তরুণ বয়সে নার্গিস বানুর প্রেমে চুপচুপে হয়ে মজে গিয়েছিলেন হিরু মিয়া। নার্গিস বানুর রূপের ঝলক আর বাঁকা হাঁসিতে দিনে দুপুরে শুকনা রাস্তায় হোঁচট খেতেন তিনি। কত রাত অসহ্য যন্ত্রণায় বিছানায় এপাশ ওপাশ করে কাটিয়েছিলেন সে সময় তার কোন হিসেব নেই। হিরু মিয়ার বিছানাটাও ছিল ডাবলবেড। যন্ত্রণাও তাই ছিল ডাবল। একলা ঘরে ঘুম আসতো না। হিরু মিয়ার স্বপ্নে, দুঃস্বপ্নে শুধু নার্গিস আর নার্গিস।
শেষ পর্যন্ত দুদণ্ড সুখের আশায়, নার্গিস বানুকে বিয়ে করে ঘরে তুলেছিলেন হিরু মিয়া। সে অনেক আগের কথা। এখন তাদের প্রায় ষাট বছরের সংসার জীবন। তাদের মধ্যে এখন সেই চুপচুপে ভালবাসা আছে কিনা তা অনিশ্চিত হলেও, কিছুটা শত্রুতা যে আছে তা প্রায়ই বোঝা যায়। দিনে দুপুরে কিংবা মধ্য রাতে দুই বৃদ্ধবৃদ্ধার গগনবিদারি চিৎকার, ঝগড়া কিংবা গালাগালি শুনে পাড়া প্রতিবেশীদের সর্বদা আতঙ্কে থাকতে হয়। প্রতিবেশীদের আতংক আরও বাড়ছে দিনে দিনে। কারন ইদানিং হিরু মিয়া নার্গিস বানুকে এক ভয়াবহ হুমকি দিচ্ছেন যে তিনি কালো জাদু এবং প্রেত সাধনা শুরু করছেন। তাই তিনি মারা যাওয়ার পরপরই কবর খুঁড়ে আবার চলে আসবেন এবং নার্গিস বানুর বাকি জীবনটাতেও তাকে জ্বালিয়ে মারবেন! নার্গিস বানুর কোন নিস্তার নেই। অনেকে বলাবলি করে, রাত বিরাতে নাকি অদ্ভুত সব ভুতুরে গোঙ্গানি শোনা যায় হিরু মিয়ার বাড়িতে। অনেকে এখন বিশ্বাসও করতে শুরু করেছে যে হিরুমিয়া প্রেত পুষতে শুরু করেছেন।
হটাৎ একদিন হিরু মিয়া কোন পূর্বাভাস না দিয়েই মারা গেলেন। কে বা কারা তাকে কবর দিল গ্রামের লোকজনও জানল না। দু-একদিন যেতে না যেতেই নার্গিস বানু সেজেগুজে যাত্রাপালা দেখতে গেলেন। গ্রামের লোকজন আতংকে ফিসফিস করতে লাগল। একজন তো নার্গিস বানুকে বলেই বসল, 'আপনের ভয় ডর নাই বুজি? হিরু মিয়া কবর থেইকা উইঠা আইলে আপনের কি হইব একবার ভাবতাসেন? উনি কি কইসিল ভুইল্লা গেসেন? মইরা গেলেও কবর খুইরা উইঠা আইব আপনারে জ্বালাইতে!'
নার্গিস বানু পান চিবুতে চিবুতে জবাব দিল, 'বুইরায় কবরে হান্দায়া কবর খুরুক। অরে আমি খাড়া কইরা উলটাইয়া কবর দিসি।'
ভালবেসে প্রেমিকা পুষলে দু'দণ্ড শান্তি পাওয়া অনিশ্চিত তবে লেয়ার মুরগী পুষলে প্রতিদিন সকালে দু'একটি ডিম পাওয়া গেলেও যেতে পারে!
বিঃ দ্রঃ এই লেখায় কোন শিক্ষণীয় বিষয় নাই। পুরাটাই কুশিক্ষা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




