somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ : ‘জয়’ বনাম ‘জিন্দাবাদ

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোটা বিশ্ব যখন এগিয়ে, আমরা তখন পিছিয়ে। উন্নয়নের নেই কোনো চিন্তা, নেই কোনো বাস্তব পরিকল্পনা। শুধু অতীত নিয়ে ভাবনা। পরমুখাপেক্ষী চিন্তা। পরস্পরকে নিয়ে নোংরা সমালোচনা। নেই কোনো আত্মসমালোচনা। এই হলো আমাদের চিন্তা-চেতনা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা থাকেন, তাদের কী দায়িত্ব? কী কর্তব্য? কী তাদের দায়িত্বশীল বক্তব্য? নেই পরস্পরের মধ্যে কোনো গঠনমূলক কর্মকা-। তদ্রƒপ বিরোধী দলের অবস্থা। এ দায়িত্বশীলরা কখন কী বলেন, কিছুই জানেন না। নেই তাদের চিন্তার কোনো গভীরতা। দিনকে দিন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। দায়িত্বশীলতার পরিবর্তে সর্বত্রই দায়িত্বহীনতার ঢংকা বাজিয়ে যাচ্ছে। এককথায় নেই কোনো জবাবদিহিতা। নেই জাতির কাছে কোনো দায়বদ্ধতা।
প্রসঙ্গত, আলোচ্য প্রবন্ধে ফিরে আসি। আমাদের নেতা-নেত্রীরা মাঝেমধ্যে অনেক উদ্ভট কথা বলেন। অহেতুক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এসব তর্কবিতর্ক এক শ্রেণীর নোংরামিতা। বালখিল্যতা; পশ্চাৎপদ চিন্তা। নিরর্থক আলোচনা। জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির নানা পরিকল্পনা। কেউ বলেন, যারা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করেন তারা পাকিস্তানের দালাল। আর যারা ‘জয় বাংলা’ বলেন তারা দিল্লীর চর। দুটি শব্দ। তবে প্রচুর বিতর্ক। একজন দায়িত্বশীল দেশপ্রেমিকের পক্ষে এসব বিতর্কে না জড়ানোই ভালো। আমরা ‘জিন্দাবাদ’ বনাম’, ‘জয়’ কথাটির পরস্পর অর্থ কী একটু গভীরে বিশ্লেষণ করেছি? এ ব্যাপারে কী কোনো অধ্যায়ন করেছি? বলতে পারলেই খেল খতম। সব হজম। কিন্তু কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়। এ হিতাহিতজ্ঞান আমাদের নেই। নেই বলে অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে এত আলোচনা, এত পর্যালোচনা। অযথা সময়ক্ষেপণ করা। প্রিয় পাঠক, আসুন দুটি শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ করি। প্রসঙ্গত, কিছু আলোচনা করি। পুরনো ক্যাসেট বন্ধ করি। এই তর্কিত বিষয়টির দ্রত সমাধানে এগিয়ে আসি।

জয় শব্দটি সংস্কৃত ভাষা
প্রথমত ‘জয়’ শব্দের প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে একটু জ্ঞাত হওয়া দরকার। ‘জয়’ শব্দটি সংস্কৃত। এর আভিধানিক অর্থ ‘বিজয়’। তবু এই শব্দটি একটি ধর্মীয় পরিভাষা। মহাভারতের অপর নাম ‘জয়’। এ শব্দটি ধর্মীয় পরিভাষা হওয়ায় আর্যগন তাদের ঠাকুর-দেবতা, দেশ, স্থান বা সম্মানিত ব্যক্তির আগে ‘জয়’ শব্দটি ব্যবহার করে মহিমান্বিত হত। অনুপ্রেরণা লাভ করতো। একপর্যায়ে আনন্দিত হয়ে উঠত। অতঃপর ‘জয় মা কালী; জয় রামজি কি, জয় হিন্দু, ভারত মাতা কি জয়, শিবাজী কি জয়, জয় গোবিন্দ, জয় নারায়ণ, জয় গণেশ, জয় জগত্বারিণী, কালিমা কী জয় ............ ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করত। মূলত হিন্দু ধর্মের প্রকৃত নাম বৈদিক বা সনাতন ধর্ম। শ্রীমদ্ভগব গীতা হিন্দুদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ। এ গ্রন্থ থেকে এসব শব্দসমূহ এসেছে।
