ছাত্রদল-শিবিরের কয়েকজন কর্মী-সমর্থকদের সামান্য পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরীর জন্য সুপারিশ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাতজন সংসদ সদস্যকে তিরস্কার ও ধমক দিয়েছেন। এ সামান্য বিষয়ে এরকম সংঙ্কীর্ণতার পরিচয় দেয়াটা কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য শোভনীয়? প্রজাতন্ত্রে চাকরী লাভের জন্য আওয়ামী লীগার হতে হবে এমন বিধান কি সংবিধানে আছে? প্রধানমন্ত্রী তো সকলের, কোন দলের নয়। সংসদ সদস্যগণ যাদের তরে চাকরী লাভের জন্য একটু হরকত করেছেন তারা সম্ভবত তাদের নিকট আত্মীয়, প্রতিবেশী বা নির্বাচনী এলাকার ভোটার হবেন। আসলে ভিন্নমতের হলেও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা খুবই কঠিন। তাছাড়া যোগ্য প্রার্থীকে শুধু মাত্র ভিন্নমতের হওয়ার কারণে কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত করার অধিকার সরকারের আছে কি? এটি নাগরিকের একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার। প্রতিটি ঘরে একটি করে চাকরী দেওয়ার অর্থ কি এই যে, বেছে বেছে আওয়ামী লীগের ঘর থেকে চাকরী দেয়া হবে? এ ধরনের অনৈতিক কাজ শুধু যে এ সরকার করছে তা নয় সব সরকারই কমবেশী করেছে। এ ধরণের মন্দ কালচার বন্ধ হওয়া উচিত।
কথায় বলে বাঁশের চেয়ে খঞ্চি বড়! প্রধান মন্ত্রীর চেয়ে একধাপ এগিয়ে এক মন্ত্রী বললেন, বিএনপি-জামায়াতকে কোন কাজেই সহায়তা করা যাবে না। এই না হলে কি মন্ত্রী! যে চেতনার আলোকে মন্ত্রীমশায় বিএনপি-জামায়াতকে কিক মারলেন সেই চেতনায় কি এরশাদের দল জাতীয় পার্টি একখান ছোট্ট কিক পাওয়ার যোগ্য নয়? কিন্তু কোন্ পীরের পানি পড়ার বরকতে জাতীয় পার্টি এমন পিয়ারের দোস্ত বনে গেল তা আল্লাহ পাকই ভাল জানেন! প্রধান মন্ত্রী হয়তো চেয়ে ছিলেন প্রশাসনে বিরোধী মতের কেউ না থাকুক, তাহলে নির্বিঘ্নে সুন্দরভাবে মনের মতো করে দেশ চালানো যাবে। তাই তিনি সাতজন এমপিকে মৃদু ভৎর্সনা করেছেন। আর অন্যান্য মানবিক, সামাজিক কাজে সকল মতের মানুষ সুখে-দুখে একে অপরের পাশে থাকুক।
যেমন রাজাকার বিয়াই অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া। বাল্যকালের বন্ধু বিএনপির ডাক সাইটে কোন নেতা মিথ্যা মামলায় জেলে গেলে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করা। রাজাকারের নাতি যদি মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে জামাই হন আর তিনি যদি শশুর বাড়ী বেড়াতে আসেন তাহলে গলদা চিংড়ি, পাবদা, রুই, কাতলা ইত্যাদি লোভনীয় মাছের ঝাল ফ্রাই দিয়ে জামাই আদর করা। নির্বাচনের সময় মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থী চোখের পানিতে গণ্ডদেশ ভাসিয়ে জামায়াতের দ্বারে দ্বারে আত্মীয়তার সূত্রে ভোট প্রার্থনা করা। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বা ঈদ-পার্বণে বিএনপি-জামায়াত-আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে বুকেবুকে ঘর্ষণ থেকে শুরু করে পায়ে সালাম করে আর্শিবাদ নেয়া (অবশ্য মিডিয়ার ক্যামেরা থাকলে এ সব কিছুই হারাম!)।
সরকারী মাল শশুর বাড়ীর ওয়ারিশ মনে করে সবাই মিলে ভাগ-বাটোয়ারা করে গায়েব করে ফেলা। লাল পানি আর গাঁজার আসরে সব কয়টা দাঁত বেড় করে আনন্দ উল্লাষে চিয়ার্স করা, গাঁজার কল্কি আদবের সাথে ভিন্ন মতের মন্ধুর বরাবরে এগিয়ে দেয়া (যাদের এসব বদ অভ্যাস আছে তাদের বেলায় প্রযোজ্য) ইত্যাদি। এসব কাজ যা সামাজিক জীব হিসেবে আমরা উঠতে বসতে করি বা করতে বাধ্য হই। সকল মতের মানুষের মাঝে শেষের কয়টা বদ অভ্যাস ছাড়া অন্যান্য সকল সামাজিকতা চালু থাকুক তা সবাই চান বা চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মুহতারাম মন্ত্রী মহোদয়ের হুকুমের উপর আমল করলে তো এসব হৃদ্যতাপূর্ণ মানবিক সামাজিক কালচার বন্ধ হয়ে যাবে। তখন তো রাজাকারের নাতি আর শশুর বাড়ি যেতে পারবে না। কী ফ্যাসাদরে বাবা!
