প্রায়সই বিভিন্ন জায়গায় ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের ডাক্তার লেখায় বাঁধা সৃষ্টি করে স্বয়ং প্রশাসনের অনেক লোকজনদের জরিমানা করতে দেখি। পরে আবার সেই টাকা ফেরত দেবারও নিউজ প্রায়সই পত্রিকা পাতা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলোতে দেখা যায়।
তবে এখানে প্রশ্ন আসে, জরিমানা বা হলোই কেন আর ফেরতইবা দেওয়া হয় কেন?
এই নাটকের প্রয়োজন কি?
আরেকটি বড় প্রশ্ন আসে, যদি তারা নিরাপরাধী হয় তবে এই হয়রানিতে তাদের মানহানি করা হচ্ছেনা কি?
মূল আলোচনায় যাবার আগে, ডিপ্লোমা চিকিৎসক কারা তাদের সম্পর্কে একটু ছোট করে ধারনা দিয়ে নেই।
ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের হঠাৎবাংলাদেশে নতুন করে আর্বিভাব ঘটেনি। চিকিৎসকদের এই শ্রেণীটির বাংলাদেশে আবির্ভাব হয় বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের হাত ধরে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধস্ত দেশে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া ছিল সরকারের কাছে সবথেকে চ্যালেন্জের কাজ।ছিলনা পর্যান্ত কোন চিকিৎসক,ছিলনা পর্যান্ত মেডিকেল কলেজ। তখনই বঙ্গবন্ধু কম সময়ে মধ্যমমানের চিকিৎসক তৈরীর লক্ষ্যে ডিএমএফ(DMF) ডিগ্রিটি অনুমোদন করিয়ে আনেন।যার পূর্ণ রূপ হচ্ছে diploma in medical faculty।
বর্তমানে ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা ৩ বছর তাত্ত্বিক জ্ঞান এবং ১ বছরের ইন্টার্নিশিপের মধ্য দিয়ে দিয়ে ডিএমএফ ডিগ্রিটি অর্জন করেন। এবং কোর্স শেষে তাদের বিএমডিসি থেকে চিকিৎসক হিসাবে বৈধ রেজিষ্টেশন দেওয়া হয়। এখানে উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে শুধুমাত্র এমবিবিএম, বিডিএস এবং ডিএমএফ -দেরই চিকিৎসক হিসাবে বৈধ রেজিষ্টেশন দেওয়া হয়। এছাড়া এই ডিএমএফরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে সাব এসিসট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার(SACMO) হিসাবে দীর্ঘকাল ধরে সফলতার সাথে কাজ করে আসছে।
এখান মূল আলোচনা আসা যাক, প্রশাসনের এই ভুলটি হয় কেন?
প্রথমত কারন হচ্ছে, বিএমডিসি আইন ২০১০ এর ২৯ এর(২)।
এই আইনে স্পষ্ট বলা আছে, এমবিবিএস এবং বিডিএস ছাড়া অন্য কেউ ডাঃ পদবী ব্যবহার করতে পারবেনা।
এরপরে তো ডিএমএফ-দের জমিমানা করা যেতেই পারে। এটিই সাধারণ ভাবে মনেহতে পারে।
এই একই ভুলটি প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাগণও করে থাকেন। তবে এর পিছনেও যে বিস্তার কাহিনী রয়েছে সেটি আবার প্রকাশ পায় আদালতে গিয়ে।
ঘটনাটি একটু খুলে বললে হয়তো পাঠকদের বোঝার জন্য সুবিধা হবে। এর কারণ আমি আগেই বলেছি, বিএমডিসি শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন দেয় এমবিবিএস, বিডিএস এবং ডিএমএফ -দের।
আগে থেকে সব ঠিকই ছিল ডাঃ লেখায় কারো বাঁধা ছিলনা। কিন্তু ২০১০ সালে এসে বিএমডিসির নীতিনির্ধারক ফোরাম হঠাৎ সংশোধিত আইনে ডিএমএফদের ডাঃ লেখার অধিকার কেড়ে নিতে এই আইনটির বাস্তবায়ন করেন।
শুরু হয় ডিএমএফদের ধরপাকড়। এতে তাদের উপর অবিচার করা হয়েছে বলে, ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন 'বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন' আদালতে গিয়ে তারা রিট করে।
তাদের যুক্তি ছিল, বিএমডিসি থেকে বৈধ ডাক্তার হিসবে রেজিঃ পাবার পরও কেন ডাঃ লিখতে পারবেনা?