গীতা শাস্ত্রী জগদীশ চন্দ্র ঘোষ ও শ্রী অনিল চন্দ্র ঘোষ সম্পাদিত উনবিংশ সংস্করণের ভূমিকাতেই নিমোক্ত শ্লোকটি এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
“নারায়ণং নমস্কৃত্য
নবঞ্চৈব নবোত্তম্ম
দেবীং সরস্বতীং ব্যাসং”।
এর অর্থ- (নারায়ণ, নরশ্রেষ্ঠ নর, সরস্বতী দেবী ও বাসদেবকে নমস্কার করে ‘জয়’ অর্থাৎ মহাভারতাদি গ্রন্থ পাঠ করবে) আর্যরা মহাভারতের নাম দিয়েছিল ‘জয়’। কারণ তারা বিশ্বাস করতো যে মহাভারত পাঠ করলে অবিদ্যজনিত সকল সংস্কার জয় করা যায়। মহাভারতের প্রাচীন নাম ‘জয়’। (মহাভারতঃআদি ৬২/২০) ‘মহাভারত সনাতন’ ধর্মের প্রধান এবং আদি গ্রন্থ। পরবর্তীকালে পূরাণাদি শাস্ত্রেই ভক্তি মার্গ ও ভগবত ধর্মই কথিত হয়েছে। সে কারণে এই সকল শাস্ত্রেও সাধারণ নাম ‘জয়’ হয়েছে।

জয় শব্দটির ব্যবহার
জয় শব্দটি মূলত সংস্কৃত। এক বিদেশি ভাষা। ‘জয়’ স্লোগানের উৎস হচ্ছে অবিভক্ত ভারত। অবিভক্ত ভারতে ‘হিন্দুস্থান কি জয়’ স্লোগান দেয়া হতো। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে আন্দোলনকারীরা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ‘হিন্দুস্থান কি জয়’ স্লোগান দিতেন। সময়টা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তখন নেতাজী সুভাষ বসু গঠন করলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। জার্মানি ও জাপানের সহযোগিতায়। একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশের কাছ থেকে ভারতের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। তখন তার সেক্রেটারি মেজর আবিদ হাসান সফরানি ‘হিন্দুস্থান কি জয়’ শ্লোগানটিকে সংক্ষিপ্ত করে ফেলে। অতঃপর তার পরিবর্তে তিনি চালু করেন ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান। এরপর নেতাজী সুভাষ বসু তার প্রতিটি বক্তৃতায় ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান ব্যবহার করেছেন। একপর্যায়ে এ স্লোগানটি ভারতীয়দের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যে স্মারক পোস্ট মার্ক ব্যবহার করা হয়, তাতে ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান উৎকীর্ণ ছিল।
শুধু তাই নয়, পূরাণে দেখা যায়, ‘জয় ও বিজয়’ নামে দুই ভাই ছিলেন। ‘এ দুই ভ্রাতা স্বর্গে বিষ্ণুর দ্বার রক্ষক ছিলেন। পরে এরা বিষ্ণুর হস্তে নিহত হয়ে স্বর্গে গমন করেন’ (সুধীরচন্দ্র সরকার সংকলিত পৌরাণিক অভিধান, পৃ: ১৭৯-১৮০)। তাই নিঃসন্দেহে আমরা বলতে পারি, পৌরাণিক ‘জয়’ শব্দটি একটি সংস্কৃত ভাষা। একটি ধর্মীয় ভাষা। একটি জাতিগত ভাষা। তাতে কী কোনো সন্দেহের অবকাশ রয়েছে?