সবচেয়ে বড় বিপদ আমাদের। আমাদের বাড়ীটা অনেক বড়। লোক সংখ্যা প্রচুর। এককথায় জনসংখ্যার বিষ্ফুরণ! আওলাদ বৃদ্ধিতে আমাদের সিংহ পুরুষেরা যে কত দক্ষ তা বাড়ীটির জনস্রোত না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। যদিও আমার একভাবী পরিবার পরিকল্পনা অফিসে চাকুরী করেন কিন্তু তাঁকে কেউ পাত্তা দেয় বলে মনে হয় না। তিনি নিজেও আমল করেন কিনা তাতেও সন্দেহ আছে! অপরদিকে ধানের শীষ ছাড়া এ বাড়ীর বনি আদমরা অন্য কিচ্ছু বুঝতে চায় না। সমস্যা হলো গত আট দশ বছরে এ বাড়ীতে যত বউ এসেছে এর সিংহ ভাগই এসেছে আওমী লীগের পরিবার থেকে। এ নিয়ে ভাবীদের সাথে দেবরদের মাঝে মাঝেই একাত্তর শুরু হয়ে যায়। যার গলায় জোর বেশী সেই হয়ে যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা! দু'একজন ছাড়া বেশীরভাগ ভাবীই সংসারে সুখ-শান্তি বাজায় রাখার স্বার্থে রণেভঙ্গ দিয়ে রাজাকার বনে যান! তবে সুনামগঞ্জের ভাবী যার বাবা মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ সাহেবের রাজনৈতিক সহকমর্ী তাকে হারানো বহুত মুশকিল! সাজেদা চৌধুরীর মতো রুদ্র মূর্তি ধারণ করে, মতিয়া চৌধুরীর মতো চোখ বন্ধ করে ভাবী যখন হুঙ্কার ছাড়েন তখন দেবররা তো নস্যি! ভাইজান নিজেই মেউঁ মেউঁ করেন! যদি মন্ত্রীর ফতোয়ার উপর আমার ভাবীরা আমল শুরু করেন তাহলে তো বংশবৃদ্ধি থেমে যাবে! আর শঙ্কর জাত ভাতিজা-ভাতিজিদের কী উপায় হবে! তারা তো মাঠে মারা যাবে!
বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ লক্ষ কর্মী-সমর্থক মাথার গাম পায়ে ফেলে, শরীরের রক্ত পানি করে দেশ স্বচল রাখার ব্লাড 'বৈদেশিক মুদ্রা' দেশে পাঠাচ্ছে। দেশমাতৃকার উন্নয়ে দেশের অভ্যন্তরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এর কি কোন মূল্য নেই? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিনীত আবেদন রাখতে চাই, দয়া করে ভিন্নমতের হলেও দু'চারজন গরীব নাগরিককে পিয়ন-গার্ডের চাকরী দিয়ে রুটি-রুজি কামায়ের সুযোগ করে দিন। এর গৌরব আপনাকেই উজ্জ্বল করবে। মা-বাবা, বউ-ঝি নিয়ে খেয়ে পড়ে আপনার জন্য দোয়া করবে। তাছাড়া দলে-দলে, জনে-জনে রেষারেষি বৃদ্ধি না করে সামাজিক সুসম্পর্ক গড়ে তুলার উপর জোর দিন দেখবেন কোন একদিন মহাথির মোহাম্মদ বা নেলসন ম্যান্ডেলার মতো নিজেকে শ্রদ্ধাপূর্ণ সুউচ্চ সিংহাসনে আবিষ্কার করে নিজেই বিস্ময়ে অভিভূত হবেন।