somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাপগল্প: পেরেক

১৭ ই জুন, ২০১০ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডান কাত হতে বামে যেতেই পিঠের তলায় খাট টা কিংবা বলা ভালো খাটের তক্তাগুলো কিড়মিড় করে উঠে।একটামাত্র তক্তার পেরেক কোন রকম আটকে আছে।এটাও যেকোন সময় খুলে যেতে পারে বলে তার ধারণা।সে তার বৌয়ের দিকে তাকায়।বৌ শিরনি খায়।শিরনি খেতে কি রকম তার জানা নেই যেহেতু সে কখনো শিরনি খায় না অথবা খায় নি।
খাট টা।কয়েকটা পেরেক মেরে দেয়া যায় না?
বৌয়ের শিরনি ভর্তি চামচ একটু থামে।সে আশাবাদী হয়।
তুমি চাইলেই আমি পেরেক কিনে আনতে পারি।
শিরনির চামচ নড়ে উঠে।সে উঠে বসে তাড়াতাড়ি।
আমি কাল বাসমতি চাল আর দুধ নিয়ে আসব।কাল আমরা পায়েস খাবো।
আমার পায়েস ভালো লাগে না।পেরেক ও না।
কিন্তু বাচ্চা টা রাতে ঘুমাতে পারবে না তো!তার কথা ভাবো একবার!
বৌ কিছু বলে না।শিরনির চামচ মুখে দিয়ে বেরিয়ে যায়।তার পিঠের তলায় আবার কিড়মিড় করে উঠে খাট টা।
সে খাটে হাত বোলায়।অবশিষ্ট পেরেক টা নেড়েচেড়ে দেখে।পড়ে যাওয়া পেরেকগুলোর খালি গর্ত দেখে।তার ভাবতে ভালো লাগে যে এই গর্তে অনেকগুলো পেরেক ছিলো।খাট টা তখন নড়বড়ে ছিলো না।বৌ টা পায়েস খেত মজা করে আর গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকত খাটে।আর আগুন খেত।লাল আগুন।নীল আগুন।হলুদ আর কমলা আগুন।আগুন খেতে মজা লাগে।বৌ টা লাল হয়ে যেত।জানো আমার ঘুমের ভেতর হামাগুড়ি।আমি ধরি।চোখ দেখি।আমার গরম লাগে।বাতাস লাগে।
বৌ টা বললেই বাসমতি চাল আর দুধের পায়েস হত।আগুন খেতে খেতে আর পায়েস খেতে খেতে বৌ টা চোখ খেয়ে ফেললে সে ব্যস্ত হয়ে উঠে।ছবি আঁকে।রঙ মাখে।ছবি আঁকতে আঁকতে আর রঙ মাখতে মাখতে বৌ টা পায়েস বদলে শিরনি খেতে শুরু করে।আর খাটের তক্তার পেরেকগুলো খুলে পড়ে যেতে শুরু করে।
সে প্রথম তক্তা টা উলটে দেখে।অথবা এটা দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় তক্তা ও হতে পারে।তক্তার উল্টো পিঠে সে স্ক্রুড্রাইভার খুঁজে পায়।স্ক্রুড্রাইভার টা নিখাদ কল্পনা হতে পারে তার অথবা আসলেই পেতে পারে;তবে সে একটা স্ক্রুড্রাইভার খুঁজে পায়।চোখের যেখানে চোয়ালের হাড়ে চুম্বন;সে স্ক্রুড্রাইভারের এক মোচড়ে চোখ খুলে ফেলে বৌ টার তলপেটে কিংবা বুকে কিংবা মুখে আটকে রাখে।বৌ টা ঠোঁট খুলে ফেলে তার নাকে ঝুলিয়ে দেয়।তারপর বৌ টা বুকে কিংবা মুখে অথবা তলপেটে তার চোখ নিয়ে আর সে নাকে বৌ টার ঠোঁট নিয়ে শুয়ে থাকে।তারা হয়তো বা আরো কিছু করে কিংবা করে না;বৌ টা হয় তো বলে,আর না;সে হয়তো দু'য়েকবার ঘাম মুছে;কিন্তু তারা পাশাপাশি শুয়ে থাকে।বৌ টা হয়তো আবার বলে,আর না আর তার চোখের ভেতর প্রথম তক্তার পেরেক ঢুকে যায়।তার সারারাত ঘুম হয় না।নিঃশব্দে আর সশব্দে সে আর খাট টা জেগে থাকে।
