মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব একটি প্রকল্পের নাম কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং তৃণমূলের জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প গ্রহণ করেন। এই প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৬-২০০১ শাসনামলে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সারাদেশে ১০ হাজার ৭২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত হয় এবং ৮ হাজারটি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়। সরকার পরিবর্তন হলে মাঝখানে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকে। ২০০৯ সাল থেকে আবার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করা হয়। ২০১১ সাল থেকে আগস্ট ২০১৭ পর্যন্ত নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয় ৩ হাজার ১৩৮টি। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৮৬১টি। ২০২২ সালের মধ্যে সারাদেশে ১৭ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ সংক্রান্ত সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
কিন্তু এতকিছুর মহাযোগ্যের পর প্রশ্ন একটি থেকেই যায়, এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবা দিচ্ছে কোন ডাক্তার?
বাস্তবতা হচ্ছে এই কোটি কোটি টাকার প্রকল্পে সেবা দিচ্ছে HSC সমমান আটর্স, কমার্স,কারিগরি,মানবিক যেকোন বিভাগের ছাত্ররা।তাদের নাম দেওয়া হয়েছে, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইভার। যাদের মাত্র ৩ মাসের একটি ট্রেনিং দিয়ে এখানে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভাবলেও গা শিওরে উঠে, সারাজীবন কারিগরি পড়ে ৩ মাসের একটি সাধারন কোর্সেই সে পেয়ে যাচ্ছে ড্রাগ লেখার লাইসেন্স। যার ফলে জনমনে তৈরী হচ্ছে সঙ্কা, স্বাধাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্য সেবার মান নিয়ে!
এভাবে চলতে থাকলে এই মেঘা প্রকল্পটি অতি দ্রুতই জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার সঙ্কা করছি।
এখনই যদি সরকার সঠিক পদক্ষেপ না নিতে পারে, তবে সত্যিকারের জনগণের দাড়গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দেবার যে স্বপ্ন নিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যাত্রা শুরু করেছিল। সেই যাত্রার বাস্তবায়ন কোনদিনই সম্ভব হবেনা
এমতাবস্থায় এই মেঘা প্রকল্পটির সঠিক ব্যাবস্থাপনায় আনা সময়ের দাবী রাখে।এখানে সত্যিকারের ডাক্তারদেরই নিয়োগ দিতে হবে। না হলে কোনদিনই এই প্রকল্পটি মানুষের আস্থা অর্জন করে উঠতে পারবেনা। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আমাদের দেশের ডাক্তারদের তো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই ঠিকমতো খুজে পাওয়া যায়না। তারা কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগ দিলে কিভাবে যাবে?
এ প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই, বিকল্প সমাধান হতে পারে ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা। যাদের মেডিকেলের ১৪ টি বিষয়ের উপর ৩ বছরের তাত্ত্বিক এবং ১ বছরের ইন্টার্নশিপ সহ মোট ৪ বছরে তারা ডিএমএফ(DMF) ডিগ্রি অর্জন করে। এছাড়া ডিগ্রি শেষে তাদের বিএমডিসি রেজিঃ দেওয়া হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে বৈধ চিকিৎসক হিসাবে বিএমডিসি রেজিস্টেশন শুধুমাত্র এমবিবিএস, বিডিএস এবং ডিএমএফ দেরই দেওয়া হয়।
এছাড়া তাদের সাব এসিসট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার(SACMO) হিসাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে দীর্ঘকাল থেকে তারা সুনামের সাথে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে আসছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোর চিত্র আমাদের বর্তমানে সকলেরই জানা। এখানে বড় বড় ডাক্তারদের নিয়মিত খুজে পাওয়া না গেলেও এই ডিপ্লোমা চিকিৎসকরাই যে গ্রাম ৬০-৭০ ভাগ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছে এ সম্পর্কিত খবরগুলো প্রায়সই বিভিন্ন পত্রিকার পতায় নজরে আসে। তবে শেষ এক দশকেরও বেশী সময় ধরে তাদের নিয়োগ বন্ধ থাকায় এই সেক্টরে বেকারত্বের হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে । বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজারের বেশী ডিপ্লোমা চিকিৎসক বেকারত্বে ভুগছে।
এ অবস্থায় ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের এই প্রকল্পে ব্যবহার করতে পারাটা হবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন। যদি এই প্রকল্পটিতে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় তবে জনগণের দোরগোড়ায় প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পারবে বলে মনেকরি এবং বাংলাদেশ সারা বিশ্বে স্বাস্থ্য সেবায় রোল মডেল হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:৫৭