে যাবো।
আমি কিছুতেই হারাতে চাইনি; সব কিছু দিয়ে চেষ্টা করেছি ; দিন-রাত পড়েছি।
অবশেষে দেখতে দেখতে চারমাস অতিক্রম করে এসএসসি পরিক্ষা চলে আসলো। সব পরিক্ষা ভালোই দিচ্ছিলাম আমি কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস, পদার্থ বিজ্ঞান পরিক্ষার দিনে স্যাররা আমার মাত্র সতেরোটা নৈবত্তিক মেশাতেই খাতা নিয়ে নিল। আসলে সেদিন পুরো হলের পরিক্ষার্থীদের সাথেই এমর ঘটনা ঘটেছিল। স্যাররা টাইম নিয়ে সমস্যা পাকিয়ে ফেলেছিল আর ফল দিতে হলো আমাদের।
বাড়িতে এসে সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম ; কিন্তু কেঁদে আর কিহবে যা হওয়ার তা তো হয়েইছে। এখন রেজাল্টের আপেক্ষায়.....
তিনমাস পর রেজাল্ট হলো কিন্তু কি পেয়েছি আমি??;
গোন্ডেন প্লাস??
নাহ্!!! গোন্ডেন প্লাস কেন ; এ প্লাসও পাইনি আমি।
এখন কোন মুখ নিয়ে ওর সামনে যাবো আমি; ভাবছিলাম এখন আজ থেকেই হয়তো রিলেশন ব্রেকাপ হবে আবার।
কিন্তু না সম্পূর্ণ ধারনাটাই ছিল আমার ভুল। কারন অবাক দুষ্টু-মিষ্টি মেয়ে আবার আবাক কান্ড করে বসলো। আমি ফোন দিয়ে বললো, টেনশন নিচ্ছ কেন ;আমি তো তোমার পাশে আছিই। এবার হয়নি তো কি হয়েছে এইচএসসি তে নিশ্চই তুমি গোল্ডেন প্লাস পাবে। আর তুমি যে আমার জন্য এতটা পরিবর্তন হয়েছো সেটাই আমার কাছে অনেক কিছু। এ কথা শোনার পর আমি অনেক কেঁদেছিলাম; দুঃখের কান্না নয় আনন্দের কান্না।।
নিজের এত পরিবর্তনের ফলেও বাবা-মা আমার প্রতি যে আগেই বিশ্বাসটা হারিয়েছিল, সেটা হয়তো ফিরাতে পারিনি। তার ফলে বাবা-মা সরাসরি আমার কলেজে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে তা নামত জানিয়ে দিল। তারা ভেবেছিল কলেজে ভর্তি হয়ে যদি কোন ভালো রেজাল্ট না করতে পারি তবে তারপর কোথায় চান্স পাবো??। আর আমরা যেহেতু মিডেল ক্লাস ফ্যামিলি, তাই আমায় যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়াবে এমনটাও সম্ভব নয়।
তাই তারা বললো, আমায় নাকি ম্যাটসে ভর্তি করাবে। আমি বলেছিলাম আমি হবোনা তাদের যা করার তারা করুক।
তারাও জানিয়ে দিল যদি তাদের কথামতো ভর্তি না হই তবে আমি কি করবো তা যেন নিজেই করি ; তারা আমার লেখাপড়ার কোন খরচ বহন করবেনা।
তাই একরকম বাধ্য হয়েই ম্যাটসে ভর্তি হতে হয় আমাকে।
তারপর থেকেই শুরু হলো আমার ভালোবাসার মাঝে মূল ফাটলটা। ওর পরিবার থেকে এখন একের পর এক বাঁধা আসে আমাদের রিলেশনশীপের জন্য। তারা আমাদের রিলেশনশীপের পক্ষে ছিলেননা। কারন হিসাবে তারা বলতেন, আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের যতেষ্ট সংশয় রয়েছে। আর যাই হোক আমি তাদের মেয়ের যোগ্য হতে পারবোনা।
এত বাঁধা শর্তেও আমারা আমাদের রিলেশনশীপ কন্টেনিউ করে গিয়েছি। এভাবেই কেঁটে গিয়েছে প্রায় তিনটি বছর। এর মধ্যে আমি তাদের এই ভবিষ্যৎবাণী পরিবর্তনের লক্ষে ম্যাটসের পাশাপাশি ইন্টারে ভর্তি হই। আমার লক্ষ্য হচ্ছে ম্যাটস্ পাশ করার পরই সরাসরি এমবিবিএস এ চান্স নেওয়া। যেহেতু বাংলাদেশী শিক্ষা ব্যবস্থায় ম্যাটসের পর এমবিবিএস করা যায়না তাই এই ইন্টারের বাড়তি চাপটা আমায় নিতে হচ্ছে আরকি।
এতকিছুর পরও আজ আমাদের এই ব্রেকাপ। আর ব্রেকাপটা এমনভাবে হইলো যা আমি কখনোই আশা করিনি। আজ তার প্রতি আমার বিশ্বাস, আস্তা সবকিছুকে ধুলিস্যাত করে দিয়েছে সে। এতদিনের চেনা মানুষটাকে হঠাৎ করেই চিনতে পারছিনা আমি; সবকিছুই কেন যেন গোল পাকিয়ে যাচ্ছে কোন কিছুই বুঝতে পারছিনা।
আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে সব কিছু খুলে বলছি তবে কথাগুলো পরিপ্রেক্ষীতে আপনাদের মন্তব্য আশা করছি...