পরের সকালে বাসমতি চাল আর দুধ আনলে বৌ টা তুলে রাখে,পড়ন্ত দুপুরে পায়েস রাঁধে এবং রাতে আবারো বলে,আর না।আর পরের তক্তা কিংবা তক্তাগুলোর পেরেকও খুলে তার চোখে গেঁথে যায়।সে পায়েস খায় কিন্তু বৌ টা খায় না।বৌ টার তলপেটে ব্যথা হতে পারে যেহেতু অনেক পায়েস আর আগুন খেয়েছে কিন্তু পরদিন সকালে শিরনির প্লেটে তার ভুল ভাঙে।বৌ টা চোখ ফেরত চাইলে সে কাঁটাচামচে চোখ গাঁথে আর ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে পানি খায়।

পরের রাতে সে বৌ টার তলপেটে হাত রাখে যেহেতু তার বিশ্বাস তলপেটের ঘামে পূর্ণ অধিকার আছে;বৌ টা কিছু বলে না বরং কমলার খোসা ছাড়ায়।শীতলীকারকের পেটের ভেতর কমলা টা অনেকক্ষণ ছিলো হয়তো তাই ঠান্ডা হতে হতে স্বাদহীন রস জমে থাকে আর তার কাছে কিছু টা তিতকুটে ও মনে হয়।সে ভাবে,কমলা তিতা হলো কিভাবে কিন্তু তবুও খায়।কমলা খায়।পায়েস খায়।আর বৌ টা শিরনি খায়।সে পায়েসের চামচ মুখে দিয়ে ভাবে,শিরনি খাওয়ার অধিকার আছে কি নেই।
পরের রাতগুলোয় সে আবারো তলপেটে হাত রাখে;বৌ টা কমলা ছাড়ায় আর সে টের পায়,কমলা গুলো আরো ঠান্ডা আর রসহীন হয়ে গেছে।সে তবুও সিদ্ধান্তে আসতে পারে না,শিরনির খাওয়ার অধিকার আছে কি নেই।ভাবতে ভাবতে সে পায়েসের কথা ভুলে যায়।এক চামচ শিরনি তারও চেখে দেখতে ইচ্ছে হয় কিন্তু চাখে না যেহেতু সে শিরনি খায় নি অথবা খায় না।
শিরনি তে কি কমলার রস মিশিয়ে দেয়া থাকে?
বৌ টা হাসে।
রস টা কি খুব মিষ্টি?
বৌ টা আবারো হাসে।
সে খাটে মনোযোগ দেয়।তখনো দু তিন টা তক্তার পেরেক থাকতে পারে কিন্তু তার কাছে পেরেকহীন তক্তার দাবি বাড়ে।
আমরা কি খাট টা ঠিক করবো?
না।
পেরেক,বাসমতি চাল আর দুধ নিয়ে এলেই হয় তো!
না।
সে রাতে অনেকক্ষণ ঘুমাতে পারে না।বৌ টার তলপেটে হাত রাখতে গিয়ে দেখে ওখানে কোন তলপেটই নেই কিংবা চোখ গাঁথতে গিয়ে টের পায়,সেখানে কোন বুক কিংবা মুখ নেই।তার মনে হয় যে গতকাল ও ছিলো অথবা কোন কালেই ছিলো না।
তিন টা তক্তায় পেরেক ছিলো।এখন মাত্র একটায়।কে খুলেছে?
আমি।
কেন?
জানি না।
একটা রেখে দিলে কেন?
খুলতে পারছি না।
খুলতে চাও?
বৌ টা শিরনির চামচ মুখে নিয়ে তাকায়।একটা কমলা আছে।শেষ কমলা।খাবে?
