রোড টু মনরোভিয়া
কাফি সিম্বা লাইবেরিয়ার দায়িত্ব পেয়ে প্রথম সফরেই গ্রান্ড বাসার ন্যাশনাল হাইওয়েতে জনগনের তোপের মুখে পড়ে পুরাই বিলা হয়ে গেলেন। ফলশ্রুতিতে মন্ত্রীসভার জরুরী বৈঠক। ’গেল বছরে ৩৩৬ টি দুর্ঘটনা ৭০০ লোকের প্রানহানি,হাজারের ওপর আহত’- আতকে উঠলেন প্রেসিডেন্ট। এটা কি সড়ক নাকি জাহান্নামের প্রবেশ পথ। কাফি সিম্বার তৎপরতায় ১০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি ইতিহাসের ব্যত্যয় ঘটিয়ে পৃর্ববর্তী ৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে ১ বছরের মাথায় প্রতিবেদন দাখিল করে ফেলল। ততদিনে কাফি সিম্বা ক্ষমতার কুলোটা মুলোটার রস আস্বাদনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় জনগনের প্রতি দরদ বেশ ভালই সামলে নিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মোতাবেক ন্যাশনাল হাইওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের সাহায্যার্থে একটি আধুনিক ও বৃহত সিমেট্রি তৈরি করা হলো, নিহতদের অতি উন্নত মানের আবলুস কাঠের কফিনের ব্যবস্থা করা হলো, আহতদের নির্বিঘ্নে ঠ্যাং কাটার উন্নত যন্ত্র হাসাপাতালে প্রতিষ্ঠা করা হলো, দামী ক্রাচের ব্যবস্থা করা হলো। সিমেট্রি পরিদর্শন করতে গিয়ে যন্ত্রচালিত কপিকলের সাহায্যে কফিন কবরে নামানোর প্রক্রিয়া দেখে কাফির গর্বে বুক ফুলে উঠল। আহ.. কি তৃপ্তিৃ. .....জনগনের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দটা নিউরণ থেকে অঙ্গ প্রতেঙ্গে যখন ঠিক ছড়িয়ে পড়ব পড়ব করার সময়েই এক কুলাঙ্গার সাংবাদিকের চিৎকারে সব ভেস্তে গেলে। শ্লাদের জ্বালায় সিমেট্রিতেও শান্তি নাই। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স মর্কটটাকে যথাযথ ট্রিটমেন্ট দেয়ার আগেই কাফি তাকে ডেকে তার ক্ষোভের বৃত্তান্ত জানতে চাইলেন। মর্কটটার পরামর্শ শুনে গোরস্থানের মতো পবিত্র জায়গাতেও মন্ত্রী আমলাগণ অট্টহাসিতে ভেঙে পড়লেন। এত আধুনিক সিমেট্রি, দামী কফিন, ক্রাচের ব্যবস্থা না করে রাস্তা উন্নতকরণ আর গাড়ির ফিটনেস ঠিক রাখলেই নাকি জনগণ রক্ষা পায়। .....হা...হা....হা......। মুর্খ জনগণ এর চে’ আর বেশি কিই ভাবতে পারে। কাফি সিম্বা বুঝতে পারলেন মুর্খ জনগনকে শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে এ ধরনের আরো আজগুবি ভাবনায় তারা ডুবে থাকবে। ইশারায় শিক্ষামন্ত্রীকে এ বিষয়ে ভাবার পরামর্শ দিয়ে খোশ চিত্তে প্রাসাদের পথে রওয়ানা হলেন। পথে আবার ছোট শ্যালকের কফিনের কারখানাও পরিদর্শন করতে হবে।
আমজনতার জুস
