somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস ও আমার মাতৃভাষা বিষয়ক কিছু ভাবনা

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাই ২১শে ফেব্রুয়ারী বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসে আপনাকে ও এই ব্লগের সকল সদস্যকে অভিনন্দন।

এই ব্লগে বিভিন্ন পোস্টে ও বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বাংলাভাষার "অবক্ষয়" নিয়ে দুর্ভাবনা প্রসঙ্গে আমার কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করছি। আশা করি মুক্তমনে পড়বেন।

লক্ষ্য করে থাকবেন অবক্ষয় শব্দটি আমি কোটেশনে দিলাম। আসলে ভাষা সম্পর্কে আমার নিজস্ব কিছু অভিমত আছে। মানব ইতিহাসে ভাষার সৃষ্টি হয়েছিল মনের ভাব আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসাবে। সময়ের সাথে আস্তে আস্তে ভাষা এক একটি জাতির পরিচয়ের ধারক ও বাহকে পরিণত হয়। অসামান্য সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি হয় যা স্ব স্ব জাতির পরিচায়ক। তাই হয়ত মাতৃভাষার প্রতি আমরা এত রক্ষণশীল। কিন্তু ডারউইনের বিবর্তনের নিয়ম ভাষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য - হয়ত অনেক বেশি করে। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সব ভাষাই (উপজাতি ভাষাগুলি, যথা, সাওঁতালি ইত্যাদি বাদে) সংস্কৃত থেকে অপভ্রংশ হয়ে এসেছে। কিছু অপভ্রংশ ইতিমধ্যেই লুপ্ত, যথা, পালি। ভারতবর্ষে (আমি ভারতবর্ষ বলতে আজকের আফগানিস্তান থেকে মায়ানমার পর্যন্ত হিমালয়ের দক্ষিণের বিশাল ভুখন্ডকে বোঝাতে চেয়েছি। এই অঞ্চল হাজার হাজার বছর ধরে একই সম্পৃক্ত ইতিহাসে জারিত।)ব্যবহৃত ভাষাগুলির মধ্যে সংস্কৃতই প্রথম ব্যকরণ সিদ্ধ ভাষা (পাণিনি এই ভাষার ব্যাকরণ প্রণেতা)। আগের ব্যকরণহীন ভাষার সংস্কার করে সৃষ্ট বলেই এর নাম - সংস্কৃত। লক্ষ্যনীয়, সংস্কৃত আজ এতগুলি ভাষার জন্ম দিয়ে মৃত। আর তার অপভ্রংশগুলি আজও বিদ্যমান। বাংলা সংস্কৃতের যে একটা অপভ্রংশ তার একটা উদাহরণ দিই। মূল সংস্কৃত "দীপশলাকা" বললে হয়ত আজ অনেকেই বুঝতে পারবেন না। কিন্তু বাংলা "দেশলাই" বললে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়। দুটি শব্দের তফাতটা লক্ষ্য করুন। "বিকৃতি" কোথায় পৌঁছেছে!!

ভাষা বিবর্তিত হয়। হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে আগে এই বিবর্তনটা হত মূলত তিন ভাবে, -
১) ভাষার কষ্টকর উচ্চারণের শব্দগুলির সরলীকরণে (উপরের দীপশলাকার উদাহরণটি প্রণিধানযোগ্য),
২) কিছু অপভাষা বা পরিভাষার (ইংরাজিতে যাকে স্ল্যাং বলে) অন্তর্ভুক্তি (কোলকাতার ছাত্রসমাজের কথ্যভাষায় ছোট কিছু বোঝাতে "খাপচু" বলে একটি শব্দ ব্যবহৃত হয়। কে বলতে পারে কাল এটি সংসদ অভিধানে জায়গা করে নেবে না?), এবং,
৩) অন্তর্নিহিত কারণে ভাষায় জুতসই শব্দের অভাবহেতু অন্য ভাষা থেকে ধার করে (আলমারী আসলে একটি পর্তুগীজ শব্দ আলমেইরা থেকে নেওয়া।)।