সে ভাবে।কমলা হয়তো পুরোপুরি রসহীন।তিতা।সে তবু খেতে চায়।বৌ টা খোসা ছাড়াতে শুরু করে।সে দেখে,কোয়া গুলো রসে পূর্ণ।কমলা হয়তো মিষ্টি হবে।
এটা কি শীতলীকারকের পেটে ছিলো না?
হ্যাঁ।
তাহলে?
এটাই কিন্তু শেষ।
সে চুপ করে থাকে।বৌ টা কমলার খোসা সম্পূর্ণ ছাড়িয়ে তার হাতে দিতে চায়।সে ধরে না।কমলা টা অনেকক্ষণ বিছানায় পড়ে থাকে।তারপর সে কড়িকাঠে তাকায়।হিসাব মেলায়।শেষ কমলা।শেষ তক্তার শেষ পেরেক।সে নড়ে উঠে।খাট টা কিড়মিড় করে।সে কমলার দিকে তাকায়।তার মনে হয়,কমলার কোয়া মিষ্টরসে পূর্ণ কিন্তু তার নাকে দুর্গন্ধ লাগে।সে কমলা ছুঁড়ে ফেলে।
বৌ টা বেরিয়ে গেলে তার কানে শিরনি খাওয়ার শব্দ আসে।সে কাঁটাচামচ থেকে চোখ খুলে চোয়ালের হাড়ের উপর বসায়।কাঁটাচামচ ছুঁড়ে দিলে কাঁচ ভাঙে।কাঁচের গেলাস আর বাচ্চাটার ঘুম ভাঙে।খাট টা কিড়মিড় করে।সে ভাবে শেষ কমলা আর শেষ পেরেক।স্ক্রুড্রাইভারের খোঁচায় দুইবার হাত রক্তে মেখে তিনবারের চেষ্টায় সে পেরেক খুলে নিলে খাট টা ভেঙে পড়ে।তার একবার মনে হয়,খাট টা অনেক মজবুত ছিলো কিংবা মনে হয়,কোনকালেই এখানে কোন খাট ছিলো না।পেরেক ছিলো।তক্তা ছিলো।কিন্তু খাট ছিলো না।
সে পাশের ঘরে যায়।পাশের ঘরে আগে কখনো যায় নি যেহেতু বৌ টা ও ঘর থেকে শিরনির বাটি নিয়ে আসতো।সে দেখে যে ও ঘরে একটা খাট পড়ে আছে।তক্তাগুলো টেনে দেখে।কোন পেরেক খোলা নেই।নাড়িয়ে দেখে কিন্তু কিড়মিড় শব্দ হয় না।টেবিলে রাখা শিরনি দেখে।চামচে একটু খানি চাখে।সে অবাক হয় যে এগুলো শিরনি নয়।পায়েস।সে খায় না।তার মনে হয় পায়েসের মধ্যে কমলার তিতা রস ঢুকে গেছে।সে শুধু ভাবে,এই খাট টার পেরেক ও কি খুলে যাবে?

অনেকদিন পর একরাতে সে পাশের ঘর থেকে পেরেক খুলে পড়ার শব্দ শুনতে পায়।তার একবার মনে হয়,কেউ একজন শিরনি খাচ্ছে।কিন্তু সে ভাবে,এটা অ্যালকোহলিক বিভ্রম হতে পারে যেহেতু সে নিজেই দেখেছে,খাট টা অনেক মজবুত এবং পেরেকগুলোর খোলার সম্ভাবনা নেই এবং বাটি তে পায়েস ছিলো।
তারমাথার ভেতর একটা খাট,পেরেকের অনেকগুলো মজবুত গাঁথুনি আর এক বাটি পায়েস সমান্তরাল ঝুলে থাকে।



=======================================
ছবি কৃতজ্ঞতা:ব্যান্ড আইকন্স
=======================================
উৎসর্গ: একজন কন্যা যার দুচোখ ভরা সমুদ্র।
এই গল্প দিয়ে তাঁকে শুধু একটাই কথা বলতে চাই,আপ্পি,তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসে তোমার এই বাউন্ডুলে ভাই টা।
=======================================
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১০ দুপুর ২:৫৪
৪২টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×