somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইনস্টাইনের ব্রেইন নিয়ে যত গবেষণা

০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইনস্টাইনের ব্রেইন নিয়ে চিরাচরিত গল্পটি এরকম...

১৯৫৫ সালে বিশ্বের বিখ্যাত গনিতবিদ ও পদার্থ বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ৭৬ বছর বয়সে মারা যান। তিনি মারা যাবার পর তার ব্রেইনটি খুব তারাতারি আলাদা করেন আমেরিকার প্রিন্সটোন হস্পিটাল এর প্যাথোলজিস্ট ড। টমাস হার্ভে। কিন্তু তার পরে এই ব্রেইনের এর কি হল তা সবার কাছে অনেকটা রহস্য থেকে যায়।



তারপরে ১৯৭০ সালে এই ব্রেইনের খোজের উদ্দেশ্যে মাসিক নিউজার্সি পত্রিকার একজন রিপোর্টার স্টিভেন লেভি ড. টমাস হার্ভের সাথে দেখা করতে তার নতুন কর্মস্থল ক্যানসাস যান। সেখানে গিয়ে স্টিভ লেভি দেখেন, আইনস্টাইনের ব্রেইনটি কাঠের দুটি বক্সে রাখা, যার উপরে লেখা ছিল "কোস্টা সাইডার"। তার ব্রেইনের সেরেবেলাম (মাথার একেবারে পিছনে গাড়ের কাছে থাকে) আর সেরেব্রাল কর্টেক্স (ব্রেইন এর উপরের পুরা অংশ) এর কিছু অংশ বাদে বাকি পুরো ব্রেইনটি কেটে পাতলা স্লাইস করা হয়েছিল গবেষণার জন্য। চলুন দেখা যাক কি পাওয়ে গেছিলও গবেষণায়...

আইনস্টাইন মারা যাবার ৩০ বছর পরে তার ব্রেইন এর উপর ১৯৮৫ সালে একটি পেপার বের হয় যে পেপার এর সিনিয়র অথর ছিলেন সেই ড. টমাস হার্ভে। নিউরোসায়েন্টিস্ট রা মানুষের ব্রেইনকে টোটাল ৪৭ টি ভাগে চিহ্নিত করেছেন যাকে বলে ব্রডম্যান ম্যাপ। এ ম্যাপ অনুসারে মানুষের ব্রেইনের ৯ ও ৩৯ নাম্বার এরিয়া খুবি গুরুত্বপুর্ন। মানুষের প্ল্যানিং, স্মৃতি আর মনযোগ এর জন্য এরিয়া ৯ কাজ করে আর এরিয়া ৩৯ কাজ করে ভাষা আর জটিল সমস্যা নিয়ে। ড. টমাস হার্ভের এই দল গবেষণায় করেছিলেন এই দুই এরিয়ার নিউরন এবং গ্লিয়াল সেল এর অনুপাত নিয়ে। তারা আইনস্টাইনের ব্রেইনের এই অনুপাত তুলনা করেছিলেন আরো ১১ জনে মৃত ব্যাক্তির ব্রেইন এর সাথে যাদের গড় বয়স ছিল ৬৫। এ পেপারের ফলাফলটা ছিল এরকম "The results of the analysis suggest that in left area 39, the neuronal: glial ratio for the Einstein brain is significantly smaller than the mean for the control population (t = 2.62, df 9, p less than 0.05, two-tailed). Einstein's brain did not differ significantly in the neuronal:glial ratio from the controls in any of the other three areas studied." তার মানে দাড়ালো আইনস্টাইনের ব্রেইন এর একমাত্র বাম দিকের ৩৯ নাম্বার এরিয়াতে "একটি নিউরনের জন্যা একাধিক গ্লিয়াল সেল" ছিল যা অন্য ১১ টি ব্রেইন এ ছিল না। এই রেজাল্ট এর ব্যাখ্যাটা ছিল এরকম-- যেহেতু এরিয়া ৩৯ এ বেশী গ্লিয়াল সেল, তার মানে বেশী আইনস্টাইনের ব্রেইন বেশি শক্তি ব্যায় করে--যার কারনেই হয়তো তার চিন্তা শক্তি ও তাত্বিক জ্ঞান সাধারনের চেয়ে বেশী ছিল। ২০০৬ সালে এরকমই আরেকটা পেপার পাব্লিশ হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে আইনস্টাইনের ব্রেইন এর গ্লিয়াল সেল এর গঠন (যেমন বড় এস্ট্রোসাইট প্রসেস) অন্যদের চেয়ে আলাদা ছিল।

