অনেক দিন ধইরা ফুলের ফটুক তুলনের পোষ্ট দিবো ভাবতেছিলাম। চলো শুরু করি...
এইটা এমন না যে বলিউডের নায়িকার মতো মেকাপ মাইরা, ঘইষা মাইজা এরপর সুন্দর বানাইতে হইবো এর পর উপস্থাপন ।
ফুল এমনিতেই সুন্দর জিনিস তাই তোমর এমনিতে কিছু করা লাগবো না। শুধু তার প্রকাশটা ঠিকভাবে হইতেছে কিনা তা লক্ষ্য রাখবা তাতেই চলবো। মনি ঋষিগন কিছু উপদেশ দিয়া গেছেন যার অনুসরণে ফুলের ফটুকটা হয়ে উঠবে আরো নজরকাড়া, সুন্দর, শৈল্পিক।
প্রাকবিবেচিত বিষয় সমূহ –
তুমি যদি একটু সুন্দর/অন্যরকম ফুলের ফটুত তোলাতে আগ্রহী হও তাহলে ঠুসঠাস কইরা ফটুক তুইল্যা ফালাইও না। একটু সময় নাও... তুমি যে ফুলের ফটো তুলবে তার কছে দাড়াও নিচের বিষয়গুলি নিয়া একটু চিন্তা কর
- যদি একগুচ্ছ ফুল হয় তাহলে কোন/কোনগুলি তোমার ছবির প্রধান বিষয় হিসবে নির্বাচিত হবার যোগ্যতা রাখে।
- ফোকাল পয়েন্ট/পয়েন্ট অব ইন্টারেষ্ট কোনটা হবে ? (ফুলের মধ্যে যে পোকাটা মধু খাইতেছে সেটা ? ফুলের বৃন্ত ? ফুলের রঙ ? ফুলের পাপড়ি (texture)? নাকি ফুলের আকৃতি? )
- ফুলটার চারিদিকে একবার ঘুরে আসো দেখ কোন দিকটা তোমাকে সবচেয়ে ভাল পার্সপেকটিভ দিচ্ছে।
- ডেপ্থ অব ফিল্ড কি হবে ? বেশী না কম ছবিতে তার প্রতিক্রিয়া কি হবে?
- ফটুক তোলার পর ফুলের ছবিটা কি ক্রপ করবে ? নাকি কাছে গিয়ে তুলবে?
- ফুলের উপর প্রক্ষেপিত আলোটা কি পর্যাপ্ত ?
- সাবজেক্টের সামনে (foreground) এবং পিছনে (background) কি আছে? এমন কিছু কি আছে যা তোমার ছবির জন্য অনাকাংখিত বা মনযোগ বিনষ্ঠকারী?
- কিভাবে তুললে ছবিটা ভালো হবে? (Horizontal or vertical)
এই বিষয়গুলির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নাও।
ফুলের ফটো তুলতে হইলে সকাল সকাল উইঠা যাওয়া উত্তম। সূর্য উঠার সময়কালে বা একটু আগে সাধারনত বায়ুপ্রবাহ থাকে কম, নিশ্চই চাওনা বাতাসে দোল খাওয়া কোন ঝাপসা ফটু তুলতে? সকালবেলা বাযুপ্রবাহ থাকবে কম এবং যদি পেয়ে যাও শিশিরকণা যা তোমার ছবিকে দিবে এক অন্যমাত্রা। শিশির যদি না পাও সমস্যা ফুলের মধ্যে পানির স্প্রে দিয়া এরপর ফটুক তোল সবসময় শীতকাল সবসময় শিশির। পড়ন্ত বিকালেও ফটু ভালো হয় তবে বায়ুপ্রবাহ অন্তরায় হইতে পারে ।
সুন্দর ফটুর জন্য নির্বাচিত ফুল/ফুলগুলি/ফুলেরগুচ্ছ কে একটু প্রধান্য দেবার প্রয়োজন হয়ে থাকে, সাধারণত বাগানের মধ্যে মনোযোগ বিনষ্টকারী উপাদানের অভাব নাই দেখা গেল নির্বাচিত ফুলটা হয়তো কোন বেড়া, ছায়াযুক্ত জায়গায়, অন্য ফুলের সাথে বা পাতার আড়ালে আছে । আগে পিছনে মনোযোগ বিনষ্টকারী উপাদান হয় তোমাকে গ্রহন বা র্বজন করতে হবে। প্রথমেই বর্জনের চিন্তা না করে বিকল্প চিন্তা করা উচিত – কিছু সমস্যা দুরীভুত হইতে পারে