জিন্দাবাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ
‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি উর্দু নয়; ফার্সি থেকে উদ্ভূত। ‘জিন্দা’ অর্থ জীবিত। ‘বাদ’ অর্থ ফার্সি ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য। ‘বুদন’ থেকে গঠিত হয়েছে। যার মানে ‘হউক’। এই শব্দটি দিয়ে কোনো কিছুর বা কর্মের অভিব্যক্তি প্রকাশ করা। কোনো কিছু শুরু করা। জিন্দাবাদ কথাটি এ দেশে কখন চালু হয়েছে। এ বিষয়ে রয়েছে অনেক মতানৈক্যতা। তবে অনেকে জানেন, এই শব্দটি উর্দু পরিভাষা। তাই চলমান এই পরিস্থিতিতে কেউ ‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করলে সে হয়ে যাবে পাকিস্তানি চর বা দালাল। যদি তাই হয়, আওয়াম থেকে আওয়ামী। কথাটি উর্দু পরিভাষা। বাংলায় সাধারণ লোক। আওয়ামী থেকে আওয়ামী লীগ। এ দেশে বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল। স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। এ দলে কোটি কোটি নেতা-কর্মীর আজ উপস্থিতি। আওয়ামী কথাটি উর্দু ভাষা। তাই বলে আওয়ামী লীগের হাজার-হাজার নেতা-কর্মী তারা সবাই কী পাকিস্তানের দালাল হবেন? পাকিস্তানপন্থী হবেন? আওয়ামী লীগ যদি পাকিস্তানের দালাল হয় তাহলে বাংলাদেশে দেশপ্রেমিক কারা? ‘দৈনিক ইত্তেফাক’। প্রাচীনতম একটি জাতীয় দৈনিক। ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে নির্ভিক এক সংবাদপত্র। ইত্তেফাক উর্দু শব্দ। বাংলায় একতা। তা হলে ইত্তেফাক কী পাকিস্তানের দালাল?
আমি একজন মুসলমান। শুধু আমি কেন এ দেশের ১৬ কোটি জনগণের মধ্যে ১৫ কোটি জনগণ সকালে-বিকালে, ঘরে-বাইরে, বক্তৃতা-ভাষণে বিসমিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, তওবা, ইনশাআল্লাহ, ঈমান, আল্লাহ হাফেজ, খোদা হাফেজ, জিন্দাবাদ ইত্যাদি শব্দসমূহ এন্তার ব্যবহার করে যাচ্ছে। এসব শব্দ ফার্সি, আরবি, উর্দুসহ নানা ভাষার সংমিশ্রণ থেকে এসেছে। তাহলে এসব শব্দ উচ্চারণে আমরা কী খেজুরতলার বা পাকিস্তানের দালাল হয়ে যাব? এসব উদ্ভট তত্ত্ব যারা আবিষ্কার করেন তারা জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেন। ফায়দা হাসিলের জন্য এসব হটকারী কাজ করেন। এসব জাতীয়তাবাদবিরোধী তৎপরতা। এরা একটি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে দাঁড়িয়ে এসব উদ্ভট কথা হরহামেশায় বলে যাচ্ছেন। নতুন নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করছেন। এরা এখনও বোকার স্বর্গে বাস করেন। কারণ তারা কী জানেন, সেই দলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন স্বাধীন জাতির অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা মরহুম এই নেতা যিনি জীবনের বেলা শেষে এসে বক্তৃতা শেষ করতেন ‘জয় বাংলা’র পরিবর্তে ‘খোদা হাফেজ’ বলে। তাহলে এই নেতাকে পাকিস্তানের বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের এজেন্ট বলবেন? এ বিষয়ে বিস্তারিত আরও দেখে নেন সরকারি সংস্থা বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ বইয়ের ১৪৪ পাতায়।