ফাপস ভাইয়ের আগমনে বিপ্লবী জনতার মুহুর্মুহু শ্লোগানে মশিউরের একটু গলা মেলাতে ইচ্ছে করল, যদিও সে বয়স আর নাই। জ্যাম কিছুতেই ছাড়ছেনা দেখে বাস থেকে নেমে পড়ে জটলার দিকে এগিয়ে আরো মুগ্ধ মশিউর। ফুটপাতে জুড়ে কেমিক্যালমুক্ত আম বিক্রির বিশাল ব্যবস্থা, সাথে আবার সুদৃশ্য প্যান্ডেল, মরিচ বাতির ঝলকানি। ফাপস ভাই অতি গণতান্ত্রিক বলেই ফিতা কাটার ধার দিয়ে গেলেননা, কোন বক্তৃতাও দিলেননা, কেবল যুবগীল নেতাদের পিঠে একটু চাপড়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। এই চাপড় শুধু চাপড় নয়, এর ম্যাসেজটা অত্যন্তু গুরুত্বপূর্ণ। দেশের রাজকীয় ফল আম যখন ক্যামিকেলে সয়লাব, তখন যুবগীল নেতারা জনগণকে কেমিক্যালমুক্ত আম খাওয়ানোর জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখলেও কম হয়ে যায়। পুরো ঢাকাবাসীদের জন্য স্থানে অস্থানে ফুটপাত জুড়ে এই আম বিক্রিকে বিক্রয় হিসেবে নয়, বরং সেবার বহিপ্রকাশই বলা যেতে পারে। জনগণের না হয় হাটা চলায় একটু অসুবিধা হচ্ছে, কিন্তু মওসুমী ফল আম থেকে পুষ্টি না পেলেতো দুর্বল হয়ে হাটাই বন্ধ করে দিয়ে ঘরে শুয়ে থাকতে হবে। নিজের যুক্তির শানিত ধারে মশিউরের মুখ মন্ডল উজ্জল থেকে উজ্জলতর হওয়ার পথেই বাধ সাধলো এক রিক্সাওয়ালা। ’ এত ঢাকঢোল পিটাইয়া ওষুধ ছাড়া আম না বেইচা আমে যাতে ওষুধ না মিশাইতে পারে সেইডা সরকার দেখলেই পারে’- মুর্খ রিক্সাওয়ালার এহেন মন্তব্যে মশিউর বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই ধরনের মন্তব্যকারী অশিক্ষিত লোকগুলারে শিক্ষার আলোতে না নিলে বাঙালী এক পা সামনে গিয়ে দু পা পিছিয়ে আসবে। কেবল স্বাক্ষরতা বাড়ালেই হবেনা, প্রকৃত শিক্ষিত না করতে পারলে বাঙালী জাতির উন্নতি নাই- হতাশ মশিউর বাড়ির পথ ধরে।
কেমিক্যাল মুক্ত ব্লগ
আমাদের অতিপ্রিয় সামুব্লগেও একইভাবে পাঠককে কেমিক্যালমুক্ত ব্লগ খাওয়ানোর চেষ্ট চলছে অনেকদিন ধরে। প্রথমে আমার প্রিয় পোস্ট সংকলন, তারপর বাৎসরিক, বাৎসরিক থেকে মাসিক। ইদানিং কেউ সাপ্তাহিক সেরা ব্লগের সংকলন দেয়ারও চেষ্টা করছে। পাঠকের চেয়ে লেখকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে কি আর করা। তবে এ ব্যাপারে কতৃপক্ষই যা করার করতে পারে। আবজাব হাজার হাজার পোস্টের চেয়ে সারাদিন ভাল দশটি পোস্ট প্রকাশে দোষ কি? তবুও চিকনে কিছু মুর্খ পাঠক (টিআরপি, বিজ্ঞাপন বিজনেস এগুলা বোঝার মতো জ্ঞান যাদের এখনও হয় নাই) এখনও আশা করে ব্লগারদের ব্যক্তিগত সংকলন নয় সামু এক সময় শুধু সংকলন হওয়ার মতো মানসম্মত পোস্ট প্রকাশ করবে।
তবে এই কেমিক্যাল মুক্ত ব্লগ খাওয়ানো কিছুদিন পর ঝিমাইয়া পড়লেও সৃষ্টিকর্তার জাতে ওঠাটা এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়। আপনি নতুন ব্লগার, মাইরা দেখেন একটা সংকলন পোস্ট, আপনারে আর ঠেকায় কে?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৫৬