পুরোনো কবরস্থান থেকে উঠে আসে বটগাছটার বীজ। কিংবা বীজের ফসিল। ডালে যে কাক রেখে গেছে নির্জনতার চিহ্ন, তার কা কা সুর ভেসে ভেসে যাচ্ছে দূরের অন্ধকারে। পাতারা এসময় দোল খায়। পাতাদের ঘরে পাখিদের ঘ্রাণ জমে জমে কখন কুয়াশা হয়ে গেছে আর ন্যাতানো পাহাড়ের কোটরে সঙ্গমরত এক জোড়া সাপ সেই কুয়াশার তীব্র মদ পান করে লিখে ফেলে তপস্যারত পাগলের বীর্যপতনের কালযাপন, চা পান করতে করতে সেইসব আমাদের কানে আসে এবং হারিয়ে যায়।
এখানে শীতের রাতে মেলা বসে। গুহার ভেতর আশ্রয় করে বাক্যহীন জটাধারী। উপরে কাচা কাঠে অদ্ভুত খেয়ালে আগুন ধরিয়ে নাচে ন্যাংটা পাগল। তার লিঙ্গ বলে কিছু নেই। বীর্যপতনের হিসাবে সব যোগফল একাকার করে সে না পুরুষ, না নারী, না বৃহন্নলা। মাদকপাতা পুড়ে পুড়ে ঈশ্বরবৃন্দ ঘোলাটে হয়ে গেলে কানাইঘাটের চরকাঅলা বাড়ি ফিরে যায় আর পেছনে পড়ে থাকে মন্ডা-মিঠাই। শীতের রাত বাড়ে। চায়ের গেলাসে কুয়াশারা নামে। সাপেদের সঙ্গমশেষে ক্লান্ত পাগল ঘুমিয়ে গেলে মঞ্চে উঠে আসে নিশাচরী। সার্কাস যুবতী। তার স্তনের ভাজে আমাদের নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। তলপেটে আমন্ত্রণপত্র ঝুলিয়ে সে সোজা উঠে যায় আসমানে। আমরা উর্ধবগামী তার নিতম্বে বিভ্রান্ত হই।
সংগীত থেমে যায়। যুবতী হঠাৎ সবেগে নেমে আসে ভূতলে। চিৎকার দিয়ে নগ্নবুক আর যোনী মেলে ধরে সহস্র বুভুক্ষু চোখের পর্দায়। যেন মনসা সে! আয়! গিলে খাই!
আমরা গর্বিত পৌরুষত্ব নিয়ে বিপাকে পড়ে যাই। বিব্রত ও বিপন্ন হই।
রাত ফুরিয়ে এলে দূরের শহর থেকে ঝুম ঝুম ট্রেন থামে স্টেশানে। নাগরিক সংবাদের ভীড়ে সারাদিন ঘোলাটে ছবির মতন রেটিনায় ঝুলে থাকে সার্কাসের নগ্নবক্ষা যুবতী। সেই রাতের পর যাকে আর কোথাও দেখা যায় নি। কেবল সার্কাসের শূন্য উঠোনে পড়েছিলো তার পরিত্যক্ত সালোয়ার। রক্তাক্ত।
কবর থেকে উঠে আসে বটবীজের ফসিল। রাশি রাশি বটের ডালে ঘিরে আসে চারপাশ। পাতাদের চাপে দমবন্ধ হয়ে মারা যেতে যেতে চায়ের গেলাসে শেষ চুমুকের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে ন্যাংটা পাগলের আগুননৃত্য। গুহাবাসের রহস্য। আর সঙ্গমে রত সাপদের ক্রমাগত হিস হিস!
বটবীজের ফসিল কবরে ফিরে গেলে আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাই আর সার্কাস যুবতী সারাটা আকাশ কাঁপিয়ে হাসতে থাকে অবিরাম। মধ্যরাতের ট্রেনের মতন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৫২