আমরা বলি ‘আব্বা’। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলেন ‘বাবা’। কিন্তু ‘বাবা’ ফার্সি শব্দ। হিন্দুদের একটি কমন ভাষা। ফার্সি বলে তারা কী বাবা শব্দ ব্যবহার করতে পারবেন না? ব্যবহার করলে তারা কী পাকিস্তানের দালাল হয়ে যাবে? জাত-পাত সব চলে যাবে।
জিন্দাবাদ ফার্সি শব্দ। তার মানে এই নয় যে, একক মুসলমানী ভাষা। মুসলমানরা শুধু ব্যবহার করবে। অন্য কোনো সম্প্রদায়ের লোক এই শব্দটি ব্যবহার করতে পারবে না। তার মানে একি ব্রাহ্মণ্য ভাষা? একমাত্র ব্রাহ্মণ ছাড়া কেউ বেদ-উপনিষদ পড়তে পারে না। তবে সনাতনী ধর্মের অন্য শ্রেণীর লোকেরা বেদ-উপনিষদের বাণী শুনতে পারবে। বলতে পারবে না। তা কী করে হয়? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, এই উপমহাদেশে মুসলমানরা যখন এই শব্দটি উচ্চারণ করেননি, তখন একজন হিন্দু সর্ব প্রথম ‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন। যদিও জিন্দাবাদ কথাটি এ দেশে কে আগে ব্যবহার করেছিলেন এ বিষয়ে রয়েছে অনেক মতানৈক্যতা। কে সেই ব্যক্তি? তিনি হলেন ভগৎ সিং। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে একজন বিপ্লবী পুরুষ। তিনি লালা লাজপত রাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধে ১৭ ডিসেম্বর ১৯২৮ সালে পুলিশ সুপার স্যান্ডার্সকে হত্যা করেন। সেই বিচারের রায়ে তার ললাটে লেখা থাকে ফাঁসির আদেশ। ‘বন্দে মাতরম’ শব্দের পরিবর্তে ফাঁসির মঞ্চে তিন বিপ্লবী ভগৎ, শুকদেব, রাজগুরুর সেদিন দীপ্ত কণ্ঠে স্লোগান ছিল‘ ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ‘সাম্রাজ্যবাদ কা নাশ হো’ প্রভৃতি ধ্বনি দিতে থাকেন। ভগৎ সিংহের লেখা ‘জেল ডায়েরি’ বইটিতে জিন্দাবাদ সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য আছে। আশা করি দেখে নেবেন।
অনেকের অভিমত- ভগৎ সিং নয়, ভারতের ইতিহাসে ১৯২১ সালে মাওলানা হযরত মোহানী ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ সর্বপ্রথম উচ্চারণ করেছিলেন। কে এই হযরত মোহানী? ইতিহাস বিমুখ এ প্রজন্মের অনেকে তাকে হয়তো চেনেন না। এই মোহানী কংগ্রেসের সর্বপ্রথম প্রকৃত বা পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি করেছিলেন। তিনি ছিলেন বৃটিশবিরোধী, মুসমান বংশজাত খিলাফত কমিটির সদস্য। তিনি ১৯২১ সালে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণাকালে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ এই স্লোগান উচ্চারণ করেছিলেন। আগে-পরে বড় কথা নয়। তর্কে নয়। ধরে নিলাম ভগৎ সিং প্রথমে জিন্দাবাদ শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন। ভগৎ সিং ছিলেন একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী। তিনি আগে বা পরে জিন্দাবাদ শব্দটি ব্যবহার করেছেন বলে তার জাত-পাত সবই কী চলে গেছে? ইতিহাস সাক্ষ্য যে, সেদিন কোনো মুসলমান এ নিয়ে প্রতিবাদ করেননি। ভগৎ সিংকে ভর্ৎসনা দেননি। এখন কেন? এতসব আলোচনা? এতসব সমালোচনা ?