সন্ধ্যা এই প্রায় এক সপ্তাহ আগে একটা ছেলের প্রপোস পায়; এর আগেও এমন বহুবার প্রপোস পেয়েছে সে । কিন্তু বরাবারের মতো এবারও জানিয়ে দিল ছেলেটিকে আমার সাথে রিলেশনের কথা। কিন্তু তার পরপরই নিজেই বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দিল ছেলেটির দিকে। আর ছেলেটিও তাতে রাজি। আমি দুদিন পর আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে ছেলেটার সাথে ওর প্রতিদিন কথা হয় এমন তথ্য জানতে পারি। কিন্তু কথাটা আমলেই নিলামনা; এমন কিছু হলে ও আমায় অবশ্যই জানাবে বলে আমি ভেবেছিলাম। আমার ওর প্রতি এ বিশ্বাসটুকু ছিল কিন্তু ও আমায় জানায়নি।
তারপর আবার দুদিন পর তথ্য পাইলাম যে, সন্ধ্যা ছেলেটার সাথে কলেজের মধ্যে নাকি খোলা মাঠে কথা বলছে।
কথাটা শোনার কিছুক্ষের মধ্যেই ফোন দিলাম ওর বান্ধুবিকে। আর জানতে চাইলাম তোমরা কই আছ এখন??
: আমরা কলেজে।
: তবে পরে ফোন করছি। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে, বলে ফোন কাঁটলাম আমি।
তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোন আসলো সন্ধ্যার।আর এতক্ষণে সব কিছু খুলে বললো ও আমায়। আমি ওর কথাগুলো শুনে আবাক হলাম। আর একটাই মাত্র প্রশ্ন করলাম,
একটা ছেলে তোমায় প্রপোস করেছে তার সাথে কেন ফ্রেন্ডসিপ করতে হবে??
তারপরেই শুধু হইলো আমারসাথে ওর কথা কাটাকাটি আর অবশেষে রাগে আমি, এই ফ্রেন্ডশিপ কন্টেনিউ করলে ভবিষ্যৎে কি হবে এবং হতে তা নিয়ে কিছু নেতিবাচক কথা বলে রাখলাম। এটুকুই কথা হয়েছিল সেদিন।
একদিন পর ফেসবুকে দেখলাম, ঐ ছেলেটা নিজের নামের সাথে ওর নাম লাগিয়ে ফেসবুক আইডি খুলেছে। সরাসরি ছেলেটাকে ফোন করে জিঙ্গাসা করলাম, এই তোমার ফ্রেন্ড ভাবা ওকে??
ছেলের যে কখনোই সন্ধ্যাকে ফ্রেন্ড ভাবেনি তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে সে আমায় বুঝিয়ে দিল সেটা।
আমি আবাক!! সন্ধ্যাকে বিষয়টা বোঝানোর চেষ্টা করলাম আর আমার সেই নেতিবাচক ভবিষ্যৎ বাণী কতটা সত্য হতে যাচ্ছে সেটাইও অনুধাবন করানোর চেষ্টা করলাম।
তারপর ছেলেটিকে ফোন দিয়ে তার সাথে দেখা করার জন্য আহব্বান করলাম। ছেলেটিও রাজি হইলো আমার কথায়। তবে প্রায় ঘন্টাখানিক পর কল দিয়েই অন্যরকম কথা ভেসে আসলো তার মুখ থেকে। আমি আবাক হলাম, কেন এভাবে কথা বলছে সে আমার সাথে?
ছেলেটা এমনভাবে বলছিল যাতে মনেহচ্ছিল আমি মনেহয় কোন গুন্ডা আর সে আমায় ভিষন ভয় পায়। ও আসলে বুঝানোর চেষ্টা করছিল আমি ওকে সামনে পাইলেই মনেহয় খুন করে ফেলবো।
কেন এমনভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছিল সেটা তখন না বুঝলেও কিছুক্ষণ পর ঠিক বুঝেছি। কারনটা হচ্ছে ওর সামনে সেই সময়টায় সন্ধ্যা স্বয়ং দাড়িয়ে ছিল।
আর সন্ধ্যার সামনে আমায় খারাপ বানানোর জন্যই এতসব আয়োজন। সন্ধ্যাও তার এই ছকে পা দিয়েছে। আমার প্রতি ঘৃর্ণা প্রকাশ করে সরাসরি আমায় আর কোনদিন ওর লাইফ নিয়ে ইন্টারফেয়ার না করার জন্য বলেছে। আরও বলেছে আমি ১০ টা ছেলের সাথে রিলেশন করবো তাতে তোমার কি; আমি আজ থেকে আমাদের রিলেশনশীপ এখানেই ব্রেকাপ করছি। আমি শুধু শুনে গিয়েছি তার কথাগুলো; একটা প্রতিবাদও করিনি। দুদিনের একটা ফ্রেন্ডের চক্রান্তে তার তিন বছরের রিলেশনশিপকে ব্রেকাপ করেছে; এখানে কিই বা বলার আছে আমার। তবে শেষে একটা কথাই বলেছি, একদিন না একদিন তুমি বুঝবা রাশেদের ভালোবাসা কতটা পবিত্র ছিল। আর সেদিন অনুতপ্ত করবে তুমি নিজেই। তবে লাভ হবেনা কারন এই রাশেদ আজ থেকে তোমার দিকে ফিরেও তাকাবেনা। মনেরেখ আল্লাহ উপর থেকে সব কিছু দেখছে আর তিনি বিচার একদিন করবে।
এই ছিল আমার প্রকৃত ভালোবাসা সমাপ্তির মর্মাহত ইতিহাস। এখন আপনাদের মন্তব্যের আপেক্ষায় রইলাম। আশাকরি সকলে মন্তব্য করবেন....
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০১