যদিও ড. হার্ভের এ ফলাফল আইনস্টাইনের মেধাবিত্বকে নিয়ে প্রথম ফোকাস করে ব্রেইন এর গঠন কে দায়ী করেন, তারপরেও গবেষক সমাজে এ নিয়ে কিছু সমালোচনে রয়েছে। যেমন, প্রথমত, এখানে ১ জন আইনস্টাইনের সাথে তুলনা করা হয়েছে ১১ জনের ব্রেইন। ১১ জন ওকে বাট ১জন কে নিয়ে পাওয়া গবেষণালব্দ ফলাফল অবশ্যই পারিসাংখিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ! দ্বিতিয়ত, যেই ১১ জনের ব্রেইন এর সাথে কম্পেয়ার করা হয়েছে তাদের গড় বয়স আইনস্টাইনের চেয়ে ১২ বছর কম ছিল, এবং কনিষ্ঠ ব্রেইনের বয়স ছিল ৪৭ বছর। যেহেতু ব্রেইন নিয়ে মোটামুটি সবই অজানা, তাই এটা বলা মুশকিল যে আসলেই অই বয়সে (৭৬) বয়সে গ্লিয়াল সেলঃ নিউরন বেড়ে যায় কিনা? তৃতীয়ত, ওরা অনুপাত দেখেছে কিন্ত নাম্বার কিয়ে কিছু বলেনি। তাছাড়াও এ বিষয়টি ক্লিয়ারভাবে ঐ পেপারে উল্লেখ করা হয় নি কিভাবে তারা সকল ব্রেইন এর ৩৯ আর ৯ নং এরিয়া স্লাইস করেছে, পিউরিটি কত পার্সেন্ট?

আরেকটা কথা হল, ব্রেইন এর কোন এরিয়া যেকোন একটি কাজ ১০০% করতে পারেনা! ব্রেইন কাজ করে তার বিভিন্ন অংশের সমন্বয়ে। কিন্তু অন্য এরিয়া নিয়ে কিছু বলা হয়নি ঐ পেপারে।

আইনস্টাইনের এর মস্তিষ্ক নিয়ে দ্বিতীয় যে পেপারটি বেশী আলোচনায় এসছিল তা প্রকাশ হয় ১৯৯৬ সালে। এ পেপারে বলা হয় তার ব্রেইন এর ওজন ১২০০ গ্রাম যা নরমাল মানুষের চেয়ে ওজনে কম (১৪০০ গ্রাম)। তার ব্রেইন এর এরিয়া ৯ অন্যদের (৫ জনের সাথে কম্পেয়ার) চেয়ে পাতলা ছিল এবং অনেক বেশী নিউরন ছিল। তার মানে অল্প যায়গায় খুব ঘেষাঘেষি করে অনেক বশী নিউরন ছিল।

১৯৯৯ সালে আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, আইনস্টাইনের মগজের পেরিয়েটাল লোব (টোটাল ৪টি বড় ভাগে ব্রেইন বিভক্ত-পেরিয়েটাল লোব হল মাথার ঠিক উপরের লোবটি) খাজগোলু অন্য ৩৫ জনের চেয়ে আলাদা; পার্শ্বিক খাজগুলো ছোট/মিসিং ছিল। আর ব্রেইন এর এ লোব/ভাগটি গানিতিক যুক্তি, স্থানিক চিন্তাশক্তি নিয়ে কাজ করে থাকে। পাশপাশি তার ব্রেইন ১৫% বেশী প্রশস্ত ছিল। সব কিছু মিলে ধারনা করা হয় তার নিউরোনগুলো কাজ করার জন্য যথেষ্ঠ যায়গা পেত যা তার গানিতিক ও স্থানিক চিন্তা শক্তিতে সাহায্য করত।

২০১৩ সালে তার ব্রেইনের এর ফটোগ্রাফি নিয়ে একটি পেপার পাব্লিশ হয় যেখানে দেখানো হয়েছে, আইনস্টাইনের ব্রেইনের প্রিফন্ট্রাল এরিয়া অন্যদের চেয়ে প্রশস্ত, বিশেষ করে ব্রেইন এর যে অংশ জিহবা ও মুখমন্ডল নিয়ে কাজ করে।


যাই হোক, গবেষণার ফলাফল গুলো খুবি মজার--এট লিস্ট বিজ্ঞানীরা পার্থক্য খুজে পাচ্ছেন। মানুষ নিয়ে গবেষণা করতে গেলে অনেক সমস্যা থেকেই যায়, ইচ্ছে করেতো আর মানুষ মারা যায়না! আর তাই খুব পার্ফেক্টলি ব্রেইন নিয়ে গবেষণা করাও অসম্বব। আইনস্টাইনের ব্রেইন নিয়ে গবেষণার প্রধান অসুবিধা/লিমিটেশন হল---পৃথিবীতে আইনস্টাইন এর মত জিনিয়াস একজনই ছিল/আছে। তাই এ গবেষণা আরো বেশী গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য পৃথিবীর বিখ্যাত ম্যাথমেটিশিয়ান্দের ব্রেইন সংগ্রহ করে রাখতে হবে। আইনস্টাইনের মত এরকম বড়মানের বিজ্ঞানীর ব্রেইন নিয়ে গবেষণার ফলাফল হয়তো একসময় সঠিকভাবে বলতে সক্ষম হবে ব্রেইন এর কোন অংশ আসলেই বড়মানের বিজ্ঞানী হতে বাধ্য করে! জয় আইনস্টাইন!

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:০১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×