আমার বাবার ঠাকুমার একটা কথা আমাদের পরিবারে প্রবাদপ্রতিম হয়ে গেছে। তিনি বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে তাঁর বজ্রযোগিনী গ্রামের বাড়িতে খোট্টা মালিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর নিজস্ব হিন্দিতে, "হিঁয়াসে মাটি কাটকে লাউগাছের তলায় ধপ কইরা ফেলায় দাও।" হাসতে পারেন। তিনি কিন্তু সিরিয়াস ছিলেন। আর তাঁর এই উক্তি মালিরও বোধগম্য হয়েছিল। ভাষার ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল।

এখন বিশ্বায়নের যুগে বিভিন্ন ভাষার সহাবস্থান অনেক বেড়ে গেছে। জীবিকার তাগিদে একাধিক ভাষা শেখাটা এখন প্রায় বাধ্যতামূলক। ফলে, "ফ্রেন্ডসরা এই অফারটা কিন্তু ভ্যালিড টিল ফোর্টিন্থ..." জাতীয় শব্দবন্ধ এসে পড়াটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ছে। এটা আগেও হয়েছে।
কিন্তু তাতে যখন গেল গেল রব ওঠে চারদিকে তখনই আমার মনে দ্বিধা আসে। তারপর সমাজের ধ্বজাধারীরা যখন জোর করে আমাদের ভাষা সংশোধনে আমাদের শহরের দোকানের সাইনবোর্ডের ভাষা ঠিক করতে উঠে পড়ে লাগে তখন আতঙ্ক বাড়ে। এ কোন নতুন ধরণের সন্ত্রাসবাদ?!
বাংলাদেশের যে ভাষার জন্য স্বাধীনতার লড়াই, আমার মনে হয়, তা যত না বাংলাভাষা সংরক্ষণের জন্য তারথেকে অনেক বেশি উর্দুভাষা জোর করে চাপিয়ে দেবার প্রতিবাদের ফলশ্রুতি। (মাপ করবেন যদি আমি কারুর মনে আঘাত দিয়ে থাকি।)

বাংলা ভাষা অন্ততঃ অষ্টম শতাব্দী থেকে (চর্যাপদের যুগ থেকেই যদি শুরু ধরি) চলে আসছে। অসংখ্য বিবর্তন হয়েছে। আরও হবে। হোক না। আমাদের সাহিত্য তো হারিয়ে যায়নি। যে কোনো ধরণের সেন্সরই কিন্তু মারাত্মক। পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ আর ত্রিপুরা মিলিয়েই এই ভাষার অন্ততঃ বিশটা রকমফের আছে। কোনটাকে আপনি শুদ্ধ ধরবেন? আর কোনটার শ্বাসরোধ করবেন?

সমরেশ বসুর বহুবিতর্কিত উপন্যাস প্রজাপতি শুরুই হচ্ছে একটি স্ল্যাং বা অপভাষা দিয়ে - শশ্লা। সেই উপন্যাস সাহিত্য হিসাবে কিন্তু মোটেই ফেলনা নয়। আবার প্রচুর আবর্জনা সাহিত্য হিসাবে চালানোর চেষ্টা করেও চলেনি। এদের "বটতলা" মার্কা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আমার মনে হয় আমার মাতৃভাষা বাংলা অনেক সমৃদ্ধ আর ব্যপ্ত। কোনো বান্দি না বাংলিশ বা ইংলা এর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। হয়ত তারা আলাদা একটা ভাষা হিসাবে বেরিয়ে আসবে, হয়ত হারিয়ে যাবে। আর যদি সত্যি সত্যি কোনো এক দূর ভবিষ্যতে বাংলা লুপ্ত হয়ে যায়, আমি আপনি কি জোর করে তা ঠেকাতে পারব?

সাহিত্য কিন্তু থেকে যাবে। কালিদাস কিন্তু অধুনা মৃত সংস্কৃততেই তাঁর অসামান্য সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। শেক্সপীয়ারের ইংরাজিও আজ আর নেই। তাই বলে সেই সাহিত্য মানবসভ্যতার ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়নি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৫২
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×