একদিকে বিএমডিসি ড্রাগ লেখার লাইসেন্স দিবে আর অন্যদিকে বলবে তুমি ডাক্তার না। এটি কি করে মানার?
আদালত রিট পিটিশনটি গ্রহন করে এবং তারপর ঘোষণা করে, তাদের ডাঃ লেখার অধিকার ৩ মাস বাড়ানো হলো, তারপর ৬ মাস বাড়ানো হলো, এভাবে ৬ মাস করেকরে বেশ কয়েকবার চলার পর সর্বশেষ ২০১৫ সালে এসে আদালত নির্দেশনা জারি করে যতদিন না পর্যন্ত মামলাটির ফয়সালা না হচ্ছে, ততোদিন পর্যন্ত বিএমডিসি এই আইনের প্রয়োগ ডিএমএফদের উপর করা যাবেনা।
এবং তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা যাবেনা, জরিমানা যাবেনা। এটিই ছিল আদালতের নির্দেশনা।
এবং এখন পর্যন্ত মালমাটি চলমান আছে।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়, মামলটি যাতে ডিএমএফদের বিপক্ষে যায় এবং বিএমডিসি ২০১০ এর ২৯ আইনের বাস্তবায়ন হয় এর পক্ষে আবার কাজ শুরু করে এমবিবিএস এবং বিডিএস দের বিভিন্ন পেশাভিত্তিক সংগঠন গুলো। তারা বিএমডিসি ২০১০ এর ২৯ আইনটি আদালতের নির্দেশনা থাকা সর্তেও জনসমক্ষে প্রচার প্রসার ঘটিয়ে তাতের বুঝানো চেষ্টা করে এই আইনুযায়ে ডিএফএফরা ডাক্তার লিখতে পারবেনা।
এবং কি এমনও অনেক অভিযোগ আছে, প্রশাসনকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ডিএমএফদের স্বয়ং জরিমানা করিয়েছে এমবিবিএসরা। পরবর্তীতে আবার আপীলে টাকা ফিরে পেয়েছে।
অথচ আদালতের নির্দেশনাটি যে এখনো বলবৎ রয়েছে এর বিরুদ্ধে কথা বলা বা মিথ্যা তথ্য দেওয়া এটি যে স্পষ্ট আদালত অবমাননা। সেটি তারা অনেকে স্বীকার করতেই নারাজ।
এ অবস্থায় জনগণের সামনে সত্য তুলে আনা অনেকখানি কঠিন কাজ।
এরমাঝে ডিএমএফরা যেহেতু উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসাবে নিয়োগ পায়। এবং এমবিবিএসরা মেডিকেল অফিসার হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত তাই তাদের কাছে এমবিবিএসরা বরাবরই সন্মানের পাত্র। এ অবস্থায় উপযুক্ত সন্মান বজায় রাখতে হয় তবে মিথ্যা প্রচার এবং প্রসার বন্ধ করতে হবে। না হলে এই সন্মানিত মানুষগুলো তাদের কাছে সন্মানিত থাকবে কিনা সেটিও প্রশ্ন আসে।
আর বাংলাদেশে আইন যেহেতু সকলের জন্যই সমান, তাই মধ্যকার সন্মানের ঘার্তি না করিয়ে আদালতের উপর ভরসা রাখাই দুদলেরই উচিত হবে বলে মনেকরি।
নিচে দুইটি তথ্য সমৃদ্ধ লিঙ্ক দেওয়া হলোঃ
জরিমানার টাকা ফিরে পেয়েছে এমন একজনের আদালতের নথিপত্র
রিট পিটিশন এবং হাইকোর্টের আদেশের নথিপত্র
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:১১