এইভাবে -
- সাবজেক্টের কাছে নিজে কাছে চলে যাও এতে করে নির্বাচিত বিষয় ছবির পুরো অংশজুরে থাকবে বা সাবজেক্ট আইসোলেটেড হয়ে যাবে অনেক ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অত্যন্তকাজে লাগে। ( ক্রপ, জুম, মাইক্রো ল্যন্স এই ক্ষেত্র কাজের জিনিস।)
- ডেপ্থ অব ফিল্ড কমিয়ে দাও তাতে তোমার সাবজেক্টের সৌন্দর্য্য আর প্রকাশমান হবে সাথে সাথে ফরগ্রাউন্ড আউট অব ফোকাস এবঙ ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার হয়ে মনোযোবিনষ্টকারী উপদানের বিলুপ্তি ঘটাবে।
- সাবজেক্টকে অন্যকোন নতুন পছন্দমাফিক জায়গায় নিয়ে যাও এতে অবশ্য পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট হতে পারে।
আশে পাশে মরে যাওয়া ফুল বা শুকিয়ে যাওয়া ফুলকে অগ্রাহ্য করা ঠিক নয় ঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে ছবির আবেদন বেড়ে যায়। অসুন্দরের মাঝে যেমন সুন্দর আরও সুন্দর হয়ে উঠে তেমনি মরে যাওয়া বা শুকিয়ে যাওয়া ফুল তোমর সাবজেক্টকে ফুটিয়ে তুলতে পার আরও সুন্দর করে । একমাত্র তোমার আভিজ্ঞতাই পারে এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে।
ফটোর ফোকাল পয়েন্ট ঠিক করা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় - দর্শককে যে জিনিসটা প্রথমে আকর্ষন করবে সেটাই ছবির পয়েন্ট অব ইন্টারেষ্ট এবং সেটাকেই ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারন কর, যতটুকু সম্ভব শার্প রাখতে চেষ্টা কর। শার্প ফোকাসিং ফটোগ্রাফির সব জায়গায় কাম্য হলেও ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে এই শার্প ফোকাসিং একটা কঠিন বিষয়। খুবই অল্প ডেপ্খ অব ফিল্ডের পরিবর্তনে ছবির মধ্যে অনেক বেশী পরিবর্তন ঘটে যায়। এরপর পয়েন্ট অব ইন্টারেষ্ট কে রুল অব থার্ড বা গোল্ডেন রেশিও অনুযায়ী অফ সেন্টারে কম্পোজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কাছ চলে যাও – খুব কাছে থেকে ফটুক তুললে অনেক সময় মনে ফটুক অনেকটা বিমূর্ত হয়ে উঠে যা খুবই নজরকাড়া, হৃদয়কাড়া । তাই সবসময় কালার কন্ট্রাষ্ট, পাপড়ির টেক্সার ও প্যাটার্ণ এর প্রতি মনোযোগী হও দিয়ে দাও ছবিকে এক অন্যমাত্রা।
অনেক সময় – পারিপার্শিকের আলো মেরে ফেলা দরকার হয়। এতে ব্যবগ্রাউন্ডের ঘন কালোর রং এর উপর সাবজেক্টের আলোকিত রূপ ফুটে উঠে সুন্দর ভাবে। হাই শাটার স্পিড এবং একই সাথে ফ্লাসের ব্যবহারে সহজেই পারিপার্শের আলোকে মেরে ফেলা যায়।
পরের পর্বে সমাপ্য
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০৮