জিন্দাবাদ মিশে আছে মজ্জার সাথে
বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি মডারেট গণতান্ত্রিক দেশ। হাজার হাজার বছর ধরে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলামী তাহজীব-তমদ্দুনকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। এ সবুজ জমিনে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা নিঃসঙ্কোচে স্ব-স্ব ধর্ম পালন করে আসছে। যা যুগ যুগ ধরে। তাই কোনো মুসলমান কী কোনো বৈদান্তিক শব্দ পছন্দ করবেন? কোনো বৈদান্তিক চেতনায় কী তারা বিশ্বাস করবেন? তাদের ওপর কোনো কিছু জোর করে চাপিয়ে দেয়া যাবে? তদ্রƒপ একজন সনাতনী ধর্মাবলম্বী তাদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থের বাইরে কোনো কিছুকে গ্রহণ করবে? একজন মুসলমান প্রত্যহ ঘরে-বাইরে ইসলামী কৃষ্টি সভ্যতা সর্বোপরি তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিভাষায় চলছে-ফিরছে-কথা বলছে। তদ্রƒপ একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী তাই করছে। বাংলা এমন একটি ভাষা যে ভাষার সাথে মিশে আছে ফার্সি, উর্দু। মিশে আছে সংস্কৃতি। এসব ভাষাকে বাদ দিলে বাংলা ভাষা এখনও অনেক ক্ষেত্রে অপূর্ণাঙ্গ।
কেন এই মিশ্রত ভাষা? এই উপমহাদেশ শাসন করেছে তুর্কি-পাল-সেন-মোগল-ব্রিটিশ সর্বশেষ পাকিস্তান। হাজার হাজার বছর ধরে তারা শাসন করেছে। ফলে তাদের সংস্পর্শে থেকে গড়ে উঠেছে নানা সংস্কৃতি। নানা সভ্যতা। নানা কৃষ্টি। এইসব সভ্যতা এবং সংস্কৃতির ফসল আজকের এই মিশ্রিত পরিভাষা। এই মিশ্রিত ভাষাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে স্ব-স্ব জাতির কৃষ্টি-কালচার, যা প্রতিটি সমাজে-ধর্মে-কর্মে রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজও জেকে বসে আছে। কাজেই একজন মুসলমান যদি জিন্দাবাদ বলেন তাতে দোষের কী? কারণ ‘জিন্দাবাদ’ কথাটি মুসলমানদের মজ্জার সাথে মিশে আছে। রক্তের শিরায় শিরায় মিশে আছে। মিশে আছে পবিত্র কুরআনের ঐশী বাণী। ‘জয়’ শব্দটি একজন হিন্দুর বেলায়ও তাই। কোনো হিন্দু অহরহ এ শব্দটি ব্যবহার করলে তাতে কী কোনো অপরাধ হবে? কোনো দেশের দালাল হবে? কারণ এটা ধর্মীয় ভাষা। তাদের দৃষ্টিতে মায়ের মুখের ভাষা।
আসলে এসব মতলববাজরা মায়ের মুখের ভাষাকে কেড়ে নিতে চায়। ইসলামী সভ্যতাকে ধ্বংস করতে চায়। ইসলামকে নির্মূল করতে চায়। তাই এতসব জিগির। ধর্মকে বাদ দিয়ে পৃথিবীতে কোনো কিছুই গড়ে ওঠেনি। তাই ধর্ম এবং জাতীয়তা পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত। একটি ছাড়া অপরটি চলতে পারে না। ধর্মীয় দৃষ্টিতে আমরা প্রথমত মুসলমান। দ্বিতীয়ত, জাতিতে বাঙালি। একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী ও তাই। ধর্মকে বাদ দিলে কোনো জাতির অস্থিত্ব থাকে না। ধর্ম প্রতিটি মানুষের প্রত্যাহিক জীবনের কর্মের একটি অংশ। তাই কোনো দেশ বা জাতি তার কৃষ্টি এবং ধর্মীয় আলোকে কোনো ভাষা বা চয়ণ ব্যবহার করলে সে কী অপরাধি হবে? হবে কী কোনো দেশের দালাল?
জয় কথাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হৃদয়ে মিশে আছে।
মিশে আছে জিন্দাবাদ কথাটি প্রতিটা মুসলমানের হৃদয়ে। এর থেকে কেউ বেরিয়ে আসতে পারবে না। তাই ‘জয়-জিন্দাবাদ’ নিয়ে বিতর্ক করা বালখিল্যতা এক আচরণ মাত্র। এসব ফালতু কথা। অযথা সময়ক্ষেপণ করা। এতসব বাদ সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা। নানা ফায়দা নেবার পাঁয়তারা করা। জাতির আবহমান ইতিহাস-ঐতিহ্য ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা। এরা এক কথায় জাতীয়তাবাদের শত্রু। দেশ-জাতির শত্রু। এরাই জগৎ শেঠ। এরাই রায় দুর্লভ। এরাই মীর জাফর? এরাই বিশ্বাসঘাতক। এরা সংঘবদ্ধ। পরিকল্পিতভাবে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এরা বাঙালির আবহমান গোটা ইতিহাস-ঐতিহ্য, দীর্ঘ সংগ্রাম এবং বিশ্বাসের বিরোধী।
লেখক : আইনজীবী ও খুলনা থেকে প্রকাশিত আজাদ বার্তার সম্পাদক
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×